শাহজাহানের রাজত্বকাল

শাহজাহানের রাজত্বকাল, শাহজাহান উপাধি লাভ, সিংহাসনে আরোহণ, বিদ্রোহ দমন, গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে দুর্ভিক্ষ, পর্তুগিজদের দমন, আহম্মদনগর জয়, গোলকুন্ডা ও বিজাপুর রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার, কান্দাহার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, মধ্য এশিয়া অভিযান, স্থাপত্য, চিত্রকলা, সাহিত্য, সংগীত বিষয়ে শাহজাহানের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল প্রসঙ্গে শাহজাহানের রাজত্বকাল মুঘল সাম্রাজ্যের সুবর্ণ যুগ, শাহজাহানের সিংহাসনে আরোহণ, শাহজাহানের রাজত্বের সময়কাল, শাহজাহানের রাজত্বকালে বিদ্রোহ দমন, শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ, শাহজাহানের রাজত্বকালে পর্তুগিজ দমন, শাহজাহানের রাজত্বকালে মধ্য এশিয়া অভিযান, শাহজাহানের রাজত্বকালে শিল্প, স্থাপত্য, সাহিত্য, সঙ্গীত ও চিত্রকলা সম্পর্কে জানব।

শাহজাহানের রাজত্বকাল (১৬২৮ – ৫৮)

ঐতিহাসিক ঘটনাশাহজাহানের রাজত্বকাল
রাজত্বকাল১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ
পূর্বসূরিজাহাঙ্গীর
উত্তরসূরিঔরঙ্গজেব
অবদানতাজমহল
ময়ূর সিংহাসন
লালকেল্লা
মোতি মসজিদ নির্মাণ
শাহজাহানের রাজত্বকাল

ভূমিকা :- মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পরবর্তী মুঘল সম্রাট হলেন তাঁর পুত্র শাহজাহান। শাহজাহান ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

শাহজাহান উপাধি

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের প্রকৃত নাম খুররম। মেবার এবং আহমদনগর অভিযানে তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পিতা জাহাঙ্গীর তাঁকে ‘শাহজাহান’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

শাহজাহানের সিংহাসনে আরোহণ

জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আবুল মুজাফ্ফর শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ শাহজাহান’ উপাধি নিয়ে শাহজাহান আগ্রার সিংহাসনে আরোহণ করেন।

বিদ্রোহ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা

সিংহাসনে আরোহণের অল্পদিনের মধ্যেই শাহজাহানকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলি হল –

(১) জুঝর সিং-এর বিদ্রোহ

বুন্দেলখণ্ডের বুন্দেলা-রাজ জুঝর সিং বিদ্রোহ ঘোষণা (১৬২৮-২৯) করলে সম্রাট শাহজাহানের ত্রিমুখী আক্রমণের তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং যুবরাজ ঔরঙ্গজেবের সাথে পরবর্তী যুদ্ধে (১৬৩৫) জুঝর সিং ও তার পুত্র বিক্রমজিৎ নিহত হন।

(২) খান জাহান লোদির বিদ্রোহ (১৬২৯-৩১)

দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা খান জাহান লোদি শাহজাহানকে বার বার বিব্রত করলে ১৬৩১ খ্রিস্টপূর্ব শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে যান এবং খান জাহান লোদিকে পরাজিত ও নিহত করেন।

শাহজাহানের রাজত্বকালে গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে দুর্ভিক্ষ

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বের তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে (১৬৩০-৩২) গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ত্রাণ কার্যের জন্য সম্রাট কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যেমন –

  • (১) তিনি ৭০ লক্ষ টাকার রাজস্ব মকুব করেন।
  • (২) সরকারি লঙ্গরখানা খুলে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
  • (৩) তিনি মনসবদারদের সেবামূলক কার্যাবলী গ্ৰহণের নির্দেশ দেন।

পর্তুগিজদের দমনে শাহজাহানের ভূমিকা

শাহজাহানের আমলে পর্তুগিজদের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। সম্রাট বাংলার শাসনকর্তা কাসিম আলি খাঁকে পর্তুগিজদের উৎখাতের নির্দেশ দেন। ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে কাসিম আলি হুগলি অবরোধ করেন এবং তিন মাস যুদ্ধ করার পর পর্তুগিজদের পরাজিত করে হুগলি দখল করেন।

