মালয় রাজ্য প্রসঙ্গে সুবর্ণ দ্বীপ, আরব বণিকদের বিবরণ, শৈলেন্দ্র বংশ, চোল আক্রমণ, বরবুদুরের স্তূপ, মজাপহিত রাজ্য, মজাপহিত রাজ্যের পতন ও হিন্দু সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।
মালয় রাজ্য
বিষয় | মালয় রাজ্য |
বংশ | শৈলেন্দ্র বংশ |
বিখ্যাত রাজা | রাজাসনাগর |
বিখ্যাত কীর্তি | বরবুদুরের স্তূপ |
ভূমিকা :- মালয় উপদ্বীপের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের পূর্ব সীমায়, ব্রহ্মদেশের পরেই। ফলে ভারত -এর সামুদ্রিক রাজ্যগুলি বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়ে বাণিজ্য ও উপনিবেশ বিস্তার করে। “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় বাণিজ্য ও উপনিবেশ স্থাপনের দ্বার হিসেবে মালয় কাজ করে।”
সুবর্ণ দ্বীপ
অষ্টম খ্রিস্টাব্দে শৈলেন্দ্ৰ বংশ মালয় উপদ্বীপ, সুমাত্রা, জাভা, বালি ও বোর্ণিও প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে এক সাম্রাজ্য স্থাপন করে। এই সাম্রাজ্যের নাম ছিল সুবর্ণ দ্বীপ।
মালয় রাজ্য সম্পর্কে আরব বণিকদের বিবরণ
আরব বণিকদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, শৈলেন্দ্র সম্রাটরা মহারাজা উপাধি নেন। তাঁদের বিরাট নৌবহর প্রতিবেশী কম্বোজ ও চম্পাকে জয় করে।
মালয় রাজ্যের শৈলেন্দ্র বংশ
- (১) শৈলেন্দ্রে সম্রাটরা ছিলেন মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম -এর অনুরাগী। শৈলেন্দ্র রাজা বালপুত্রদেব বাংলার পাল সাম্রাজ্য-এর সম্রাট দেবপাল -এর কাছে একটি দূত মিশন পাঠিয়ে নালন্দায় একটি বিহার নির্মাণের অনুমতি চান।
- (২) সম্ভবত শৈলেন্দ্র রাজারা এই সময় বাংলা থেকে মহাযান ধর্মে দীক্ষা নেন। বাঙালী ভিক্ষু কুমার ঘোষ শৈলেন্দ্র সম্রাটকে মহাযান তন্ত্রে দীক্ষা দেন। তারই নির্দেশে তারাদেবীর মন্দির নির্মিত হয়। চোল রাজার সম্মতিক্রমে শৈলেন্দ্র রাজা নেগাপটমে বিহার তৈরি করেন।
মালয় রাজ্যে চোল আক্রমণ
- (১) শৈলেন্দ্র বংশ নবম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করার পর, চোল সম্রাট প্রথম রাজেন্দ্র চোল, শৈলেন্দ্র রাজ্য আক্রমণ করেন এবং শৈলেন্দ্র রাজ্যের কিছু অংশ অধিকার করেন। চোল-শৈলেন্দ্ৰ সংঘাত প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলে।
- (২) শেষ পর্যন্ত শৈলেন্দ্র সম্রাট স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম হন। কিন্তু এই দীর্ঘ যুদ্ধে শৈলেন্দ্র বংশ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। ত্রয়োদশ শতকে শৈলেন্দ্র বংশের পতন ঘটে।
শৈলেন্দ্র যুগে নির্মিত বরবদুরের স্তূপ
শৈলেন্দ্র যুগে যবদ্বীপ বা জাভায় বিখ্যাত বরবদুরের স্তূপ তৈরি করা হয়। এই স্তূপের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশৈলী বিস্ময়কর।
মাজাপহিত রাজ্য
- (১) শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর মাজাপহিত রাজ্য স্থাপিত হয়। পূর্ব জাভায় ত্রয়োদশ শতকে বিজয় নামক এক ব্যক্তি এই রাজ্য স্থাপন করেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল তিক্তবিশ্ব বা মাজাপহিত।
- (২) এই বংশের বিখ্যাত রাজা ছিলেন রাজাসনাগর (১৩৫০ খ্রি)। নগরকৃতঙ্গম গ্রন্থে তার কৃতিত্বের বিবরণ পাওয়া যায়। সমগ্র পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও মালয় উপদ্বীপ নিয়ে তাঁর সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। ভারত ও চীন -এর সঙ্গে তার সাম্রাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল।
মাজাপহিত রাজ্যের পতন
পঞ্চম শতক থেকে ইসলামের প্রভাবে মাজাপহিত সাম্রাজ্যের পতন আরম্ভ হয়। মুসলিম আক্রমণের চাপে জাভার হিন্দুরাজা দেশ ত্যাগ করেন এবং বালি দ্বীপে আশ্রয় নেন। জাভায় ইসলামী আধিপত্য স্থাপিত হয়।
মালয় রাজ্যের হিন্দু সংস্কৃতি
বহু শতক ধরে বালি দ্বীপে হিন্দু সংস্কৃতি জীবিত থাকে। সুমাত্রা, জাভা ও বালি দ্বীপে আজও হিন্দু সভ্যতার প্রভাব জনসাধারণের জীবনযাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। জনসাধারণের নামকরণে, রামায়ণ ও মহাভারতের আখ্যান অবলম্বনে জাভা ও বালি দ্বীপের নৃত্যে এই প্রভাব দেখা যায়।
উপসংহার :- সুমাত্রা, জাভা ও বালি দ্বীপগুলিতে বহু হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়। বৌদ্ধধর্মও এই দ্বীপগুলিতে জনপ্রিয় ছিল। বরবদুরের স্তূপের শিলাময় সৌন্দর্য এখনও বহু লোকের বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
(FAQ) মালয় রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সুবর্ণ দ্বীপ।
মালয় উপদ্বীপ, সুমাত্রা, জাভা, বালি ও বোর্ণিও।
বরবুদুরের স্তূপ।