রুকনউদ্দিন বারবক শাহ

রুকনউদ্দিন বারবক শাহ প্রসঙ্গে হাবসী ও আরবি সেনা নিয়োগ, সেনাপতি নিয়োগ, বাংলা ও উড়িষ্যার বিরোধের কারণ, কামরূপ আক্রমণ, ত্রিহুত জয়, বাংলার সীমান্ত রক্ষা, সাহিত্য প্রীতি, ধর্ম সহিষ্ণুতা, শিল্পানুরাগ ও তার ত্রুটি সম্পর্কে জানবো।

সুলতান রুকনউদ্দিন বারবক শাহ

সুলতানরুকনউদ্দিন বারবক শাহ
বংশইলিয়াস শাহী
শাসনকাল১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি
পূর্বসুরিনাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ
উত্তরসূরিশামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ
রুকনউদ্দিন বারবক শাহ

ভূমিকা :- ইলিয়াস শাহী বংশের বিশেষ খ্যাতি সম্পন্ন রাজা ছিলেন রুকনউদ্দিন বারবক শাহ। পিতা নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর রুকনউদ্দিন বারবক শাহ বাংলায় রাজত্ব করেন।

হাবসী ও আরবি সেনা নিয়োগ

তিনি হাবসী ও আরব সেনা নিয়োগ করেন। সম্ভবত তিনি সামন্ত শক্তিগুলির ওপর নির্ভরতা কমাবার জন্য বিদেশী সেনা নিয়োগের নীতি নেন। ফেরিস্তার মতে বারবক শাহ ৮০ হাজার হাবসী সেনা আমদানি করেন। এছাড়া তার অধীনে বহু আফগান সেনাও ছিল।

সেনাপতি নিয়োগ

বারবক শাহ ইসমাইল গাজী নামে এক ধার্মিক আরবকে সেনাপতি পদে নিয়োগ করেন।

বাংলা ও উড়িষ্যার বিরোধের কারণ

  • (১) ইলিয়াস শাহের আমল থেকেই বাংলার সুলতানদের সঙ্গে উড়িষ্যার হিন্দু রাজাদের বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের জন্য বাংলার অথবা উড়িষ্যার শাসকদের আগ্রাসন নীতি শুধুমাত্র দায়ী ছিল না।
  • (২) ভৌগোলিক কারণে উভয় দেশের সীমান্ত এমনভাবে ঘন সংযুক্ত ছিল যে উভয় দেশের মধ্যে সংঘাত ছিল অবশ্যম্ভাবী। কারণ উভয় দেশের মধ্যে কোনো প্রাকৃতিক সীমারেখা ছিল না।

বাংলা ও উড়িষ্যা সংঘাত

বাংলা-উড়িষ্যা সংঘাতের ফলে কখনও বাংলার সুলতানরা সরস্বতী-সুবর্ণরেখা পার হয়ে উড়িষ্যায় অভিযান করতেন। আবার কখনও উড়িষ্যা রাজ ভাগীরথী নদীকে তার সীমান্ত করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ বাংলার মেদিনীপুর, হুগলি ও বর্ধমান দখল করতেন।

গড় মান্দারণ দখল

বারবক শাহের আমলে উড়িষ্যা রাজ গজপতি কপিলেন্দ্র হুগলী জেলার গড় মান্দারণ অধিকার করেন।

কামরূপ আক্রমণ

বারবক শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজী। সম্ভবত পূর্ব সীমান্তে কামতা বা কামরূপ রাজ্যের রাজা কামেশ্বরকে পরাস্ত করেন।

ত্রিহুত জয়

বারবক শাহ তাঁর পশ্চিম সীমান্তকে সুরক্ষিত করার জন্য ত্রিহুত অধিকার করে বুড়ি গণ্ডক নদী পর্যন্ত তাঁর সীমানা বিস্তার করেন। ত্রিহুতে তাঁর শাসনকর্তা ছিলেন কেদার রায় নামে এক হিন্দু। দণ্ডবিবেক গ্রন্থ থেকেও বারবক শাহের ত্রিহুত জয়ের কথা জানা যায়।

