আদিম মানুষের পরিযান প্রসঙ্গে আন্তর্মহাদেশীয় পরিযান, পরিযানের কারণ, পরিযানের পদ্ধতি, দুটি গুরুত্বপূর্ণ বহির্গমন বা পরিযান, ইউরোপ মহাদেশে যাত্রা হল এশিয়া মহাদেশে যাত্রা, উত্তর আমেরিকায় যাত্রা, দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা ও অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রা সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন কালে আদিম মানুষের পরিযান প্রসঙ্গে আদিম মানুষের আন্তর্মহাদেশীয় পরিযান, আদিম মানুষের পরিযানের কারণ, আদিম মানুষের পরিযানের পদ্ধতি, আদিম মানুষের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিযান সম্পর্কে জানব।
আদিম মানুষের পরিযান
ঐতিহাসিক ঘটনা | আদিম মানুষের পরিযান |
কারণ | অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধান |
পদ্ধতি | স্থলভাগ ও জলভাগের উপর দিয়ে |
প্রথম পরিযান | হোমো ইরেক্টাস প্রজাতি |
পরিযানে বিরত | লুসি প্রজাতি |
ভূমিকা :- প্লেইস্টোসিন যুগে পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে আফ্রিকায়। আজ থেকে অন্তত দেড় থেকে দুই লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের উদ্ভব ঘটেছিল বলে নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন। উদ্ভবের পর থেকে দীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকার মাটিতেই আদিম মানুষের বসবাস ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত থেকেছে।
আন্তর্মহাদেশীয় পরিযান
এই পরিযানের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) মানুষের যাত্রা
আফ্রিকায় সুদীর্ঘকাল বসবাস করার পরবর্তীকালে সেখানকার আদিম মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে দূরদূরান্তের অজানা ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর এই ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে গমনকে আন্তর্মহাদেশীয় পরিযান বা এক কথায় পরিযান বলা হয়। আন্তর্মহাদেশীয় পরিযানের মাধ্যমে আদিম মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণী আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন মহাদেশীয় স্থলপথ ও মহাসাগরীয় বরফ পথের উপর দিয়ে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। উষ্ণ পর্যায়ে বরফ গলে গিয়ে ভূপৃষ্ঠ উন্মুক্ত হলে এবং সাগর জলে ভরে গেলে বিভিন্ন মহাদেশ সাগরের জলরাশির দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
(২) ডিএনএ পরীক্ষা
আদিম মানুষের পরিযান সম্পর্কে গবেষণার পদ্ধতি হিসেবে ডিএনএ পরীক্ষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রাচীন জীবাশ্মের সঙ্গে বর্তমান কালের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ডিএনএ-র তুলনামূলক আলোচনা করে আদিম মানুষের পরিযান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। দেখা যায় যে, আফ্রিকার বহু প্রাচীন জীবাশ্মগুলির ডিএনএ-র বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর ডিএনএ-তে লক্ষ্য করা যায়। এর থেকেই প্রমাণ মেলে যে, একদা আফ্রিকা থেকেই আদিম মানুষ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।
পরিযানের কারণ
প্রাচীনকালে আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –
(১) অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধান
প্লেইস্টোসিন যুগের একটি বড়ো সময়কাল জুড়ে পর্যায়ক্রমে তুষার যুগ বিরাজ করেছিল। এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে অপেক্ষাকৃত অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানে নতুন স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। আবার উষ্ণ যুগেও একইভাবে অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানে আফ্রিকার আদিম মানুষ অন্যত্র যাত্রা করেছিল।
(২) স্থলভাগের সংযুক্তি
