প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী আত্রেয়ী প্রসঙ্গে আত্রেয়ীর শিক্ষা লাভ, বেদজ্ঞ ঋষিদের আশ্রম দণ্ডকারণ্য, দণ্ডকারণ্যে অগস্ত্য মুনির আশ্রম, দণ্ডকারণ্যে অগস্ত্য মুনির আশ্রমে আত্রেয়ীর আগমণ, ভবভূতির নাটকে আত্রেয়ীর কাহিনী, প্রবল জ্ঞানানুরাগিনী আত্রেয়ী ও ঋষি অগস্ত্যের নিকট আত্রেয়ীর কন্যা স্নেহ লাভ সম্পর্কে জানবো।
ভারতের প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী আত্রেয়ী প্রসঙ্গে আত্রেয়ী নামের অর্থ নদী, আত্রেয়ীর শিক্ষা, আত্রেয়ীর প্রবল জ্ঞানানুরাগ, ভবভূতির নাটকে আত্রেয়ীর কাহিনী উল্লেখ, অগস্ত্য মুনির আশ্রমে আত্রেয়ীর আগমণ ও আত্রেয়ীর বেদ, উপনিষদ শিক্ষা লাভ সম্পর্কে জানব।
প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী আত্রেয়ী
ঐতিহাসিক চরিত্র | আত্রেয়ী |
পরিচিতি | প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী |
গুরু | মহর্ষি বাল্মীকি |
শিক্ষা লাভে আগমন | অগস্ত্য মুনির আশ্রম |
আত্রেয়ীর কাহিনী | ভবভূতির উত্তরচরিত নাটক |
ভূমিকা :- প্রাচীন যুগের একজন বিদুষী নারী ছিলেন আত্রেয়ী। সংস্কৃত নাট্যকার ভবভূতির উত্তরচরিত নাটকে আত্রেয়ী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
আত্রেয়ীর শিক্ষা লাভ
মহর্ষি বাল্মীকি ছিলেন তার গুরু। বাল্মীকির নিকট তিনি বেদ, বেদাঙ্গ, উপনিষদাদি সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেছিলেন।
বেদজ্ঞ ঋষিদের আশ্রম দণ্ডকারণ্য
দণ্ডকারণ্যে অগস্ত্য প্রমুখ মহর্ষি বাস করতেন। দণ্ডকারণ্যের বিচিত্র প্রাকৃতিক শোভা সেই সময়ে ভারতবিখ্যাত ছিল। নীলগিরির দূরবর্তী মনোরম শোভা, রমণীয় নদীসমূহের অবিরাম কলগীতি, নদীতটবিহারী সারস ও চক্রবাক, জলচর বিহঙ্গগণে বিরাজিত পদ্মসমন্বিত শান্ত সরোবর, সেকালে দণ্ডকারণ্যকে জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ নিকেতনে পরিণত করেছিল। এইজন্যই বেদজ্ঞ ঋষিরা মনবিমোহনকারী দণ্ডকারণ্যে তপোবন নির্মাণ করে বাস করতেন।
দণ্ডকারণ্যে অগস্ত্য মুনির আশ্রমে
অগস্ত্য মুনির আশ্রম এই দণ্ডকারণ্যেই অবস্থিত ছিল। সেই আশ্রম ছিল বিবিধ পুষ্পফলসমন্বিত, নানাবিধ বিহঙ্গপদে প্রতিধ্বনিত এবং পিপ্পলী বৃক্ষসমূহে শোভিত রমণীয় স্থলবহুল বনমধ্যে প্রতিষ্ঠিত। সেই আশ্রমের চারিদিকে ছিল অনেক নির্মল সরোবর, সেই সরোবরসমূহে হংসযূথ ও কারণ্ডবগণ এবং চক্রবাক সমুহ ক্রীড়া করত।
দণ্ডকারণ্যে অগস্ত্য মুনির আশ্রমে আত্রেয়ীর আগমণ
অগস্ত্যের এইরূপ পুণ্য আশ্রমে আত্রেয়ী দেবী অগস্ত্য প্রমুখ ঋষিদের মুখে সামবেদ-এর গাথা শ্রবণ করবার জন্য গমন করেছিলেন। বিষয়টি ভবভূতির উত্তরচরিত নাটকে অতি সুন্দরভাবে বর্ণিত রয়েছে।
ভবভূতির নাটকে আত্রেয়ীর কাহিনী
- (১) ভবভূতির উত্তরচরিত নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে দেখতে পাই বনদেবী বাসন্তী আত্রেয়ীকে অগস্ত্যের আশ্রমে আগমন করতে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করছেন— “দেবি! আত্রেয়ী, আপনি কিজন্য এই দণ্ডকারণ্যে মহর্ষি অগস্ত্যের আশ্রমে আগমন করেছেন ? আপনার এতদূর পরিশ্রম করে এখানে আসিবার কারণ কি বলুন ত?”
