দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এর সময়কাল, বিবাদমান পক্ষ, যুদ্ধের কারণ হিসেবে ইংরেজদের সাহায্য লাভে ব্যর্থ, দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ইংরেজ সেনাবাহিনীর হামলা, বিনা অনুমতিতে টিপুর রাজ্যের ওপর দিয়ে গমন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, ত্রিশক্তি জোট গঠন, দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা, সলবাইয়ের সন্ধি, হায়দার আলির পরাজয়, হায়দার আলির মৃত্যু, টিপু সুলতানের যুদ্ধে যোগদান, ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি ও সন্ধির শর্ত সম্পর্কে জানবো।

হায়দার আলি ও ইংরেজদের দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

সময়কাল১৭৮০-৮৪ খ্রিস্টাব্দ
বিবাদমান পক্ষইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মহীশূর রাজ্য
হায়দার আলির মৃত্যু১৭৮২ খ্রিস্টাব্দ
টিপু সুলতান -এর যুদ্ধে যোগদান১৭৮২ খ্রিস্টাব্দ
ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

ভূমিকা :- প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এর পর ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের সন্ধি স্বাক্ষরিত হলেও ইংরেজ ও মহীশূরের মধ্যে কোনও স্থায়ী সদ্ভাব প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এই সন্ধি ছিল কোম্পানির পক্ষে তীব্র অপমানজনক। তাই শীঘ্রই দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের কারণ

এই যুদ্ধের পিছনে বেশ কিছু কারণ বর্তমান। যেমন –

(১) ইংরেজদের সাহায্য লাভে ব্যর্থ

১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠারা মহীশূর আক্রমণ করলে পূর্বশর্ত অনুসারে হায়দার আলি ইংরেজদের কাছে সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হন। এর ফলে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।

(২) দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্র ধরে ইংল্যাণ্ডফ্রান্স -এর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে ভারত -এ ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ শুরু হয়। ইংরেজরা মহীশূর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ফরাসি উপনিবেশ মাহে দখল করে। হায়দারের প্রতিবাদেও কোনও কাজ হয় নি। এতে তিনি প্রবল ক্ষুব্ধ হন।

(৩) ইংরেজ সেনাবাহিনীর হামলা

ইংরেজ বাহিনী প্রায়ই হায়দারের রাজ্যভুক্ত দিন্দিগুল ও সন্নিহিত সীমান্ত অঞ্চলে হামলা চালাত।

(৪) বিনা অনুমতিতে হায়দারের রাজ্যের ওপর দিয়ে গমন

নিজামের ভ্রাতা বসলৎ জঙ্গ-এর জায়গির গুন্টুর দখলের জন্য ইংরেজ বাহিনী বিনা অনুমতিতে হায়দারের রাজ্যের ওপর দিয়ে গেলে তিনি বিরক্ত হন।

(৫) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

বোম্বাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হায়দারের এই মর্মে চুক্তি হয় যে, তারা মহীশূর থেকে একচেটিয়াভাবে গোলমরিচ ও চন্দনকাঠ কিনবে এবং বিনিময়ে তারা হায়দারকে গোলা-বারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র দেবে। বোম্বাই কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রাখে নি।

হায়দার আলির ত্রিশক্তি জোট গঠন

এই সব কারণে হায়দার ইংরেজদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি ত্রিশক্তি জোট গঠন করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা

প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ -এ (১৭৭৫-৮২ খ্রিঃ) ইংরেজদের ব্যস্ততার সুযোগে হায়দার ইংরেজদের মিত্ররাজ্য কর্ণাটকের ওপর আক্রমণ হানেন (১৭৮০ খ্রিঃ) এবং রাজধানী আর্কট দখল করে নেন। এর ফলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়।

মারাঠা ও ইংরেজদের মধ্যে সলবাইয়ের সন্ধি

ইংরেজ-পক্ষ সমূহ বিপদ উপলব্ধি করে মারাঠাদের সঙ্গে সলবাইয়ের সন্ধি (১৭৮২ খ্রিঃ) স্বাক্ষর করে বিবাদ মিটিয়ে নেয় এবং নিজামকেও দলে টানে।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে হায়দার আলির পরাজয়

মিত্রহীন হায়দার একাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকেন। ইংরেজ সেনাপতি স্যারআয়ার কূটকে হায়দারের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। ত্রিনোমালি এবং পোর্টোনোভো -র যুদ্ধে হায়দার পরাজিত হন।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে হায়দার আলির মৃত্যু

ফরাসি নৌ-সেনাপতি সাফ্রেনের নেতৃত্বে একটি নৌবহর দাক্ষিণাত্যে পৌঁছলে হায়দারের শক্তি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সময় কর্কট রোগে হায়দারের মৃত্যু ঘটে (১৭৮২ খ্রিঃ)।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতানের যোগদান

১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাই সন্ধি দ্বারা ইউরোপ -এ ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের অবসান হয়। হায়দারের সুযোগ্য পুত্র টিপু সুলতান ফরাসি সাহায্য ছাড়া একাই বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যান।

টিপু সুলতান ও ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি

শেষ পর্যন্ত রণক্লান্ত ইংরেজ কর্তৃপক্ষ টিপু সুলতানের সঙ্গে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি (Treaty of Mangalore) স্বাক্ষরে বাধ্য হয় (১৭৮৪ খ্রিঃ)।

ম্যাঙ্গালোরের সন্ধির শর্ত

এই সন্ধির শর্তানুসারে উভয়পক্ষ পরস্পরের অধিকৃত স্থানগুলি ফেরত দেয়। বলা বাহুল্য, এই সন্ধি একটি সাময়িক যুদ্ধ-বিরতি ছিল মাত্র। অচিরেই তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়।

উপসংহার :- ওয়ারেন হেস্টিংস ম্যাঙ্গালোরের সন্ধিকে ‘অপমানজনক শান্তি’ (‘humiliating pacification’) বলে অভিহিত করেন। ঐতিহাসিক ডঃ মহিবুল হাসান -এর মতে এই সন্ধি ছিল টিপুর ‘কূটনৈতিক জয়’।

(FAQ) দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময়কাল কত?

১৭৮০-৮৪ খ্রিস্টাব্দ।

২. কোন যুদ্ধের সময় হায়দার আলির মৃত্যু হয়?

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে।

৩. হায়দার আলির মৃত্যুর পর কে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান?

হায়দার আলির পুত্র টিপু সুলতান।

৪. ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে হয়?

১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও টিপু সুলতান।

৫. কোন সন্ধির মাধ্যমে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান হয়?

ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ।

Leave a Comment