পৌষ মেলা প্রসঙ্গে পৌষ উৎসবের ভিত্তি, ব্রাহ্মমন্দির স্থাপন, মেলার আয়োজন, মেলা বন্ধ, মেলার উদ্বোধন, মেলার বিভিন্ন দিন, পৌষ মেলার বর্ণনা সম্পর্কে জানবো।
শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত পৌষ মেলা প্রসঙ্গে পৌষ মেলা, পৌষ উৎসবের ভিত্তি, পৌষ মেলার আয়োজন, পৌষ মেলা বন্ধ, পৌষ মেলার মাঠ, পৌষ মেলার উদ্বোধন, পৌষ মেলার বিভিন্ন দিক, পৌষ মেলার বর্ণনা, পৌষ মেলার বিশেষত্ব, পৌষ মেলার ইতিহাস।
শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা
উৎসব | পৌষ মেলা |
সূচনাকাল | ১৮৯৪ সাল |
প্রতিষ্ঠাতা | জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি |
ধরণ | সাংস্কৃতিক |
স্থান | শান্তিনিকেতন |
পুনরাবৃত্তির হার | বাৎসরিক |
মেলা শুরু | ৭ পৌষ |
ব্যাপ্তি | ৩ দিন |
আকর্ষণ | বাউল গান |
ভূমিকা :- শুধুমাত্র বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত বলেই নয় বরং সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ -এর বাইরে সমাজ সংস্কারক রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয়, তা শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলায় বিশেষভাবে অনুভূত হয়, অনুভূত হয় বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে মেলার গুরুত্বও।
পৌষ মেলা
ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক মেলা ও উৎসব হল পৌষমেলা। প্রতি বছর ৭ পৌষ এই মেলা শুরু হয় এবং চলে তিন দিন ধরে। তবে দোকানিরা সারা পৌষ মাস ধরেই মেলাপ্রাঙ্গনে দোকান দিতে পারেন। এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বাংলা লোকসংগী, বিশেষত বাউল গানের অনুষ্ঠান।
পৌষ উৎসবের ভিত্তি
২১ ডিসেম্বর ১৮৪৩ সালে (১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছ থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এটিই ছিল শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি।
ব্রাহ্মমন্দির স্থাপন
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়।
মেলার আয়োজন
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
মেলা বন্ধ
১৮৯৪ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে পৌষমেলা। ১২৬ বছরের ইতিহাসে মোট দু’বার বন্ধ থেকেছে পৌষমেলা। ১৯৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষাগ্রহণের শতবর্ষে মন্বন্তরের কারণে এবং ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে মেলা আয়োজন সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালেও কোভিড পরিস্থিতির জন্য পৌষমেলা বন্ধ ছিল।
মেলার মাঠ
প্রথম দিকে ব্রাহ্মমন্দির বা কাঁচমন্দিরের উত্তর দিকের মাঠে মেলা আয়োজিত হত। সেই দিন সান্ধ্য উপাসনার পর বাজি পোড়ানোও হত। পরে মেলার আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজন শুরু হয়।
মেলার উদ্বোধন
পৌষ উৎসব বা মেলা শুরু হয় ৭ পৌষ তারিখে। ভোরবেলায সানাই বাদনের আয়োজন করা হয়। বৈতালিক দল গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা করে। এরপর ছাতিমতলায় উপাসনার আয়োজন করা হয়। তারপর উপস্থিত সবাই গান গাইতে গাইতে উত্তরায়নে উপস্থিত হন।
মেলার বিভিন্ন দিন
পৌষমেলায় বাংলা লোকসংগীত (বিশেষ করে বাউল গানের) আয়োজন করা হয়। লোকসংগীতের সঙ্গে লোকনৃত্য ও লোকক্রীড়ার অনুষ্ঠানও হয়। এই মেলায় পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত অঞ্চলের সাংস্কৃতিক নিদর্শনের প্রদর্শনী হয়। শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা নাচ, গান ও নাটকের আয়োজন করে। প্রত্যেক দিনই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। মেলার শেষ দিনটি শান্তিনিকেতনের ব্যক্তিত্বদের প্রতি উৎসর্গিত।
