মমি

মমি শব্দের উৎপত্তি, উৎপত্তি স্থান অর্থ, মমিকরণের উদ্দেশ্য, মমিকরণ প্রথা, মমি তৈরির পদ্ধতি, মমির ধরণ, মিশরের মানুষের বিশ্বাস, আধুনিক পদ্ধতি, ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি ও আধুনিক যুগের মমি সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীন মিশরের মমি প্রসঙ্গে, মমি কাকে বলে, মমি কথার অর্থ, মমি শব্দের উৎপত্তি, মমির উৎপত্তি স্থান, মমিকরণের উদ্দেশ্য, মমিকরণের প্রক্রিয়া, মমি তৈরির পদ্ধতি, মমির ধরণ, মমির গুরুত্ব ও আধুনিক যুগে মমি।

মিশরের মমি

ঐতিহাসিক নিদর্শনমমি
উৎপত্তিস্থলমিশর
অর্থপ্রাচীন সমাধি
উল্লেখযোগ্য মমিরাজা তুতানখামেনের সমাধি
মমি

ভূমিকা :- মমি হল একটি মৃতদেহ যা মানবিক প্রযুক্তির মধ্যে অথবা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস এবং হ্ময়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। মমি হল ওষুধে মাখানো কাপড়ে জড়ানো মৃতদেহ।

মমি শব্দের উৎপত্তি

মমি শব্দটি মধ্য যুগের লাতিন শব্দ mumia থেকে এসেছে, যা আরবী শব্দ মুমিয়া এবং পারস্য ফার্সি ভাষা মোম থেকে এসেছে। এর অর্থ হল বিটুমিন।

মমির উৎপত্তি স্থান

অধিকাংশ গবেষকের মতে, প্রাচীন মিশর ছিল মমির উৎপত্তিস্থল। তবে গ্রহণযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতারও এক হাজার বছর পূর্বে উত্তর চিলি এবং দক্ষিণ পেরুর চিনচেরাতে মমির সংস্কৃতি চালু হয়। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে (জাদুঘর) তাদের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ আছে।

মমির অর্থ

মমিগুলি আক্ষরিক অর্থে তাদের প্রাচীন সমাধি।

মমি করণের উদ্দেশ্য

মমিকরণের যে পন্থাই অবলম্বন করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য ছিল একটাই। – যতটা সম্ভব দেহের চামড়া ও অবয়ব সংরক্ষণ করা।

মমিকরণ প্রক্রিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মমি করে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রচলন ছিল। ইনকা, অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী, প্রাচীন ইউরোপিয়ান সভ্যতা সহ আরও অনেক সভ্যতায় মৃতদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার বছর ধরে মমিকরণ প্রথা প্রচলিত ছিল।

মমি তৈরির পদ্ধতি

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রাচীন মিশরের অধিবাসীরা মমি তৈরির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বের করেন। কয়েকটি ধাপে এই মমি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হত।

  • (১) প্রথমে মৃত ব্যক্তির নাকের মাঝে ছিদ্র করে মাথার ঘিলু ও মগজ বের করা হত। এ ক্ষেত্রে লোহা জাতীয় জিনিসের সহায়তা নেওয়া হত।
  • (২) তারপর মৃতদেহের পেটের বাম পাশের দিকে কেটে ভেতরের নাড়িভুড়ি বের করে ফেলা হত। এরপর শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন: ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলি ইত্যাদি বের করা হত।
  • (৩) অঙ্গগুলি বের করার পর আবার পেট সেলাই করে দেওয়া হত। এই কাজে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করত। কারণ, পেট সেলাই করতে গিয়ে পেটের ভেতর বাতাস ঢুকে গেলে মৃতদেহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
  • (৪) অতঃপর মৃতদেহ ও বের করা অঙ্গগুলিতে লবণ মেখে শুকানো হত। যখন সব ভালোভাবে শুকিয়ে যেত, তখন গামলা গাইন গাছের পদার্থ ও বিভিন্ন প্রকার মসলা মেখে রেখে দেওয়া হত।
  • (৫) চল্লিশ দিন পর লিনেনের কাপড় দ্বারা পুরো শরীর পেঁচিয়ে ফেলা হত এবং তারপর তারা মমিগুলিকে সংরক্ষণ করে রাখত।

মমির ধরন

মমি সাধারণত দুই ধরনের হয়। যেমন – এন্থ্রোপজেনিক মমি এবং স্পন্টেনিয়াস মমি।

(১) এন্থ্রোপজেনিক মমি

এই ধরনের মমি বলতে সেই মমিগুলোকে বুঝায় যে গুলিকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হত। সাধারণত ধর্মীয় কারণে এই ধরনের মমি তৈরি হত। অধিকাংশ মমি এর অন্তর্ভুক্ত।

(২) স্পন্টেনিয়াস মমি

এই ধরনের মমি তৈরি হত প্রাকৃতিক ভাবে, প্রচণ্ড গরম বা তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে অথবা বদ্ধ কোনো জলাভূমির মত বায়ু শূন্য অবস্থায়।

মিশরের মানুষদের বিশ্বাস

প্রাচীন মিশরে বিশ্বাস করা হত যে, মৃত্যুর পর মানুষ আরেক পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাদের বিশ্বাস ছিল এই যাত্রা শেষে পরকালে বসবাসের জন্য তাদের দেহ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি মমি

মমিকরণের এই প্রথা মূলত সমাজের উচ্চ স্তরের জন্য প্রচলিত থাকলেও মিশরের ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি প্রস্তর ছিল এই প্রথা।

প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি মমি

প্রথম দিকের মমিগুলো তৈরি করা হত প্রাকৃতিক ভাবে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালের আগের যুগে মিশরীয়রা তাদের মৃতদেহ গুলিকে গভীর কোনো গুহার ভেতরে কবর দিত। এই গুহাগুলি অনেক সংকীর্ণ হত। ফলে মরুভূমির শুষ্ক ও উত্তপ্ত বালির তাপে প্রাকৃতিক উপায়ে মৃতদেহের মমিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত।

মমি করণে আধুনিক পদ্ধতি

মিশরে মমিকরণ প্রথা হয়ে উঠে সমাজে পদমর্যাদা এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। সাংস্কৃতিক এই শ্রেণিবিন্যাসের কারণে মিশরে জাঁকজমক এবং মমিকরণে আধুনিক পদ্ধতির চল শুরু হয়।

মমি করণে সুগন্ধি ব্যবহার

চতুর্থ রাজবংশের শাসনামলে (খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ সাল) বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং সুগন্ধি তেল দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ প্রথা চালু হয়।

বর্তমান যুগে মমি

বর্তমান যুগে সবচেয়ে জনপ্রিয় মমি হিসেবে রাজা তুতানখামেনের নাম উঠে আসে। রাজা তুত এর সমাধি এবং মমি আবিষ্কৃত হয় ১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ডস কার্টার দ্বারা।

উপসংহার :- ধর্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচ্য হওয়া ছাড়াও মমি হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অংশ। মমির ধারনার ভিত্তিতে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস রচিত এবং চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

(FAQ) মমি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মমি কাকে বলে?

সংরক্ষিত মৃতদেহকে মমি বলে।

২. বিখ্যাত মমি কোনটি?

ফ্যারাও তুতানখামেনের মমি।

৩. প্রাচীন মমিটি কত বছরের পুরনো?

প্রায় ৭০০০ বছরের।

৪. মমি কি?

সংরক্ষিত মৃতদেহ।

৫. মমি শব্দের অর্থ কি?

সংরক্ষিত মৃতদেহ।

Leave a Comment