আদি মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা

আদি মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা প্রসঙ্গে সম্পদে পরিপূর্ণ মন্দির, ছোট শহর রূপে মন্দির, মন্দিরে সুরক্ষিত সম্পদ, মন্দির মেরামতে গিল্ড, কৌটিল্যের মন্তব্য, প্রধান দায়িত্বে ব্রাহ্মণ, মন্দির লিপির তথ্য, মন্দির ও চার্চ, কৃষকদের অবস্থা, ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক ঐক্যে ভূমিকা, বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, ঋণ দান জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করা সম্পর্কে জানবো।

আদি মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা

বিষয়সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা
সম্পদ জমা কেন্দ্রমন্দির
মন্দির মেরামতগিল্ড
রক্ষণাবেক্ষণব্রাহ্মণ
আদি মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা

ভূমিকা :- আদিমধ্য যুগের ভারতের ইতিহাসে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মন্দির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন লিপি হতে জানা যায় মন্দিরগুলি বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিল।

সম্পদে পরিপূর্ণ মন্দির

মন্দিরগুলি ছিল সম্পদ জমার কেন্দ্র। মন্দিরগুলি সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। এমনকি মন্দিরের নিজস্ব দোকান ছিল এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে দান গ্রহণ করত।

ছোটো শহর রূপে মন্দির

এক একটি মন্দির ছিল ছোটো শহর এবং প্রতিটি মন্দিরের বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য স্থায়ী কর্মচারী নিয়োজিত হত। “It served the purpose of bank, received deposits of donations and endowments which it held as trust funds. Endowments included assignment of taxes on trade.”

মন্দিরে সুরক্ষিত সম্পদ

মন্দির পবিত্রস্থান হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় মন্দিরের আমানত সমূহ খুবই সুরক্ষিত ছিল। জনসাধারণ তাদের সম্পদ নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে জমা রাখত।

মন্দির মেরামতে গিল্ড

গিল্ডগুলি মন্দির মেরামতের কাজে আত্মনিয়োগ করে তাদের বিশেষ ঝোঁক দেখাত এবং তাদের সদস্যদের কাছ থেকে চুক্তিবদ্ধ পরিমাণ টাকা আদায় করত এবং তাদের নিয়মিত পাওনা দিয়ে দিত।

কৌটিল্যের মন্তব্য

কৌটিল্য বলেছেন যে দেবতাধ্যক্ষ নামক কর্মচারী “brought together all the wealths of the temples in the kingdom so that the king could use it in emergency. King also kept their treasures stored in the temples. Even kings borrowed money from temples in times of distress.

প্রধান দায়িত্বে ব্রাহ্মণ

বড়ো বড়ো মন্দিরগুলি ছিল এক একটি ধনাগার। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন ব্রাহ্মণ। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মচারী নিয়োগ হত। কৃষককে নির্দিষ্ট শস্য দেওয়ার ভিত্তিতে জমি দেওয়া হত।

মন্দির লিপির তথ্য

‘The Sahasbahu Temple Inscription’ হতে জানা যায় যে “There was a large body of staff at temples including scribes. craftsmen, singers, musicians, drammers, engineers, carmen, dancing girls and others. Potters, oilmen, washermen, florists etc. were also donated to the temples. These were attached to the manors of their lord.”

কে. ডি. রমণ কাঞ্চীর একটি মন্দির পরিচালনার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে জানা যায় “The role of temple as a landowner and also of its wealth and material power find mention in a number of Inscription of North and South India.”

মন্দির ও চার্চ

মন্দিরকে ভূমিদান প্রথার সঙ্গে মধ্যযুগের ইউরোপের চার্চে ধর্মযাজকদের বৃত্তি দেওয়ার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যারা জমি পেল তারা সমাজজীবনে বিচার ও শাসনতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করে।

কৃষকের অবস্থা

চাষ করার জন্য কৃষকের প্রয়োজন থাকলেও কৃষককে বহু রকমের ‘পরিহার’ দিতে হত এবং তার ফলে কৃষক ‘আশ্রিত-হালিক’-এ পরিণত হয়েছিল। যদিও এযুগে কৃষিকাজ সমাজে অবহেলিত ও নিন্দনীয় বলে গণ্য ছিল না। স্বভাবতই এই সূত্র ধরেই সমাজজীবনে ‘ফিউডাল অর্থনীতি’র সূচনা হয়।

ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা

শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রাহ্মণদের সমাজজীবনে অত্যাচার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে গ্রাম কৃষিজীবীরা ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছিল সে তথ্য পাওয়া যায়।

কৈবর্ত বিদ্রোহ

দিব্যর নেতৃত্বে বাংলায় পাল আমলে মহীপালের বিরুদ্ধে কৈবর্ত বিদ্রোহকে কেউ কেউ কৃষক বিদ্রোহ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। মন্দিরের প্রভুত্বের ফলে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।

রাজনৈতিক ঐক্যে ভূমিকা

মন্দিরগুলি তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের মিলনক্ষেত্র রূপে দেখা দেওয়ায় দেশে এক অস্পষ্ট রাজনৈতিক ঐক্যেরও সূচনা হয়েছিল বলা যেতে পারে।

বাণিজ্যের সম্প্রসারণ

মন্দিরকে কেন্দ্র করে নগরজীবনের সূচনা হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।

মন্দির থেকে ঋণদান

মন্দির গ্রামের সাধারণ মানুষকে অগ্রিম ঋণ দিত এবং অন্যান্যদের ১২ শতাংশ হারে সুদে ঋণ দিত। সমাজজীবনে যারা অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়ত তারা এর ফলে অনেকটাই তাদের দুর্দশা লাঘব করতে পারত।

গ্ৰামীণ স্তরবিন্যাস

অগ্রহার ব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে ব্রাহ্মণরা খাজনাবিহীন জমির অধিকারী হওয়ায় এবং মন্দিরও বহু জমির মালিক হওয়ায় ভারতবর্ষে গ্রামীণ সম্প্রদায় কৃষক ও সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপর বিভিন্ন তথ্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ আলোকসম্পাত করে।

সামন্ততান্ত্রিক উৎসের সন্ধান

ড. শর্মা ও ডি. ডি. কোসাম্বি এইখানেই সামাজিক ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার উৎসের সন্ধান করেছেন। অপরদিকে দেখা যায় “South Indian socio-economic and political structure was integrated with the control of land.”

জীবন ও জীবিকাকে নিয়ন্ত্রণ

প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় মন্দির ভারতবাসীর জীবন ও জীবিকাকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ভারতীয় জীবনদর্শন মন্দিরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।

উপসংহার :- ভারতীয় সমাজ, অর্থনীতি, স্থাপত্য ও শিল্পে মন্দিরের প্রভাব পড়েছিল গভীরভাবে। মন্দিরকে বাদ দিয়ে ভারতীয় সমাজকে কল্পনা করা যায় না।

(FAQ) আদি মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে মন্দিরের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আদি মধ্য যুগে সম্পদ জমা কেন্দ্র কোথায় ছিল?

মন্দির।

২. মন্দিরের সম্পদ সুরক্ষিত থাকার কারণ কি?

কারণ, মন্দির পবিত্র স্থান।

 ৩. মন্দির মেরামতে আত্মনিয়োগ করে কারা?

 গিল্ড গুলি।

৪. মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন কারা?

ব্রাহ্মণরা।

Leave a Comment