পৌষ মেলার বর্ণনা
- (১) প্রথম প্রথম এই পৌষ মেলা মাত্র একদিন অনুষ্ঠিত হত। সজীব অথচ অনাড়ম্বর এই মেলা শুরু হতো বৈতালিক সুরের মধ্য দিয়ে। নানা ভোজ্য সামগ্রী অনাথ শিশুদের মধ্যে বিতরণ করার মধ্য দিয়ে গ্রাম্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতো।
- (২) যে কোনো মেলাই জনসমাগম ছাড়া ফিকে হয়ে যায়। সূচনা লগ্ন থেকেই শান্তিনিকেতনের আশেপাশে গ্রামের লোক সারাদিন ধরে এই মেলাকে মুখরিত করে রাখত। মাঠে বসতো নানা মনোহরী দোকান।
- (৩) মেলার পশ্চিম প্রান্তের বড় অংশ জুড়ে হস্তশিল্পের সমাহার। বিকনার ডোকরা, বাঁকুড়ার টেরাকোটার ঘোড়া, দুমকার ধাতুর গয়না, নানারকম কাঠের জিনিস, সবার প্রিয় প্যাঁচা, মাটির পুতুল, বাঁশের, বেতের জিনিস ছাড়াও কাপড়ের, চামড়ার ব্যাগ, অজস্র সস্তা খেলনা, বাঁশি, ভেঁপুর কোলাহল সর্বত্র।
- (৪) মেলার পূর্বপ্রান্তে ভিড় বেশি। ওখানেই পর পর নাগরদোলা, উত্তেজক রাইড, বিকট ম্যাজিক এবং আদি অকৃত্রিম বাইক ও গাড়ি নিয়ে ‘মরণ ফাঁদের খেলা।’ এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাটির হাঁড়িকুড়ি, ঝুড়ি, তিরধনুক, বইয়ের দোকান, জামা কাপড়, সস্তা শাড়ি, কাঁথা স্টিচ, পাটের দ্রব্য সামগ্রী, সরকারি বেসরকারি কৃষি কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আঁকা ছবি, আর্টের জিনিস, আচার-মোরব্বা, অভাব নেই কিছুরই।
- (৫) এই মেলায় প্রায় ১,৫০০টি স্টল দেওয়া হয়। মেলা উপলক্ষে তিন দিনে ১০,০০০ পর্যটক সমাবেশ হয় এখানে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শান্তিনিকেতনে প্রতিদিন গড়ে ৩,৫০০ পর্যটক আসেন।
- (৬) পৌষ উৎসব, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্রপক্ষ ও নববর্ষ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে দৈনিক ৪০,০০০ বা তারও বেশি পর্যটক আসেন। তবে শান্তিনিকেতনে পর্যটক নিবাসের সংখ্যা খুব কম। অবশ্য এখানে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ভাড়ায় ঘর পাওয়া যায়।
- (৭) এই মেলার এক বিশেষত্ব তার হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টিতে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে প্রতিটি দ্রব্যই বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় অংশ গ্রহণের জন্য।
- (৮) ভিড়ে, চিৎকারে, ঘোষণায়, গানে, আড্ডায় মেলা জমজমাট। শীতের সকাল দুপুর রাতে বিচিত্র চেহারা তার। শেষ দিনে বাজির আয়োজন। আজকের পৌষমেলার অন্তহীন উন্মাদনার কারণ খুঁজতে চাইলে সশরীরে, সবান্ধবে, সপরিবারে ভিড়ে মিশে যাওয়াই শ্রেয়।
উপসংহার :- পৌষ মেলা আমাদের এক চিরায়ত ঐতিহ্য। বছরের পর বছর আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাক্ষী হয়ে আপন মহিমায় সে টিকে আছে। আধুনিক নগর সভ্যতা ও সংস্কৃতিও যে গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি ও সভ্যতাকে পাশে নিয়ে চলতে পারে তা পৌষ মেলার রূপের মধ্যে সদৃষ্ট। আপন বৈশিষ্ট্যে এই মেলা সদা সমুজ্জ্বল হয়ে থাকুক এটাই সব সময় কামনা করি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “পৌষ মেলা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) পৌষ মেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রতি বছর ৭ পৌষ বীরভূমের শান্তিনিকেতনে।
২১ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ সালে।
৩ দিন।
বাউল গান।