জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন -এর সময়কাল, স্থান, সভাপতি, বাংলার প্রতিনিধি, মুসলিম প্রতিনিধি, কংগ্রেসের প্রস্তাবাবলী, অভিনবত্ব হীন প্রস্তাব, টাইমস পত্রিকার সংবাদ, সরকারের প্রতি আনুগত্য, সভাপতির ভাষণে আনুগত্যের প্রকাশ, আনন্দমোহন বসুর অভিমত, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত ও জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন প্রসঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের সময়কাল, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের স্থান, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে ৯টি প্রস্তাব গ্ৰহণ, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে ৭২ জন সদস্য, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতি, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধি, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে মুসলিম প্রতিনিধি ও জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন (১৮৮৫ খ্রিঃ)

ঐতিহাসিক ঘটনাজাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন
সময়কাল২৮-৩০ ডিসেম্বর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ
স্থানবোম্বাইয়ের গোকুল দাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজ
প্রথম সভাপতিউমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন

ভূমিকা :- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কোনও প্রকার আড়ম্বর ও জাঁকজমক না করে অতি সাধারণভাবে মাত্র ৭২ জন প্রতিনিধি নিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও ভারত-এর জাতীয় জীবনে এই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সকল অঞ্চলের প্রতিনিধি নেই

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের প্রতিনিধিরা ভারতের সকল অঞ্চলের প্রতিনিধি ছিলেন না। বাংলার বিশিষ্ট জননায়ক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসু এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হন নি—ইচ্ছে করেই তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধি

বাংলা থেকে যে তিনজন কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা কখনোই বাংলার প্রতিনিধি-স্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন না।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে মুসলিম প্রতিনিধি

এই সম্মেলনে মাত্র দু’জন মুসলিম প্রতিনিধি যোগ দেন — আর.এম.সায়ানী (R. M. Sayani) এবং এ.এম.ধরমসী (A. M. Dharamsi)।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে কংগ্রেসের প্রস্তাবাবলী

অধিবেশনের শেষে নয়টি সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়। সুপারিশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • (১) ভারতীয় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তদন্তের জন্য একটি ‘রাজকীয় কমিশন’ (Royal Commission) গঠনকরা।
  • (২) ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল’ (Indian Council) বা ভারত সচিবের পরামর্শদাতা সভার বিলোপ সাধনকরা।
  • (৩) উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, অযোধ্যা এবং পাঞ্জাবে প্রাদেশিক আইনসভা গঠনকরা।
  • (৪) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচিত ভারতীয় সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি এবং সদস্যদের বাজেট আলোচনা করা ও প্রশ্ন তোলার অধিকার প্রদান।
  • (৫) সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।
  • (৬) উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য একই সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ভারতে পরীক্ষা গ্রহণ এবং পরীক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধি করা।

অভিনবত্ব হীন প্রস্তাব

বলা বাহুল্য, এই সব প্রস্তাবগুলির মধ্যে কোনও অভিনবত্ব ছিল না, কারণ এই প্রস্তাবগুলির অধিকাংশই ‘সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন‘ -এর অধিবেশনে পাশ হয়েছিল।

টাইমস পত্রিকার সংবাদ

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের এই দাবিগুলিতে লন্ডনের ‘টাইমস’ পত্রিকা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং লেখে যে, “কংগ্রেসের এই দাবিগুলি মানার অর্থ হল ভারতকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়া।” পত্রিকা লিখছে— “বাহুবলে ভারত জয় করা হয় এবং বাহুবলেই তাকে শাসন করা হবে।”

সরকারের প্রতি আনুগত্য

সূচনা-পর্বে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ-বিরোধী ছিলেন না। ব্রিটিশ শাসন ও ব্রিটিশের ন্যায়-বিচারের প্রতি তাঁদের প্রবল আস্থা ছিল। তাঁরা সর্বদাই ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতেন। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অবিচল আনুগত্যই (“un swerving loyalty to the British crown”) ছিল এই সংগঠনের প্রধান সুর।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে আনুগত্যের সুর

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে সেই আনুগত্যের সুর ছিল অতি স্পষ্ট।

দাদাভাই নৌরজির ভাষণ

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন -এর সভাপতি দাদাভাই নওরোজি ঘোষণা করেন—“We are loyal to the backbone.”। সভাপতির ভাষণের সময় তিনি প্রশ্ন করেন— “কংগ্রেস কী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ প্রচার ও বিদ্রোহের সুতিকাগার ?” সভাকক্ষে সবার উত্তর : না, না। তিনি আবার বলতে থাকেন— “তা হলে কংগ্রেস কী সরকারের স্থায়িত্বের জন্য একটি স্তম্ভ ?” সবার উত্তর—হ্যাঁ, হ্যাঁ।

আনন্দমোহন বসুর অভিমত

১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দমোহন বসু বলেন যে, “শিক্ষিত সম্প্রদায় ইংল্যাণ্ডের বন্ধু – শত্রু নয়; তার স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় মিত্র।”

সুরেন্দ্রনাথের অভিমত

কংগ্রেস সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মতে ভারতে ব্রিটিশ শাসন ‘ঐশ্বরিক অবদান’ (‘a divine dispensation’)।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের গুরুত্ব

ভারতীয় জনজীবনে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যেমন –

  • (১) বোম্বাই প্রেসিডেন্সি অ্যাসোসিয়েশন মন্তব্য করে যে, “কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার দ্বারা স্বদেশবাসীর রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হল।”
  • (২) ‘ইণ্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকা লেখে যে, “বোম্বাই-এ প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ভারতের ভবিষ্যৎ পার্লামেন্টের বীজ এই অধিবেশনের মধ্যেই নিহিত।”
  • (৩) ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা‘ লিখছে যে, “জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় ঐক্যবন্ধনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।”
  • (৪) মাদ্রাজের ‘হিন্দু’ (Hindu) লিখছে যে, ভারতে একটি জাতি আছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন না, কিন্তু “একই উদ্দেশ্য নিয়ে, একই ছাদের নীচে সিন্ধি, পাঞ্জাবি, বাঙালি, মারাঠি, গুজরাটি, পারসি, হিন্দু ও মুসলিম জনসাধারণের সমাবেশ একেবারে সামান্য ব্যাপার নয়।”

উপসংহার :- জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা যে, দেশে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করেছিল সেই বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন যে, কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করেছিল।

(FAQ) ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় কবে?

২৮-৩০ ডিসেম্বর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে।

২. ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় কোথায়?

বোম্বাইয়ের গোকুল দাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজে।

৩. ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কে?

উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Comment