ভারতের সংবিধান গৃহীত, কার্যকর, সংবিধানের ঘোষণা, সংবিধানের সংযুক্তিকরণ, বৈশিষ্ট্য, সংবিধানের রূপকার, গণপরিষদ, গণপরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন সদস্য, খসড়া কমিটি গঠন, খসড়া সংবিধান প্রস্তুত, সংবিধানের গঠন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, অংশ, তফসিল, লোকসভা, রাজ্যসভা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ, রাষ্ট্রপতি ও বিধানসভা সম্পর্কে জানবো।
সংবিধান প্রসঙ্গে সংবিধান গৃহীত, সংবিধান কার্যকর কাল, ভারতীয় সংবিধানের রূপকার, ভারতীয় সংবিধানের রচনাকার বাবাসাহেব ভীমরাও রামজি আম্বেদকর, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা রচনা, ভারতীয় গণপরিষদ গঠন, গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান গ্ৰহণ, গণপরিষদের খসড়া কমিটির সভাপতি, ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, ভারতীয় সংবিধানের অংশ, তফসিল ও তালিকা।
স্বাধীন ভারতের সংবিধান
সংবিধান গৃহীত | ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ |
সংবিধান কার্যকর | ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ |
সংবিধান রচয়িতা | ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর |
উল্লেযোগ্য বৈশিষ্ট্য | পৃথিবীর বৃহত্তম, লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান |
ভূমিকা :- ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন ভারতের সংবিধান (Constitution of India)। পৃথিবীর অগ্রণী দেশসমূহের সংবিধানের ভালো দিকগুলি নিয়ে ভারতের সংবিধান গঠিত হয়েছে।
দেশের রূপরেখা
এই সংবিধানে বহু কক্ষবিশিষ্ট সরকারব্যবস্থা গঠন, কার্যপদ্ধতি, আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ। মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
সংবিধান গৃহীত
২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে গণপরিষদে ২৮৪ জনের স্বাক্ষরের পর ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই দিনটি জাতীয় আইন দিবস হিসেবে পরিচিত।
সংবিধান কার্যকরী
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সাল থেকে ভারতের সংবিধান জোরদারভাবে কার্যকরী হয়।
২৬ জানুয়ারি দিনটির ইতিহাস
এই ২৬ জানুয়ারি ১৯৩০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিতে ২৬ জানুয়ারি দিনটি সংবিধান পরিচালনার জন্য গৃহীত হয়েছিল।
ঘোষণা
সংবিধানে ভারতীয় রাজ্যসংঘকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণপ্রজাতান্ত্রিক রূপে ঘোষণা করা হয়েছে।
ভ্রাতৃভাব জাগরণে অনুপ্রেরণা
দেশের নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। জাতীয় ও প্রাদেশিক সংহতি সুরক্ষায় নাগরিকদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃভাব জাগরিত করে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
সংবিধানে সংযুক্তিকরণ
১৯৭৬ সালে একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতের সংবিধানের সঙ্গে “সমাজতান্ত্রিক”, “ধর্মনিরপেক্ষ” ও “সংহতি” এবং সকল নাগরিকের মধ্যে “ভ্রাতৃভাব” – এই শব্দগুলি সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবস
সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে ভারতীয় নাগরিকরা প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি তারিখটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে।
সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষের সংবিধানের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন –
(১) বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান
ভারতের সংবিধান হল পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে জটিল ও লিখিত সংবিধান। মোট ৩৯৫ টি ধারা এবং ৮ টি তপশিল (তালিকা) নিয়ে এটি গঠিত। কিন্তু বারবার সংশোধনের ফলে ২০১৩ সালের শেষে এর ধারা বৃদ্ধি পেয়ে 472 এবং তপশীল এর সংখ্যা বেড়ে 12 হয়েছে।
(২) সংবিধানের প্রাধান্য
ভারতীয় সংবিধান হল দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন। সরকারের যাবতীয় ক্ষমতার উৎস সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে এর অবস্থান।
(৩) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা
ভারতের শাসনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির তাই এখানে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই ধরনের সরকার রয়েছে। উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বন্টন হয়েছে। এখানে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত রয়েছে।
(৪) সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা
