জোসেফ ম্যাৎসিনি

জোসেফ ম্যাৎসিনি -র জন্ম, প্রথম জীবন, ব্যক্তিত্ব, কার্বোনারি দলে যোগদান, কারাবরণ, নির্বাসন, ইয়ং ইতালি প্রতিষ্ঠা, দলের উদ্দেশ্য, যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য, আদর্শ ও কর্মসূচি, সীমাবদ্ধতা, কৃতিত্ব ও শেষ জীবন সম্পর্কে জানবো।

ইতালির ঐক্য আন্দোলনের জনক জোসেফ ম্যাৎসিনি প্রসঙ্গে ম্যাৎসিনির জন্ম, ম্যাৎসিনির প্রথম জীবন, ম্যাৎসিনির শিক্ষা জীবন, ম্যাৎসিনির কর্মজীবন, ম্যাৎসিনির রাজনৈতিক জীবন, কার্বোনারি সমিতির সদস্য ম্যাৎসিনি, গুপ্ত সমিতির সদস্য ম্যাৎসিনি, ইয়ং ইতালি দলের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাৎসিনি, ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির অবদান।

জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইতালি আন্দোলন

ঐতিহাসিক চরিত্রজোসেফ ম্যাৎসিনি
জন্ম১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ, ইতালির জেনোয়া প্রদেশ
প্রতিষ্ঠিত দলইয়ং ইতালি
ভূমিকাইতালির ঐক্য আন্দোলন -এর প্রাণপুরুষ
মৃত্যু১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ
জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইতালি আন্দোলন

ভূমিকা :- কার্বোনারি আন্দোলন -এর ব্যর্থতার পর ইতালির ঐক্য আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন জোসেফ ম্যাৎসিনি ও তাঁর ইয়ং ইতালি’ বা ‘নব্য ইতালি’ দল।

জোসেফ ম্যাৎসিনি সম্পর্কে হ্যাজেনের উক্তি

ঐতিহাসিক সি. ডি. হ্যাজেন-এর মতে, “ম্যাৎসিনি ছিলেন ইতালির পুনর্জাগরণের আধ্যাত্মিক শক্তি, নব-ইতালির প্রত্যাদিষ্ট পুরুষ।”

জোসেফ ম্যাৎসিনি সম্পর্কে গ্রেনভিলের উক্তি

ঐতিহাসিক গ্রেনভিল-এর মতে, তিনি ছিলেন ইতালির প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যের বৌদ্ধিক অগ্রদূত।

জোসেফ ম্যাৎসিনির ব্যক্তিত্ব

ইতালীয় ঐক্য আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ম্যাৎসিনি ছিলেন বাগ্মী, সুলেখক, সাংবাদিক, চিন্তাবিদ, বিপ্লবী সংগঠক ও জ্বলন্ত দেশপ্রেমিক।

জোসেফ ম্যাৎসিনির জন্ম

১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালির জেনোয়া প্রদেশে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন জেনোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপক।

জোসেফ ম্যাৎসিনির প্রথম জীবন

  • (১) বাল্যকাল থেকেই স্বদেশের দুর্দশা তাঁকে পীড়া দিত। অতি অল্প বয়সেই তিনি রোমান্টিক ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন।
  • (২) দান্তে, শেক্সপিয়র, বায়রন, গ্যেটে, শিলার, হুগো, হার্ডার প্রমুখের রচনা তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
  • (৩) প্রথম জীবনে তিনি সাহিত্য রচনা করতেন। কিন্তু অচিরেই তিনি অনুধাবন করেন স্বদেশের স্বাধীনতা ব্যতীত কোনও মহান সাহিত্য সৃষ্টি অসম্ভব।
  • (৪) স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইতালির স্বপ্ন তাঁর সমগ্র চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, যতদিন না তাঁর মাতৃভূমি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ততদিন তিনি শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো পোশাক পরিধান করবেন।
  • (৫) বলা বাহুল্য, সারা জীবনই তিনি কালো পোশাক ব্যবহার করেছিলেন। পরে তিনি অবশ্য এই কাজটিকে ‘শিশুসুলভ’ বলে অভিহিত করলেও, এটি যে তাঁর গভীর স্বদেশপ্রীতির পরিচায়ক, সে সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই।

