হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব প্রসঙ্গে উপাদান, উপাদানের দুর্বলতা, সঙ্কটজনক পরিস্থিতি, ভগিনী রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার, সাম্রাজ্য বিস্তার, শাসন ব্যবস্থা, প্রজাহিতৈষনা, সাহিত্যে অবদান ও সংস্কৃতজ্ঞ সম্পর্কে জানবো।
হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব
ঐতিহাসিক ঘটনা | হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব |
রাজা | হর্ষবর্ধন |
রাজধানী | থানেশ্বর, কনৌজ |
বংশ | পুষ্যভূতি বংশ |
উপাধি | শিলাদিত্য |
ভূমিকা :- হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। ৪০ বছর রাজত্ব করার পর ৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। তিনি এক দশক কম অর্ধ শতাব্দী ধরে তার ইচ্ছামত উত্তর ভারত শাসন করার সুযোগ পান।
উপাদান
সৌভাগ্যক্রমে হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট এবং তার গুণগ্রাহী হিউয়েন সাঙ তাঁর সম্পর্কে বহু প্রশস্তি রেখে গেছেন। এই প্রশস্তিগুলির ওপর নির্ভর করে আমরা প্রধানত হর্ষবর্ধনের কর্মপ্রকৃতির বিচার করে থাকি।
উপাদানের দুর্বলতা
অবশ্য একথা স্মর্তব্য যে, বাণভট্ট ছিলেন হর্ষবর্ধনের আশ্রিত। সুতরাং তাঁর রচনা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হতে বাধ্য। হিউয়েন সাঙ ছিলেন হর্ষবর্ধনের গুণগ্রাহী এবং তাঁর দ্বারা উপকৃত। সুতরাং এই বিবরণগুলির মধ্যে কিছুটা অতিশয়োক্তি থাকা স্বাভাবিক।
সঙ্কটজনক পরিস্থিতি
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন একটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে পৈতৃক সিংহাসনে বসেন। তার বিরুদ্ধে শশাঙ্কের গঠিত শত্রুজোট তখন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছিল। এই জোট হর্ষবর্ধনের ভগিনীপতি গ্রহবর্মাকে নিহত করে, হর্ষবর্ধনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজ্যবর্ধনকেও নিহত করে এবং ভগিনী রাজশ্রীকে বন্দিনী করে।
রাজ্যশ্রী উদ্ধার
হর্ষবর্ধন অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের সঙ্গে এই জোটের সম্মুখীন হন এবং কামরূপ রাজ্য -এর রাজা ভাস্করবর্মার সাহায্যে একটি প্রতি-জোট গঠন করেন। তিনি শত্রুজোটকে হঠিয়ে ভগিনী রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার করে এবং কনৌজ অধিকার করে তার প্রথম সাফল্যের ধ্বজা উড়িয়ে দেন।
সাম্রাজ্য বিস্তার
- (১) সাম্রাজ্য স্থাপয়িতা হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্বও কম ছিল না। অনেকে তাকে প্রাচীন ভারতের শেষ সম্রাট বলেন। চালুক্য লিপিতে তাঁকে “সকলোত্তর পথ নাথ” অর্থাৎ সমগ্র উত্তরাপথের অধিপতি বলা হয়েছে। বাণভট্ট তাঁকে ‘পঞ্চ ভারতের অধিপতি’ বলেছেন।
- (২) বাস্তবক্ষেত্রে হর্ষের সাম্রাজ্য এত বড় ছিল না। পূর্ব পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবাংলা ও উড়িষ্যা নিয়ে তাঁর সাম্রাজ্য ছিল। দক্ষিণের চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর হাতে তিনি শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হন। উত্তরের সিন্ধু, কাশ্মীর, রাজপুতানা প্রভৃতি স্থান তাঁর রাজ্যের বাইরে ছিল।
- (৩) সুতরাং তাঁকে উত্তর ভারতের শেষ সম্রাট বলা চলে না। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রতিষ্ঠিত প্রতিহার বংশ -এর আয়তন তাঁর সাম্রাজ্য অপেক্ষা কম ছিল না। সুতরাং তাকে প্রাচীন ভারতের শেষ প্রধান সম্রাট বলা চলে না।
ডঃ রায়চৌধুরীর অভিমত
আধুনিক ঐতিহাসিক ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, “সমুদ্রগুপ্ত -এর সাম্রাজ্যের আদর্শে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতকে এক রাজচক্রতলে আনবার জন্য হর্ষবর্ধন চেষ্টা করেন, তবে তা ফলপ্রসু হয়নি।”
শাসন ব্যবস্থা
- (১) হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থার যতই গুণগান হিউয়েন সাঙ করুন না কেন বাস্তবে তাঁর সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল সামন্ত রাজারা ইচ্ছামত শাসন করত। সামন্ত শক্তির উদ্ভবের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব কমে গিয়েছিল।
- (২) একথা ঠিক যে, থানেশ্বরের এক ক্ষুদ্র রাজ্যকে তিনি উত্তর ভারতীয় চরিত্র দেন। কিন্তু তাঁর শাসন ব্যবস্থা ছিল শিথিল। রাজ্যে দস্যু-তস্করের বেশ উপদ্রব ছিল। ফৌজদারী আইনও খুব কড়া ছিল। হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থায় সামন্ত রাজাদের প্রভাব কমাবার ব্যবস্থা না থাকায়, তাঁর মৃত্যুর পরেই তার সাম্রাজ্য ভেঙে যায়।
প্রজাহিতৈষণা
হর্ষবর্ধন প্রজাহিতৈষী রাজা ছিলেন। তিনি সাধ্যমত প্রজাদের প্রতি ন্যায়বিচার করার চেষ্টা করতেন। তার দানশীলতা ছিল তুলনাহীন। পরিবার, পরিজন, ভগিনী রাজ্যশ্রীর প্রতি তার ভালবাসা প্রশংসার দাবী রাখে। তাঁর শাসনকালে উত্তর ভারতে মোটামুটি রাজনৈতিক শান্তি বজায় ছিল।
সাহিত্যে অবদান
তাঁর ব্যক্তিগত গুণাবলী ছিল বহুবিধ। তার সাহিত্য প্রতিভা ছিল। নাগানন্দ, রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শিকা প্রভৃতি রচনা তাঁর সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় দেয়।
সংস্কৃতজ্ঞ
তাঁর রাজসভায় কাদম্বরীর রচয়িতা বাণভট্ট তাঁর সভাকবি ছিলেন। যৌর্য ও ভর্তৃহরি প্রভৃতি পণ্ডিতও তাঁর রাজসভায় ছিলেন। তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় -এর একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি চীন -এর সম্রাটের নিকট দূত পাঠান।
উপসংহার :- হর্ষের চরিত্রে সমুদ্রগুপ্তের সমরকুশলতা ও অশোক -এর প্রজাহিতৈষণার সমন্বয় ঘটেছিল বলে আর. কে. মুখার্জী মন্তব্য করেছেন।
(FAQ) হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
থানেশ্বর ও কনৌজ।
হর্ষবর্ধন।