শাহজাহানের আহম্মদনগর জয়

আহম্মদনগরের সুলতান হুসেন শাহ মোগলদের হাতে বন্দী হলে আহম্মদনগর মোগল সাম্রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত (১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ) হয়।

শাহজাহানের নিকট গোলকুণ্ডা রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার

গোলকুণ্ডার কুতুব শাহি সুলতান আবদুল্লাহ বিনা যুদ্ধে শাহজাহানের বশ্যতা স্বীকার করেনএবং বাদশাহের নামে খুৎবা পাঠ, মুদ্রা প্রচলন করতে সম্মত হন।

শাহজাহানের নিকট বিজাপুর রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার

বিজাপুরের সুলতান আদিল শাহ বশ্যতা স্বীকারে রাজি না হলে মোগল বাহিনী বিজাপুর রাজ্য আক্রমণ করে এবং ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। ফলে ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের সুলতান বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হন।

শাহজাহানের কান্দাহার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা

জাহাঙ্গীরের আমলে কান্দাহার মোগলদের হস্তচ্যুত হয়। কান্দাহার পুনরুদ্ধারের জন্য শাহজাহান ১৬৪৯, ১৬৫২ও ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনটি অভিযান পাঠান। কিন্তু সব অভিযান ব্যর্থ হয়।

শাহজাহানের মধ্য এশিয়া অভিযান

বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান সকলেরই বিশেষ দুর্বলতা ছিল মধ্য এশিয়ার বলখ, বদাখশান, সমরখন্দ প্রভৃতি স্থান পুনরুদ্ধার করা। ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে যুবরাজ মুরাদ ও পরে ঔরঙ্গজেবের নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করলেও শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি ও মধ্য এশিয়া জয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

শাহজাহানের আমলে শিল্প ও সংস্কৃতি

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা ও স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

(১) স্থাপত্য নিদর্শন

শাহজাহানের সময় দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, শিশমহল, মোতি মসজিদ, লালকেল্লা, ময়ূর সিংহাসন, তাজমহল, জামি মসজিদ নির্মিত হয়।

(২) সাহিত্য

শাহজাহানের রাজত্বকালে আবদুল হামিদ লাহোরি ‘পাদশাহনামা’, ইনায়েৎ খাঁ ‘শাহজাহাননামা’ রচনা করেন।

শাহজাহানের আমলে চিত্রকলা

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সময় উল্লেখযোগ্য চিত্রশিল্পী ছিলেন মির হাসান, অনুপ চিত্রা, চিত্রামণি, সমরকন্দি, মহম্মদ নাদির প্রমুখ।

শাহজাহানের আমলে সংগীতচর্চা

সুগায়ক শাহজাহান নিজে বহু সংগীত রচনা করেন এবং প্রতি সন্ধ্যায় তার দরবারে গায়ক ও নর্তকীদের সমাবেশ ঘটত।

শাহজাহানের রাজত্বকাল সুবর্ণযুগ

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে শান্তি ও সমৃদ্ধি, আর্থিক উন্নতি, শিল্প ও সংস্কৃতিতে অভাবনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। এইসব কারণে অনায়াসেই শাহজাহানের রাজত্বকালকে মোগল সাম্রাজ্যের সুবর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

উপসংহার :- আসলে শাহজাহানের রাজত্বকাল ছিল সমৃদ্ধি ও অবক্ষয়ের সন্ধিকাল।এই সময় শিল্প ও সাহিত্যে যেমন চরম উন্নতি ঘটেছিল তেমনি প্রশাসন ও সামরিক দক্ষতায় অবক্ষয়ের সূচনা হয়। সামনের আবরণ যতই জমকালো হোক না কেন, এর অন্তরে অবক্ষয় ও ধ্বংস শুরু হয়ে গিয়েছিল।

(FAQ) পাগলপন্থী বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বের সময়কাল কত?

১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ।

২. কার রাজত্বকালকে মোগল সাম্রাজ্যের সুবর্ণযুগ বলা হয়?

মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালকে।

৩. শাহজাহানের আমলে নির্মিত দুটি স্থাপত্য নিদর্শনের নাম লেখ।

তাজমহল, লালকেল্লা।

Leave a Comment