জোসেফ ম্যাৎসিনির কার্বোনারি দলে যোগদান

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করার পর স্বদেশের মুক্তির উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে ‘কার্বোনারি’ নামে একটি গুপ্ত সমিতি পরিচালিত কার্বোনারি আন্দোলনে যোগ দেন।

কার্বোনারি দলের প্রতি ম্যাৎসিনির আকর্ষণ

এই দলের মতাদর্শ ও কর্মপন্থা তাঁর পছন্দ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি এই সমিতিতে যোগ দেন সদস্যদের নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমে আকৃষ্ট হয়ে।

জোসেফ ম্যাৎসিনির কারাবরণ ও নির্বাসন

কার্বোনারি দলের নেতৃত্বে পরিচালিত ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদানের জন্য তিনি কারারুদ্ধ হন এবং পরে নির্বাসিতও হন।

জোসেফ ম্যাৎসিনির নির্বাসিত জীবন

এরপর দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সইংল্যান্ড -এ নির্বাসিত জীবন কাটান।

যুব শক্তির প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধি

এই সময় তিনি ‘কার্বোনারি’ আন্দোলনের ত্রুটিগুলি অনুধাবন করেন এবং উপলব্ধি করেন যে, কেবল গুপ্তহত্যা বা সন্ত্রাসবাদের দ্বারা ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার জনজাগরণ— দরকার যুবশক্তির উন্মেষ।

ইতালির ইতিহাস রচনায় যুবকরাই ভরসা

তিনি উপলব্ধি করেন যে, আত্মদান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে একমাত্র যুবকরাই ইতালির এভাবে ইতালির ইতিহাস রচনা করতে পারে।

জোসেফ ম্যাৎসিনির দ্বারা ইয়ং ইতালি দল প্রতিষ্ঠা

যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তি আন্দোলনের উদ্দেশ্যে নির্বাসিত অবস্থায় ফ্রান্সের মার্সাই শহরে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ইয়ং ইতালি’ বা ‘নব্য ইতালি’ নামে একটি যুব সংগঠন তৈরি করেন।

ইয়ং ইতালি দলের সভ্য বা সদস্য

চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনও ব্যক্তি এই দলের সভ্য হতে পারত। দুবছরের মধ্যেই এর সদস্য সংখ্যা ৬০ হাজার স্পর্শ করে।

জোসেফ ম্যাৎসিনির ঘোষণা

তিনি বলেন উন্মত্ত জনতার অগ্রভাগে যুবকদের উপস্থিতি তাদের নবীন অন্তরে লুক্কায়িত ক্ষমতার উৎসকেই প্রকাশ করে এবং তাদের উদাত্ত আহ্বান জনতার মধ্যে ঐন্দ্রজালিক প্রভাবের সৃষ্টি করে।”

জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইয়ং ইতালি

গুপ্ত সমিতি হলেও ইয়ং ইতালি কিন্তু কোনও নাশকতামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল না। এটি ছিল একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান—আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান নয়।

জোসেফ ম্যাৎসিনির ইয়ং ইতালি দলের উদ্দেশ্য

এই দলের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা, প্রচার, আত্মত্যাগ ও চরিত্রনিষ্ঠার দ্বারা ইতালিতে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার করা।  

জোসেফ ম্যাৎসিনির দ্বারা ইয়ং ইতালি পত্রিকা প্রকাশ

ইতালির ঐক্যের আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ইয়ং ইতালি নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন।