প্লেইস্টোসিন যুগে সমুদ্র ও নদীনালার জলরাশি শীতল হয়ে কয়েকবার বরফে পরিণত হয়েছিল। ফলে পূর্বে জলরাশি দ্বারা বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন স্থলভাগ বরফের দ্বারা সংযুক্ত হয়েছিল এবং আদিম মানুষ বরফের ওপর দিয়ে অন্যত্র যাত্রা করার সুযোগ পেয়েছিল।
(৩) খাদ্যের সংস্থান
শিকার ও খাদ্যসংগ্রহের প্রয়োজনেও মানুষ আফ্রিকা থেকে নতুন স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল।
পরিযানের পদ্ধতি
আফ্রিকার আদিম মানব প্রধানত দু- ভাবে সেখান থেকে অন্যান্য দেশে-মহাদেশে যাত্রা করেছিল। যথা –
(১) স্থলভাগের ওপর দিয়ে
আদিম মানুষ আফ্রিকার স্থলভাগের ওপর দিয়ে ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন দেশ-মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্থলভাগের ওপর দিয়ে তারা মূলত ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে পৌঁছোতে পেরেছিল।
(২) বরফের সমুদ্রের ওপর দিয়ে
এ ছাড়াও তুষার যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রের জলরাশি ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয়েছিল। স্থলভাগের বিস্তীর্ণ অংশও বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এভাবে জল ও স্থলভাগ বরফের চাদরে আবৃত হওয়ায় সাগর-দ্বারা বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। বরফের এই সংযোগের সহায়তায় আদিম মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে বরফের ওপর দিয়ে দূরদূরান্তে যাত্রা করেছিল। ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশে আগত আদিম মানুষ পরবর্তীকালে সমুদ্রের বরফের ওপর দিয়েই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছিল।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ বহির্গমন
আফ্রিকার আদিম মানুষের সকল প্রজাতিই আফ্রিকা থেকে অন্যত্র সরে পড়ে নি বলে মনে করা হয়। জীবাশ্ম-রেকর্ডের ভিত্তিতে গবেষকগণ দাবি করেন যে, লুসি প্রজাতির মানবগোষ্ঠী সম্ভবত আফ্রিকার মাটি ছেড়ে বহির্বিশ্বে যাত্রা করে নি। তবে আফ্রিকার অন্যান্য বেশ কয়েকটি আদিম মানবগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে অনুকূল আবহাওয়ার খোঁজে ও বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। বহির্বিশ্বের উদ্দেশ্যে আফ্রিকার আদিম মানুষের দুটি বহির্গমন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যথা –
(ক) প্রথম বহির্গমন
- (১) মনে করা হয় যে, হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির একটি মানবগোষ্ঠী সর্বপ্রথম আফ্রিকার মাটির মায়া ত্যাগ করে বাইরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। বলাই বাহুল্য যে, কোনো দিগবিজয়ের উদ্দেশ্যে নয়, খাদ্যসংগ্রহ ও অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানেই তারা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। আফ্রিকা থেকে আদিম মানবগোষ্ঠীর এই বেরিয়ে পড়া ‘প্রথম আফ্রিকা থেকে বহির্গমন’ বলে অভিহিত হয়।
- (২) জীবাশ্ম-রেকর্ড থেকে অনুমান করা হয় যে, প্রথম পর্বের এই পরিযানকারীরা বেশ কিছু কাল আফ্রিকার নিকটবর্তী উষ্ণ অঞ্চলগুলিতেই অবস্থান করেছিল। পি. এণ্ড্রুজ ও মি. স্ট্রিঙ্গার মনে করেন যে, পরবর্তীকালে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে তাদের সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর। এদের উত্তরসূরিরাই চীন, জাভা-সহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে আজ থেকে আড়াই লক্ষ বছর পূর্বে বিচরণ করত।
(খ) দ্বিতীয় বহির্গমন
- (১) প্রথম বহির্গমনের দীর্ঘকাল পর হোমো স্যাপিয়েন্স নামে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বহির্বিশ্বের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা অনুমান করেন যে, পূর্ব আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের একটি বড়ো মাপের পরিযান ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে। তুষার যুগে এই অঞ্চলে তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণেই মানুষ এখান থেকে অন্যত্র সরে পড়তে শুরু করেছিল।