ইংল্যান্ড -এর অনুকরণে ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এখানে দুই ধরনের শাসক দেখা যায়। নামসর্বস্ব শাসক (রাষ্ট্রপতি) ও প্রকৃত শাসক (প্রধানমন্ত্রী)। আবার এখানে মন্ত্রিপরিষদ তার সমস্ত কাজের জন্য যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকে।
(৫) ধর্মনিরপেক্ষতা
ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ধর্মনিরপেক্ষতা। ভারত ধর্মের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ। অর্থাৎ, এখানে বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র প্রাধান্য দেয় না। প্রতিটি ধর্ম সমানভাবে স্বীকার করা হয়।
(৬) এক নাগরিকত্ব
ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দ্বি-নাগরিকত্ব স্বীকার করা হয়নি। অর্থাৎ, এখানে প্রতিটি নাগরিক ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এক নাগরিকত্ব ভোগ করে।
(৭) মৌলিক অধিকার
সংবিধানের 12 থেকে 35 নং ধারায় নাগরিকদের ৬ টি মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার, শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার। তবে এই অধিকার গুলি অবাধ নয়।
(৮) মৌলিক কর্তব্য
ভারতের সংবিধানের ৫১ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য উল্লেখিত হয়েছে। যেমন – জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা, ভারতের সার্বভৌমিকতা রক্ষা, দেশের সম্পদ রক্ষা, হিংসার পথ ত্যাগ করা ইত্যাদি।
(৯) সর্বজনীন ভোটাধিকার
সংবিধানের ৩২৬ নং ধারায় সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের ভোটাধিকার স্বীকার করা হয়েছে। ১৮ বছর বয়স্ক প্রতিটি ব্যক্তি এখানে ভোট দিতে পারে।
(১০) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণে অনুপস্থিতি
আমাদের দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নেই। দেশের সরকারের তিনটি বিভাগ। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
(১১) অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
এছাড়া ভারতীয় সংবিধানের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের উপস্থিতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিশ্ব শান্তির আদর্শ গ্রহণ, লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের উপস্থিতি ইত্যাদি।
সংবিধানের রূপকার
ভারতীয় সংবিধানের প্রধান মহাস্থপতি হলেন সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর।
১৯৩৫ সালের আইন ধ্বংস
ভারতে এই সংবিধানের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বে প্রচলিত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রতিটি আইন সংবিধান অনুসারী
সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়ার কারণে ভারত সরকার প্রবর্তিত প্রতিটি আইনকে সংবিধান অনুসারী হতে হয়।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র
সংবিধান কার্যকরী হওয়ার দিন থেকে ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের পরিবর্তে পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
গণপরিষদ
প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত ভারতের গণপরিষদ ভারতের সংবিধানের খসড়াটি রচনা করে।
গণপরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব
এই পরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব হলেন জওহরলাল নেহরু, চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নলিনীরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ।
গণপরিষদের বিভিন্ন সদস্য
গণপরিষদের বিভিন্ন সদস্যরা হলেন –
- (১) অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি।
- (২) এইচ. পি. মোদী ও আর. কে. সিধওয়া পারসি সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন।
- (৩) সংখ্যালঘু কমিটির চেয়ারম্যান হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট খ্রিস্টান এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ব্যতীত অন্যান্য ভারতীয় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি।
- (৪) অরি বাহাদুর গুরুং ছিলেন গোর্খা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
- (৫) বিশিষ্ট জুরি আল্লাদি কৃষ্ণস্বামী আইয়ার, বি. আর. আম্বেদকর, বেনেগাল নরসিং রাউ এবং কে. এম. মুন্সি, গণেশ মভলঙ্কার প্রমুখেরাও গণপরিষদের সদস্য ছিলেন।
- (৬) বিশিষ্ট মহিলা সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরোজিনী নাইডু, হংস মেহেতা, দুর্গাবাই দেশমুখ ও রাজকুমারী অমৃত কৌর।
- (৭) সচ্চিদানন্দ সিনহা ছিলেন গণপরিষদের প্রথম সভাপতি পরবর্তীতে রাজেন্দ্র প্রসাদ সভাপতি নির্বাচিত হন।
খসড়া কমিটি গঠন
২৯ অগস্ট ১৯৪৭ সালে ড. বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে আরও ছয় জন সদস্য ছিলেন।
খসড়া সংবিধান প্রস্তুত
