চেক প্রজাতন্ত্র দেশটি প্রসঙ্গে অবস্থান, সীমা, আয়তন ও জনসংখ্যা, রাজধানী ও শহর, ভৌগোলিক দিক, ঐতিহাসিক দিক, নামের উৎপত্তি, নামকরণ, জলবায়ু, অর্থনীতি, সরকার ব্যবস্থা, ধর্ম ও খেলাধুলা সম্পর্কে জানবো ।
স্বাধীন দেশ চেক প্রজাতন্ত্র
দেশ | চেক প্রজাতন্ত্র |
মহাদেশ | ইউরোপ |
রাজধানী | প্রাগ |
ভাষা | চেক |
রাষ্ট্রপতি | মিলোশ জেমান |
প্রধানমন্ত্রী | পেট্রা ফিয়ালা |
ভূমিকা :- মধ্য ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র হল চেক প্রজাতন্ত্র। ঐতিহাসিকভাবে দেশটি বোহেমিয়া নামে পরিচিত।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির অবস্থান
স্বাধীন দেশ চেক প্রজাতন্ত্র মূলত ৪৮° উত্তর থেকে ৫১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ১২° পূর্ব থেকে ১৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির সীমা
স্বাধীন রাষ্ট্র চেক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে জার্মানি, উত্তর-পূর্বে পোল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্বে স্লোভাকিয়া অবস্থিত।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির আয়তন ও জনসংখ্যা
দেশটির আয়তন প্রায় ৭৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির ভৌগোলিক দিক
দেশটিতে রয়েছে পাহাড়ি ভূমি যা প্রায় ৭৮,৮৭১ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলে বিস্তৃত এবং এর অধিকাংশেই নাতিশীতোষ্ণ মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় জলবায়ু বিদ্যমান।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির শহর ও রাজধানী
দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম প্রাগ। অন্যান্য শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বার্নো ও অস্ত্রাভা।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির ঐতিহাসিক দিক
- (১) নবম শতাব্দীর শেষ দিকে মোরাভিয়ার অধীনে বোহেমিয়ায় ডাচি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০০২ সালে রোমান সাম্রাজ্য-এর একটি ইম্পেরিয়াল রাজ্য হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল এই দেশটি। পরে ১১৯৮ সালে এটি একটি রাজ্যে পরিণত হয়।
- (২) ১৫২৬ সালে মোহাচের যুদ্ধের পর বোহেমিয়া সাম্রাজ্যটি ধীরে ধীরে হ্যাপসবার্গ রাজতন্ত্রের সাথে মিশে যায়। এই সময় প্রোটেস্ট্যান্ট বোহেমিয়ান বিদ্রোহ ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। এই যুদ্ধের পর হ্যাপসবার্গরা তাদের শাসনকে সুসংহত করে।
- (৩) উনিশ শতকে চেক ভূমি আরও শিল্পোন্নত হয়ে ওঠে। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর সমাপ্তি ঘটলে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির পতনের পরে এর বেশিরভাগ অংশ প্রথম চেকোস্লোভাক প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে ওঠে।
- (৪) আন্তঃযুদ্ধকালীন সময়কালে সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রক্ষাকারী মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের একমাত্র দেশ ছিল চেকোস্লোভাকিয়া। ১৯৩৮ সালে মিউনিখ চুক্তির পর নাৎসি জার্মানি চেক ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
- (৫) ১৯৪৫ সালে চেকোস্লোভাকিয়া পুনরুদ্ধার করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের পরে দেশটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই সময় সোভিয়েত রাশিয়া ছিল অন্যতম প্রধান কমিউনিস্ট রাষ্ট্র।
- (৬) ১৯৬৮ সালের প্রাগ বসন্তের সময় সরকার ও অর্থনীতির উদারীকরণের প্রচেষ্টা সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের মাধ্যমে দমন করা হয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের মখমল বিপ্লব দেশে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটায়।
- (৭) ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে যায়। এর সাংবিধানিক রাজ্যগুলি চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
স্বাধীন দেশ চেক প্রজাতন্ত্র নামের উৎপত্তি
- (১) প্রথাগত ইংরেজি নাম বোহেমিয়া শব্দটি ল্যাটিন বয়োহেমাম থেকে এসেছে। এর অর্থ বোইইদের বাড়ি। বর্তমান ইংরেজী নামটি (Czech) এসেছে চেক ভাষার শব্দ চেক(Čech) থেকে।
- (২) এই নামটি এসেছে স্লেভিয় উপজাতি চেক থেকে এবং কথিত আছে তাদের নেতা চেক -এর নাম থেকে এই নামের উৎপত্তি, যিনি রিপ পর্বতে বসতি স্থাপনের জন্য তাদের বোহেমিয়াতে নিয়ে আসেন।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির নামকরণ