- (২) পণ্ডিতরা এই বেরিয়ে পড়াকে দ্বিতীয় আফ্রিকা থেকে বহির্গমন’ বলে অভিহিত করেছেন। এই সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী দীর্ঘকাল ধরেই আফ্রিকা থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের পরিযান ঘটেছে। আধুনিক মানব ইতিহাসে এই দ্বিতীয় এবং তার পরবর্তীকালের বহির্গমনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন মহাদেশে বহির্গমন
আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে আদিম মানুষের পরিযান ঘটেছিল বলে পণ্ডিতগণ অভিমত দিয়ে থাকেন। যেমন –
(ক) ইউরোপ মহাদেশে যাত্রা
আফ্রিকা মহাদেশের ভূখণ্ড থেকে আদিম মানুষের আধুনিক বংশধর সর্বপ্রথম নিকটবর্তী ইউরোপীয় ভূখণ্ডে পৌঁছোয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) আরবের পথ
আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষের পক্ষে ইউরোপে পৌঁছোনো খুবই সহজ ছিল। আরবের ভূখণ্ড হল আফ্রিকার সঙ্গে ইউরোপের সংযোগস্থল। আরবের স্থলভাগের ওপর দিয়ে তারা খুব সহজেই ইউরোপ মহাদেশীয় ভূখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিল।
(২) আরবের উত্তরদিকের পথ
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সম্মেলনে জানানো হয়েছে যে, আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষ আরবের দক্ষিণ প্রান্তের পথ ধরে ইউরোপের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। উত্তরদিকের মিশরীয় পথ ধরে তারা ইউরোপের দিকে যাত্রা করে নি।
(খ) এশিয়া মহাদেশে যাত্রা
আফ্রিকার আদিম মানুষের বংশধররা সুদূর অতীতে এশিয়া মহাদেশে পদার্পণ করেছিল এবং এই মহাদেশের দূরদূরান্তের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা প্রধানত দুটি ধারায় এশিয়া মহাদেশে পৌঁছেছিল –
(১) ইউরোপ থেকে
আদিম মানুষ প্রথম আফ্রিকা থেকে ইউরোপ -এ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ইউরোপ থেকে স্থলপথে এশিয়া মহাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তবে এই পরিযান প্রথমে পশ্চিম এশিয়া এবং পরে চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানে ঘটেছিল। কারণ, চিন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানে মানুষের পূর্বপুরুষের যতটা প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে সে তুলনায় ভারতে প্রাপ্ত আদিম মানুষের নিদর্শনগুলি ততটা প্রাচীন নয়।
(২) আরবের পথ
আই বি. এম.-এর সিনিয়র ম্যানেজার অজয় রোয়ুরু (Ajay Royyuru) তাঁর গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে, আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষের একটি শাখা আরব হয়ে ইউরেশিয়ার পথ ধরে ভারত-এ প্রবেশ করেছিল। তিনি জিনতত্ত্বের গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, দক্ষিণ ভারতের মানবগোষ্ঠী ইউরোপের তুলনায় বরং আফ্রিকার মানবগোষ্ঠীর অনেক কাছাকাছি। যাই হোক, এশিয়া মহাদেশের মেসোপটেমিয়া, ভারত, চিন প্রভৃতি দেশের নানা স্থানে আদিম মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল।
(গ) উত্তর আমেরিকায় যাত্রা
আদিম মানুষ আজ থেকে অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ হাজার বছর পূর্বে এশিয়া মহাদেশ থেকে উত্তর আমেরিকায় পদার্পণ করেছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) বেরিং প্রণালীর পথ
বেরিং প্রণালী ধরে এশিয়া থেকে আমেরিকার দূরত্ব মাত্র ৫০ মাইল। বেরিং প্রণালীর এই ৫০ মাইল পথ অতিক্রম করে আদিম মানুষ এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। সেই সময় তুষার যুগ চলছিল বলে বেরিং প্রণালীর বৃহদংশ বরফে ঢাকা ছিল। এই বরফের ওপর দিয়ে মানুষ উত্তর আমেরিকায় পৌঁছেছিল।
(২) বিচ্ছিন্নতা
