সলবাইয়ের সন্ধি

সলবাই এর সন্ধি -র সময়কাল, স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ, সলবাই-এর সন্ধির পটভূমি হিসেবে পুরন্দরের সন্ধি মানতে নারাজ, সুরাটের সন্ধি অনুমোদন, তেলেগাঁওয়ের যুদ্ধ, ওয়াড়গাঁও-এর সন্ধি, পুনরায় যুদ্ধ, ইংরেজদের দুর্বলতা, সলবাই-এর সন্ধি স্বাক্ষর, সলবাই-এর সন্ধির শর্ত সলবাই-এর সন্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

সলবাই এর সন্ধি প্রসঙ্গে সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষরের সময়কাল, সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষরকারী পক্ষ, সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষরে মহাদজী সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতা, সলবাই এর সন্ধির পটভূমি, সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষর, সলবাই এর সন্ধির শর্ত ও সলবাই এর সন্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

সলবাই এর সন্ধি (১৭৮২ খ্রিস্টাব্দ)

ঐতিহাসিক ঘটনাসলবাইয়ের সন্ধি
সময়কাল১৭৮২ খ্রিস্টাব্দ
দুই পক্ষইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মারাঠা পেশোয়া
শর্তমাধব রাও নারায়ণকে পেশোয়ার স্বীকৃতি
ফলাফলপ্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ-এর অবসান
সলবাই এর সন্ধি

ভূমিকা :- ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর বলে সুরাটের সন্ধি বাতিল করে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

সলবাই এর সন্ধির পটভূমি

এই সন্ধির পটভূমি ছিল নিম্নরূপ –

(১) পুরন্দরের সন্ধি মানতে নারাজ

বোম্বাই কর্তৃপক্ষ পুরন্দরের সন্ধি মানতে রাজি ছিল না। এই ব্যাপারে তারা ইংল্যান্ডে কোম্পানির পরিচালক সভার কাছে আবেদন জানায়।

(২) সুরাটের সন্ধি অনুমোদন

এরপর ইংল্যান্ড কোম্পানির পরিচালক সভা সুরাটের সন্ধি অনুমোদন করে। ফলে বোম্বাই সরকার আবার রঘুনাথ রাওয়ের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে।

(৩) তেলেগাঁওয়ের যুদ্ধ

তেলেগাঁওয়ের যুদ্ধে ভারত-এর ‘ম্যাকিয়াভেলিনানা ফড়নবীশ-এর কূটনীতির কাছে রঘুনাথ রাও ও ইংরেজদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।

(৪) ওয়াড়গাঁও এর সন্ধি

তেলেগাঁও-এর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বোম্বাই-এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষ অপমানজনক ওয়াড়গাঁও-এর সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন (১৭৭৯ খ্রিঃ)।

(৫) ওয়াড়গাঁও এর সন্ধির শর্ত

এই সন্ধি অনুসারে ইংরেজরা ১৭৭৩ সাল থেকে বিজিত সকল স্থান প্রত্যর্পণে সম্মত হয়। স্থির হয় যে, বাংলাদেশ থেকে আগত সকল সৈন্য ফিরে যাবে এবং সিন্ধিয়া ব্রোচের রাজস্বের কিছু অংশ পাবেন।

(৬) পুনরায় যুদ্ধ

হেস্টিংস এই অপমানজনক সন্ধি মানতে রাজি ছিলেন না। এই সন্ধি অস্বীকার করে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু মারাঠাদের বিরুদ্ধে এই সময় জয়লাভ করা সহজসাধ্য ছিল না।

(৭) ইংরেজদের দুর্বলতা

দীর্ঘদিন যুদ্ধে ইংরেজরা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া তাদের নিরাপত্তার জন্য মহীশুরের হায়দার আলি-র ক্ষমতা খর্ব করা তখন অতি প্রয়োজনীয় ছিল।

সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষর

শেষ পর্যন্ত মারাঠা নায়ক মাহাদজি সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সলবাই-এর সন্ধি দ্বারা দু’পক্ষে শান্তি স্থাপিত হয় এবং প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের অবসান ঘটে।

