সুরাটের সন্ধি

সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের সময়কাল, স্থান, স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ, সুরাটের সন্ধির পটভূমি হিসেবে নারায়ণ রাওকে হত্যা, রঘুনাথ রাওয়ের বিরোধিতা, রঘুনাথ রাওকে ক্ষমতাচ্যুত করা, সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষর, সুরাটের সন্ধির শর্ত, সুরাটের সন্ধির স্বরূপ ও গ্রান্ট ডাফের অভিমত সম্পর্কে জানবো।

সুরাটের সন্ধি প্রসঙ্গে মারাঠাদের সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুরাটের সন্ধি, সুরাটের সন্ধির সময়কাল, সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরকারী পক্ষ, সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের পটভূমি, সুরাটের সন্ধির শর্ত, সুরাটের সন্ধির স্বরূপ, সুরাটের সন্ধির ফলে পেশোয়া পদের দাবিদার রঘুনাথ রাও, সুরাটের সন্ধির মাধ্যমে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূচনা ও সুরাটের সন্ধি সম্পর্কে গ্ৰান্ট ডাফের অভিমত সম্পর্কে জানব।

সুরাটের সন্ধি (৭ মার্চ ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ)

ঐতিহাসিক ঘটনাসুরাটের সন্ধি
সময়কাল৭ মার্চ ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ
স্থানসুরাট
দুই পক্ষইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ক্ষমতাচ্যুত পেশোয়া রঘুনাথ রাও
সুরাটের সন্ধি

ভূমিকা :- পেশোয়া মাধব রাও মৃত্যুর পর মারাঠা সাম্রাজ্য-এ অন্তদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় মাধব রাও তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নারায়ণ রাওকে উত্তরাধিকার মনোনীত করে যান।

সুরাটের সন্ধির পটভূমি

সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ-

(১) নারায়ণ রাওকে হত্যা

সিংহাসনে বসার ন’মাসের মধ্যে পিতৃব্য রঘুনাথরাও সপ্তদশ বর্ষীয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক অপরিণত বালক নারায়ণরাওকে হত্যা করে নিজে পেশোয়া পদ দখল করেন (১৭৭৩খ্রিঃ)।

(২) রঘুনাথ রাওয়ের বিরোধিতা

সখারাম বাপু, নানা ফড়নবীশ, মাহাদজি সিন্ধিয়া ও অন্যান্য মারাঠা নেতৃবৃন্দ পেশোয়া হিসেবে রঘুনাথরাওকে মানতে রাজি ছিলেন না। তারা ১২ জন মারাঠা সর্দার‘ বারো ভাই -এর সমিতি’ নামে একটি রাজ-পরিষদ গঠন করে রঘুনাথরাও -এর বিরোধিতা করতে থাকেন।

(৩) রঘুনাথ রাওকে ক্ষমতাচ্যুত করা

  • (ক) ইতি মধ্যে মৃত নারায়ণরাও -এর সন্তান-সম্ভবা বিধবা পত্নী একটি পুত্রসন্তান প্রসব করলে (১৭৭৪খ্রিঃ) অবস্থা জটিলতর হয়ে ওঠে।
  • (খ) মারাঠা নেতৃমণ্ডলী রঘুনাথ রাওকে ক্ষমতাচ্যুত করে এই শিশু সন্তানটিকে দ্বিতীয় মাধবরাও বা মাধবরাও নারায়ণ (১৭৭৪৯৬খ্রিঃ) নামে পেশোয়া পদে অধিষ্ঠিত করেন।
  • (গ) নারায়ণ রাওয়ের বিধবা পত্নী গঙ্গাবাঈ এই শিশু পুত্রের অভিভাবিকা নিযুক্ত হন।

সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষর

রাজ্যচ্যুত রঘুনাথ রাও বোম্বাই-এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন। ইংরেজরা তাঁকে পেশোয়া পদ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে সম্মত হয় এবং এই মর্মে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ইমার্চ দু’পক্ষের মধ্যে সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

সুরাটের সন্ধির শর্ত

এই সন্ধির শর্ত অনুসারে স্থির হয় যে,

  • (১) ইংরেজ সাহায্য নিয়ে রঘুনাথ রাও ‘পেশোয়া’-র গদিতে বসবেন।
  • (২) ইংরেজরা রঘুনাথ রাও-কে আড়াই হাজার সৈন্য দিয়ে সাহায্য করবে এবং তার যাবতীয় ব্যয় রঘুনাথ রাও-ই বহন করবেন।
  • (৩) ইংরেজদের সাহায্যের বিনিময়ে রঘুনাথ রাও তাদের সুরাট ও ব্রোচ জেলাদ্বয়ের রাজস্বের একাংশ এবং সলসেট ও বেসিন ছেড়ে দেবেন।
  • (৪) ইংরেজদের বিনা অনুমতিতে তিনি কোনও ইংরেজ-বিরোধী শক্তির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কবেন না।

সুরাটের সন্ধির স্বরূপ

সুরাটের সন্ধি ছিল এক ধরনের বশ্যতামূলক মিত্রতা চুক্তি। এই চুক্তি স্বাক্ষর করে রঘুনাথ রাও মারাঠা জাতির স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে উদ্যোগী হন এবং মারাঠা জাতির ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন।

সুরাটের সন্ধি সম্পর্কে গ্রান্ট ডাফের অভিমত

ঐতিহাসিক গ্রান্ট ডাফ-এর মতে এই চুক্তির অনিবার্য ফলশ্রুতি হল প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ

উপসংহার :- সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের পর রঘুনাথ রাও এবং ইংরেজদের যুগ্মবাহিনী আরাসের যুদ্ধে পেশোয়ার সেনাদলকে পরাজিত করে (মে, ১৭৭৫ খ্রিঃ)। রঘুনাথ রাও পুনরায় পেশোয়ার গদিতে বসেন। এইভাবে ভারত-এ প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

(FAQ) সুরাটের সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুরাটের সন্ধি কখন স্বাক্ষরিত হয়?

১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই মার্চ।

২. সুরাটের সন্ধি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

ক্ষমতাচ্যুত পেশোয়া রঘুনাথ রাও এবং ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে।

৩. সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের সময় গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?

ওয়ারেন হেস্টিংস।

Leave a Comment