ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় -এর জন্ম, পিতামাতা, আদিবাস, শিক্ষা, বিবাহ ও পরিবার, করণিক পদে যোগদান, ইংল্যান্ড গমন, লণ্ডন ইন্ডিয়া সোসাইটির সম্পাদক, ভারত সভা প্রতিষ্ঠায় অবদান, চার্লস পলের পৃষ্ঠপোষকতা, সর্বাধিক গুরুত্ব অর্জন, সুরেন্দ্রনাথ রক্ষা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি, স্থায়ি কমিটি গঠনের প্রস্তাব, দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক কাউন্সিলের সদস্য, অবসর গ্রহণ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
ঐতিহাসিক চরিত্র | উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় |
জন্ম | ২৯ ডিসেম্বর, ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ |
পেশা | আইনজীবী |
পরিচিতি | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি |
মৃত্যু | ২১ জুলাই, ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- ভারতীয় ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।
জন্ম
১৮৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার খিদিরপুরে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাঢ়ী শ্রেণীর কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান৷
পিতামাতা
তার পিতা গিরিশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্ট -এর অ্যাটর্নি ছিলেন। তার মায়ের নাম ছিল সরাসরি দেবী
আদি বসতি ও বংশধর
তার পরিবারের আদিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাগাণ্ডা৷ উমেশচন্দ্রের পিতামহ পীতাম্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম কলকাতায় বসতি গড়েন৷ উমেশচন্দ্র তাঁর মায়ের বংশের দিক থেকে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ত্রিবেণীর বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন-এর বংশধর ছিলেন।
শিক্ষা
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ওরিয়েন্টাল সেমিনারী এবং হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা করেন।
বিবাহ ও পরিবার
১৮৫৯ সালে তিনি হেমঙ্গিনী মতিলালের সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। তার কন্যা জানকী ব্যানার্জী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউহাম কলেজে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা ও শারীরবৃত্তবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন।
করণিক পদে যোগদান
১৮৬২ সালে কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট -এর অ্যাটর্নিদের সংস্থা ডাব্লিউ পি গিল্যান্ডার্সে, একজন করণিক হিসাবে যোগ দেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি আইনের ভাল জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
ইংল্যান্ড গমন
১৮৬৪ সালে বোম্বের আরজে জিজিবাইয়ের থেকে বৃত্তি লাভের মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে তিনি মিডল টেম্পলে যোগ দেন এবং ১৮৬৭ সালের জুন মাসে আদালতে ডাক পান।
লণ্ডন ইন্ডিয়া সোসাইটির সম্পাদক
এরপর তিনি ব্রিটেনে চলে যান এবং প্রিভি কাউন্সিলে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৮৬৫ সালে দাদাভাই নওরোজি লন্ডন ইন্ডিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং উমেশচন্দ্রকে তার সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ভারত সভা প্রতিষ্ঠায় অবদান
১৮৭৬ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভার স্থাপনেও উমেশচন্দ্র যথেষ্ট অবদান রাখেন
চার্লস পলের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ
১৮৬৮ সালে কলকাতায় ফিরে আসার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টারস্যার চার্লস পলের পৃষ্ঠপোষকতা পান।
সর্বাধিক গুরুত্ব অর্জন
কয়েক বছরের মধ্যে তিনি হাইকোর্টে ব্যারিস্টারের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তিনি স্থায়ী হিসাবে কর্মরত প্রথম ভারতীয় ছিলেনএবং সেই ক্ষমতাবলে ১৮৮২, ১৮৮৩, ১৮৮৪, ও ১৮৮৬-৮৭ সালে তিনি চারবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
সুরেন্দ্রনাথকে রক্ষা
তিনি কলকাতা হাইকোর্টে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিকে রক্ষা করেছিলেন, যখন তার বিরুদ্ধে বিখ্যাত আদালত অবমাননা মামলা হয়েছিল।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী ছিলেন এবং সেখানকার আইন অনুষদের সভাপতি ছিলেন।
জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি
১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন -এ সভাপতিত্ব করেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভায় ৭২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটি গঠনের প্রস্তাব
১৮৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে দাদাভাই নওরোজির সভাপতিত্বে তিনি প্রতিটি প্রদেশে কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে দলের কাজ আরও ভালোভাবে সমন্বয় করা যায়।
দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি
১৮৯২ সালে এলাহাবাদে তিনি আবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নিযুক্ত হন।এখানে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য ভারতের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এই অবস্থানকে অস্বীকার করেছিলেন।
ইংল্যান্ডে ভারতীয় সংসদীয় কমিটি গঠন
১৮৯৩ সালে, নওরোজি, উমেশচন্দ্র এবং বদরুদ্দীন তায়াবজি ইংল্যান্ডের ভারতীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করেন।
বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক কাউন্সিলের সদস্য
১৮৯৩ সাল থেকে১৮৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
অবসর
১৯০১ সালে তিনি কলকাতা আদালত থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯০২সাল থেকে তিনি লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু
১৯০৬ সালের একুশে জুলাই লন্ডনের ক্রয়ডারে থাকার সময় ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র ব্যানার্জির জীবনাবসান হয়।
উপসংহার:- উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আনুষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেললেও তিনি তাঁর স্ত্রীকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিতে আপত্তি করেননি। তিনি তাঁর পরিবারকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পরে যেন কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা না হয়।
(FAQ) উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
আইনজীবী।
প্রথম ও অষ্টম অধিবেশনে।