যুবসমাজের উদ্দেশ্যে ম্যাৎসিনির বক্তব্য

  • (১) ম্যাৎসিনি যুব সম্প্রদায়কে তাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে সচেতন করে দিয়ে বলেন, যদি দু কোটি ইতালীয় ঐক্যবদ্ধভাবে ও একনিষ্ঠ দেশেপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাহলে জয়লাভ অবশ্যম্ভাবী।
  • (২) তিনি বলেন যে, ধর্ম ও দেশপ্রেম এক ও অভিন্ন, এবং যুবকদের কাজ হল গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ ও ইতালির অতীত গৌরব কাহিনি ছড়িয়ে দেওয়া। এজন্য হয়তো তাদের উপর স্বৈরাচারী শাসককুলের অত্যাচার নেমে আসবে, কিন্তু এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই, কারণ “শহিদের রক্ত ঝরলেই আদর্শের বীজ দ্রুত বৃদ্ধি পায়”।
  • (৩) তাঁর আদর্শ ছিল ঐক্যবদ্ধ ইতালি। যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতেন, “কেবল ইতালি, ঐক্যবদ্ধ ইতালিই তোমাদের মন্ত্র হবে।”
  • (৪) তিনি বলতেন, “কেবল সমগ্র ইতালি, ঐক্যবদ্ধ ইতালির জন্যই বিপ্লব করো, অন্য কোনও খণ্ডিত আদর্শের জন্য বিপ্লব কোরো না।”

জোসেফ ম্যাৎসিনির দ্বারা ইয়ং ইতালি দলের পতাকা তৈরি

তিনি ইয়ং ইতালি দলের জন্য যে পতাকা তৈরি করেন তার একদিকে লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা ও এক্য এবং অপরদিকে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবতা’।

জোসেফ ম্যাৎসিনির আদর্শ ও কর্মসূচি

ম্যাৎসিনীর আদর্শ ও কর্মসূচিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  • (১) তিনি ঐক্যবদ্ধ ইতালির স্বপ্ন দেখতেন এবং এজন্য ইতালি থেকে অস্ট্রিয়ার উচ্ছেদ অপরিহার্য বলে মনে করতেন। ইতালির ঐক্য ও উন্নতির প্রথম শর্তই হল অস্ট্রিয়ার প্রাধান্যের অবসান।
  • (২) এই কাজে তিনি কোনও বিদেশি সাহায্য গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি মনে করতেন যে, ইতালির আত্মনির্ভরশীল যুবকরা নিজেরাই এই কাজে সক্ষম।
  • (৩) তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনও আন্দোলন সফল হতে পারে না। তাঁর মতে, বিপ্লব জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্যই সংঘটিত হয়। তাই তিনি ‘ইয়ং ইতালি’-র সদস্যদের জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে তাদের জীবনের ঘনিষ্ঠ শরিক হওয়ার আবেদন জানান।
  • (৪) জনগণের সর্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ম্যাৎসিনি স্বাধীন ইতালিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন – রাজতন্ত্র নয়।
  • (৫) কেবলমাত্র ইতালি নয়-তাঁর লক্ষ্য ছিল সমগ্র মানব-সত্তার ঐক্য।

জোসেফ ম্যাৎসিনি দ্বারা ইয়ং ইউরোপ প্রতিষ্ঠা

সমগ্ৰ মানব সত্তার উদ্দেশ্যে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ইয়ং ইউরোপ’ নামে এক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার জন্য সারা ইউরোপ -এর যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। এই গোষ্ঠীও ইউরোপের বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

জোসেফ ম্যাৎসিনি সম্পর্কে ড্রজের উক্তি

ঐতিহাসিক ড্রজ বলেন যে, তাঁর আদর্শ ও কর্মপন্থা ইতালিবাসীর মনে এতই প্রভাব ফেলেছিল যে, কেউই তা থেকে মুক্ত থাকতে পারে নি।