- (১) ঐতিহ্যগতভাবে দেশটি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল – পশ্চিমে বোহেমিয়া, পূর্বে মোরাভিয়া এবং উত্তর-পূর্বে চেক সিলেসিয়া। ঐতিহাসিক সিলেসিয়ার ক্ষুদ্র দক্ষিণ-পূর্ব অংশ, যার অধিকাংশই এখন পোল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত।
- (২) এই দেশটি চতুর্দশ শতক থেকে বোহেমিয় সাম্রাজ্যের ভূমি নামে পরিচিত ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময় চেক বা বোহেমিয় ভূমি, বোহেমিয় সাম্রাজ্য, চেকিয়া, সেন্ট ওয়েনচেসলাস সাম্রাজ্যের ভূমি প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিল।
- (৩) ১৯১৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এর ফলে দেশটি তার স্বাধীনতা ফিরে পায়। একই দেশে চেক ও স্লোভাক জাতির মিলনকে প্রতিফলিত করার জন্য তখন দেশটির নাম রাখা হয় চেকোস্লোভাকিয়া।
- (৪) ১৯৯২ সালে চেকোস্লোভাকিয়া বিলুপ্ত হয়। এর পর চেকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সংক্ষিপ্ত হিসেবে চেকিয়া নামটি সুপারিশ করে। কিন্তু এই রূপ তখন গৃহীত না হওয়ায় দীর্ঘ নাম চেক প্রজাতন্ত্র ব্যবহৃত হতে থাকে।
- (৫) চেক সরকার ২০১৬ সালে দাপ্তরিক সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে চেকিয়া নাম অনুমোদন করে। এই সংক্ষিপ্ত নামটি জাতিসংঘ কর্তৃক তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিআইএ এবং গুগল ম্যাপসের মতো অন্যান্য সংস্থা দ্বারাও এই নামটি এখন ব্যবহৃত হয়।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ
দেশটির পশ্চিমদিকের অংশ বোহেমিয়া এলবে ও ভলতাভা নদীর অববাহিকার সমন্বয়ে গঠিত। এই অংশ নিচু পর্বতমালা। দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ স্নেজকা (১,৬০৩ মি) এখানে অবস্থিত। পূর্বদিকের অংশ মোরাভিয়াও পাহাড়ি। এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে মোরাভা নদী।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির জলবায়ু
দেশটির জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ধরনের। উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং ঠাণ্ডা, মেঘলা ও তুষারময় শীতকালবিশিষ্ট এই দেশের জলবায়ু মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যবর্তী পর্যায়ের। স্থলবেষ্টিত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটির গ্রীষ্ম ও শীতকালের তাপমাত্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির সরকার ব্যবস্থা
স্বাধীন দেশ চেক প্রজাতন্ত্র একটি বহুত্ববাদী বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। দেশটির সংসদ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। সীমিত এবং নির্দিষ্ট ক্ষমতাবিশিষ্ট আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির অর্থনৈতিক দিক
দেশটির পরিষেবা, উৎপাদন ও উদ্ভাবন ভিত্তিক একটি উন্নত, উচ্চ-আয়ের রপ্তানি-ভিত্তিক সামাজিক বাজার অর্থনীতি বর্তমান। চেক প্রজাতন্ত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ইউরোপীয় একক বাজারে অংশগ্রহণ করে।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির শিল্প
ডলনি ভিস্টোনিসের ভেনাস হল প্রাগৈতিহাসিক শিল্পের একটি সম্পদ। প্রাগের থিওডোরিক ছিলেন গথিক যুগের একজন চিত্রশিল্পী যিনি কার্লস্টেইন দুর্গ সজ্জিত করেন। ভাস্লাভ হলার, ইয়ান কুপেস্কি, কারেল স্ক্রেটা, আন্তন রাফায়েল মেংস অথবা পেট্রা ব্রান্ডেল, ভাস্কর ম্যাথিয়াস ব্রন ফার্ডিনান্ড ব্রকফ প্রমুখ বারোক যুগের শিল্পী।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির ধর্ম
দেশটির বেশিরভাগ জনগণ নাস্তিক। কিছু অধিবাসী মার্টিন লুথার-এর প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম অনুসরণ করে।
চেক প্রজাতন্ত্র দেশটির খেলাধুলা
স্বাধীন চেক প্রজাতন্ত্রের দুটি প্রধান খেলা হল ফুটবল এবং আইস হকি। সবচেয়ে বেশি দেখা ক্রীড়ানুষ্ঠান হল অলিম্পিক টুর্নামেন্ট এবং আইস হকির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। টেনিস, ভলিবল, ফ্লোরবল, গল্ফ, বল হকি, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল এবং স্কিইং অন্যান্য সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলাগুলির মধ্যে অন্যতম।
উপসংহার :- চলচ্চিত্র নির্মাতারা বার্লিন, প্যারিস এবং ভিয়েনায় পাওয়া যায় না এমন দৃশ্য গ্ৰহণের জন্য প্রাগে আসেন। এখানকার কার্লোভি ভেরি শহর ২০০৬ সালের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র ক্যাসিনো রয়েল -এর দৃশ্যধারণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
(FAQ) চেক প্রজাতন্ত্র দেশটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১ জানুয়ারি ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ।
চেক।
প্রাগ।
মিলোশ জেমান।
পেট্রা ফিয়ালা।