ভারতের প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী দেবহুতি প্রসঙ্গে বিদ্যানুরাগিণী দেবহুতি, দেবহুতির বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ, দেবহুতির বিবাহ সম্পন্ন, জ্ঞানাকাঙ্খী দেবহুতি, দেবহুতির জ্ঞানানুশীলন, দেবহুতির সন্তান অরুন্ধতী, দেবহুতির সন্তান অনসূয়া, দেবহুতির পুত্র কপিল মুনি ও দেবহুতির অবদান সম্পর্কে জানব।
প্রাচীন ভারতীয় বিদুষী নারী দেবহুতি প্রসঙ্গে দেবহুতির বিদ্যানুরাগ, দেবহুতির বিবাহ, দেবহুতির জ্ঞানাকাঙ্খা, দেবহুতির কন্যা অরুন্ধতী ও অনসূয়া, দেবহুতির পুত্র কপিল মুনি ও প্রাচীন ভারতীয় সমাজে দেবহুতির অবদান সম্পর্কে জানব।
ভারতের প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী দেবহুতি
ঐতিহাসিক চরিত্র | দেবহুতি |
পিতা | স্বায়ম্ভুব মুনি |
মাতা | শতরূপা |
স্বামী | কর্দম ঋষি |
কন্যা | অনসূয়া ও অরুন্ধতী |
পুত্র | কপিল মুনি |
ভূমিকা :- প্রাচীন যুগের একজন বিদুষী নারী ছিলেন দেবহুতি। তিনি ছিলেন প্রবল বিদ্যানুরাগী।
দেবহুতির পরিচিতি
বিদুষী দেবহুতি রাজা স্বায়ম্ভুব মুনির কন্যা। তার জননীর নাম শতরূপা। দেবহুতির ভ্রাতা প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ দুইজনেই প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন।
বিদ্যানুরাগিণী দেবহুতি
দেবহুতি শৈশব থেকেই আপনার প্রতিভার পরিচয় প্রদান করেন, সেজন্য পিতা তাঁর সুশিক্ষার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। ঐ সময়ে এই বিদ্যানুরাগিণী মহিলার সুনাম সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছিল।
দেবহুতির বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ
কর্দম নামে একজন ঋষিযুবকের এই সময়ে অত্যন্ত বিদ্যার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি ছিল। দেবহুতির এমনই বিদ্যানুরাগ ছিল যে তিনি কোনও রাজপুত্রকে বিবাহ না করে কর্দম ঋষিকে বিবাহ করার ইচ্ছা পিতার নিকট প্রকাশ করলেন। জ্ঞানলাভের চরিতার্থতাই ছিল এর একমাত্র কারণ।
দেবহুতির বিবাহ সম্পন্ন
কন্যার ইচ্ছানুরূপ বরের সাথে তার বিবাহ দেবার জন্য রাজা স্বায়ম্ভুব মুনি কর্দম আশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর অভিপ্রায় জ্ঞাপন করলেন। এই সময়ে কর্দম ঋষি ব্রহ্মচর্যাশ্রম পরিত্যাগ করে গার্হস্থ্যাশ্রমে প্রবেশের উদ্যোগ করছিলেন। তিনি সন্তুষ্টচিত্তে রাজার প্রস্তাবে সম্মতি দান করলেন। শুভদিনে শুভক্ষণে দীনদরিদ্র ঋষির সাথে রাজকন্যার বিবাহ হল।
জ্ঞানাকাঙ্খী দেবহুতি
দেবহুতি রাজৈশ্বর্য পরিত্যাগ করে স্বামীর শান্ত নির্জন তপোবনে এলেন। তার প্রাণে ঐশ্বর্য বা বিলাসের প্রতি কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না, আকাঙ্ক্ষা ছিল শুধু জ্ঞানের প্রতি।
দেবহুতির জ্ঞানানুশীলন
এবার স্বামীর নিকট হতে দেবহুতির মনের বাসনা পূর্ণ করতে লাগলেন। তিনি একদিকে গৃহকর্ম করতেন, অপর দিকে স্বামীর সাথে জ্ঞানানুশীলন করতেন। তাদের উভয়ের জীবন জ্ঞানে ও প্রেমের অপূর্ব সুষমায় অলঙ্কৃত হয়েছিল।
দেবহুতির সন্তান অরুন্ধতী
ঋষি কার্দমক ও দেবহুতির নয়টি কন্যা জন্মগ্রহণ করে। ঐ কন্যাদের মধ্যে অরুন্ধতীর নাম বিশেষ প্রসিদ্ধ। বশিষ্ঠ-পত্নী অরুন্ধতীর সতীত্ব ও পবিত্রতার কাহিনী আমাদের দেশে চিরন্তন আদর্শ রূপে বিরাজমান রয়েছে। এখনও বিবাহকালে কন্যা বলে থাকেন “প্রার্থনা করছি, দেবী অরুন্ধতী, আমি যেন তোমার ন্যায় পাতিব্রত্যধর্মে গরীয়সী থাকি।”
দেবহুতির সন্তান অনসূয়া
বিদুষী দেবহুতির কন্যা অনসূয়ার সাথে পরিণয় হয়েছিল অত্রি ঋষির। অনসূয়াও একজন শ্রেষ্ঠা গুণবতী মহিলা ছিলেন, আব অত্রি ঋষি ছিলেন একজন খ্যাতনামা ব্রহ্মজ্ঞ ঋষি।
দেবহুতির সন্তান কপিলমুনি
যে কপিলমুনি সাংখ্যদর্শন পৃথিবীর সর্বত্র পরিচিত, যে কপিল অসাধারণ জ্ঞানী ও সুপণ্ডিত বলে আজ পর্যন্ত পরিকীর্তিত হয়ে আসছেন, সেই কপিল মুনি এই দেবহুতির গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেন।
দেবহুতির অবদান
পুত্রকে শিক্ষিত এবং জ্ঞানী করার জন্য এই মহীয়সী মহিলা অক্লান্ত শ্রম ও যত্ন করেছিলেন তা আশ্চর্য বলতে হবে। কপিল জ্ঞানের পুণ্যধারা দ্বারা মানবের মুক্তিপথের অনুসন্ধান করেছিলেন। সেই প্রেরণার মূল সুত্র, মূল আদর্শ ও শিক্ষা জননী শুভ্র স্তন্যধারার সাথেই তার জীবনে অন্তর্নিহিত হয়েছিল।
উপসংহার :- জ্ঞান, শিক্ষা এবং ত্যাগের জন্য দেবহুতির নাম মহিলাকুলে আদর্শস্থানীয়া হয়ে থাকবে।
(FAQ) ভারতের প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী দেবহুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রাজা স্বায়ম্ভুব মুনির কন্যা।
কর্দম ঋষি।
অনসূয়া ও অরুন্ধতী।
কপিল মুনি।