আজ থেকে দশ হাজার বছর পূর্বে যখন সর্বশেষ তুষার যুগের অবসান ঘটে তখন সমুদ্রের বরফ গলে জলে পরিণত হয়। ফলে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ভূখণ্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ফলে আদিম মানুষ পরবর্তীকালে আর এই পথে উত্তর আমেরিকায় যেতে পারে নি।
(৩) ভাইকিংদের অভিযান
কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন যে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দী নাগাদ ভাইকিংরা ইউরোপ থেকে গ্রিনল্যান্ড, নিউফাউন্ডল্যান্ড, লাব্রাডার উপকূল প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময় লিফ নামে জনৈক ভাইকিং-এর নেতৃত্বে বেশ কিছু নরনারী গবাদিপশু-সহ লাব্রাডার উপকূলে বসবাস করতে যায়। অবশ্য ভাইকিংদের এই যাত্রা সম্পর্কে বিতর্ক আছে।
(ঘ) দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা
আদিম মানুষ দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রার বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) পানামা যোজক অতিক্রম
আদিম মানুষ উত্তর আমেরিকায় পৌঁছোনোর পর সেখান থেকে পরবর্তীকালে আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়েছিল। দক্ষিণের পানামা যোজকের বরফের উপর দিয়ে তারা দক্ষিণ আমেরিকার ভূখণ্ডে পদার্পণ করেছিল। এরপর ধারাবাহিক বিস্তার লাভের মাধ্যমে তারা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
(২) বিচ্ছিন্নতা
পরবর্তীকালে উষ্ণ যুগে সমুদ্রের জলরাশির দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা হাজার হাজার বছর ধরে বহির্জগতের প্রভাবমুক্ত হয়ে সেখানে বসবাস করছিল। এই দক্ষিণ আমেরিকাতেই সুপ্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কলম্বাস-এর আমেরিকা আবিষ্কারের পরবর্তীকালে স্পেন-র নাবিক কোর্টেস দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাজটেক সভ্যতার সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি দেখে অবাক হলেও তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে, সেখানকার বাসিন্দারা তখনও প্রস্তর যুগেই পড়ে আছে, লৌহ যুগ-এ পৌঁছোতে পারে নি।
(ঙ) অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রা
তুষার যুগে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সংলগ্ন সংকীর্ণ সমুদ্রের জলরাশি বরফে পরিণত হয়। এই বরফের ওপর দিয়েই মানুষ এশিয়া থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) ইন্দোনেশিয়ায় যাত্রা
আদিম মানুষ আজ থেকে অন্তত ত্রিশ হাজার বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বরফের সমুদ্র অতিক্রম করে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছোয়।
(২) অস্ট্রেলিয়া যাত্রা
ইন্দোনেশিয়া থেকে সমুদ্রের বরফের ওপর দিয়ে আরও এগিয়ে তারা পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। তুষার যুগের অবসানের পরবর্তীকালে এই ভূখণ্ড আবার সমুদ্রের জলরাশির দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে আদিম মানুষ বহির্জগতের প্রভাবমুক্ত হয়ে সেখানে বসবাস করতে থাকে। তবে ভৌগোলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে এখানে ইউরোপীয়রা ব্যাপক হারে এসে এখানকার প্রাচীন জনজাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে থাকে।
উপসংহার :- আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের প্রাচীনতম সন্ধান পাওয়া গেছে আফ্রিকা। দীর্ঘকাল ধরেই তারা আফ্রিকার মাটিতেই বসবাস ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দীর্ঘকাল পর তারা অজানা ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আদিম মানুষের পরিযান” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) আদিম মানুষের পরিযান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আফ্রিকায়।
অনুকুল আবহাওয়ার সন্ধান।
স্থলভাগের উপর দিয়ে ও বরফের সমুদ্রের উপর দিয়ে।
লুসি।