সলবাই এর সন্ধির শর্ত

এই সন্ধির শর্তানুসারে,

  • (১) ইংরেজরা মাধব রাও নারায়ণকে পেশোয়া বলে স্বীকার করে এবং রঘুনাথ রাওয়ের পক্ষ ত্যাগ করে।
  • (২) রঘুনাথ রাওকে বার্ষিক তিন লক্ষ টাকা বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
  • (৩) ইংরেজরা সলসেট, থানা ও বোম্বাই-সংলগ্ন কিছু অঞ্চল লাভ করে এবং
  • (৪) মারাঠা সাম্রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত অধিকৃত অঞ্চলগুলি তারা ফিরিয়ে দেয়।

সলবাই এর সন্ধির গুরুত্ব

সমকালীন ভারত ইতিহাসে নানা কারণে এই সন্ধি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ,

(১) কোম্পানির আর্থিক সংকট

প্রত্যক্ষ ফলের দিক থেকে এই সন্ধি দ্বারা ইংরেজদের বিশেষ কোনও লাভ হয় নি—বরং এই যুদ্ধে তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং অর্থ-সংকট মোচনের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস-কে বৈধ-অবৈধ নানা আপত্তিকর পথ অবলম্বন করতে হয়।

(২) শান্তি স্থাপন

পরোক্ষভাবে অবশ্য এই সন্ধি ইংরেজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে নানাভাবে সাহায্য করে। মারাঠারাই তখন ছিল ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাপেক্ষা পরাক্রান্ত শক্তি। এই সন্ধি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে মারাঠা ও ইংরেজদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখে।

(৩) ইংরেজদের শক্তি সঞ্চয়

এই অবকাশে ইংরেজরা শক্তি সংগ্রহ করে মহীশূর, নিজাম, অযোধ্যার নবাব ও ফরাসিদের সঙ্গে চরম বোঝাপড়া করে নেয়। এই সব শক্তিগুলিকে ধ্বংস করার পর ইংরেজরা সর্বশক্তি নিয়ে মারাঠাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধতৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ-এ অবতীর্ণ হয়।

(৪) স্মিথের অভিমত

ঐতিহাসিক স্মিথ (Smith) বলেন এই সন্ধি শক্তিশালী মারাঠাদের সঙ্গে ইংরেজদের কুড়ি বছরের শান্তি স্থাপন করে আগামী দিনে ভারতীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণকর্তা হিসেবে তাদের আধিপত্য স্থাপনের সুযোগ করে দেয়।”

(৫) লুয়ার্ডের অভিমত

কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিক লুয়ার্ড (C. F. Luard) বলেন যে, এই সন্ধি তর্কাতীতভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি বলেন যে, এই সন্ধি দ্বারা কোম্পানি মারাঠা শক্তিকে ধ্বংস করে ফেলে।

(৬) সার্বভৌম শক্তি রূপে কোম্পানির প্রতিষ্ঠা

পরবর্তীকালে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে সার্বভৌম শক্তিরূপে কোম্পানির প্রতিষ্ঠা ছিল ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সলবাইয়ের সন্ধির অনিবার্য ফল।

(৭) সরদেশাই-এর অভিমত

ঐতিহাসিক সরদেশাই (G.S. Sardesai) এই মতের বিরোধিতা করে বলেন যে, এই সন্ধির দ্বারা মারাঠা শক্তি ধ্বংস হলে মারাঠাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ইংরেজদের আরও দু’টি যুদ্ধ করার কোনও প্রয়োজন হত না।

উপসংহার :- সলবাই-এর সন্ধি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত বর্তমান থাকলেও ঐতিহাসিক সরদেশাই-এর মতে, সলবাই-এর সন্ধি ছিল ইংরেজদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার চরম নিদর্শন।

(FAQ) সলবাই এর সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন সন্ধি দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের অবসান হয়?

সলবাই এর সন্ধি।

২. সলবাই এর সন্ধি কখন স্বাক্ষরিত হয়?

১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে।

৩. সলবাই এর সন্ধি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

ইংরেজ কোম্পানি ও মারাঠা পেশোয়ার মধ্যে।

৪. সলবাই এর সন্ধি স্বাক্ষরের সময় গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?

ওয়ারেন হেস্টিংস।

Leave a Comment