স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে পরাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ, স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ, জওহরলাল নেহেরুর সমাজতান্ত্রিক চিন্তা, মিশ্র অর্থনীতি, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, জমিদারি প্রথার বিলোপ, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবস্থা, কমিউনিস্ট সরকারের ভূমিকা, বামপন্থী আন্দোলন ও স্বাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানবো।
মুক্ত স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে ভারতে সমাজতন্ত্র হল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, ভারতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রাম মনোহর লোহিয়া, জওহরলাল নেহেরুর সমাজতান্ত্রিক চিন্তা, ভারতের সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা।
স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ
ঐতিহাসিক ঘটনা | স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ |
বলশেভিক বিপ্লব | রাশিয়া |
চিনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা | ১৯৪৯ খ্রি |
তেভাগা আন্দোলন | বাংলা |
কংগ্রেসের আবাদী অধিবেশন | ১৯৫৫ খ্রি |
ভূমিকা :- মার্কসবাদী আদর্শে সমাজতন্ত্রকেই শ্রেষ্ঠ শাসন-কাঠামো বলে মনে করা হয়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজতন্ত্র বলতে বোঝায় সম্পত্তির ওপর ব্যক্তি মালিকানার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। রাশিয়ায় ভি.আই. লেনিন-এর নেতৃত্বে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাও সে তুঙ-এর নেতৃত্বে চীন-এ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ
- (১) ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিংশ শতকে ভারত-এ সর্বপ্রথম আধুনিক সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার বিকাশ ঘটে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ তরুণ নেতা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সপক্ষে সওয়াল করেন। তাদের প্রভাবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস দল তার দলীয় নীতিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আদর্শ গ্রহণ করে।
- (২) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও চরমপন্থী সমাজতান্ত্রিক দলগুলি ভুস্বামী ও জমিদারদের বিরুদ্ধে দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে। তাদের উদ্যোগে বাংলার কৃষকরা ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ১৯৪০-এর দশকে তেভাগা আন্দোলন শুরু করে।
স্বাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পরবর্তীকালে তাঁর সুযোগ্য কন্যা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির (শাসনকাল ১৯৬৬-৭৭ খ্রি. এবং ১৯৮০-১৯৮৪ খ্রি.) নেতৃত্বে ভারত সরকার এদেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও তাদের দলীয় নীতিকে গণতান্ত্রিক সমাজবাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
নেহরুর সমাজতান্ত্রিক চিন্তা
- (১) ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু মার্কসবাদী শ্রেণিসংগ্রামের আদর্শে বিশ্বাসী না হলেও সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক আর্থিক সংস্কারের সাফল্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
- (২) তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে ভারতে ঐক্য, সংহতি ও সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের আবাদী অধিবেশনে নেহরু ভারতে ‘সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সমাজব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার নীতি তুলে ধরেন। মুনাফ অর্জন নয়, সমাজের অগ্রগতি এবং আয় ও সম্পদের সুষম বন্টনই ছিল এই নীতির মূল লক্ষ্য।
- (৩) নেহরু ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে মুখ্যমন্ত্রীদের লিখেছেন যে, “আমরা যখন সমাজতন্ত্র বা সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সমাজের কথা বলি, তখন সামাজিক ন্যায়বিচারের কথাই বলি। অধ্যাপক ভবতোষ দত্ত মনে করেন যে, ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে সোভিয়েত ধাঁচের কর্মসূচি প্রতিস্থাপন করা নেহরুরই কৃতিত্ব।
ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ
স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি হল –
(ক) মিশ্র অর্থনীতি
জওহরলাল নেহরু রচিত ‘Discovery of India’ গ্রন্থে ভারতের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর আদর্শ ছিল –
- (i) সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকবে,
- (ii) ভারী শিল্পে রাষ্ট্রীয় মালিকানার অস্তিত্ব থাকবে,
- (iii) সমবায়ভিত্তিক গ্রামীণ ও ক্ষুদ্রশিল্পকে উৎসাহিত করা হবে।”
এভাবে নেহরু ভারতে ‘মিশ্র অর্থনীতি” গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
(খ) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়। এভাবে ভারতবর্ষকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা হয়।
(গ) জমিদারি প্রথার বিলোপ
স্বাধীন ভারত সরকার ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইতিপূর্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-এর পর থেকে ভারতে বিভিন্ন জমিদার ও অসংখ্য মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব ঘটেছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারত সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১৯৫১ ও ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আইন প্রণয়ন করে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটায়। ফলে দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যের তীব্রতা বহুলাংশে হ্রাস পায়।
(ঘ) জাতীয়করণ
সরকার বিভিন্ন বিমা ও কিছু বৃহৎ ব্যাংকের জাতীয়করণ ঘটায়। ফলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্থলে জাতীয় উদ্যোগ বৃদ্ধি পায়, যার প্রত্যক্ষ সুফল দেশের জনগণের হাতে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
(ঙ) রাজন্য ভাতার বিলোপ
স্বাধীনতা লাভের পর বেশ কিছু দেশীয় রাজ্য ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করে। প্রথমদিকে দেশীয় রাজ্যগুলির রাজাদের রাজন্য ভাতা দেওয়া হলেও কিছুকাল পর সরকার রাজন্য ভাতার বিলোপ ঘোষণা করে।
(চ) জমির ঊর্ধ্বসীমা
জমির সুষম বণ্টনের উদ্দেশ্যে সরকার জমির মালিকানার ঊর্ধ্বসীমা বেধে দেয়। পঞ্চাশের দশক জুড়ে জমিদার ও জায়গিরদারদের বিপুল পরিমাণ জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
(ছ) কর আরোপ
ধনীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করে জাতীয় আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি নেহরুর লক্ষ্য ছিল দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকদের করের আওতার বাইরে রাখা।
(জ) পিছিয়ে-পড়া সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবস্থা
সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল পিছিয়ে-পড়া তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলিকে সমাজের মূলস্রোতের সমপর্যায়ে উন্নীত করা। এই উদ্দেশ্যে ভারতের সংবিধানে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া অস্পৃশ্যতার মতো অসামাজিক বিষয়গুলিকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করে এসব জাতিকে মর্যাদাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(ঝ) কমিউনিস্ট সরকারের ভূমিকা
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে ১৯৬০-এর দশকে কেরালায় এবং ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গ-এ সরকার গঠন করে। এই সরকার নিজ নিজ রাজ্যে বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করে।
(ঞ) বামপন্থী আন্দোলন
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও চরমপন্থী সমাজতান্ত্রিক দলগুলি ভূস্বামী ও জমিদারদের বিরুদ্ধে দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে। তাদের উদ্যোগে বাংলার কৃষকরা ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ১৯৪০-এর দশকে তেভাগা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারী ভাগচাষীরা উৎপন্ন ফসলের অর্ধাংশের পরিবর্তে ২/৩ অংশ দাবি করে। এ ছাড়া দাক্ষিণাত্যে হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ১ বছর ধরে জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ চলে, যা তেলেঙ্গানা আন্দোলন নামে পরিচিত। এসব বিদ্রোহ কৃষক শোষণের অবসানে সরকারকে সচেতন করে।
(ট) অন্যান্য উদ্যোগ
বিনোবা ভাবে, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখ সমাজবাদী নেতৃবৃন্দ সর্বোদয় আন্দোলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ভূমিবণ্টনের উদ্যোগ নেন।
স্বাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপের মূল্যায়ন
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সক্রিয় উদ্যোগে দেশে বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ফলে ধনী ভূস্বামীদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। দেশে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে, ভূস্বামীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ঊর্ধ্বসীমা বেধে দেওয়া হয়, ধনীদের সম্পদ ও আয়ের ওপর কর আরোপিত হয়, বিভিন্ন ধনবান অর্থনৈতিক সংস্থা জাতীয়করণ হয় ইত্যাদি। অন্যদিকে দরিদ্র শ্রেণিকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়।
