হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন

হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসন, উদারতান্ত্রিক স্বৈরশাসন, প্রজাতন্ত্র, পুরোহিত রাজা, পৌর শাসনব্যবস্থা ও পৌর শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানবো।

হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন

বিষয়হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন
অবস্থানসিন্ধু নদের তীর
শাসনপৌর শাসন
রাজাপুরোহিত রাজা
রাজধানীহরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো
হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন

ভূমিকা:- প্রাচীন ভারত -এ হরপ্পা সভ্যতার মানুষ রাজনীতি সচেতন ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় এই সভ্যতার অধিবাসীদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বল সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন নিদর্শন থেকে এই সভ্যতার রাষ্ট্র প্রশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকের অগ্রগতির আভাস যায়।

হরপ্পার রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় কী ধরণের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তা নিয়ে পণ্ডিতগণ একমত হতে পারেননি।

(১) কেন্দ্রীয় শাসন

ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, এখানে একটি কেন্দ্রীয় শাসন ছিল এবং তার সহায়করূপে আমলাদের একটি গোষ্ঠী ছিল। ঐতিহাসিক ডি. ডি. কোশাম্বী বলেছেন যে, রাজতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র – যাই হোক না কেন হরপ্পা সভ্যতায় একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসন ছিল। তা না থাকলে এখানে এত উন্নত ও সুপরিকল্পিত নাগরিক সভ্যতার বিকাশ সম্ভব হত না।

(২) উদারতান্ত্রিক স্বৈরশাসন

ঐতিহাসিক এইচ. ডি. শাঙ্খালিয়া মনে করেন যে, সিন্ধু উপত্যকায় উদার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু ছিল।

(৩) প্রজাতন্ত্র

কেউ কেউ মনে করেন যে, হরপ্পার নগরগুলিতে বণিকদের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ ‘গিল্ড‘ বা ‘বণিক সংঘ এখানকার প্রশাসন পরিচালনা করত।

(৪) পুরোহিত রাজা

মার্টিমার হুইলার মনে করেন যে, হরপ্পার সমাজে সম্ভবত ‘পুরোহিত রাজা’র শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পুরোহিত-রাজা দৈব অধিকার ঘোষণা করে তার স্বৈরাচারী শাসন চালু রাখতেন। মহেঞ্জোদারোতে একটি পুরুষ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মাথায় ফেট্টি বাঁধা এবং মুখমণ্ডল দাড়িতে ঢাকা। অনেকে মূর্তিটিকে ‘পুরোহিত রাজার প্রতীক’ বলে মনে করেন।

হরপ্পার পৌর শাসনব্যবস্থা

বিভিন্ন পণ্ডিত মনে করেন যে হরপ্পা সভ্যতায় সম্ভবত একটি সুপরিকল্পিত কেন্দ্রীয় পৌর শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। যেমন –

(১) বিভিন্ন শহরে সাদৃশ্য

  • (ক) রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ওজন ও মাপ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন নগরগুলিতে সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বিভিন্ন পণ্ডিত অনুমান করেন যে, এই সভ্যতায় একটি সুপরিকল্পিত কেন্দ্রীভূত পৌর ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। এই পৌর ব্যবস্থায় বিভিন্ন শহরে একই ধরনের বিভিন্ন ব্যবস্থা চালু করেছিল।
  • (খ) ঐতিহাসিক এস. কে. সরস্বতী বলেছেন যে, “এই সাদৃশ্য থেকে বোঝা যায় যে এখানে একটি শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব ছিল যারা বিস্তৃত এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত।

(২) পৌর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, রাস্তার ধারে ভূগর্ভস্য পয়ঃপ্রণালীগুলি চালু রাখা, নিয়মিত ডাস্টবিনগুলি পরিষ্কার রাখা প্রভৃতি কাজগুলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই সুদৃঢ় পৌর ব্যবস্থার অস্তিত্বের প্রয়োজন ছিল বলে পণ্ডিতগণ মনে করেন।

উপসংহার:- ঐতিহাসিক স্টুয়ার্ট পিগট মনে করেন যে, “সিন্ধু সভ্যতার মতো বহুদূর বিস্তৃত সভ্যতার পরিচালনার জন্য হয়তো হরপ্পা ও মহেন-জো-দারোতে দুটি রাজধানী বা শাসনকেন্দ্র ছিল। কিন্তু রাজা বা শাসক হয়তো একজনই ছিলেন।”

(FAQ) হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. হরপ্পা সভ্যতা কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

সিন্ধু।

২. হরপ্পা কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

রাবি।

৩. মহেঞ্জোদারো কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

সিন্ধু।

৪. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় স্নানাগার পাওয়া গেছে?

মহেঞ্জোদারো।

৫. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় শস্যাগার পাওয়া গেছে?

হরপ্পা।

Leave a Comment