আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি প্রসঙ্গে আলাউদ্দিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদ, ভৌগোলিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার সমস্যা, ঐতিহাসিক কারণ, পরাক্রমশালী সম্রাট, প্রবল শক্তির অনুপস্থিতি, লুন্ঠন প্রবৃত্তি ও বিশাল সেনাবাহিনী সম্পর্কে জানবো।
আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি |
অন্য নাম | খলজি সাম্রাজ্যবাদ |
সুলতান | আলাউদ্দিন খলজি |
রাজত্ব | ১২৯৬-১৩১৬ খ্রি |
বংশ | খলজি বংশ |
ভূমিকা :- দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। ইলতুৎমিস-এর আমল থেকে সুলতানি সাম্রাজ্যের সীমাকে বাড়াবার বিশেষ কোনো চেষ্টা কোনো সুলতান করেন নি। আলাউদ্দিন সিংহাসনে বসবার পর এক হাতে মোঙ্গোল আক্রমণ প্রতিরোধ এবং অপর হাতে রাজ্য বিস্তার আরম্ভ করেন।
আলাউদ্দিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদ
- (১) আলাউদ্দিন ছিলেন ঘোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালোভী। তাঁর পিতৃব্য জালালউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে তিনি দেবগিরি লুণ্ঠন করে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের পরিচয় দেন। সিংহাসনে বসবার পর স্বভাবতই তাঁর উচ্চাকাক্ষা বৃদ্ধি পায়।
- (২) বরণীর মতে, তিনি সিকন্দরশাহ বা আলেকজাণ্ডার -এর মত দিগ্বিজয় করার কথা ভাবতে থাকেন। আলাউদ্দিন বলতে থাকেন যে হজরত মহম্মদ-এর ৪ অনুচর ছিল, তাঁরও ৪ সেনাপতি আছে – উলুগ খান, নসরত খান, জাফর খান ও আলাপ খান।
আলাউদ্দিন খলজির ভৌগোলিক সাম্রাজ্যবাদ
- (১) দিল্লীর বিজ্ঞ কোতোয়াল আলাই-উল-মুলক তাঁকে বোঝান যে, যখন ভারতের বিরাট অংশ সুলতানি সরকার জয় করতে পারে নি, তখন বিশ্বজয়ের কথা কল্পনা করা সুলতানের অনুচিত।
- (২) আলাউদ্দিন কোতোয়ালের এই পরামর্শ মেনে নেন এবং প্রথমে উত্তর ভারত জয়ের জন্য প্রচেষ্টা চালান। আলাউদ্দিনের রাজ্য জয় নীতির পশ্চাতে তার ভৌগোলিক সাম্রাজ্যবাদ কার্যকরী ছিল সন্দেহ নেই।
আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার সমস্যা
- (১) আলাউদ্দিন কেবলমাত্র রাজ্য লোভে ভারতে রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করেন একথা ঠিক নয়। রণথম্বোর, চিতোর প্রভৃতি দুর্গগুলির ওপর উত্তর ভারতের দিল্লীর আধিপত্য ও নিরাপত্তা নির্ভর করত। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির হাতে এই দুর্গগুলি থাকায় আলাউদ্দিন নিরাপদ বোধ করতেন না।
- (২) দিল্লী অঞ্চল থেকে গুজরাটের সঙ্গে সংযোগ রাজপুতানার মধ্য দিয়ে ছিল। গুজরাটের বন্দরের সঙ্গে যোগ রাখার জন্য উত্তর ভারতের বণিকদের কাফিলাগুলি রাজস্থানের মরু অঞ্চল পার হত। রাজপুতানার রাজপুত রাজারা দিল্লীর অধীনতা স্বীকার না করলে এই যোগাযোগ বিপন্ন হত। সুতরাং সামরিক ও অর্থনৈতিক কারণেও আলাউদ্দিন তাঁর রাজ্য বিস্তার নীতি নেন।
আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদের ঐতিহাসিক কারণ
- (১) আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদের পশ্চাতে একটি ঐতিহাসিক কারণ নিহিত ছিল। গঙ্গা-যমুনা সমতলভূমির আধিপত্য যে শক্তি ভোগ করত, ভারতের ইতিহাসে দেখা গেছে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও তারাই আধিপত্য স্থাপন করত।
- (২) প্রাচীন আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট আকবর -এর আমলেও তাই ঘটেছিল। সুতরাং উত্তর ভারতের বৃহত্তর অঞ্চলে আধিপত্য স্থাপনের পর আলাউদ্দিন বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে দৃষ্টি দেন। এটা ছিল ভারত ইতিহাসের minifest destiny, বা অবধারিত নিয়তি।
পরাক্রমশালী সম্রাট আলাউদ্দিন খলজি
আলাউদ্দিনের মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, পরাক্রমশালী সম্রাট কেবলমাত্র দিল্লী সুলতানি সাম্রাজ্যের সীমাগত স্থিতাবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন তা আশা করা যায় না।
আলাউদ্দিন খলজির সময় প্রবল শক্তির অনুপস্থিতি
সুলতান আলাউদ্দিনের আমলে উত্তরে ও দক্ষিণে এমন কোনো প্রবল শক্তি ছিল না যার ভয়ে আলাউদ্দিন হাত গুটিয়ে নেবেন। রাজপুত শক্তি তাঁকে প্রবল বাধাদানের পর পরাস্ত হলে, আলাউদ্দিনের মনোবল বেড়ে যায়। তিনি দক্ষিণের দিকে স্বভাবতই দৃষ্টি দেন।
আলাউদ্দিন খলজির লুন্ঠন প্রবৃত্তি
- (১) আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের পশ্চাতে কেবলমাত্র তার লুণ্ঠন প্রবৃত্তি কার্যকরী ছিল বলে কে. এস. লাল প্রমুখ ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেন। যদি আমরা বরণীর বক্তব্য গ্রহণ করি, তবে উত্তর-দক্ষিণ ভারত অভিযানের আগেই আলাউদ্দিন আলেকজাণ্ডারের মতই দিগ্বিজয়ের কথা ভাবতে শুরু করেন।
- (২) পরবর্তীতে তিনি মত বদলে উত্তর ভারত জয়ে মন দেন। উত্তরে মালব, রাজপুতানা জয়ের পর স্বভাবতই দক্ষিণের দিকে তাঁর দৃষ্টি পড়ে। কেবলমাত্র লুণ্ঠনের জন্যই আলাউদ্দিন দক্ষিণে অভিযান চালান এই মত অনেকে গ্রহণ করেন না।
- (৩) দক্ষিণের ধনসম্পদ লুণ্ঠনের জন্য আলাউদ্দিনের লোভ হয়ত ছিল। প্রথম দেবগিরি অভিযানের সময় থেকে তিনি দক্ষিণের অপরিমিত ধনরত্নের সন্ধান পান একথা সত্য। তৎকালীন ভৌগোলিক পরিবেশে আলাউদ্দিন দক্ষিণকে তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার অসুবিধা বুঝতেন।
আলাউদ্দিন খলজির বিশাল সেনাবাহিনী
ডঃ ইউ এন দের মতে আলাউদ্দিন দক্ষিণের হিন্দু রাজ্যগুলিকে ধাপে ধাপে করদ রাজ্যে পরিণত করার নীতি নেন। তাছাড়া আলাউদ্দিনের হাতে ছিল ৪৭৫০০০ সেনা। উত্তর ভারত জয়ের পর এই বিরাট সেনাদলকে নিষ্ক্রিয় রাখা সম্ভব ছিল না। কাজেই আলাউদ্দিন এই বাহিনীকে দক্ষিণে পাঠান।
উপসংহার :- সুতরাং আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদের পশ্চাতে তার সামরিক একনায়কতন্ত্র, রাজ্য বিস্তারের স্পৃহা, সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও সংহতি, লুণ্ঠনের লক্ষ্য এবং দক্ষিণে করদ রাজ্য স্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকরী ছিল।
(FAQ) আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আলাউদ্দিন খলজি।
জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি।
উলুগ খান, নসরৎ খান, জাফর খান ও আলপ খান।
আলাই-উল-মুলক।