১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব

  • (১) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হলে ইতালির সর্বত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রবলতর রূপ ধারণ করে।
  • (২) নেপলস্, মিলান, টাস্কেনি ও লম্বার্ডি-তে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়। ভেনিসে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার রাজা চার্লস অ্যালবার্ট অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
  • (৩) পোপের রাজ্য রোমে বিদ্রোহ দেখা দিলে পোপ পলায়ন করেন এবং ম্যাৎসিনির নেতৃত্বে রোম ও টাস্কেনি-তে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (৪) অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের যুগ্ম-বাহিনী ইতালির গণ-আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়। সার্ডিনিয়া-রাজ চার্লস অ্যালবার্ট কাস্টোজা ও নোভারা -র যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার কাছে পরাজিত হন।
  • (৫) পোপ তাঁর হৃত রাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং রোম -এর প্রজাতন্ত্র ধ্বংস হয়।

জোসেফ ম্যাৎসিনির শেষ জীবন

ব্যর্থ জোসেফ ম্যাৎসিনি লন্ডনে আশ্রয় নেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানেই অতিবাহিত করেন।

জোসেফ ম্যাৎসিনির সীমাবদ্ধতা

ম্যাৎসিনির দেশপ্রেম ও আদর্শবাদ নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকলেও তাঁর নীতি ও কর্মপন্থা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। যেমন –

  • (১) জ্যাক ড্রজ বলেন যে, তিনি দেশপ্রেমিক ছিলেন, কিন্তু তাঁর কোনও রাজনৈতিক প্রতিভা ছিল না। তিনি ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত আদর্শবাদী। তিনি নিজ মতকে অভ্রান্ত বলে মনে করতেন।
  • (২) তাঁর মধ্যে বাস্তববোধ ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ছিল। সংগ্রাম পরিচালনার জন্য যে বাস্তববোধ, আপোসধর্মী মনোভাব এবং বিপক্ষ শক্তি সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়নের দরকার হয়, তা তাঁর মধ্যে ছিল না।
  • (৩) ‘কার্বোনারি’-র কার্যকলাপ ও কর্মপদ্ধতি পছন্দ না করলেও তিনি ‘কার্বোনারি’-র চক্রান্ত ও গুপ্ত কর্মপদ্ধতিই অনুসরণ করেন।
  • (৪) মার্কসবাদী লেখকদের মতে, সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর অনীহা ছিল। এই কারণে তিনি কৃষি বা শ্রমিক কল্যাণমূলক কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করেন নি।
  • (৫) তিনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেন নি—কেবলমাত্র শিক্ষিত সম্প্রদায় এবং অপরিণত যুবকদের মধ্যেই তাঁর প্রভাব সীমাবদ্ধ ছিল।
  • (৬) অধ্যাপক হবসবম তাঁকে ‘woolly and ineffective self-dramatizer Mazzini” বলে অভিহিত করেছেন।
  • (৭) তাঁর প্রজাতান্ত্রিক আদর্শও ছিল অবাস্তব। তিনি মনে করতেন যে, প্রজাতন্ত্রের ঐতিহ্য ইতালির মাটির সঙ্গে মিশে আছে। এ বক্তব্য সঠিক নয়। ইতালির প্রজাতন্ত্র ছিল নগররাষ্ট্রের প্রজাতন্ত্র—জাতীয় প্রজাতন্ত্র নয়।
  • (৮) ঐতিহাসিক ফিশার বলেন যে, তাঁর প্রজাতান্ত্রিক আদর্শ ইতালীয় ঐক্যের পরিপন্থী ছিল–অনুকূল নয়। তাঁর মতে, ম্যাৎসিনির প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন ছিল আকাশকুসুম কল্পনামাত্র— “The dream was chemirical”।
  • (৯) তিনি মনে করতেন যে, বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই কেবলমাত্র নৈতিক বলের উপর ভিত্তি করেই জাতীয় ঐক্য সাধিত হবে। এ ধারণাও অবাস্তব, অবান্তর ও নিছক রোমান্টিকতাবাদী।