- (২) আত্রেয়ী উত্তরে বলেন – “আমি শুনেছি মহর্ষি অগস্ত্য প্রমুখ পুণ্যতপা ঋষিগণের এই দণ্ডকারণ্য আশ্রমে সামবেদ গীত হয়, আমি সামবেদের সেই সুমধুর স্বরলহরী শ্রবণ করার জন্য এবং বেদ, বেদান্ত ও উপনিষদাদি শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়ন করার নিমিত্ত মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রম হতে এখানে এসেছি।”
- (৩) তখন বাসন্তী বলেন “আপনার কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। যে মহাপুরুষ বাল্মীকির নিকট শত শত ঋষিব্রহ্মচারিগণ গমন করে বেদ, উপনিষদাদি অধ্যয়ন করে থাকন, আপনি সে পুণ্য-আশ্রম পরিত্যাগ করে এখানে এসেছেন, এতে বিস্মিত হবার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান আছে।”
- (৪) আত্রেয়ী বলেন “কে একজন মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রমে তাঁর দুটি যমজ পুত্র রেখে গিয়েছেন। মহর্ষি এই পুত্র দুটিকে শিক্ষাদান করতে অতি মাত্রায় ব্যস্ত। আর সেই পুত্র দুটি এত বড় মেধাবী যে তাদের সাথে একসঙ্গে অধ্যয়ন করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ ও সামবেদ এই তিনটি বেদ অধ্যয়ন করে ফেলেছে, এই জন্যই আমি মহর্ষি অগস্ত্যের আশ্রমে অধ্যয়নের জন্য আগমন করেছি।”
প্রবল জ্ঞানানুরাগিনী আত্রেয়ী
- (১) আত্রেয়ী যে কিরূপ জ্ঞানানুরাগিনী ছিলেন এখান থেকেই তা সুস্পষ্ট অনুভব করতে পারা যায়। কোথায় আর্যাবর্তে বাল্মীকির আশ্রম, আর কোথায় কোন্ দূর দাক্ষিণাত্যে মহর্ষি অগস্ত্যের তপোবন! এই দূরদেশ অতিক্রম করা সুদূর অতীতে বড় সহজ ব্যাপার ছিল না।
- (২) কিন্তু বিদ্যা ও জ্ঞানলাভের স্পৃহা আত্রেয়ীর এতদূর প্রবল হয়েছিল যে, তিনি ভীষণ বন্যজন্তুসমাকীর্ণ দুর্গম দুস্তর অরণ্যানী, দুর্লঙ্ঘ্য পর্বতশ্রেণী, দুর্গম গিরিপথ ও দুরতিক্রম্য নদনদী উত্তীর্ণ হয়ে দণ্ডকারণ্যে মহর্ষি অগস্ত্যের আশ্রমে আগমন করেছিলেন।
ঋষি অগস্ত্যের নিকট আত্রেয়ীর কন্যা স্নেহ লাভ
মহর্ষি অগস্ত্য আত্রেয়ীর বিদ্যানুরাগ ও জ্ঞানানুশীলন স্পৃহা দেখে এতদূর পুলকিত হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁকে কন্যার মতো পরম স্নেহে নানাশাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষাদান করেছিলেন।
উপসংহার :- সে কালের ছাত্রীসমাজের মধ্যে যে বিদ্যানুরাগ ছিল, তারা বিদ্যালাভের জন্য যে নির্ভীকভাবে দূরদূরান্তরে গমন করতেও ইতস্ততঃ করতেন না, আত্রেয়ীর বাল্মীকির তপোবন হতে মহর্ষি অগস্ত্যের আশ্রমে আগমনই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে।
(FAQ) প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী আত্রেয়ী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতের প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী।
প্রথমে বাল্মীকি পরে অগস্ত্য মুনি।
দণ্ডকারণ্যে।
ভবভূতির উত্তরচরিত নাটকে।