বাংলার সীমান্ত রক্ষা

এইভাবে তিনি বাংলার সীমান্তকে সুরক্ষিত করেন। গড় মান্দারণ দুর্গ উড়িষ্যা রাজার হাত থেকে উদ্ধার করেন।

সাহিত্য প্রীতি

  • (১) বারবক শাহ ছিলেন বিদ্যানুরাগী লোক। তিনি “আল-ফাজিল”, “আল-কামিল” উপাধি নেন। তিনি বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত বৃহস্পতি মিশ্রকে দরবারে রাখেন। বৃহস্পতি মিশ্র অমরকোষের টীকা পদচন্দ্রিকা ও কালিদাসের কয়েকটি কাব্যের টীকা ভাষ্য রচনা করেন। তিনি বৃহস্পতিকে “পণ্ডিত সাৰ্বভৌম’ উপাধি দেন।
  • (২) বারবক শাহ শ্রীকৃষ্ণ বিজয় কাব্য রচয়িতা মালাধর বসুকে “গুণরাজ খান” উপাধি দেন। ডঃ আর সি মজুমদারের মতে, রামায়ণের কবি কৃত্তিবাসও বারবক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। ফার্সী পন্ডিত ইব্রাহিম কায়ম ফারুকী বারবক শাহের সাহায্য পান। তিনি শরফনামা রচনা করেন।

ধর্মসহিষ্ণুতা

বারবক শাহ ছিলেন উদার ও ধর্মসহিষ্ণু শাসক। তিনি বহু হিন্দুকে উচ্চ রাজপদ দেন। অনন্ত সেন ছিলেন বারবক শাহের চিকিৎসক। কুলধরকে বারবক শাহ ‘শুভরাজ খান’ উপাধি দেন। এছাড়া বহু হিন্দু কর্মচারী বারবক শাহের অধীনে উচ্চপদে কাজ করতেন।

উল্লেখযোগ্য সভাসদ

বারবক শাহের সভাসদদের মধ্যে ছিলেন কেদার রায়, গন্ধর্ব রায়, মুকুন্দ প্রমুখ। মুকুন্দ ছিলেন রাজপণ্ডিত। এছাড়া অজলকা খান, আশরফ খান প্রমুখ মুসলিম অমত্যরা ছিলেন।

শিল্পানুরাগ

বারবক শাহ শিল্প-সৌন্দর্যের গুণগ্রাহী ছিলেন। তাঁর মুদ্রাগুলি খুবই সুন্দর। তার প্রাসাদ ছিল অত্যন্ত শিল্প-সুরমামণ্ডিত।

ত্রুটি

তিনি যে বিদেশী হাবসী সেনা নিয়োগ করেন। তারা অত্যাচারী হয়ে ওঠে। এটিই ছিল তার একমাত্র ত্রুটি।

উপসংহার :- ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “বাংলার সুলতানদের মধ্যে রুকনউদ্দিন বারবক শাহ নানা দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারেন।”

(FAQ) রুকনউদ্দিন বারবক শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ইলিয়াস শাহী বংশের বিশেষ খ্যাতি সম্পন্ন রাজা কে ছিলেন?

রুকন উদ্দিন বারবক শাহ।

২. বারবক শাহ কাকে গুণরাজ খান উপাধি দেন?

শ্রীকৃষ্ণ বিজয় কাব্য রচয়িতা মালাধর বসু।

৩. বারবক শাহ কি উপাধি গ্ৰহণ করেন?

আল ফাজিল, আল কামিল।

৪. বারবক শাহ কাকে পণ্ডিত সার্বভৌম উপাধি প্রদান করেন?

বৃহস্পতি মিশ্র।

Leave a Comment