খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ

খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ প্রসঙ্গে অভিজাত পরিবারে জন্ম, মির-বক্সি পদে নিয়োগ, গুজরাটের ইতিহাস, ধারাবাহিক ইতিহাস লিখতে প্রয়াসী, তিন খণ্ডে রচিত গ্ৰন্থ, সাহায্য গ্ৰহণ, আকবরের প্রভাব, দীন-ই-ইলাহী এড়িয়ে যাওয়া, আকর গ্ৰন্থ ও ইতিহাসচর্চার মাইলফলক সম্পর্কে জানবো।

খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ

ঐতিহাসিকখাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ
সময়কালমুঘল যুগ
গ্ৰন্থতবাকাৎ-ই-আকবরী
উৎসর্গআকবর
খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ

ভূমিকা :- মুঘল যুগে আবুল ফজলের পরেই বিখ্যাত লেখক হিসেবে যাঁর স্থান তিনি হলেন খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ। তাঁর লেখা তবাকাৎ-ই-আকবরী-র নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

তিন খণ্ডে রচিত গ্ৰন্থ

তিন খণ্ডে রচিত তবাকাৎ-ই-আকবরী গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডে দিল্লি সুলতানির ইতিহাস এবং দ্বিতীয় খণ্ডে বাবর, হুমায়ুন ও আকবর – এই তিনজন মুঘল সম্রাটের আমলের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।

অভিজাত পরিবারে জন্ম

লেখক খুবই অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বাবর ও হুমায়ুনের শাসনকালে তিনি উচ্চপদে আসীন ছিলেন। লেখক আবুল ফজল ও বদায়ুনির খুব কাছের লোক ছিলেন।

মির-বক্সি পদে নিয়োগ

তিনি আকবরের সময় গুজরাটের বখশি পদে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে আকবর তাকে দিল্লিতে নিয়ে আসেন এবং ১৫৯১-৯২ খ্রিস্টাব্দে তাকে মির-বক্সি পদে নিয়োগ করেন।

গুজরাটের ইতিহাস

তাঁর ঐতিহাসিক অনুসন্ধিৎসা তাঁকে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের এক ধারাবাহিক ইতিহাস রচনায়, অনুপ্রাণিত করেছিল। বিশেষ করে, আকবরের রাজত্বকালে গুজরাটের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ধারাবাহিক ইতিহাস লিখতে প্রয়াসী

নিজামউদ্দিন তাঁর গ্রন্থ রচনার পটভূমিতে উল্লেখ করেছেন যে মিনহাজ-ই-সিরাজের তাবাকাত-ই-নাসিরী এবং বরনীর তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থের পরে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাতে সমগ্র ভারত উপমহাদেশের ধারাবাহিক ইতিহাস আকবরের রাজত্বকাল পর্যন্ত অনুপস্থিত। তাই তিনি পটভূমি হিসেবে গজনীর রাজবংশ থেকে আকবরের শাসনকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ইতিহাস লিখতে প্রয়াসী হন।

সাহায্য গ্ৰহণ

তিনি কোন কোন গ্রন্থের সাহায্য নিয়েছেন তাও উল্লেখ করেছেন। এই গ্রন্থে ভারত উপমহাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ স্থান পেয়েছে।

আকবরের প্রভাব

এই গ্রন্থে আকবরের যথেষ্ট প্রভাব আছে এবং আকবরকেই গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে। কিন্তু তাসত্ত্বেও তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান দ্বারা সমকালীন ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।

দীন-ই-ইলাহী এড়িয়ে যাওয়া

  • (১) গ্রন্থটি ১৫১২-৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচনা করেন। তিনি আকবরের দীন-ই-ইলাহী বা সুলহ-ই-কুল বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। আকবরের প্রায় চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাস এই গ্রন্থে বিবৃত করেছেন কিন্তু আবুল ফজলের ন্যায় সম্রাটের তোষামোদ করে নয়।
  • (২) আবার তিনি আকবরের মতের বিরোধিতা কিংবা সমালোচনাও করেন নি। সম্ভবত আকবরের রাজ অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় সুকৌশলে দীন-ই-ইলাহী বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

আকর গ্ৰন্থ

তাবাকাত-ই-আকবরী গ্রন্থটি বিশ্লেষণধর্মী না হয়ে একটি বিবরণমূলক বিস্তৃত সময়ের ইতিহাস হিসেবে গণ্য করা হয়। আচার্য যদুনাথ সরকার মন্তব্য করেছেন যে এই গ্রন্থটি মধ্যযুগের ভারতের প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং পরবর্তী ভারতীয় ও ইউরোপীয় লেখকদের নিকট আকর গ্রন্থ।

ইতিহাসচর্চার মাইলফলক

স্মিথ এই গ্রন্থটিকে শুভ ও ঘটনার রঙবিহীন রচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন, কিন্তু খালেক আহম্মদ নিজামী মধ্যযুগীয় ভারতীয় ইতিহাসচর্চার মাইলফলক হিসেবে এটিকে গণ্য করেছেন।

উপসংহার :- ইলিয়ট ও ডাউসন অনুরূপ মন্তব্য করে লেখেন, “It is the first that was composed upon a new model in which India alone forms the subject-matter of the work, of the exclusion to the other Asiatic Countries.”

(FAQ) খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মুঘল যুগে আবুল ফজলের পরেই বিখ্যাত লেখক হিসেবে কার স্থান?

খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ।

২. তবাকাৎ-ই-আকবরী কার লেখা?

খাজা নিজামউদ্দিন আহম্মদ।

৩. নিজামউদ্দিন আহম্মদ তার গ্ৰন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?

আকবর।

Leave a Comment