শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ

শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ প্রসঙ্গে রাজত্বকাল, ধর্মপ্রাণ পন্ডিত ও শাসক, সুবিচারক, রাজ্য বিস্তার, রাজত্বকালের সমৃদ্ধি, তিনটি মহান অট্টালিকা নির্মাণ, বাইশ দরওয়াজা নির্মাণ ও তার উদারতা সম্পর্কে জানবো।

শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ

সুলতানশামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ
সিংহাসনে আরোহণ১৪৭৪ খ্রি:
বংশইলিয়াস শাহী বংশ
পূর্বসূরিবারবক শাহ
উত্তরসূরিজালালউদ্দিন ফতে শাহ
শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ

ভূমিকা :- বারবক শাহের মৃত্যুর পর ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রথমদিকে তিনিও পিতার সঙ্গে যুক্তভাবে রাজত্ব করেছিলেন।

রাজত্বকাল

ইউসুফ শাহ ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।

ধর্মপ্রাণ পণ্ডিত ও সুশাসক

বিভিন্ন তথ্যে ইউসুফ শাহকে ধর্মপ্রাণ, পণ্ডিত ও সুশাসক হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। ফিরিস্তার গ্রন্থেও এই মতের সমর্থন পাওয়া যায়।

ন্যায় বিচারক

তিনি ন্যায় বিচারক রূপেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যদিও তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। এমনকি, তাঁর মুদ্রাগুলিতে তাঁর নিজ নাম ব্যবহৃত হয় নি।

রাজ্য বিস্তার

তাঁর শিলালিপিগুলি চারদিকে যেভাবে বিস্তৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে তা থেকে অনুমিত হয়, তাঁর রাজ্য সেই সব অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছিল। তাঁর লিপিগুলি গঙ্গারামপুর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জের বিপরীতে বন্দর শহরে, ঢাকার সাত মাইল উত্তরে মিরপুর এবং হুগলি জেলার পান্ডুয়ায় পাওয়া গেছে। তাই ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, এই সমস্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাঁর অধীন ছিল।

রাজত্বকালের সমৃদ্ধি

একইভাবে দেখা যায় যে, তাঁর রাজত্বকালে যে সমস্ত অট্টালিকা ও মসজিদ নির্মিত হয়েছিল তা থেকে তাঁর রাজত্বকালের সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। ১৪৭১ খ্রিস্টাব্দে দারাসবারিতে জামি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এবং সম্ভবত তিনি এখানে একটি কলেজ নির্মাণও করেছিলেন।

তিনটি মহান অট্টালিকা নির্মাণ

কানিংহাম ও ক্রিঘটনের মতে, ইউসুফ শাহ গৌড়ে তিনটি মহান অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। উত্তর লিপিগুলি এই মতকে সমর্থন করে। এই তিনটি অট্রালিকা হল গৌড়ের বিখ্যাত লোটন মসজিদ, চামকাটি মসজিদ এবং গৌড়ের তাঁতিপাড়া মসজিদ।

ফ্রাঙ্কলিনের মন্তব্য

লোটন মসজিদের শিল্প-সুষমা বর্ণনা করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, “is unsurpassed for elegance of style, lightness of construction and tasteful decoration in any part of Hindustan.”

বাইশ দরওয়াজা

ইউসুফ শাহ হুগলি জেলার পান্ডুয়ায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মসজিদটি ‘বাইশ দরওয়াজা’ নামে পরিচিত। পাণ্ডুয়া ইউসুফ শাহ জয় করেছিলেন এবং সেখানে তাঁর শিলালিপি পাওয়া গেছে।

উদারতা

  • (১) তবে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, ইউসুফ শাহ তাঁর পিতার মতো অপর সম্প্রদায়ের প্রতি উদার ছিলেন না। এই মন্তব্য যথার্থ নয় বলেই মনে হয়। কারণ, সমসাময়িক সমস্ত তথ্যেই ইউসুফ শাহকে পণ্ডিত ও ন্যায়পরায়ণ শাসক বলে অভিহিত করা হয়েছে।
  • (২) ফিরিস্তার লেখায় দেখা যায় যে, আলিমদের তিনি সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন তাঁরা ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ের মীমাংসা করতে গিয়ে কারও পক্ষ অবলম্বন না করেন। এর থেকে তাঁর চরম ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষ্য মেলে। তাই মনে হয়, একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক কখনও পরধর্মবিদ্বেষী হতে পারেন না।

উপসংহার :- শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর এক অযোগ্য পুত্র সিকান্দার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তবে এই বিষয়ে সন্দেহ আছে।

(FAQ) শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ কে ছিলেন?

বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান।

২. শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ কখন সিংহাসনে আরোহণ করেন?

১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

৩. পাণ্ডুয়ায় বাইশ দরওয়াজা নির্মাণ করান কে?

শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ।

Leave a Comment