সুলতানি যুগের শিল্প

সুলতানি যুগের শিল্প প্রসঙ্গে রেশম শিল্প, রেশম শিল্পের উল্লেখ, কৃষিজাত শিল্প, বস্ত্র শিল্প, ধাতু শিল্প ও অন্যান্য শিল্প সম্পর্কে জানবো।

সুলতানি যুগের শিল্প

ঐতিহাসিক ঘটনাসুলতানি যুগের শিল্প
মসলিনবাংলা
পাটোলাগুজরাট
বিশ্বব্যাপী খ্যাতিইস্পাত
ভারত-এ খ্যতিবাংলার চিনি
সুলতানি যুগের শিল্প

ভূমিকা :- সুলতানি যুগে কৃষিজাত দ্রব্যের সাহায্যে কারিগর শ্রেণী নানা ধরনের শিল্পদ্রব্য তৈরি করত। কে. এম. আশরফের মতে সুলতানি যুগের যন্ত্রপাতি ও কলা-কৌশল ছিল নিম্নমানের। সুতরাং শিল্পদ্রব্যের মান খুব উঁচু ছিল না। তবে বহু কারিগর ও শিল্পী বংশানুক্রমে নিজ নিজ পেশায় নিযুক্ত থাকত।

সুলতানি যুগে রেশম শিল্প

চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে রেশম শিল্পের বিশেষ প্রচলন হয়। তসর, মুগা, খাজ রেশম তৈরি হত। চীনা রেশমের ভারতে তেমন প্রচলন ছিল না। বাংলার বিখ্যাত রেশম শিল্পের উল্লেখ ইবন বতুতার রচনায় পাওয়া যায় নি।

সুলতানি যুগে রেশম শিল্পের উল্লেখ

পঞ্চদশ শতকের চীন-এর পর্যটক মা হুয়ান বাংলায় রেশম শিল্প ও গুটিপোকার বিশেষ উল্লেখ করেছেন। তারিখ-ই-রশিদি গ্রন্থে কাশ্মীরে রেশম শিল্পের কথার উল্লেখ পাওয়া যায়।

দিল্লির সুলতানি যুগে কৃষিজাত শিল্প

কৃষিজাত দ্রব্য থেকে সুলতানি যুগে নানা শিল্পদ্রব্য তৈরি করা হত। আখ থেকে চিনি, গুড় তৈরি হত। বাংলার চিনির সারা ভারতে খ্যাতি ও চাহিদা ছিল।

সুলতানি যুগে বস্ত্র শিল্প

  • (১) তুলা থেকে বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠেছিল। তুলা থেকে প্রথমে সূতা তৈরি হত এবং এই সুতার দ্বারা কাপড় বোনা হত। চরকা দ্বারা সুতা কাটা হত। ইসামি তার ইতিহাসে চরকার কথা বলেছেন। এছাড়া ধুনুকি তার যন্ত্রে তুলাকে ধূনত। তাতে কাপড় বোনা হত।
  • (২) অত্যন্ত মোটা সুতার কাপড়ের নাম ছিল “কামিনা”। দরিদ্র লোকেরা এই কাপড় পরত। মাঝারি সুতার কাপড়ের নাম ছিল “কিরপাস” বা “কালিকো”। মিহি সুতার কাপড়ের নাম ছিল “বারিফ”। এছাড়া ছিল মিহি রেশমের কাপড় বা মসলিন। বাংলার মসলিনের সুনাম ছিল।
  • (৩) দিল্লী ও আলিগড়ে মোটা রেশম, মুগার কাপড় বোনা হত। সুতা ও রেশম মিশিয়ে “মাশরু নামে এক ধরনের কাপড় তৈরি হত। গুজরাটে খুব মিহি সুতার রেশমের কাপড় তৈরি হত। এই কাপড়ের নাম ছিল “পাটোলা”।
  • (৪) আলাউদ্দিন খলজি গুজরাট জয় করে বহু উৎকৃষ্ট “পাটোলা” অধিকার করেন। এছাড়া কাশ্মীরের শাল, কার্পেট ও পশমের জিনিসের নাম ছিল। বস্ত্রশিল্প গ্রাম ও শহরে সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিল। গুজরাটে বহু দামী তসর পাওয়া যেত।

দিল্লির সুলতানি যুগে ধাতু শিল্প

  • (১) সুলতানি যুগে ধাতু শিল্পের মধ্যে লৌহ শিল্পের খুবই চাহিদা ছিল। কর্মকাররা অস্ত্র-শস্ত্র, চাষের যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালীর দ্রব্য তৈরি করতে ব্যস্ত থাকত। এ যুগে খুব উচ্চমানের ইস্পাত তৈরি হত যার বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছিল।
  • (২) কচ্ছের লোহা ছিল খুব উন্নত মানের। রাজপুতানার সম্বর হ্রদের জল থেকে লবণ তৈরি হত। দাক্ষিণাত্যের খনিতে হীরা ও দামী পাথর পাওয়া যেত। তুতিকোরিণে মুক্তার চাষ হত।

সুলতানি যুগের অন্যান্য শিল্প

এছাড়া রঞ্জন শিল্প, চিনি, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি শিল্পদ্রব্য বিশেষত সোনা, রূপা, পিতল, কাঁসার শিল্প। চামড়া শিল্প, কাগজ, সুরা শিল্পও বেশ উন্নত ছিল।

উপসংহার :- সুলতানি যুগে অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। তবে শিল্পের প্রচলন ছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল নিম্নমানের হওয়ায় শিল্প দ্রব্যের মান বিশেষ উন্নত ছিল না।

(FAQ) দিল্লীর সুলতানি সেনাবাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন গ্ৰন্থ থেকে সুলতানি যুগের রেশম শিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়?

তারিখ-ই-রশিদি গ্রন্থে।

২. কোথাকার মসলিন কাপড়ের সুনাম ছিল?

বাংলা।

৩. সুলতানি যুগে কোন ধাতুর শিল্প বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল?

লৌহ শিল্প।

৪. গুজরাটে খুব মিহি সুতার রেশমের কাপড় কি নামে পরিচিত?

পাটোলা।

Leave a Comment