হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা প্রসঙ্গে সকলোত্তরপথনাথ, বাণভট্টের বর্ণনা, হিউয়েন সাঙের বিবরণ, চালুক্য লিপি, আধুনিক মত, পঞ্চ ভারতের প্রভূ, সাম্রাজ্য সীমার বাইরের অঞ্চল, সাম্রাজ্যের বাইরে প্রভাব সম্পর্কে জানবো।
হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা
বিষয় | হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা |
রাজা | হর্ষবর্ধন |
রাজধানী | থানেশ্বর, কনৌজ |
বংশ | পুষ্যভূতি বংশ |
উপাধি | শিলাদিত্য |
ভূমিকা :- হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে পৈত্রিক রাজ্য থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। এর পর তিনি ভগিনী রাজ্যশ্রীর পক্ষে তাঁর মৃত স্বামীর রাজ্য কনৌজ অধিকার করেন। কনৌজকে নিজ রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে হর্ষবর্ধন তাঁর রাজ্য বিস্তার নীতির সূত্রপাত করেন।
সকলোত্তরপথনাথ হর্ষবর্ধন
- (১) চালুক্য লিপিগুলিতে হর্ষবর্ধনকে ‘সকলোত্তরপথনাথ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ডঃ কে এম পানিক্কর তার সার্ভে অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি গ্রন্থে বলেছেন যে, “বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরের সকল দেশ, নেপাল ও কাশ্মীর হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল।”
- (২) এটিং হাউজনের মতে, কামরূপ থেকে কাশ্মীর, হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত ছিল হর্ষবর্ধনের রাজ্যসীমা। ডঃ আর-কে- মুখার্জী মন্তব্য করেছেন যে, সকল সম্ভাব্য দিক বিচার করে দেখা যায় যে, হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারত -এর সার্বভৌম সম্রাট বা অধিরাজে পরিণত হন।
বাণভট্টের বর্ণনায় হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা
হর্ষবর্ধন সম্পর্কে জানার জন্য আমরা প্রাথমিক উপাদান হিসেবে বাণভট্টের বিবরণের ওপর নির্ভর করতে পারি। কিন্তু এই বিবরণে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা সম্পর্কে অস্পষ্ট ধোঁয়াটে কথা আছে। যেমন বাণভট্ট বলেছেন, “হর্ষ পঞ্চ ভারতের প্রভূ ছিলেন।”
হিউয়েন সাঙের বিবরণে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা
হর্ষবর্ধন সম্পর্কে জানার জন্য আমরা প্রাথমিক উপাদান হিসেবে হিউয়েন সাঙ -এর বিবরণের ওপর নির্ভর করতে পারি। কিন্তু এই বিবরণে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা সম্পর্কে অস্পষ্ট ধোঁয়াটে কথা আছে। হিউয়েন সাঙের মতে, “হর্ষ ভারতের সকল রাজাকে হয় তার বশ্যতা স্বীকার করতে নতুবা তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আহ্বান জানান।
হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা সম্পর্কে চালুক্য লিপি
চালুক্য লিপিতে হর্ষকে “সকল উত্তরা-পথের-নাথ” বলা হয়েছে। কিন্তু এই সকল মন্তব্য থেকে হর্ষের রাজ্যের প্রকৃত সীমা কিছু জানা যায় নি। এই মন্তব্যগুলির মধ্যে প্রচুর অসঙ্গতি আছে।
হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা সম্পর্কে আধুনিক মত
সম্রাট হর্ষের রাজ্যসীমা জানতে হলে তিনি কোন কোন রাজ্য প্রকৃত জয় করেন তা জানা দরকার। যেমন –
- (১) হর্ষবর্ধন উত্তরাধিকার সূত্রে থানেশ্বর বা পূর্ব পাঞ্জাবের অধিকার পান।
- (২) তিনি তাঁর ভগিনীর সূত্রে কনৌজ বা উত্তরপ্রদেশের দোয়াব অঞ্চল ও তার সংলগ্ন অঞ্চল অধিকার করেন।
- (৩) তিনি শশাঙ্ক -এর মৃত্যুর পর মগধ বা বিহার, পশ্চিম বাংলা, উড়িষ্যা ও কঙ্গদ বা গঞ্জাম জয় করেন। এই অঞ্চলে হর্ষবর্ধন প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপন করেন কি না সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
পঞ্চ ভারতের প্রভূ হর্ষবর্ধন
এ পর্যন্ত হর্ষবর্ধনের রাজ্যসীমা সম্পর্কে কোনো গোলমাল নেই। কারণ বাণভট্টের অভিমত যে, হর্ষ পঞ্চভারতের প্রভু ছিলেন। পঞ্চ ভারত বলতে পাঞ্জাব, কনৌজ, বিহার, বাংলা, উড়িষ্যা বোঝায়।
হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমার বাইরের অঞ্চল
ওপরের সীমার বাইরে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল কিনা তা বিতর্কের বিষয়। পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, রাজপুতানা, নেপাল, কাশ্মীর, পূর্ববাংলা, কামরূপ তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে তাকে “সকল-উত্তরাপথ-নাথ” অথবা উত্তর ভারতের অধিরাজ বলা চলে না।
রাজ্য সীমার বাইরে হর্ষবর্ধনের প্রভাব
তবে হর্ষবর্ধনের রাজ্যসীমার বাইরেও তাঁর প্রভাব বিস্তৃত ছিল। বলভীর ধ্রুবসেন তাঁর প্রতি আনুগত্য জানান। উত্তর ভারতের ক্ষুদ্র রাজারা তার ভয়ে কাঁপতেন। পূর্ব পাঞ্জাব থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল তাঁর পতাকার অধীনে।
উপসংহার :- রোমিলা থাপারের মতে, মৌর্যদের মত কোনো কেন্দ্রীয় শাসন হর্ষবর্ধন স্থাপন করতে পারেন নি। তাঁর অধীনে সামন্ত রাজারা স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করত।
(FAQ) হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
থানেশ্বর ও কনৌজ।
হর্ষবর্ধন।