১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ দমনে কলকাতায় ইংরেজ সেনা সমাবেশ, দিল্লিতে ইংরেজ সেনা প্রেরণ, লক্ষ্মৌ-এ মহাবিদ্রোহ দমন, কানপুরে মহাবিদ্রোহ দমন, বেরিলিতে মহাবিদ্রোহ দমন ও মধ্যভারতে মহাবিদ্রোহ দমন সম্পর্কে জানবো।
মহাবিদ্রোহ দমন প্রসঙ্গে কলকাতায় ইংরেজ সেনা সমাবেশ, মহাবিদ্রোহ দমনে দিল্লিতে ইংরেজ সেনা প্রেরণ, মহাবিদ্রোহ দমনে লক্ষ্মৌএর বিদ্রোহ দমন, মহাবিদ্রোহ দমনে কানপুরের বিদ্রোহ দমন, মহাবিদ্রোহ দমনে বেরিলিতে বিদ্রোহ দমন, মধ্যভারতে মহাবিদ্রোহ দমন।
মহাবিদ্রোহ দমন
ঐতিহাসিক ঘটনা | মহাবিদ্রোহ দমন |
দিল্লি দখল | জন নিকলসন |
লক্ষ্মৌ দখল | স্যার কলিন ক্যাম্পবেল |
কানপুর দখল | স্যার হেনরি হ্যাভলক ও স্যার কলিন ক্যাম্পবেল |
মধ্যভারত দখল | স্যার হিউ রোজ |
ভূমিকা :- বিদ্রোহ দমনের জন্য সরকার পক্ষে প্রবল তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এক সর্বাত্মক পরিকল্পনা নিয়ে নিষ্ঠুর দমননীতির মাধ্যমে সরকার বিদ্রোহ দমনে অগ্রসর হয়।
কলকাতায় ইংরেজ সেনা সমাবেশ
বড়লাট লর্ড ক্যানিং-এর নির্দেশে বোম্বাই, মাদ্রাজ ও পেগু থেকে যত বেশি সম্ভব সেনা এনে কলকাতায়জড়ো করা হয়। চীন -এর দিকে আগুয়ান একদল ব্রিটিশ সৈন্যের যাত্রাপথ পরিবর্তন করে কলকাতায় আনা হয়।
দিল্লিতে ইংরেজ সেনা প্রেরণ
- (১) সরকারের কাছে দিল্লি দখল করা ছিল মর্যাদার প্রতীক। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন আম্বালা থেকে আগত একদল ইংরেজ সেনার হাতে বিদ্রোহীদের একটি দল পরাজিত হয়।
- (২) বিখ্যাত সেনানায়ক জন নিকলসনের নেতৃত্বে পাঞ্জাব থেকে একদল ইংরেজ সেনা দিল্লির উপকণ্ঠে উপস্থিত হয়।দুই পক্ষে বেশ কিছুদিন যুদ্ধের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২০শে সেপ্টেম্বর ইংরেজ বাহিনী দিল্লি দখল করে।
- (৩) যুদ্ধকালে প্রাপ্ত আঘাতের ফলে নিকলসন মারা যান। ইংরেজবাহিনী দিল্লিতে নির্মম হত্যাকাণ্ড ও লুঠতরাজ চালায়।
- (৪) হুমায়ুন -এর সমাধিক্ষেত্রে আত্মগোপনকারী বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহকে সপরিবারে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইংরেজ অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান হডসন অকারণে বাহাদুর শাহের দুই পুত্র ও পৌত্রদের গুলি করে হত্যা করেন।
- (৫) যুদ্ধপরাধী হিসেবে বাহাদুর শাহকে বন্দি করে দক্ষিণ বার্মার মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ৮৭ বছর হয়সে তিনি সেখানে প্রাণত্যাগ করেন। এইভাবে মোগল রাজবংশের বিলুপ্তি ঘটে।
লক্ষ্মৌ-এ বিদ্রোহ দমন
- (১) ৩০ শে মে লক্ষ্ণৌ-এ বিদ্রোহ শুরু হলে এখানকার চীফ কমিশনার স্যার হেনরি লরেন্সস্থানীয় ইউরোপীয় ও অনুগত সৈনিকদের নিয়ে ‘রেসিডেন্সি’-তে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
- (২) এই সময় বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে লরেন্সের মৃত্যু হলে ব্রিগেডিয়ার ইংলিস ইংরেজ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হন।
- (৩) অবরুদ্ধ রেসিডেন্সিকে মুক্ত করার জন্য প্রথমে স্যার হেনরি হ্যাভলকএবং পরে স্যার জেমস আউট্রাম-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত স্যার কলিন ক্যাম্পবেল ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে লক্ষ্ণৌ দখলে সক্ষম হন।
কানপুরে বিদ্রোহ দমন
- (১) কানপুরে নানাসাহেবের নেতৃত্বে বিদ্রোহ পরিচালিত হচ্ছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে স্যার হেনরি হ্যাভলক কানপুর দখল করলে নানাসাহেব পলায়ন করেন।
- (২) এরপর হ্যাভলক লক্ষ্ণৌ অভিমুখে অগ্রসর হলে তাঁতিয়া তোপি নভেম্বর মাসে কানপুরের দখল নেন। শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বর মাসে স্যার কলিন ক্যাম্পবেল কানপুর পুনর্দখল করেন।
বেরিলতে বিদ্রোহ দমন
বেরিলি প্রায় এক বছর বিদ্রোহীদের দখলে ছিল। স্যার ক্যাম্পবেল বেরিলি পুনর্দখল করলে বিদ্রোহীদের অনেকে নেপাল -এ পলায়ন করেন।
মধ্যভারতে বিদ্রোহ দমন
- (১) বুন্দেলখণ্ড ও মধ্যভারতে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ ও নানাসাহেবের অনুচর তাঁতিয়া তোপি।
- (২) এই অঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব পড়ে ইংরেজ সেনাপতি স্যার হিউ রোজ-এর ওপর। হিউরোজ বুন্দেলখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ঝাঁসি ও কাল্পি অধিকার করেন।
- (৩) এরপর লক্ষ্মীবাঈ ও তাঁতিয়া তোপি মিলিতভাবে অভিযান চালিয়ে ইংরেজদের মিত্র সিন্ধিয়াকে বিতাড়িত করে গোয়ালিয়র দখল করেন। তাঁরা এখানে নানাসাহেবকে ‘পেশোয়া’ বলে ঘোষণা করেন।
- (৪) হিউ রোজ দ্রুত গতিতে গোয়ালিয়র অভিযানে অগ্রসর হন। ১৮৫৮-র জুন মাসে তিনি গোয়ালিয়র পুনরুদ্ধার করেন। এই যুদ্ধে লক্ষ্মীবাঈ মৃত্যুবরণ করেন।
- (৫) তাঁতিয়া তোপি নানা স্থানে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের হাতে ধরা পড়েন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। নানাসাহেব নেপালে পলায়ন করেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অন্যান্য বিদ্রোহী নেতারা প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন।
উপসংহার :- এই ভাবে নিষ্ঠুর দমননীতির মাধ্যমে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যে সমগ্র ভারতে বিদ্রোহ দমিত হয়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মহাবিদ্রোহ দমন” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) মহাবিদ্রোহ দমন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জন নিকলসন।
স্যার কলিন ক্যাম্পবেল।
স্যার হেনরি হ্যাভলক ও স্যার কলিন ক্যাম্পবেল।
স্যার হিউ রোজ।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনা বা গল্পগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