সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার প্রাধান্য, চেকোস্লোভাকিয়ার পরিণতি, ভারত-পাক সমস্যার ক্ষেত্রে, চীনের ক্ষেত্রে, বর্ণবৈষম্য সমাধানের ক্ষেত্রে, একমেরুবিশিষ্ট বিশ্বের ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতায়, আর্থিক সংকট ও কর্মীসংখ্যা সম্পর্কে জানবো।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা
ঐতিহাসিক ঘটনা | সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠা দিবস | ২৪ অক্টোবর |
প্রেক্ষাপট | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
উদ্দেশ্য | বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা |
ভূমিকা:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। বর্তমানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়।
সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার প্রাধান্য
বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, যে সব সমস্যায় সোভিয়েত রাশিয়া বা আমেরিকা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, জাতিপুঞ্জ সেই সব ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকেছে। এই প্রসঙ্গে বার্লিন সংকট ও কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের মধ্যে বিবাদ, হাঙ্গেরির সংকট, চেকোশ্লোভাকিয়ার সংকট এবং পাক-ভারত বিবাদ প্রভৃতির কথা বলা যেতে পারে।
চেকোস্লোভাকিয়ার পরিণতিতে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চেকোশ্লোভাকিয়াতে রুশ প্রভাব বিস্তৃত হয় এবং রাশিয়া নানাভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। চেকোশ্লোভাকিয়া এই ব্যাপারে জাতিপুঞ্জে অভিযোগ জানায়, কিন্তু রাশিয়ার বাধাদানের ফলে কোনও প্রতিকার হয় নি।
ভারত-পাক সমস্যার ক্ষেত্রে
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরেই (১৯৪৭ খ্রিঃ) পাকিস্তান ভারতের কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করে এবং এই উদ্দেশ্যে ওই অঞ্চলে হানাদার বাহিনী পাঠিয়ে কাশ্মীরের একাংশ দখল করে। ভারত জাতিপুঞ্জে আবেদন জানায়। সেই থেকে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে একাধিকবার পাক-ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ভারত বারবার জাতিপুঞ্জে আবেদন জানিয়েছে এবং জাতিপুঞ্জ একের পর এক তদন্ত কমিশন নিযুক্ত করেছে, কিন্তু কোনও গঠনমূলক সমাধানসূত্র আজও খুঁজে পাওয়া যায় নি। পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাশ্মীর সমস্যা আজও একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন।
চীনের ক্ষেত্রে
এশীয় ভূখণ্ডে যে সব সমস্যায় চীন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সেইসব ক্ষেত্রেও জাতিপুঞ্জ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে নি। উদাহরণ হিসেবে চিন-রাশিয়া সীমান্ত বিরোধ, চিনের তিব্বত দখল, চিন-ভারত সীমান্ত বিরোধ, ভিয়েতনাম সংকট প্রভৃতির কথা বলা যায়। আসলে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায় এইসব দেশের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে।
বর্ণবৈষম্য সমাধানের ক্ষেত্রে
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও জাতিপুঞ্জ সর্বদা সফল হয় নি। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ভারত জাতিপুঞ্জে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে সেখানকার ভারতীয়দের উপর নানা অত্যাচারের অভিযোগ জানায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার জানায় যে, এটি তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে কারও হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। জাতিপুঞ্জ এক্ষেত্রেও সদর্থক কোনও ভূমিকা নেয় নি। এই ধরনের আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।
একমেরুবিশিষ্ট বিশ্বের ক্ষেত্রে
বর্তমানে জাতিপুঞ্জকে নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। আগে পৃথিবী ছিল দ্বিমেরুবিশিষ্ট। সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙনের পর বর্তমানে বিশ্ব একমেরুবিশিষ্ট। মার্কিন আধিপত্যবাদ আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতায়
নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সর্বেসর্বা, অন্য চার সদস্য নীরব দর্শকমাত্র। ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় সংকট-এর সময় থেকে ‘বিশ্বশান্তি’-র নামে নিজ স্বার্থে যুদ্ধ করেছে আমেরিকা। এক্ষেত্রে সৈন্য ও রসদ জুগিয়েছে জাতিপুঞ্জ।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের আর্থিক সংকট
জাতিপুঞ্জের আর্থিক সংকট প্রবল। জাতিপুঞ্জ চলে মার্কিন অর্থে। আর্থিক দিক থেকে জাতিপুঞ্জ সম্পূর্ণভাবে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা কর্মীসংখ্যা
জাতিপুঞ্জের কর্মীসংখ্যা একটি বিরাট সমস্যা। বর্তমানে এর কর্মীসংখ্যা ৫৩ হাজার। বছরে বেতন দিতে ব্যয় হয় ১০ বিলিয়ন ডলার। এই বোঝা বহন করা সত্যিই দুরূহ।
উপসংহার:- নানা ত্রুটি ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিপুঞ্জের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। দিন দিন এর সদস্য সংখ্যা ও কর্মের পরিধি বিস্তৃততর হচ্ছে। আশা করা যায় যে, নতুন পৃথিবী গড়ার কাজে এই সংস্থা পথ-নির্দেশকের কাজ করবে।
(FAQ) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে।
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।