শক-পার্থিয় শাসন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ক্ষত্রপতন্ত্র, অধীনস্থ কর্মচারী, যুগ্ম রাজত্ব, বিস্তৃততর সাম্রাজ্য স্থাপন, বাণিজ্য, আমদানি, রপ্তানি, গিল্ড ব্যবস্থা, মুদ্রা, শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।
শক-পার্থিয় শাসন ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | শক-পার্থিয় শাসন ব্যবস্থা |
শাসনকেন্দ্র | তক্ষশীলা, মথুরা |
মুদ্রা | দ্বিভাষিক |
অনুরাগী | সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য |
শক রাজা | রুদ্রদামন, নহপান |
পার্থিয় রাজা | গণ্ডোফার্নিস |
ভূমিকা :- শক-পার্থিয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষত্রপ দ্বারা প্রদেশগুলিকে শাসন করা হত। ক্ষত্রপ কথাটি পারসিক ক্ষত্রপবন থেকে এসেছে। ইন্দো-গ্রীক রাজা মিনান্দার ক্ষত্রপ দ্বারা রাজ্য শাসন করতেন একথা বলা হয়েছে।
শক-পার্থিয় যুগে ক্ষত্রপতন্ত্র
- (১) শক-পার্থিয়রাও ক্ষত্রপ প্রথাকে একটি নিয়মিত ব্যবস্থায় পরিণত করে। উত্তরে তক্ষশীলা ও মথুরা, পশ্চিমে উজ্জয়িনীতে ক্ষত্রপদের শাসনকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল। ক্ষত্ৰপ পদগুলি এই সকল স্থানে বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে। শক-ক্ষত্রপরা শাসনকার্যে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত।
- (২) কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনভাবেই শাসন করত। পরবর্তীকালে ক্ষহরত ও কার্দমক ক্ষত্রপরা রাজার উপাধি গ্রহণ করে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে। কেউ কেউ বলেন যে, এই ক্ষত্রপরা কুষাণ সম্রাটের অধীনে ছিল। এ সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায়নি।
শক-পার্থিয় শাসন ব্যবস্থায় অধীনস্থ কর্মচারী
ক্ষত্রপরা শক্তিশালী ও স্বাধীনতা পেলে মহাক্ষত্রপ উপাধি নিত। ক্ষত্রপদের অধীন সামন্ত কর্মচারীরা শাসনকার্য চালাত। ইন্দো-গ্রীক যুগ থেকে মেরিডার্ক প্রভৃতি জেলাস্তরের যে সকল কর্মচারীর কথা জানা যায়, ক্ষত্রপরা সেই পদগুলি অব্যাহত রাখে। এছাড়া তারা অমাত্য, মহাসেনাপতি প্রভৃতি ভারতীয় উপাধিধারী ভারতীয় কর্মচারীদেরও নিয়োগ করত।
শক-পার্থিয় যুগে যুগ্ম রাজত্ব
আলোচ্য শক-পার্থিয় যুগে শক রাজাদের উপাধিগত মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাজাধিরাজ, চক্রবর্তী প্রভৃতি উপাধি ক্ষত্রপরা নেন। শকরা যুগ্মরাজ প্রথার প্রচলন করে। রাজা জীবিতকালে পুত্র বা পৌত্রের সঙ্গে যুগ্মভাবে রাজত্ব করতেন। চষ্টন তাঁর পৌত্র রুদ্রদামনের সঙ্গে যুগ্মভাবে রাজত্ব করেন।
শক-পার্থিয় যুগে বিস্তৃততর সাম্রাজ্য স্থাপন
ভারত -এ কুষাণ শাষন থেকে শক শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। কুষাণগণ অপেক্ষা বিস্তৃততর সাম্রাজ্য শকরা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। উত্তর ভারত ছাড়াও তারা দাক্ষিণাত্যের কিছু অংশ জয় করে এবং গর্বিত সাতবাহন বংশের গর্ব খর্ব করে।
শক-পার্থিয় যুগে বাণিজ্য
ভারতীয় অর্থনীতিতে শকদের অবদান কম ছিল না। বারিগাজা বন্দর থেকে শকরা সমুদ্রপথে পশ্চিম এশিয়া, মিশর ও ইউরোপ -এর সঙ্গে বাণিজ্য করত। শক রাজারা মূলতানের পথে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত বলে জানা যায়।
শক-পার্থিয় যুগে আমদানি-রপ্তানি
বারিগাজায় বিদেশ থেকে মূল্যবান বিলাস ও প্রসাধন দ্রব্য এবং নর্তক নর্তকী আমদানি হত। ভারত থেকে রান্নার মশলা, সুগন্ধী মশলা, রেশমের কাপড়, সূতী কাপড়, চিনি, কর্পূর, চন্দন প্রভৃতি রপ্তানি হত।
শক-পার্থিয় যুগে নিগম বা গিল্ড
নাসিক লিপি থেকে জানা যায় যে, শক রাজাদের আমলে বাণিজ্যের ও শিল্পের উন্নতি এত হয় যে, বণিক ও কারিগরদের নিগম বা গিল্ড বা সঙ্ঘ বেশ গড়ে ওঠে। নিগম বা গিল্ডগুলি ব্যাঙ্কের কাজ করত। নাসিকের নিগমে নহপানের জামাতা ঋষভদত্ত টাকা আমানত করেন বলে জানা যায়। নিগমগুলি সুদে টাকা ধার দিত।
শক-পার্থিয় যুগের মুদ্রা
শখ দ্বিভাষিক মুদ্রা গুলির দুই পিঠে দুই রাজার নাম থাকত। মুদ্রাগুলি ইন্দো-গ্রীক মুদ্রার অনুকরণে ছাঁচে ঢেলে তৈরি করা হত। মুদ্রাগুলি অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হত। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত -এর মুদ্রায় শক মুদ্রার প্রভাব দেখা যায়।
শক-পার্থিয় যুগে ভাষা ও সংস্কৃতি
শক মহিলারা গ্রীক ভাষায় কথা বলতে পারতেন বলে মনে করা হয়। শকরা সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগী ছিল।
শক-পার্থিয় যুগে শিল্প ও সংস্কৃতি
শকদের চেষ্টায় গান্ধার শিল্প -এর উন্নতি ঘটেছিল। শকরা ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিল। ক্রমে তারা ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সামিল হয়ে যায়। স্মিথের মতে, বর্তমান রাজপুতদের পূর্বপুরুষেরা অনেক ক্ষেত্রে শক ছিল।
উপসংহার :- উজ্জয়িনীতে সংস্কৃত সাহিত্য ও নাটকের চর্চায় শক-ক্ষত্রপদের উৎসাহ বিশেষ কাজ করেছিল। ভারতীয় সঙ্গীতেও শকদের অবদান ছিল বলে সঙ্গীত শাস্ত্রে উল্লেখ দেখা যায়। ভারতীয় রাগ-রাগিণীতে শকদের সৃষ্টি মিশে গিয়েছিল।
(FAQ) শক-পার্থিয় শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ক্ষত্রপ দ্বারা।
মথুরা, তক্ষশীলা, উজ্জয়িনী।
নহপান ও রুদ্রদামন।
গণ্ডোফার্নিস।