এই খসড়া কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে সেটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে গণপরিষদে পেশ করেন।
সময়কাল ও অধিবেশন
গণপরিষদ ভারতের সংবিধান রচনা করতে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় নিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে ১৬৬ দিন গণপরিষদের অধিবেশন বসেছিল।
সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষিত
অনেক পর্যালোচনা ও সংশোধন করার পর ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে গণপরিষদের মোট ৩০৮ জন সদস্য সংবিধান নথির দুটি হস্তলিখিত (একটি ইংরেজি ও একটি হিন্দি) কপিতে সই করেন। দুই দিন পর এই নথিটি ভারতের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষিত হয়।
সংশোধনী
পরবর্তী ৭০ বছরে ভারতের সংবিধানে মোট ১২৪ টি সংশোধনী আনা হয়েছে।
সংবিধানের গঠন
ভারতের এই সংবিধানে মোট ২৪ টি অংশে ৪৪৮ টি ধারা, ১২টি তফসিল এবং ১১৩টি সংশোধনী বিদ্যমান। এই সংবিধানে ইংরেজি সংস্করণে মোট শব্দসংখ্যা হল ৪৮৬ টি।
সংবিধানের প্রস্তাবনা
কোনও নথির প্রারম্ভিক বিবৃতি হল প্রস্তাবনা, যাতে ওই নথির দর্শন ও উদ্দেশ্য বর্ণিত থাকে। সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রস্তাবনায় সংবিধান রচয়িতাদের উদ্দেশ্য, তৈরির ইতিহাস এবং দেশের আদত মূল্যবোধ ও নীতি লিপিবদ্ধ রাখা হয়।
সংবিধানের অংশ
ভারতের সংবিধানের পৃথক পৃথক অধ্যায় গুলি অংশ নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি অংশে আইনের এক একটি ক্ষেত্র আলোচিত হয়। অংশের ধারাগুলির নির্দিষ্ট বিষয়গুলি হল –
- প্রথম অংশ :- এই অংশে আছে ইউনিয়ন ও তার এলাকাসমূহ।
- দ্বিতীয় অংশ :- নাগরিকতা বিষয়ে উল্লেখ আছে।
- তৃতীয় অংশ :- মৌলিক অধিকার বর্ণিত হয়েছে।
- চতুর্থ অংশ :- নির্দেশমূলক নীতি ও মৌলিক কর্তব্য আলোচনা করা হয়েছে।
- পঞ্চম অংশ :- কেন্দ্রীয় বিষয় স্থান পেয়েছে।
- ষষ্ঠ অংশ :- রাজ্যের বিষয় স্থান পেয়েছে।
- সপ্তম অংশ :- প্রথম তফসিলের খ শ্রেণীর রাজ্য (প্রত্যাহৃত) সম্পর্কে ধারণা আছে।
- অষ্টম অংশ : – কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের বিষয় স্থান পেয়েছে।
- নবম অংশ :- পঞ্চায়েত ও পৌরশাসন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
- দশম অংশ :- তফসিলি ও আদিবাসী এলাকা স্থান পেয়েছে।
- একাদশ অংশ :- কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে।
- দ্বাদশ অংশ :- অর্থ, সম্পত্তি, চুক্তি ও মামলা।
- ত্রয়োদশ অংশ :- অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও বাণিজ্য।
- চতুর্দশ অংশ :- কেন্দ্র, রাজ্য ও ট্রাইব্যুনালের অধীনস্থ কৃত্যক।
- পঞ্চদশ অংশ :- নির্বাচন ব্যবস্থা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
- ষোড়শ অংশ :- কিছু সামাজিক শ্রেণীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
- সপ্তদশ অংশ :- ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
- অষ্টাদশ অংশ :- জরুরি অবস্থা বর্ণনা স্থান পেয়েছে।
- ঊনবিংশ অংশ :- বিবিধ বিষয়ে আলোচনা আছে।
- বিংশ অংশ :- সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বর্ণনা আছে।
- একবিংশ অংশ :- সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
- দ্বাবিংশ অংশ :- ক্ষুদ্র শিরোনাম, শুরুর তারিখ, প্রামাণ্য হিন্দি সংস্করণ ও প্রত্যাহারসমূহ বর্ণিত হয়েছে।
- ত্রয়োবিংশ অংশ :- সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা বিষয়ে উল্লেখ আছে।
- চতুর্বিংশ অংশ :- সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থার আলোচনা করা হয়েছে।
সংবিধানের তফসিল (Schedule)
তফসিল গুলিতে সরকারের আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম এবং নীতিগুলির বর্গবিভাজন ও সারণিকরণ করা হয়েছে।
প্রথম তফসিল (ধারা ১ – ৪) — রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
এখানে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকা দেওয়া আছে। সীমান্তে কোনো পরিবর্তন বা যে আইনের দ্বারা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তারও তালিকা এখানে আছে।
দ্বিতীয় তফসিল (ধারা ৫৯, ৬৫, ৭৫, ৯৭, ১২৫, ১৪৮, ১৫৮, ১৬৪, ১৮৬ ও ২২১) — উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বেতন
সরকারি কার্যালয়ের আধিকারিক, বিচারপতি ও ভারতের কন্ট্রোলার ও অডিটর-জেনারেলের বেতনের তালিকা এখানে আছে।
তৃতীয় তফসিল (ধারা ৭৫, ৯৯, ১২৪, ১৪৮, ১৬৪, ১৮৮ ও ২১৯) — শপথ
নির্বাচিত আধিকারিক ও বিচারপতিদের শপথ বিষয়ে উল্লেখ।
চতুর্থ তফসিল (ধারা ৪ ও ৮০)
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অনুসারে রাজ্যসভার আসন সংখ্যার উল্লেখ।
পঞ্চম তফসিল (ধারা ২৪৪)
