দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস

দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস প্রসঙ্গে তামিল সাহিত্যে উল্লেখ, রামায়ণে প্রথম উল্লেখ, পারজিটারের অভিমত, মৌর্য যুগে দাক্ষিণাত্য, অশোকের অধীনে দাক্ষিণাত্য, দাক্ষিণাত্যে দুটি রাজ্যের উদ্ভব, চেতরাজ্য, সাতবাহন রাজ্য, গুপ্ত বংশের অধীনে দাক্ষিণাত্য ও দাক্ষিণাত্যে বিভিন্ন রাজবংশের উদ্যান সম্পর্কে জানবো।

দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস

বিষয়দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস
তামিল দেশসুদূর দক্ষিণ
প্রথম উল্লেখরামায়ণ
চেতরাজ্যকলিঙ্গ
এলাহাবাদ লিপিসমুদ্রগুপ্ত
দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস

ভূমিকা :- সাধারণত নর্মদা ও কৃষ্ণানদীর মধ্যবর্তী স্থান দক্ষিণাপথ নামে পরিচিত। অবশিষ্ট অঞ্চল সুদূর দক্ষিণ বা তামিল দেশ বলে পরিগণিত হয়।

তামিল সাহিত্যে উল্লেখ

এই অঞ্চল অনার্যদের দ্বারা অধিকৃত ছিল বলে প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে এখানকার বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে তামিল সাহিত্যে এই অঞ্চলের কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়।

রামায়ণে প্রথম উল্লেখ

রামায়ণেই প্রথম গোদাবরীর দক্ষিণ অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামচন্দ্রের লঙ্কা অভিযানের মধ্য দিয়ে সুদূর দক্ষিণে আর্য অধিকারের বিস্তারের আভাস আছে বলে অনেকে মনে করেন

পারজিটারের অভিমত

ঐতিহাসিক পারজিটার উপরের মত গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন। কারণ, রামায়ণের ঐতিহাসিক মূল্য তাঁর কাছে নেই বলেই এই মত তিনি ব্যক্ত করেছেন।

মৌর্য যুগে দাক্ষিণাত্য

প্রকৃতপক্ষে মৌর্য যুগেই উত্তর ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের সংযোগ সাধিত হয় এবং দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস সুষ্ঠু আকার ধারণ করতে থাকে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাম্রাজ্য দাক্ষিণাত্যের তিনেভেলি জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

অশোকের অধীনে দাক্ষিণাত্য

অশোকের সময় মৌর্য সাম্রাজ্য মহীশূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং সুদূর দক্ষিণের চোল, চের, পাণ্ড্য, সত্যপুত্র ও কেরলপুত্র ইত্যাদি রাজ্য অশোকের সীমান্তিক রাজ্য ছিল। এছাড়া দক্ষিণে অন্ধ্র, রাষ্ট্রীক, পাত্যানিক, ভোজ প্রভৃতি স্বতন্ত্র জাতি বাস করত।

দাক্ষিণাত্যে দুটি রাজ্যের উদ্ভব

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর দক্ষিণে দুটি শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব হয়। একটি কলিঙ্গের চেতরাজ্য ও অপরটি সাতবাহন রাজ্য।

(১) চেতরাজ্য

কলিঙ্গ রাজ্যের অবস্থান ছিল বর্তমান উড়িষ্যা এবং এই রাজ্যের পরাক্রান্ত নরপতি ছিলেন খারবেল। প্রথমে খারবেল উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অনেক রাজার দর্প খর্ব করেছিলেন। সম্ভবত মগধের শুঙ্গ বংশীয় রাজা পুষ্যমিত্রও তাঁর নিকট পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু চেতবংশের প্রাধান্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

(২) সাতবংশের অধীনে দাক্ষিণাত্য

অন্ধ্র বা সাতবাহন বংশ অচিরে দাক্ষিণাত্যের অধীশ্বর হয়। সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী। সাতবাহন বংশের সুদীর্ঘ চার শতাব্দী পর দাক্ষিণাত্যে কোনো প্রতিপত্তিশালী রাজ বংশের সন্ধান পাওয়া যায় না।

গুপ্ত বংশের অধীনে দাক্ষিণাত্য

সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায় সমুদ্রগুপ্ত দাক্ষিণাত্যের কয়েকজন রাজাকে আনুগত্য স্বীকার করিয়েছিলেন। অবশ্য এই রাজারা তাঁর অধীনে করদ রাজা ছিলেন। পরবর্তীকালে এই সব নরপতিদের উপর গুপ্তবংশ তার আধিপত্য বজায় রাখতে পারে নি।

দাক্ষিণাত্যে বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান

গুপ্তবংশের পতনের পর দাক্ষিণাত্যে পরাক্রান্ত চালুক্য, রাষ্ট্রকূট, পল্লব, চোল, পাণ্ড্য প্রভৃতি রাজবংশের উত্থান ঘটে।

উপসংহার :- বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাজবংশ দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

(FAQ) দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন স্থান দক্ষিণাপথ নামে পরিচিত?

নর্মদা ও কৃষ্ণানদীর মধ্যবর্তী স্থান।

২. সুদূর দক্ষিণ কি নামে পরিচিত?

তামিল দেশ।

৩. রামায়ণের ঐতিহাসিক মূল্য অস্বীকার করেন কে?

ঐতিহাসিক পারজিটার।

৪. দাক্ষিণাত্যে দুটি রাজবংশের নাম লেখ?

চোল, চালুকৃত, পাণ্ড্য, পল্লব বংশ।

Leave a Comment