জোসেফ ম্যাৎসিনির কৃতিত্ব

ব্যর্থতা সত্ত্বেও ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। যেমন –

(১) ইতালির জাতীয়তাবাদের পথিকৃৎ ম্যাৎসিনি

তিনি হলেন ইতালীয় মুক্তি আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের পথিকৃৎ – ইতালীয় দেশপ্রেমিকদের শিক্ষক ও প্রেরণাদাতা। আঞ্চলিকতা ও প্রাদেশিকতায় আচ্ছন্ন ইতালিবাসীর মনে তিনিই প্রথম ইতালীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করেন।

(২) মানসিক পটভূমি তৈরিতে ম্যাৎসিনির অবদান

যে কোনও বিপ্লবের আগে যে মানসিক প্রস্তুতি বা মানসিক বিপ্লবের প্রয়োজন হয়, ম্যাৎসিনি ইতালিবাসীর মনে সেই বিপ্লব সম্পন্ন করে ইতালীয় ঐক্যের পথ প্রস্তুত করে দেন।

(৩) পরবর্তী ক্ষেত্র তৈরিতে ম্যাৎসিনির অবদান

তিনি যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন, পরবর্তীকালে তার উপর ভিত্তি করেই ক্যাভুর ইতালির ঐক্য আন্দোলনকে পূর্ণতা দান করেন।

(৪) প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যের মস্তিষ্ক ম্যাৎসিনি

ঐতিহাসিক গ্রেনভিল তাঁকে “ইতালির প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যের মস্তিষ্ক এবং বিধিপ্রেরিত নায়ক” বলে অভিহিত করেছেন।

(৫) জনসাধারণের সাথে ম্যাৎসিনির যোগসূত্র স্থাপন

বোল্টন কিং -এর মতে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে জনসাধারণের যোগসূত্র স্থাপন ম্যাৎসিনির প্রধান কৃতিত্ব। যুব সম্প্রদায়ের উপর আস্থা স্থাপন করে ইতালির ঐক্য আন্দোলনে তিনি নতুন পথের নির্দেশ করেন।

(৬) ইউরোপে ম্যাৎসিনির আদর্শের প্রভাব

কেবলমাত্র ইতালি নয়, ইউরোপ –এমনকী ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন দেশের মানুষ তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। ঐতিহাসিক ডেরেক বলেন যে, “তাঁর জীবদ্দশায় তিনি কার্ল মার্কস -এর চেয়েও বেশি কার্যকর ছিলেন।

জোসেফ ম্যাৎসিনি সম্পর্কে লিপসনের মন্তব্য

ঐতিহাসিক লিপসন বলেন, “নব্য ইতালির স্রষ্টাদের মধ্যে ম্যাৎসিনি এক অবিস্মরণীয় স্থানের অধিকারী।”

উপসংহার :- ম্যাৎসিনি ব্যর্থ হন, কিন্তু তাঁর ব্যর্থতার মধ্যেই ভবিষ্যতের বীজ নিহিত ছিল। তাঁর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্যাভুর ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। এইসব কারণে তাঁকে ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বা প্রাণপুরুষ বলা হয়।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “জোসেফ ম্যাৎসিনি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) জোসেফ ম্যাৎসিনি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জোসেফ ম্যাৎসিনি কে ছিলেন?

ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বা প্রাণপুরুষ ।

২. জোসেফ ম্যাৎসিনি কোন সমিতির সদস্য ছিলেন?

কার্বোনারি সমিতির।

৩. ইয়ং ইতালি দল প্রতিষ্ঠা করেন কে?

জোসেফ ম্যাৎসিনি।

৪. ইতালির ঐক্য আন্দোলনের জনক কে?

জোসেফ ম্যাৎসিনি।

Leave a Comment