তফসিলি এলাকা ও তফসিলি উপজাতি প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ (প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য যে সকল এলাকা ও উপজাতির বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন সেই সব ক্ষেত্রের উল্লেখ)।
ষষ্ঠ তফসিল (ধারা ২৪৪ ও ২৭৫)
অসম, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রশাসন।
সপ্তম তফসিল (ধারা ২৪৬)
কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও যুগ্ম দায়িত্ব তালিকা।
অষ্টম তফসিল (ধারা ৩৪৪ ও ৩৫১)
নবম তফসিল (ধারা ৩১-খ)
ভূমি ও ভূম্যধিকারী সংস্কার; সিকিমের ভারতভুক্তি। এটি আদালত কর্তৃক পর্যালোচিত হতে পারে।
দশম তফসিল (ধারা ১০২ ও ১৯১)
সাংসদ ও বিধায়কদের “দলত্যাগ-রোধ” সংক্রান্ত বিধি আছে।
একাদশ তফসিল (ধারা ২৪৩-ছ)
পঞ্চায়েত বা গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে উল্লেখ।
দ্বাদশ তফসিল (ধারা ২৪৩-প)
পৌরসভা সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে।
ক্ষমতা বন্টন
ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
তালিকা
সংসদ ও রাজ্য বিধানসভা গুলির ক্ষমতা গুলিকে শ্রেণীবিভক্ত করে তিনটি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
(১) কেন্দ্র তালিকা
জাতীয় প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি, মুদ্রাব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি কেন্দ্র তালিকার অন্তর্গত।
(২) রাজ্য তালিকা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় সরকার ও কয়েকটি কর ব্যবস্থা রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য তালিকায় আইন প্রণয়ন করতে পারে না।
(৩) যুগ্ম তালিকা
শিক্ষা, পরিবহন, অপরাধমূলক আইনের মতো কয়েকটি বিষয় যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এই সব ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই আইন প্রণয়ন করতে পারে।
রাজ্যসভা
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রবণতার একটি নিদর্শন হল রাজ্যসভা। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের নাম রাজ্যসভা। এটি রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত।
লোকসভা
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের নাম লোকসভা। এর সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ ততক্ষণই ক্ষমতাসীন থাকেন, যতক্ষণ তিনি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন লাভে সক্ষম হন।
আইনবিভাগ কর্তৃক শাসনবিভাগ নিয়ন্ত্রিত
মন্ত্রীরা সংসদের উভয় কক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। সংসদের কোনো একটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্যরাই মন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণ করতে পারেন। এইভাবেই ভারতে আইনবিভাগ শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি
ভারতের রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না। তিনি সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন ( রাষ্ট্রপতি নির্বাচন )।
নাম সর্বস্ব ক্ষমতা
শাসনবিভাগের সকল কাজের সম্পাদনা ও সংসদের প্রত্যেক আইন পাস রাষ্ট্রপতির নামেই হয়ে থাকে। কিন্তু এই সকল ক্ষমতা নামসর্বস্ব। বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য হন।
বিধানসভা
ভারতের রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ (দ্বিকক্ষীয় আইনসভার ক্ষেত্রে) অথবা একমাত্র কক্ষ (এককক্ষীয় আইনসভার ক্ষেত্রে) বিধানসভা। বিধানসভার সদস্য বা বিধায়করা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রিসভার উপর বিধানসভার কর্তৃত্ব বজায় থাকে।
বিচারবিভাগ
ভারতের বিচারব্যবস্থা শাসনবিভাগ বা সংসদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
- (১) বিচারবিভাগ সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা।
- (২) দুই বা ততোধিক রাজ্য অথবা কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করে থাকে বিচারবিভাগ।
- (৩) সংসদ বা বিধানসভা থেকে পাস হওয়া যে কোনো আইনের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনাও হয়ে থাকে।
- (৪) বিচারবিভাগ যদি মনে করে যে, কোনো আইন সংবিধানের কোনো আদর্শের পরিপন্থী, তবে সেই আইনকে অসাংবিধানিক বলেও ঘোষণা করতে পারে।
উপসংহার :- ভারতের সংবিধানে ঘোষিত কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার সরকার কর্তৃক লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট -এ সাংবিধানিক প্রতিবিধান পাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভারতের সংবিধান” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ভারতের সংবিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ।
ড. ভিমরাও রামজি আম্বেদকর।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি।