মহাবিদ্রোহের বিস্তার

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সূচনা, বহরমপুরে বিস্তার, ব্যারাকপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, মীরাটে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, দিল্লিতে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, কানপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, অযোধ্যায় মহাবিদ্রোহের বিস্তার, ঝাঁসী, লক্ষ্মৌ, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে মহাবিদ্রোহের বিস্তার সম্পর্কে জানব।

মহাবিদ্রোহের বিস্তার প্রসঙ্গে মহাবিদ্রোহের প্রথম সূচনা, মহাবিদ্রোহের কেন্দ্র, মহাবিদ্রোহের সময়কাল, মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি, বহরমপুরে মহাবিদ্রোহের সূচনা, ব্যারাকপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, মীরাটে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, দিল্লিতে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, কানপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার, অযোধ্যায় মহাবিদ্রোহের বিস্তার, মহাবিদ্রোহের দ্রুতগতি ও অন্যান্য স্থানে মহাবিদ্রোহের বিস্তার।

মহাবিদ্রোহের বিস্তার

ঐতিহাসিক ঘটনামহাবিদ্রোহের বিস্তার
বহরমপুর সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
ব্যারাকপুর সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ২৯ মার্চ, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
মীরাটে বিদ্রোহ১০ মে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
দিল্লিতে বিদ্রোহ১১ মে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
অযোধ্যায় বিদ্রোহজুন, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
মহাবিদ্রোহের বিস্তার

ভূমিকা :- মহাবিদ্রোহ প্রথম শুরু হয় বহরমপুর ও ব্যারাকপুরের সেনানিবাসে। অবশ্য তাদের কাজকর্মকে পরিকল্পিত বিদ্রোহ বলে স্বীকার করা যায় না।

বহরমপুরে মহাবিদ্রোহের সূচনা

  • (১) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদ -এর বহরমপুর সেনানিবাসের ১১ নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি চর্বি-মাখানো টোটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
  • (২) ইংরেজ ঐতিহাসিক জন কে বলেন যে, নিকটবর্তী মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ সিপাহিদের সঙ্গে যোগ দেয়। সিপাহিরা নবাবের বংশধর মনসুর আলি খাঁ-র জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তিনি আসেন নি।
  • (৩) বহরমপুর সেনানিবাসের এই সব কাজকর্মকে প্রতিবাদমূলক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, পরিকল্পিত বিদ্রোহ এগুলি নয়।

ব্যারাকপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) ২৯ শে মার্চ ব্যারাকপুরের সেনানিবাসে ৩৪ নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি -র মঙ্গল পাণ্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
  • (২) মঙ্গল পাণ্ডের হাতে কয়েকজন ইংরেজ সামরিক কর্মচারী নিহত হন এবং সরকার এই রেজিমেন্টটি ভেঙ্গে দেন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। মঙ্গল পাণ্ডেকে বিদ্রোহের প্রথম শহিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • (২) ব্যারাকপুর সেনানিবাসের এই সব কাজকর্মকে প্রতিবাদমূলক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, পরিকল্পিত বিদ্রোহ এগুলি নয়।

মীরাটে মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মে মীরাট সেনানিবাসেই প্রকৃতপক্ষে ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়।
  • (২) ২৪শে এপ্রিল কুচকাওয়াজের সময় মীরাটে দেশীয় অশ্বারোহী বাহিনীর ৯০ জন সৈনিক চর্বি-মাখানো কার্তুজ গ্রহণে অস্বীকৃত হয়।
  • (৩)৯ই মে সামরিক আদালতের বিচারে ৮৫ জনসৈন্যকে পদচ্যুত করে দশ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর ফলে সেনাবাহিনীতে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়।
  • (৪) ১০ই মে মীরাটের সেনাদল বিদ্রোহ করে। তাদের হাতে ইংরেজ অফিসাররা নিহত হন।তারা জেল ভেঙে সহকর্মীদের মুক্ত করে এবং দিল্লির দিকে অগ্রসর হয়।

দিল্লিতে মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) মিরাটের বিদ্রোহী সৈন্যরা১১ই মে দিল্লি পৌঁছলে, দিল্লির সেনাদল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।ইউরোপীয় অফিসারদের হত্যা করে তারা দিল্লি দখল করে।
  • (২) ইংরেজের বৃত্তিভোগীও ক্ষমতাচ্যুত মোগল বংশধর বৃদ্ধ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-কে তারা ‘ভারত -এর সম্রাট” বলে ঘোষণা করে।
  • (৩) অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি এই অভাবনীয় সম্মান গ্রহণ করেন এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও মহাবিদ্রোহের প্রতীকে পরিণত হন। বিদ্রোহীরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারে নি এবং তিনিও বিপ্লব পরিচালনা বা সংগঠনে কোনোও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন নি।
  • (৪) সম্রাটের আদেশ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী দিল্লির বিভিন্ন অংশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসলীলা চালায়।দিল্লি মহাবিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।

মহাবিদ্রোহের দ্রুত গতি

মহাবিদ্রোহ ক্রমে অযোধ্যা, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, শাহজাহানপুর, মোরাদাবাদ, রোহিলখণ্ড, বারাণসী, এলাহাবাদ, ফতেপুর, ফৈজাবাদ, বেরিলি, ঝাঁসি, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

কানপুরে মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) কানপুরে সেনাবাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে জুন মাসে। এখানে বিদ্রোহে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন প্রাক্তন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর দত্তকপুত্র নানাসাহেব।
  • (২) তিনি নিজেকে ‘পেশোয়া’ বলে ঘোষণা করেন। তাঁর দুই বিশ্বস্ত অনুচর ছিলেন তাঁতিয়া তোপি ও আজিমুল্লা।
  • (৩) ২৭শে জুন গঙ্গাতীরে সতীচৌরা ঘাটে নদী পার হওয়ার সময় বহু ইংরেজ সামরিক-বেসামরিক নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।এর দায়িত্ব নানাসাহেব অস্বীকার করতে পারেন না।

অযোধ্যায় মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) সিপাহি বিদ্রোহে অযোধ্যা ছিল এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। অযোধ্যায় বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করে রাজ্যচ্যুত নবাব পরিবার।
  • (২) প্রাক্তন নবাব ওয়াজির আলি তখন কলকাতায় বন্দি ছিলেন। এমতাবস্থায় বেগম হজরৎ মহলের নেতৃত্বে অযোধ্যাবাসী বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
  • (৩) সিপাহি, তালুকদার ও জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত যোগদানে অযোধ্যার বিদ্রোহ গণ-বিদ্রোহে পরিণত হয়।

অন্যান্য স্থানে মহাবিদ্রোহের বিস্তার

  • (১) রোহিলখণ্ড, রাণী লক্ষ্মী বাঈ -এর ঝাসি, বিহারের আরা, সাহাবাদ, গয়া ছিল বিপ্লবের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র।
  • (২) সামান্য দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নর্মদা নদীর দক্ষিণাঞ্চল, রাজপুতানা, পাঞ্জাব ও কাশ্মীর ছিল শান্ত।

উপসংহার :- এক কথায়, উত্তরে পাঞ্জাব থেকে দক্ষিণে নর্মদ উপত্যকা এবং পূর্বে বিহার থেকে পশ্চিমে রাজপুতানা পর্যন্তভারতের এক বিস্তৃত অঞ্চলে এই বিদ্রোহ পরিব্যাপ্ত হয়।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মহাবিদ্রোহের বিস্তার” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) মহাবিদ্রোহের বিস্তার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মহাবিদ্রোহের সূচনা হয় কোথায়?

২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বহরমপুর সেনানিবাসে।

২. মঙ্গল পাণ্ডে কবে কোথায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন?

২৯ মার্চ, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুর সেনানিবাসে।

৩. মহাবিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?

মঙ্গল পাণ্ডে।

৪. প্রকৃতপক্ষে মহাবিদ্রোহ কবে কোথায় শুরু হয়?

১০ মে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মীরাট সেনানিবাসে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনা বা গল্পগুলি

Leave a Comment