ঐতিহাসিক জাদুঘর হাজারদুয়ারি প্রসঙ্গে অবস্থান, নামকরণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিষ্ঠাতা, ভ্রম, কাঠামো, নির্মাণ কাল, হাজার দরজা, প্রাসাদের নীচের তলা, প্রাসাদের দ্বিতল, প্রাসাদের ত্রিতল, বিশ্বজয়ী কামান ও বিখ্যাত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিক জাদুঘর হাজারদুয়ারি
ঐতিহাসিক নিদর্শন | হাজারদুয়ারি |
প্রাক্তন নাম | বরা কোটি |
অন্য নাম | নিজামত কিলা |
প্রতিষ্ঠাতা | নবাব হুমায়ুন ঝাঁ |
অবস্থান | মুর্শিদাবাদ জেলা |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
ভূমিকা :- ব্রিটিশ যুগে বাংলার এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হাজারদুয়ারি। বিশালাকার এই প্রাসাদের প্রত্যেকটি হলঘর অনুপম সৌন্দর্যের আলোকে সজ্জিত। বাংলার নবাবি আমলের স্থাপত্যকলার এক উজ্জল প্রতিফলন হল এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ।
অবস্থান
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ নামক অঞ্চলে হাজারদুয়ারির অবস্থান। এর পাশ দিয়ে ভাগীরথী আপন রূপ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বহুদূরে।
নামকরণ
সাধারণত এই প্রাসাদটি বহু দরজাবিশিষ্ট বলে একে ‘হাজারদুয়ারি’ নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাইরে থেকে ও ভিতর থেকে হাজারদুয়ারিতে অনেক দরজা দৃশ্যমান হলেও এর মধ্যে অনেক দরজাই আদপে নকল। অথচ দূর থেকে পুরোপুরি আসল বলে মনে হয়। হাজারদুয়ারির চমক শুধু তার দুয়ারেই নয়, ঘরগুলোও মনোমুগ্ধকর।
নিয়ন্ত্রণ
হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এখন ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য একটি অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক নিদর্শন হাজারদুয়ারি। এখানে মাসে অন্তত ৩০০০০ মানুষ এর আগমন হয়।
রাজধানী ও রাজত্ব
সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ইংরেজ শাসনের আগে পর্যন্ত সুবা বাংলা, বিহার ও ওড়িষার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ শহর৷ এখানে রাজত্ব করতেন নবাবরা।
প্রতিষ্ঠাতা
মুর্শিদাবাদের নবাব হুমায়ুন ঝা ইউরোপিয় স্থপতি দিয়ে এই প্রাসাদ বানান৷ এই প্রাসাদ ইউরোপিয় ধাঁচে বানানো। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত।
ভ্রম
অনেকে ভুল করে ভাবেন যে, এই প্রাসাদ নবাব সিরাজউদ্দৌলার তৈরি। কিন্তু এই প্রাসাদ তৈরী হয় সিরাজ জমানার পরে। সিরাজের প্রাসাদের নাম ছিল হীরাঝিল প্রাসাদ, যা ভাগীরথী নদীতে তলিয়ে গেছে৷
কাঠামো
তিনতলায় বেগম ও নবাবদের থাকার ঘর, দোতলায় দরবার হল, পাঠাগার, অতিথিশালা এবং একতলায় নানা অফিসঘর ও গাড়ি রাখার জায়গা ছিল।
নির্মাণ কাল
মুর্শিদাবাদ শহরের সেরা আকর্ষণ হাজারদুয়ারি। ১৮৩৭ সালে নবাব নাজিম হুমায়ুন খাঁয়ের জন্য ৮০ ফুট উঁচু তিনতলা গম্বুজওয়ালা এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়।
হাজার দরজা
প্রকৃতপক্ষে ৯০০টি দরজা হলেও আরও ১০০টি কৃত্রিম দরজা রয়েছে প্রাসাদে। তাই নাম হাজারদুয়ারি। প্রাচীন মুর্শিদাবাদের স্মৃতি নিয়ে অপরূপ গথিকশৈলীর এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। আক্ষরিক অর্থেই এ এক ঐতিহাসিক জাদুঘর।
প্রাসাদের নীচের তলা
নীচের তলায় রয়েছে তৎকালীন নবাবদের ব্যবহৃত প্রায় ২৭০০টি অস্ত্রশস্ত্র। যার মধ্যে আলিবর্দি খাঁ ও সিরাজের তরবারি এমনকী যে ছুরিকা দিয়ে মহম্মদি বেগ সিরাজকে খুন করেছিল তা পর্যন্ত রক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়।
প্রাসাদের দ্বিতল
এই সুরম্য বিশাল রাজপ্রাসাদের দ্বিতলে দেখা যায় রুপোর সিংহাসন যেটি ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী মহারানি ভিক্টোরিয়ার দেওয়া উপহার। ১৬১টি ঝাড়যুক্ত বিশাল ঝাড়বাতির নীচে সিংহাসনে বসে নবাব দরবার পরিচালনা করতেন।
প্রাসাদের ত্রিতল
ত্রিতলে আছে নবাবী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনা দিয়ে মোড়া কোরাণ শরিফ, অমূল্য পুঁথিপত্র, আইন-ই-আকবরির পান্ডুলিপি সহ অসংখ্য বইয়ের সম্ভার। ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরও কিছু বিশিষ্ট নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এই মিউজিয়ামে।
বিশ্বজয়ী কামান
হাজারদুয়ারির চত্বরে রয়েছে ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে জনার্দন কর্মকারের তৈরি ১৮ ফুট লম্বা, আট টন ওজনের ‘জাহানকোষা’ কামান বা বিশ্বজয়ী কামান। এই কামানে একবার তোপ দাগতে ৩০ কেজি বারুদ লাগত বলে জানা যায়। এটি বাচ্চেওয়ালি কামান নামেও পরিচিত।
বিখ্যাত
মন্ত্রণাকক্ষের লুকোচুরি আয়না, দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত বিশ্ববিখ্যাত সব ঘড়ি, মার্শাল, টিশিয়ান, রাফায়েল, ভ্যান ডাইক প্রমুখ ইউরোপীয় শিল্পীর অয়েল পেন্টিং, প্রাচীন সব পাথরের মূর্তি হাজারদুয়ারিকে বিখ্যাত করে তুলেছে।
উপসংহার :- বর্তমানে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ এখানে একটা মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা বানিয়েছেন৷ তবে দুর্বল কাঠামোর জন্য দর্শকদের তিন তলায় উঠতে দেওয়া হয় না৷ শুক্রবার মিউজিয়াম বন্ধ থাকে।
(FAQ) হাজারদুয়ারি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ নামক স্থানে।
প্রাসাদে এক হাজার দরজা আছে বলে হাজার দুয়ারি নামকরণ করা হয়েছে।
নিজামত কিলা।
নবাব হুমায়ুন ঝাঁ।