(ক) মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র নয়
সংবিধানে ভারতবর্ষকে ‘সমাজতন্ত্র’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে ভারতে কোনোভাবেই সোভিয়েত রাশিয়া বা চিনের মতো মার্কসীয় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ভারতের সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কর্মসূচি খুবই অপ্রতুল, রাশিয়া বা চিনের মতো অর্থনৈতিক সাম্য ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
(খ) জমিদারি প্রথার দৌরাত্ম্য
ভারত সরকার জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘোষণা করলেও ঘুরপথে জমিদারি প্রথার দৌরাত্ম্য অব্যাহত থাকে। সরকার জমিদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর মৌলিক অধিকারের বিষয়টি প্রায় স্বীকার করে নেয়। ফলে জমিদাররা যে জমি হারায় তার বিনিময়ে সরকার তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তা ছাড়া জমিদাররা ব্যক্তিগত চাষের জমি হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ জমি নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়।
(গ) জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন লঙ্ঘিত
- (১) সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে স্বাধীন ভারত সরকার ১৯৫১ ও ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আইন প্রণয়ন করে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে ব্যক্তিগত অধীনে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ জমি রাখা যাবে, সে বিষয়ে আইন পাস করা হয়।
- (২) কিন্তু বাস্তবে বহুক্ষেত্রেই সেই আইন কার্যকরী হয়নি। জমিদাররা আইনের ফাঁক দিয়ে নামে-বেনামে বা নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ জমি নিজেদের অধিকারে রাখতে সক্ষম হয়।
- (৩) তা ছাড়া পাঁচ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট পরিবারগুলির জমির ঊর্ধ্বসীমা অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ জমি জমিদার পরিবারগুলির হাতে থেকে যায়, যা দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করা উচিত ছিল।
(ঘ) দরিদ্র কৃষকদের ক্ষতি
জমিদারি প্রথার উচ্ছেদের ফলে ধনী ও মাঝারি কৃষকরা কিছুটা লাভবান হলেও এতে দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকদের কোনো লাভ হয় নি। তা ছাড়া ভূমিসংস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল করভার লাঘব করা। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ রাজ্যেই কৃষকরা অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ এবং কোনো কোনো রাজ্যে আরও বেশি উৎপাদন কর দিতে বাধ্য হয়েছিল।
(ঙ) উৎপাদন ব্যাহত
জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটানো হলেও বহুক্ষেত্রেই দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে সঠিক ভূমিবণ্টন হয় নি। ফলে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি উৎপাদন তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়। খাদ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে ব্যর্থ হলে বাইরে থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়।
(চ) সমবায় প্রথার বিরোধিতা
কৃষি সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার সমবায় প্রথায় চাষের প্রস্তাব বিবেচনা করলে দেশের উচ্চবিত্ত ও মাঝারি কৃষকরা প্রতিবাদ করে। কারণ, সমবায় প্রথায় চাষ শুরু হলে জমিতে ব্যক্তিগত অধিকার বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে কৃষিক্ষেত্রে সমবায় প্রথা চালু করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় নি।
(ছ) ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার
বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল, দেশের নাগরিকদের সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটানো। কিন্তু ভারতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের বিলোপ না ঘটিয়ে এই অধিকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার বলে সংবিধানে স্বীকার করা হয়েছে। ফলে ভারতে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক ধনীদের সঙ্গে ভূমিহীন কোটি কোটি দরিদ্রের তীব্র বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার :- ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এদেশে নাগরিকদের অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি।
(FAQ) স্বাধীন ভারতের সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯৪০ এর দশকে।
সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু।
জওহরলাল নেহরু।
১৯৫১ ও ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আইন প্রণয়ন করে।