১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত বার্লিন চুক্তি বা বার্লিন সন্ধি প্রসঙ্গে বার্লিন কংগ্রেস, বৃহৎ কূটনীতিক সম্মেলন, যোগদানকারী রাষ্ট্র, জার্মানি ও বিসমার্কের মর্যাদা বৃদ্ধি, সাধু দালাল, বার্লিন চুক্তি সম্পাদন, বার্লিন চুক্তির শর্তাবলী, রাশিয়ার অগ্ৰগতি প্রতিহত, ডিসরেলির ঘোষণা, বহু সমস্যার বীজ নিহিত ও বার্লিন চুক্তির সমালোচনা সম্পর্কে জানবো।
বার্লিন চুক্তি বা বার্লিন সন্ধি
ঐতিহাসিক ঘটনা | বার্লিন চুক্তি |
সময়কাল | জুলাই, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | জার্মানির বার্লিন |
উদ্যোক্তা | বিসমার্ক |
স্বাক্ষরকারী দেশ | রাশিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইতালি ও জার্মানি |
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |
ভূমিকা:- ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্কের উদ্যোগে জার্মানির বার্লিন শহরে বার্লিন চুক্তি বা বার্লিন সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
বার্লিন কংগ্রেস
১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জুন জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্কের সভাপতিত্বে জার্মানির বার্লিন শহরে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহৃত হয়। এই সম্মেলন ‘বার্লিন কংগ্রেস’ নামে খ্যাত।
বৃহৎ কূটনীতিক সম্মেলন
১৮১৪-১৮১৫ সাল এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাই সম্মেলন -এর মধ্যবর্তীকালে বার্লিন সম্মেলনের মতো এত বৃহৎ কূটনৈতিক সম্মেলন আর অনুষ্ঠিত হয় নি।
বার্লিন কংগ্রেসে যোগদানকারী রাষ্ট্র
রাশিয়া, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি – এই সাতটি দেশ এবং এইসব রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ কূটনীতিকরা এই সম্মেলনে যোগদান করেন।
বার্লিন কংগ্রেসে জার্মানি ও বিসমার্কের মর্যাদা বৃদ্ধি
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জার্মানি এবং তার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্কের মর্যাদা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
বার্লিন কংগ্রেসের সাধু দালাল বিসমার্ক
বিসমার্ক বলেন যে, এই সম্মেলনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিনি ‘সাধু দালাল’ -এর ভূমিকা পালন করেন।
বার্লিন চুক্তি
দীর্ঘ এক মাস আলাপ আলোচনার পর সমবেত প্রতিনিধিমণ্ডলী স্যানস্টিফানোর সন্ধি সংশোধন করে ‘বার্লিন চুক্তি’ সম্পাদন করেন (১৮৭৮ খ্রিঃ)।
বার্লিন চুক্তির শর্তাবলী
এই চুক্তির শর্তানুসারে,
- (১) সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো ও রুমানিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
- (২) বসনিয়া ও হারজেগোভিনার উপর অস্ট্রিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
- (৩) স্যানস্টিফানো সন্ধি দ্বারা নব-প্রতিষ্ঠিত ‘বৃহৎ বুলগেরিয়া’ রাজ্যকে তিনভাগে ভাগ হয় – (ক) ম্যাসিডোনিয়া তুরস্ককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
- (৪) স্থির হয় যে, পূর্ব রুমেলিয়া তুরস্কের অধীনে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে এবং তা একজন খ্রিস্টান শাসক কর্তৃক শাসিত হবে।
- (৫) বাকি অংশ নিয়ে বুলগেরিয়া গঠিত হবে এবং তাকে নামেমাত্র তুরস্কের অধীনে রাখা হয়।
- (৬) রাশিয়া পায় বেসারাবিয়া, বাটুম, কারস্ এবং আর্মেনিয়ার কিছু অংশ।
- (৭) ইংল্যান্ড পায় সাইপ্রাস এবং ফ্রান্সকে ভবিষ্যতে টিউনিস অধিকারের অনুমতি দেওয়া হয়।
- (৮) গ্রিস যাতে থেসালি ও এপিরাস পেতে পারে তার জন্য তুরস্কের সুলতানের কাছে কেন জানানো হয় ।
বার্লিন সন্ধি দ্বারা রাশিয়ার অগ্ৰগতি প্রতিহত
বার্লিন সন্ধি রুশ-তুর্কি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ইউরোপ-এ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কি সাম্রাজ্য-এর অখণ্ডতার নীতি গৃহীত হয় এবং বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রগতি প্রতিহত হয়। এই কারণে
কংগ্রেস থেকে ফিরে ডিসরেলির ঘোষণা
ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডিসরেলি বার্লিন কংগ্রেস থেকে ফিরে সদম্ভে ঘোষণা করেন যে, “আমি সম্মানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি”। তিনি বলেন যে, ইরোপে তুরস্ক তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে”।
বার্লিন সন্ধিতে বহু সমস্যার বীজ নিহিত
ডিসরেলির এই দাবি সম্পূর্ণ যথার্থ নয় – বরং বলা যায় যে, বার্লিন সন্ধির দ্বারা পূর্বাঞ্চল সমস্যার কোনও সমাধান হয় নি, উপরন্তু সমস্যা জটিলতর হয়ে ওঠে। এই সন্ধিতে পরবর্তীকালের বহু সমস্যার বীজ নিহিত ছিল।
বার্লিন সন্ধির সমালোচনা
নানাভাবে বার্লিন চুক্তির সমালোচনা করা হয়। বলা হয় যে, এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের অখন্ডতা রক্ষিত হয়নি, বলকান জাতীয়তাবাদ উপেক্ষিত হয়, রাশিয়ার খুব বৃদ্ধি পায় এবং নতুন আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সূচনা হয়।
উপসংহার:- অধ্যাপক এ জে পি টেলর বলেন, “বার্লিন কংগ্রেস ইউরোপের ইতিহাসে এক জলবিভাজিকা। এর সামনে রয়েছে তিরিশ বছরের দ্বন্দ্ব এবং পিছনে রয়েছে চৌত্রিশ বছরের শান্তি।”
১৬ জুন, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন শহরে।
জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্ক।
জুলাই, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে।
রাশিয়া, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ইতালি ও জার্মানি।