কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ প্রসঙ্গে স্থানীয় বিদ্রোহ, উপজাতি বিদ্রোহ, দুর্বল উত্তরাধিকারী, যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, বাণিজ্যে অবনতি, সিন্ধু বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস, স্থল বাণিজ্য ধ্বংস, বৈদেশিক আক্রমণ ও সাসানীয় আক্রমণ সম্পর্কে জানবো।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ |
সাম্রাজ্য | কুষাণ সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | কুজুল কদফিসেস |
শ্রেষ্ঠ রাজা | কণিষ্ক |
শেষ রাজা | দ্বিতীয় বাসুদেব |
ভূমিকা :- মৌর্য সাম্রাজ্য -এর পতনের পর যে সমস্ত বৈদেশিক জাতি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল, তাদের মধ্যে কুষাণরাই ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। এই বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন সম্রাট কণিষ্ক। তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনে স্থানীয় বিদ্রোহার প্রভাব
ভারতের কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে পণ্ডিতেরা আঞ্চলিক বিদ্রোহকেই দায়ী করেছেন। কুষাণ সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় শক্তিগুলি স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ উপজাতি বিদ্রোহ
উত্তরপ্রদেশে নাগ ও মাঘ বংশীয় রাজারা, পাঞ্জাবে যৌধেয়, রাজপুতানায় মালব, উত্তর-পশ্চিমে কাক, খরপারিক, অর্জুনায়ন প্রভৃতি উপজাতির বিদ্রোহে কুষাণ সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়। পশ্চিম ভারত -এর শক-ক্ষত্রপগণ সুযোগ বুঝে স্বাধীনতার ধ্বজা উড়িয়ে দেন।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ দুর্বল উত্তরাধিকারী
সম্রাট কণিষ্কের পর যে সব উত্তরাধিকারীরা সিংহাসনে বসেন তারা সকলেই ছিলেন দুর্বল। তাদের শাসনাধীনে কিছুদিন কুষাণ সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বজায় থাকলেও তা স্থায়ী হয়নি।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সুষ্ঠু যােগাযােগ ব্যবস্থার অভাব
বাহুবলে কুষাণরা ভারত ও ভারতের বাইরে বেশকিছু অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু নববিজিত অঞ্চলগুলিতে কর্তৃত্ববজায় রাখতে গেলে যে ধরনের যােগাযােগ ব্যবস্থা প্রয়ােজন, তা সেই সময় ছিল না। তাছাড়া কুষাণদের গুপ্তচর ব্যবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ বাণিজ্যের অবনতি
- (১) ভারতের কুষাণ সাম্রাজ্যের প্রাণশক্তি ছিল বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নতা দেখা দিলে বাণিজ্য ব্যাহত হয়। একদা মথুরা, বারাণসী, পেশোয়ার, তক্ষশীলা বাণিজ্যের জন্য যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল তা বিনষ্ট হয়।
- (২) এক রাষ্ট্রের শাসনে না থাকায় মাল চলাচলে বিঘ্ন দেখা দেয়। দ্বিতীয় খ্রিষ্টাব্দে মহাক্ষত্রপ রুদ্রদামন নিম্ন সিন্ধু বা বিহার এলাকা অধিকার করলে সিন্ধু বন্দরগুলির পথে কুষাণ বাণিজ্য কুষাণদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সিন্ধু বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস
রোমান ও আরব বণিকরা মৌসুমী বায়ুর গতিপথ আবিষ্কার করে এই বায়ুতে জাহাজ চালিয়ে বারিগাজা ও দক্ষিণ ভারতের বন্দরে সোজা চলে আসে। কুষাণ অধিকৃত সিন্ধু বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস পায়।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ স্থল বাণিজ্য ধ্বংস
এই সময় সাসানীয় শক্তি আফগানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারত অঞ্চলে বিস্তৃত হলে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে স্থল-বাণিজ্য নষ্ট হয়। কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের এটি ছিল প্রধান কারণ এতে সন্দেহ নেই।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ বৈদেশিক আক্রমণ
ডঃ বি এন মুখার্জী প্রমুখ গবেষক কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অন্তর্বিদ্রোহ অপেক্ষা বৈদেশিক আক্রমণকে অধুনা বেশী গুরুত্ব দেন। তাদের মতে, পারসিক সাসানিয় বংশের অধিকার পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়ে কুষাণ সাম্রাজ্য গ্রাস করে।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সাসানীয় আক্রমণ
ড. বিন.এন. মুখােপাধ্যায়মনে করেন যে প্রকৃতপক্ষে কুষাণ সাম্রাজ্য যখন সাসানীয়দের কাছে আত্মসর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, তখনই এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। ২৬২ খ্রিস্টাব্দে নকস-ই-রুস্তম লিপি থেকে জানা যায় যে, কুষাণ সম্রাট সাসানীয় সম্রাট প্রথম সাপুরের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেন। কারণ, কুষাণ রাজ্য তাসখন্দ, কাশগড় পেশোয়ার প্রথম সাপুরের রাজ্য বলে উল্লিখিত হয়।
উপসংহার :- আসলে বৈদেশিক আক্রমণ, আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও অর্থনৈতিক অবনতি সম্মিলিতভাবে কুষাণ সাম্রাজ্যের পতন ঘটায় বলা চলে। যদি সাম্রাজ্য আভ্যন্তরীণ দিক থেকে দুর্বল না হত তবে বৈদেশিক শক্তি তাকে পদানত করতে পারত না।
(FAQ) কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কণিষ্ক।
মহাযান।
কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক।
অশ্বঘোষ।