প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম, পিতা-মাতা, নামকরণ, শৈশব কৈশোর, শিক্ষা, বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব, ষ রচনার বিষয়, সাহিত্য সাধনা ও রচনা সম্ভার, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতার নাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামকরণের ইতিহাস, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশব ও কৈশোর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা জীবন, বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার বিষয়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য সাধনা ও রচনা সম্ভার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমূহ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্ৰন্থ, বাংলা উপন্যাসে তথা বাংলা কথা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান ও তার মৃত্যু।
ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঐতিহাসিক চরিত্র | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
জন্ম | ১৯ মে, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ |
পিতামাতা | হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীরদাসুন্দরী দেবী |
পেশা | লেখক |
বিখ্যাত উপন্যাস | পদ্মানদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা |
মৃত্যু | ৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম
ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে মঙ্গলবার দুমকায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন দুমকা ছিল সাঁওতাল পরগনার রাজধানী শহর।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতা
পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় সেটলমেন্ট বিভাগে কানুনগোর চাকরি করতেন। সেই উপলক্ষ্যে তিনি তখন দুমকায় সপরিবারে বাস করছিলেন। মানিকের মা নীরদাসুন্দরী দেবী। বাংলাদেশ -এর ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মালপাদিয়া গ্রামে মানিকের পৈতৃক নিবাস ছিল।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম
মানিকের ভালো নাম ছিল প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকনাম ছিল মানিক। বাংলা সাহিত্যে তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সুপরিচিত। তারা ছিলেন আট ভাই ও ছয় বোন। মানিক ছিলেন পঞ্চম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামকরণের ইতিহাস
ঔপন্যাসিক ‘মানিক’ নামের একটি ছোট ইতিহাস আছে। তাঁর গায়ের উজ্জ্বল কালো রং ও সুন্দর মুখশ্রী দেখে আঁতুড় থেকেই তাঁর নামকরণ হয় কালোমানিক – সেই মানিক নামটিই রয়ে যায় আজীবন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশব ও কৈশোর
- (১) পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-ওড়িষার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবণি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে।
- (২) তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের লৌহজং এর গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন
- (১) মানিকের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কারণ পিতাকে চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হত। মানিক কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন।
- (২) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হন বাঁকুড়া জেলার ওয়েসলিয়ন কলেজ থেকে। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ -এ বিজ্ঞান বিভাগে ভরতি হন অঙ্কে অনার্স নিয়ে।
বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব
প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি রেখে আকস্মিকভাবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব। সাহিত্যের নেশাই তাঁর পাঠ্যজীবনে বিপর্যয় আনে, অভিভাবকদের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে, ফলে জেদি মানিক চরম দুঃখদারিদ্র্যকে বরণ করে সাহিত্যসাধনাকে পেশারূপে গ্রহণ করেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার বিষয়
তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। তিনি ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও কার্ল মার্কস -এর শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে।
কমিউনিস্ট পার্টিতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদান
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এই সময় থেকে তার লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
জীবনচিত্র সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারণা
পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ঐ সকল মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ছিল মানিকের। তাই ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনচিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচিত্র অভিজ্ঞতা
বিচিত্র সব মানুষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন লেখক। তার এই সকল অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন বিচিত্র সব চরিত্রের আড়ালে। পদ্মার তীরবর্তী জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে জীবনের ভাঙাগড়ার প্রভাব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙ্গা গড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তার সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। সমাজের শাসক ও পুঁজিপতিদের হাতে দরিদ্র সমাজের শোষণবঞ্চনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চরিত্রের আড়ালে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যসাধনা ও রচনাসম্ভার
মানিকের সাহিত্যসৃষ্টির পরিমাণ সুবিশাল। গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাসের সংখ্যা সাতান্নটি। তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ তো আছেই। প্রসঙ্গত বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ব্যক্তি, যিনি সাহিত্যসাধনাকে পুরোপুরি পেশা করে জীবিকানির্বাহের দুঃসাহসিক ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘দিবারাত্রির কাব্য’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস তাঁকে জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির উচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ করলেও ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), জননী (১৯৩৫), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), জীবনের জটিলতা (১৯৩৬), অমৃতস্য পুত্রাঃ (১৯৩৮), শহরতলি (প্রথম খণ্ড) (১৯৪০), শহরতলি (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৪১), অহিংসা (১৯৪১), ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১), চতুষ্কোণ (১৯৪২), প্রতিবিম্ব (১৯৪৩), দর্পণ (১৯৪৫), চিন্তামণি (১৯৪৬), শহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬), চিহ্ন (১৯৪৭), আদায়ের ইতিহাস (১৯৪৭), জীয়ন্ত (১৯৫০), পেশা (১৯৫১), স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১), সোনার চেয়ে দামী (প্রথম খণ্ড) (১৯৫১), সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৫২), ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২), পাশাপাশি (১৯৫২), সার্বজনীন (১৯৫২), নাগপাশ (১৯৫৩), ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), আরোগ্য (১৯৫৩), চালচলন (১৯৫৩), তেইশ বছর আগে পরে (১৯৫৩), হরফ (১৯৫৪), শুভাশুভ (১৯৫৪), পরাধীন প্রেম (১৯৫৫), হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬)।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্ৰন্থ
তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অতসী মামী’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গল্পগ্রন্থ যথাক্রমে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ ও ‘সরীসৃপ। তাছাড়া ‘মাটির মাশুল’, ‘হলুদপোড়া’, ‘আজ-কাল-পরশুর গল্প’, ‘মিহি ও মোটা কাহিনী’, ‘ছোটবকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি তাঁর অন্যান্য গল্পগ্রন্থ। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক প্রথম শ্রেণির উৎকৃষ্ট ছোটোগল্প আছে। এই প্রসঙ্গে ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’, ‘আত্মহত্যার অধিকার’, ‘ছোটবকুলপুরের যাত্রী’, ‘সর্পিল’, ‘নেকী’ প্রভৃতি ছোটোগল্পের নাম উল্লেখ্য।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হয়।
উপসংহার:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকালপ্রয়াণ সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সমালোচক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “অকালমৃত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাগৈতিহাসিক যে শক্তিকে বিশ্বাস করেছিলেন জীবনের সমাপ্তি অধ্যায়ে সেই শক্তির অপরিমিত সম্ভাবনা ও সর্বোত্তম সার্থকতার সন্ধান পেয়েছিলেন। ‘চাষীর মেয়ে’ তারই সোনালী ফসল বয়ে আনছিল, কিন্তু সেই ফসল তোলা শেষ হল না, তার বিচ্ছিন্ন পান্ডুলিপির পত্র সংগ্রহ ও গ্রন্থ বন্ধন অসম্পূর্ণই রইলো। তার আগেই তিনি চলে গেলেন।”
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
পদ্মানদীর মাঝি।
হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়।