রুক্মাবতী

বিদুষী ও দয়াবতী নারী রুক্মাবতী প্রসঙ্গে তার পরিচয়, সময়কালে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ, রুক্মাবতী কর্তৃক মহামারীর করাল গ্রাস দর্শন, সদ্যপ্রসূত শিশুর রক্ষায় রুক্মাবতী, তার উপলব্ধি, নিজের স্তন দান, তার প্রশংসা ও নগর পরিত্যাগ সম্পর্কে জানবো।

হিন্দু পুরাণে বিদর্ভের রাজা রুক্মীর কন্যা এবং প্রদ্যুম্নের দ্বিতীয় স্ত্রী রুক্মাবতী প্রসঙ্গে বিদুষী ও দয়াবতী নারী রুক্মাবতী, রুক্মাবতীর পুত্র অনিরুদ্ধ, রুক্মাবতীর মহামারীর করাল গ্রাস দর্শন, রুক্মাবতীর অসীম দান ও বদান্যতা সম্পর্কে জানব।

বিদুষী ও দয়াবতী নারী রুক্মাবতী

ঐতিহাসিক চরিত্ররুক্মাবতী
পরিচিতিবিদুষী ও দয়াবতী নারী
নিবাসউৎপলবতী নগরী
উল্লেখপালি সাহিত্য
খ্যাতিদানশীলতা
বিদুষী ও দয়াবতী নারী রুক্মাবতী

ভূমিকা :- সেকালে উৎপলবতী নগরীতে রক্মাবতী নামে এক বিদুষী, ধনশালিনী ও দয়াবতী মহিলা ছিলেন। তার দান, ধ্যান ও জনপ্রীতির কথা শুনলে বিস্মিত হতে হয়।

রুক্মাবতীর সময়কালে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ

একবার দেশমধ্যে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। কেবল দুর্ভিক্ষ নয়, সঙ্গে সঙ্গে অনাবৃষ্টি, মহামারীও আরম্ভ হয়ে গেল। দেশে খাদ্যদ্রব্যের এমন অপ্রাচুর্য হল যে, লোক বনের ঘাস পাতা ইত্যাদি খেয়ে অতি কষ্টে জীবন ধারণ করতে আরম্ভ করল। ক্রমে তাও হ্রাস পেল। তখন লোকে অনাহারে মরতে লাগল। দুর্ভিক্ষপীড়িত নরনারীর আর্তনাদে আকাশ বাতাস প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। শত শত নরনারী মৃত্যুমুখে পতিত হল। সুন্দর জনপূর্ণ বৃহৎ নগরী শ্মশানে পরিণত হল।

রুক্মাবতী কর্তৃক মহামারীর করাল গ্রাস দর্শন

মানুষ খাদ্যাভাবে স্নেহ, মায়া, মমতা সকলই বিসর্জন দিয়ে থাকে। একদিন রুক্মাবতী রাজপথে ভ্রমণ করতে করতে এক স্থানে দেখতে পেলেন যে, একটি ক্ষুধার্ত কঙ্কালসার রমণী খাদ্যাভাবে স্নেহ, মায়া মমতা ভুলে নিজের সদ্যোজাত শিশুর সজীব দেহ ভোজন করতে উদ্যোগী হয়ৈছে। এইরূপ দৃশ্য দেখে রুক্মাবতী শিউরে উঠলেন। মানুষ যে এমন পিশাচ হতে পারে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি।

সদ্যপ্রসূত শিশুর রক্ষায় রুক্মাবতী

তিনি তাড়াতাড়ি সেই ক্ষুধার্তা নারীর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “তুমি এ কি করিতেছ ? এইভাবে আপন সন্তানের প্রাণনাশ করিও না। তুমি অপেক্ষা কর, আমি তোমার জন্য আমার গৃহ হইতে খাদ্যদ্রব্য এনে দিচ্ছি।” তখন সেই ক্ষুধার্তা রমণী বলল, “কি খাই বল ? দেশে তৃণগাছটি পর্যন্ত নেই, কি খেয়ে জীবনধারণ করব ?” রুক্মাবতী বললেন, “একটু অপেক্ষা কর, আমি এখনই খাদ্যদ্রব্য নিয়ে তোমার নিকট আসছি “

রুক্মাবতীর উপলব্ধি

পরক্ষণেই তাঁর মনে হল যে, যদি এই নারীর নিকট তার শিশুকে রেখে যাওয়া যায়, তাহলে এই নারী যেরূপ ক্ষুধার্তা হয়েছে, তাতে সে কখনও সদ্যপ্রসূত সন্তানটির জীবন রক্ষা করবে না। শিশুটিকে নিশ্চয়ই খেয়ে ফেলবে।

রুক্মাবতীর নিজ স্তন দান

এইরূপ চিন্তা করে তিনি আপনার বস্ত্রাভ্যন্তর হতে একখানা শানিত ছুরিকা বের করে তার দ্বারা নিজের স্থূলমাংসল স্তন দুটি কেটে ঐ ক্ষুধার্ত রক্তমাংসলোলুপা নারীর নিকট অর্পণ করে শিশুটিকে নিয়ে চলে গেলেন।

রুক্মাবতীর প্রশংসা

তাঁর এইরূপ অদ্ভুত দানের কথা সর্বত্র রাষ্ট্র হয়ে পড়ল। নানাস্থান থেকে দলে দলে নরনারী এসে তাঁর বাড়ীতে সমবেত হতে লাগল। সকলের মুখে তাঁর প্রশংসা।

রুক্মাবতীর নগর পরিত্যাগ

আত্মপ্রশংসা শোনার ন্যায় আর দ্বিতীয় পাপ নেই, এইরূপ মনে করে রুক্মাবতী নগর পরিত্যাগ করে বিজন অরণ্যমধ্যে একটি আশ্রম নির্মাণ করে বাস করতে লাগলেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র সম্বন্ধে আলোচনা করিতে প্রবৃত্ত হলেন।

উপসংহার :- এই বিদুষী মহিলার পদপ্রান্তে বসে বহু তপস্বিনী নারী বৌদ্ধশাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে অর্হত্বপদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পালি সাহিত্যে তাঁর এই অসীম বদান্যতার কথা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে।

(FAQ) রুক্মাবতী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রুক্মাবতী কে ছিলেন?

প্রাচীন ভারত-এর বিদুষী, ধনশালিনী ও দয়াবতী মহিলা।

২. রুক্মাবতীর নিবাস কোথায় ছিল?

উৎপলবতী নগরীতে।

৩. রুক্মাবতীর অসীম বদন্যতার কথা কোথায় লিখিত আছে?

পালি সাহিত্যে।

৪. রুক্মাবতীর খ্যাতির কারণ কি?

দান, ধ্যান ও জনপ্রীতি।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment