মৌর্য যুগের সমাজ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জাতিভেদ প্রথা, ব্রাহ্মণদের অবস্থা, ক্ষত্রিয়দের অবস্থা, বৈশ্যদের অবস্থা, শূদ্রদের অবস্থা, রক্ষণশীলতা, দাসপ্রথা, নারীদের অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও ধর্ম সম্পর্কে জানবো।
মৌর্য যুগের সমাজ ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | মৌর্য যুগের সমাজ ব্যবস্থা |
উপাদান | ইন্ডিকা |
জাতি | সাতটি |
দার্শনিক | ব্রাহ্মণ |
ইন্ডিকা | মেগাস্থিনিস |
অর্থশাস্ত্র | কৌটিল্য |
ভূমিকা :- মেগাস্থিনিস এবং তার পরবর্তী গ্রিক ও রােমান লেখকদের বর্ণনায় মৌর্যযুগে ভারতীয় সমাজ-জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। ভারতীয় সমাজব্যবস্থার পরিপূর্ণ রূপটি তাদের চোখে ধরা পড়েনি। কিন্তু তারা অনেকেই প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের বর্ণনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
মৌর্য যুগে জাতিভেদ প্রথা
- (১) মেগাস্থিনিস তাঁর ইণ্ডিকা গ্রন্থে ভারতে সাতটি জাতির অস্তিত্বের কথা বলেছেন। যথা – দার্শনিক (ব্রাহ্মণ), কৃষক, ব্যাধ ও শিকারী, শিল্পী ও কারিগর, যোদ্ধা, পরিদর্শক, রাজার পরামর্শদাতা ও সম্পত্তির মূল্য নির্ধারক। লক্ষ্য করার বিষয় যে, মেগাস্থিনিস বৃত্তি বা জীবিকার ভিত্তিতে জাতি বিভাগ করেছেন।
- (২) মৌর্য যুগে উপরোক্ত জীবিকাগুলি প্রধান ছিল। মেগাস্থিনিস বংশানুক্রমিক ৪টি জাতির উল্লেখ করেননি। এ থেকে মনে হয় মৌর্য যুগে ভারতে জাতিভেদ প্রথার তীব্রতা কিছুটা কম ছিল, যে কারণে এই গ্রীক লেখকের চোখে তা ধরা পড়েনি।
মেগাস্থিনিসের মতের বিচার
- (১) মেগাস্থিনিসের ৭ জাতির উল্লেখ ভারত -এর প্রথাসিদ্ধ ৪টি বর্ণভেদের সঙ্গে খাপ খায় না। অনেকে বলেন যে, গ্রীক লেখকদের মধ্যে মিশর ও ভারতের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করার একটা প্রবণতা ছিল। যেহেতু হেরোডোটাসের মতে মিশরের লোকেরা ৭টি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, সেহেতু মেগাস্থিনিস ভারতেও ৭টি বর্ণ বা জাতির কল্পনা করেছেন।
- (২) অনেকের মতে মেগাস্থিনিসের বর্ণনা নিছক কল্পনা নয়। সমাজের অগ্রগতির ফলে নিত্য নতুন শ্রেণীর উদ্ভব হচ্ছিল। মেগাস্থিনিস সেজন্য ৭টি প্রধান শ্রেণীর উল্লেখ করেন। তাছাড়া তিনি দার্শনিক অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের নাম প্রথমে উল্লেখ করে বর্ণভেদ প্রথার বাস্তব ব্রাহ্মণ ঐতিহ্য স্বীকার করেন।
মৌর্য যুগে দার্শনিক বা ব্রাহ্মণদের অবস্থা
- (১) মেগাস্থিনিস তার ৭টি জাতির মধ্যে দার্শনিক অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের যে মুখ্যস্থান দিয়েছেন তা বৌদ্ধ, জৈন উপাদান এবং অর্থশাস্ত্রের দ্বারা সমর্থিত হয়। বৌদ্ধ সাহিত্যগুলিতে রাজতান্ত্রিক রাজ্যগুলিতে ব্রাহ্মণরাই রাজার মন্ত্রণাদাতার ভূমিকা পালন করতেন।
- (২) মৌর্যযুগেও ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব অনেকটা অক্ষুণ্ণ ছিল। তবে মৌর্যযুগে অনেকক্ষেত্রে ব্রাহ্মণরা তাদের চিরাচরিত জীবিকা ত্যাগ করে কৃষি ও বাণিজ্যে লিপ্ত হন। একথা অঙ্গুত্তর নিকায় গ্ৰন্থে পাওয়া যায়।
মৌর্য যুগে ক্ষত্রিয়দের অবস্থা
- (১) মৌর্য যুগে ক্ষত্রিয়ের অধিকার ও প্রভাব রীতিমত বৃদ্ধি পায়। মেগাস্থিনিস বলেছেন যে পঞ্চম শ্রেণী বা ক্ষত্রিয়রা সংখ্যায় কৃষকদের নীচে ছিল। তারা পূর্ণ স্বাধীনতা ও আরাম ভোগ করত। একমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ ছিল না।
- (২) যুদ্ধের সময় ছাড়া তারা অন্য সময় আরামে জীবন কাটাত। ক্ষত্রিয়রাই রাজাশাসন করত। তারা প্রচুর জমি জায়গার মালিক ছিল। শূদ্র এবং দাসরা এই জমিগুলি ক্ষত্রিয় প্রভুর জন্যে চাষ আবাদ করত।
এন ওয়াগলের মন্তব্য
ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের এই সুবিধাজনক অবস্থান লক্ষ্য করে এন ওয়াগলে মন্তব্য করেছেন যে, “রাজতান্ত্রিক রাজ্যগুলিতে এই দুটি বর্ণ ছিল শ্রেষ্ঠ এবং অবশিষ্ট জনসমষ্টির থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র অধিকার ও অবস্থান রক্ষা করত।”
মৌর্য যুগে বৈশ্যদের অবস্থা
- (১) মৌর্যযুগে বৈশ্যদের একাংশ বাণিজ্যের প্রসারের ফলে প্রচুর ধনরত্ন পায় এবং সামাজিক মর্যাদায় ক্ষত্রিয়দের ছুঁয়ে ফেলতে থাকে। বাকি অনেক বৈশ্য ক্রমশ দারিদ্রের পাঁকে ডুবে যায় এবং নীচে শূদ্রদের পাশে চলে যেতে থাকে।
- (২) বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায় যে অধিকাংশ বৈশ্য বাণিজ্য ও শিল্পের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করত। মৌর্য রাষ্ট্রের রাজস্বের সিংহভাগ তারাই দিত। অনেক বৈশ্যের হাতে প্রচুর জমিও ছিল। বৈশারা সরকারি পদে যোগ দিতে পারত না। ব্রাহ্মণ্য ধর্মশাস্ত্রগুলিতে বৈশ্যদের শূদ্রের সমান করার চেষ্টা এই যুগে দেখা যায়।
মৌর্য যুগে শূদ্রদের অবস্থা
- (১) এই যুগে শূদ্রদের অবস্থা আগের থেকে ভাল হয়। অর্থশাস্ত্রে দেখা যায় যে নূতন জমিগুলিতে বসতি বিস্তারের কাজে শূদ্রদের ব্যবহার করা হয়। এজন্য অর্থশাস্ত্রে ‘শূদ্র কর্ষক’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
- (২) শূদ্রবর্ণের অর্থনৈতিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল হলেও এজন্য তাদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার বাড়েনি। ডঃ আর এস শর্মার মতে শূদ্রদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। তারা ছিল সেবক শ্রেণীর লোক। গণরাজ্যগুলিতে অবশ্য শূদ্ররা কিছু বেশী অধিকার ভোগ করত।
মৌর্য যুগে জাতিভেদ প্রথার তীব্রতা হ্রাস
- (১) সম্ভবত বৌদ্ধ ধর্ম -এর প্রভাব ও গ্রীক আক্রমণের ফলে জাতিভেদের তীব্রতা কিছুটা কমেছিল। মৌর্য সম্রাটদের গ্রীক পত্নীর কথা জানা যায়। প্রবাদ আছে যে, বিন্দুসার -এর মাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর গ্রীক পত্নী।
- (২) সাতবাহন সম্রাটরা শক রাজকন্যার পানিগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। যদিও সাতবাহন রাজারা ব্যক্তিগতভাবে বর্ণাশ্রম ধর্মের ঘোর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তাঁরা তাদের নীতি রক্ষা করতে পারেন নি।
- (৩) সাতবাহন বংশে শক রাজকন্যাকে গ্রহণ করতে হয় একথা ঐতিহাসিক সত্য। ডি. ডি. কোশাম্বী বলেছেন যে, সমাজের অর্থনৈতিক ওলোট-পালটের ফলে বৈদিক যুগ -এর বর্ণভেদ প্রথায় বহু পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়।
মৌর্য যুগে রক্ষণশীলতা
- (১) জাতিভেদ প্রথায় যে পরিবর্তন ঘটে তাকে স্বীকার করে নিয়ে আর যাতে পরিবর্তন না হয় তার জন্য রক্ষণশীলরা চেষ্টা করে। ডি. ডি. কোশাম্বি বলেছেন যে, এজন্যই চাণক্য রাজাকে তাঁর দণ্ড নীতির দ্বারা সমাজ ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে বলেছেন।
- (২) আদিবাসী সমাজে রাজা ও অভিজাতদের ব্রাহ্মণরা হিরণ্যগর্ভ বা উচ্চবংশ বলে ঘোষণা করে বাকি আদিবাসীদের রাজা ও অভিজাতদের সাহায্যে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। বৈশ্যদের বিশেষ করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
- (৩) বৈশ্য ও শূদ্রকে অনেক সময় এক বলে দেখার প্রবণতা বাড়ে। বৈশ্যরাই সমাজের সম্পদ বেশীর ভাগ অর্জন করত। উচ্চশ্রেণী তা ভোগ করত। কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প এই সকল কাজ বৈশ্যরাই করত। তারা করের ভার বেশী পরিমাণে বইত। কিন্তু সমাজে তাদের স্থান উঁচুতে ছিল না।
- (৪) বৈশ্যদের যুদ্ধ বা সামরিক শক্তির অধিকার ছিল না। দেশ শাসনের অধিকারও তাদের ছিল না। তবে চন্দ্রগুপ্তের প্রাদেশিক শাসনকর্তা সৌরাষ্ট্রের বৈশ্য পুষ্যগুপ্ত এর ব্যতিক্রম ছিলেন। বৈশ্যরা সমাজে উঁচু স্থান পেতে চেষ্টা করে।
- (৫) অশোক সমাজে যে সংঘাতের কথা বলেছেন তা থেকে মনে হয় যে, সমাজের উচ্চ বর্ণ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের সঙ্গে বৈশ্যদের সংঘাতের কথা তাতে বলা হয়েছে। অশোক এজন্য সামাজিক সাম্য ও শান্তির কথা বলেন।
- (৬) কোশাম্বীর মতে, মৌর্য যুগের পরে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রাই তাদের প্রাধান্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়। বৈশ্য ও শূদ্রদের অবস্থা খারাপ হয়। সমাজে শূদ্রের স্থান একেবারেই নীচে ছিল।
মৌর্য যুগে দাসপ্রথা
- (১) মৌর্য যুগে দাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল না বলে মেগাস্থিনিস বলেছেন। মেগাস্থিনিসের মতে, “সব ভারতীয় স্বাধীন। তাদের মধ্যে একজনও ক্রীতদাস নেই।” গ্রিস-এ দাসদের প্রতি যে রকম কঠোর ব্যবহার করা হত ভারতে তা কখনও করা হত না। ভারতে দাসরা ছিল প্রধানত গৃহদাস। এজন্য মেগাস্থিনিস সম্ভবত এরকম মন্তব্য করেন।
- (২) বনগার্ড লেভিনের মতে, অর্থশাস্ত্রে ও অশোকের শিলালিপিতে দাস প্রথার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এছাড়া বৈদিক সাহিত্যে, বৌদ্ধ জাতকে, মহাভারতে, মনুসংহিতায় দাসদের কথা বলা হয়েছে।
- (৩) যারা যুদ্ধে বন্দী হত তারা অনেক সময় দাসে পরিণত হত। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজের পরিবারের কোনো ব্যক্তি অথবা নিজেকে ক্রীতদাস রূপে বিক্রি করত। ক্রীতদাসদের মধ্যে অধিকাংশ গৃহদাস রূপে থাকত এবং প্রভুর পরিবারের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে যেত।
- (৪) বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে দাসত্ব এবং জন্মসূত্রে দাসত্বের কথাও মনুসংহিতা থেকে পাওয়া যায়। যাই হোক, মৌর্য যুগে দাসদের সম্পর্কে অর্থশাস্ত্রে বেশ বিস্তৃত বিবরণ ও নিয়ম দেওয়া আছে। অর্থশাস্ত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর দাসের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কিভাবে দাসে পরিণত হয় তা কৌটিল্য বিস্তার করে বলেছেন।
- (৫) অর্থশাস্ত্রে দাসদের নানারকম অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তারা বাড়তি সময় বাইরে খেটে যে অর্থ রোজগার করত তা তাদের নিজস্ব অর্থ বলে কৌটিল্য বিধান দিয়েছেন। যদি প্রভু দাসীর সঙ্গে ব্যাভিচার করেন এবং তার ফলে দাসীর সন্তান জন্মায় তবে দাসী ও তার সন্তান ক্ষতিপূরণসহ মুক্তি পাবে বলা হয়েছে।
- (৬) কোনো আর্যবংশীয় ব্যক্তি দাসে পরিণত হলে মুক্তিপণ দিলে তাকে মুক্তি দানের কথা অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে। যে দাস নিজ দেহ বন্ধক দিয়েছে তার আত্মীয়রা বছরের অর্থ মিটিয়ে দিলে তাকে মুক্তি দেওয়ার কথাও অর্থশাস্ত্রে আছে। তবে ম্লেচ্ছ বা অনার্যরা এই অধিকার পেত না।
- (৭) অনেকে বলেন যে, মৌর্য যুগে বাস্তবে দাসদের এত অধিকার স্বীকার করা হত না। তবে অর্থশাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, অবাধ্য দাসদের দৈহিক শাস্তি দিলে মাথা ও বুকে কোন আঘাত করা চলবে না এবং তাদের প্রাণ নষ্ট করা যাবে না।
- (৮) যদি কোনো দাস প্রভুর অধীনে উত্তরাধিকারী হীন হয়ে মারা যায় তবে প্রভুকে তার শ্রাদ্ধ ও পারলৌকিক কাজ করতে হবে। মৌর্য যুগে ভারতীয় অর্থনীতি দাস শ্রমের ওপর একান্ত নির্ভরশীল ছিল না। দাসকে বিক্রি করাও যেত না। বেশীর ভাগ দাস ছিল গৃহদাস।
দাসপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
একথা স্পষ্ট যে, ধর্মশাস্ত্রগুলিতে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা দিয়েছিল। এজন্য দাসদের ওপর সদয় ব্যবহারের দাবী জানান হয়। বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে দাসদের সম্পর্কে মানবিক উদারতা প্রবল হয়। দাসদের মুক্তির দাবী জানান হয়। অর্থশাস্ত্রে দাসপ্রথাকে ম্লেচ্ছপ্রথা বলা হয়েছে এবং কোনো আর্যকে দাসে পরিণত করার বিরোধিতা করা হয়েছে।
মৌর্য যুগে কলিঙ্গ যুদ্ধের বন্দী দাস
রোমিলা থাপার বলেছেন যে, কলিঙ্গ যুদ্ধ-এর পর অশোক যে ১২ লক্ষ লোককে কলিঙ্গ থেকে নির্বাসিত করেন তিনি তাদের পতিত জমিতে দাস হিসেবে বসবাস করান৷ তবে এটা একান্তই অনুমান। শিলালিপি থেকে এর কোনো প্রত্যক্ষ সমর্থন পাওয়া যায়নি।
মৌর্য যুগে নারীদের অবস্থা
- (১) মৌর্য যুগে চার প্রকার বৈধ শাস্ত্রীয় বিবাহ প্রথা ছিল এবং চার প্রকার অশাস্ত্রীয় বিবাহ প্রথা ছিল। মেগাস্থিনিস বলেছেন যে, লোকে নিজ জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিবাহ করত। পুরুষেরা বহু বিবাহ করত। অশোকের একাধিক স্ত্রী ছিল বলে জানা যায়।
- (২) সমাজে নারীর স্থান খুব উঁচুতে ছিল না। বৌদ্ধ সংঘে ভিক্ষুনীরা স্বাধীনতা ভোগ করত। নারীদের বিশেষত উঁচুকুলের নারীদের পর্দার আড়ালে রাখা হত। অভিজাত কুলের নারীরা লেখাপড়া শিক্ষা করত। গ্রীক লেখকদের মতে, সতীদাহ প্রথা বিদ্যমান ছিল।
- (৩) রাজার দেহরক্ষিণী থাকত। নারীদের গুপ্তচরের কাজে নিয়োগ করা হত। স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে নারীদের ওপর নানা বাধা-নিষেধ চাপান হয়েছে। এই বাধা-নিষেধের অনেকটা কাজে প্রয়োগ করা হত।
- (৪) রোমিলা থাপারের মতে, এ সত্ত্বেও সমাজে নৈতিক শিথিলতা প্রবল ছিল। মেগাস্থিনিস বলেছেন যে, ভারতীয় পুরুষরা বহু বিবাহে অভ্যন্ত ছিল। সমাজে বিধবা ও অসহায় নারীদের বহু কষ্ট ভোগ করতে হত।
মৌর্য যুগে শিক্ষা ব্যবস্থা
সংস্কৃত ভাষা ছিল উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষার বাহন। বর্ণাশ্রম ধর্ম অনুসারে ব্রাহ্মণ সন্তানকে কম করে ১২ বছর গুরুগৃহে থেকে শাস্ত্র শিখতে হত। পাঞ্চাল, তক্ষশীলা, উজ্জয়িনী, বারাণসী উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। প্রাকৃত ভাষা ও ব্রাহ্মী লিপি সাধারণ লোকে বুঝত। এজন্য অশোক তাঁর শিলালিপি পালিতে প্রচার করেছেন। সাহিত্য, ছন্দ, ব্যাকরণ ছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্র লোকে শিক্ষা গ্ৰহণ করত।
মৌর্য যুগে ধর্ম
সাধারনত মৌর্য যুগে বৌদ্ধধর্মের প্রসার হলেও, ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, লৌকিক দেব-দেবী যথা শিব, কার্তিকেয় প্রভৃতির পুজো, আজীবিক, জৈন ধর্ম প্রভৃতি প্রচলিত ছিল। মৌর্য সম্রাটরা ধর্ম-সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করতেন। ধনী লোকেরা নগরে বসবাস করত। তারা ছিল বিলাসী ও আরামপ্রিয়। গৃহপতি, কৃষক ও অন্যান্য লোকেরা সাধারণত জনপদে বসবাস করত।
উপসংহার :- হিন্দুদের মধ্যে ঋতু উৎসব ও বসন্ত উৎসব-এর পরিচয় পাওয়া যায়। জৈন গ্রন্থে দীপাবলি উৎসবের উল্লেখ রয়েছে।
(FAQ) মৌর্য যুগের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইন্ডিকা।
৭ টি।
ব্রাহ্মণরা।
বৌদ্ধ ধর্ম।