মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খান প্রসঙ্গে তার জন্ম, দৈহিক গঠন, শিক্ষা, অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা, রাজধানী স্থাপন, দিগ্বিজয়, ভারত আক্রমণ, অধিকৃত স্থান, পাঠ্যপুস্তকে চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে বর্ণনা, রাশিয়া ও চীনে প্রতিক্রিয়া এবং তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খান
ঐতিহাসিক চরিত্র | চেঙ্গিজ খান |
জন্ম | আনুমানিক ১১৬২ খ্রি: |
পরিচিতি | মোঙ্গল নেতা |
রাজত্ব | ১২০৬-২৭ খ্রি: |
মৃত্যু | ১২২৭ খ্রি: |
ভূমিকা :- ইতিহাসে বিতর্কিত পুরুষ কম নেই। তাদের নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি। কিন্তু এমন কোনও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নেই চেঙ্গিজ খানের মত যার সম্পর্কে বিতর্কের অবকাশ ঠিক সেই খানটিতেই থেমে আছে যেখানটাতে শুরু হয়েছিল।
চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী মত
কোনও কোনও ঐতিহাসিক মনে করে যে চেঙ্গিজ খান একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। সমাজ সংগঠনের জন্য যার অবদান অসীম এবং এখনও উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু সেই তারই পাশাপাশি অনেকেরই স্থিরবিশ্বাস যে চেঙ্গিজ খানের মত অত্যাচারী সেনানায়ক ইতিহাসে বিরল এবং তিনি শুধু ঘৃণারই যোগ্য।
চেঙ্গিজ খানের দিগ্বিজয়
মোঙ্গল জাতির প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিজ খান এখন থেকে সাত শতাব্দী আগে তার দিগ্বিজয় শুরু করেছিলেন। এই দিগ্বিজয়ের ইতিহাস অনেকের কাছে বিশেষ করে মোঙ্গলদের কাছে লজ্জার ইতিহাস হয়ে আছে।
চেঙ্গিজ খানের জন্ম
১১৬২ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিজ খানের জন্ম মোঙ্গোলিয়ার উত্তরপূর্ব এলাকার দূর প্রত্যন্ত একটি গ্রামে।
চেঙ্গিজ খানের দৈহিক গঠন
দীর্ঘদেহী এবং অত্যন্ত বিশাল ছিল তার শরীর। ঐতিহাসিক নাজজোনি লিখেছেন যে চেঙ্গিজ খানের চোখ ছিল কটা, বিড়ালের মতন অত্যন্ত সতর্ক ছিল তার দৃষ্টি।
চেঙ্গিজ খানের শিক্ষা
মোঙ্গোলিয়ান ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাতেই তার দখল ছিল না। তিনি লিখতে শেখেন নি। ঐতিহাসিক বার্থহোলডের ভাষায় চেঙ্গিজ খান আক্ষরিক অর্থেই নিরক্ষর ছিলেন।
চেঙ্গিজ খান কর্তৃক ডাকপিওনের প্রবর্তন
সামাজিক প্রয়োজনের এবং সামরিক প্রয়োজনের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল প্রখর। ডাকপিওনের ব্যবস্থা তিনি তার রাজ্য জুড়ে প্রবর্তন করতে পেরেছিলেন।
অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা চেঙ্গিস খান
পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিজ খান একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা এবং সেনানায়ক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। ইতিহাসের ধারাও অবশ্যই তিনি পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
চেঙ্গিজ খানের রাজধানী কারাকোরাম
মেঙ্গোলিয়ার স্তেপ অঞ্চলের মধ্যাঞ্চলে চেঙ্গিজ খান তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তার রাজধানীর নাম ছিল কারাকোরাম।
রাষ্ট্রদূতদের প্রতি চেঙ্গিজ খানের সম্ভাষন
কারাকোমারে শ্বেত প্রাসাদে রত্নখচিত সিংহাসনে বসে তিনি দূর চীন, ইউরোপ, পারস্য এবং ভারতবর্ষ-এর রাষ্ট্রদূতদের সাদর সম্ভাষন জানাতেন। সেখানে বসেই তিনি পরিকল্পনা করতেন পরবর্তী যুদ্ধের। সেই সব যুদ্ধের পরিণতিতে মোঙ্গল বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল ভিয়েনার দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত।
ধ্বংসস্তূপ চেঙ্গিজ খানের রাজধানী কারাকোরাম
এই কারাকোরাম শহর পরবর্তী সময়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছিল তার প্রতি প্রতিশোধ স্পৃহায়। সেই ধ্বংসস্তূপ আর কোনদিন নতুন করে সৃষ্টি করা হয়নি।
চেঙ্গিজ খানের প্রতিকৃতি
মোঙ্গোলিয়ান রাষ্ট্রের বর্তমান রাজধানী উলান বাটোরে চেঙ্গিজ খানের একটি প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান নেই।
চেঙ্গিসৈ খানের রাজত্ব স্থাপন ও দিগ্বিজয়
- (১) বলা বাহুল্য স্তেপ অঞ্চলের অসংখ্য ছোট দল উপদলের সমন্বয় সাধন করে বিশাল একটি রাজত্ব স্থাপনের কৃতিত্ব চেঙ্গিজ খানের ছিল। মোঙ্গল অঞ্চলকে একটি সুনির্দিষ্ট জাতিতে পরিণত করার পর চেঙ্গিজ খান অতঃপর তার সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন দিগ্বিজয়ে।
- (২) ধীরে ধীরে মধ্য এশিয়া থেকে তার রাজত্ব বিস্তৃত হল পারস্য পর্যন্ত। পারস্য অধিকার করার পর তিনি জয় করলেন রাশিয়া, পূর্ব-ইউরোপের দেশগুলি। অন্যদিকে চীন এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত হতে দেরী হল না।
চেঙ্গিজ খানের ভারত আক্রমণ
১২২১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি সুলতানির ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে চেঙ্গিজ খান ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তবে সুলতান ইলতুৎমিস বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই আক্রমণ প্রতিহত করেন।
মঙ্গোল সাম্রাজ্য অধিকৃত স্থান
আধুনিক গণচীন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং কুয়েত।
মোঙ্গোলিয়াতে জনসাধারণের শান্ত ভাব
মোঙ্গোলিয়াতে জনসাধারণের মধ্যে সেই ঘৃণা, সেই ধৃষ্টতা, সেই অহংকারের পরিবর্তে রয়েছে শান্তভাব। অতিথিবৎসল হওয়া উৎসাহ।
পাঠ্যপুস্তকে চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে বর্ণনা
মোঙ্গোলিয়ার একটি পাঠ্যপুস্তকে চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে লেখা রয়েছে “অসংখ্য দল উপদলকে একত্রিত করে চেঙ্গিজ খান যে একটি রাষ্ট্র তৈরি করেছিলেন সেই কৃতিত্ব অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। কিন্তু তার সেই যুদ্ধের মনোভাব ধ্বংসের মনোভাব সমর্থন করা যায় না।”
সাম্প্রতিক কালে চেঙ্গিজ খানের প্রতি যুবক মোঙ্গলদের মনোভাব
অবশ্য সাম্প্রতিককালে চেঙ্গিজ খানের প্রতি যুবক মোঙ্গলদের মনোভাব একটু বদলেছে সম্ভবত। তারা চেঙ্গিজ খানকে আলেকজান্ডার দি গ্রেটের সঙ্গে তুলনা করতে চাইছে, জুলিয়াস সিজার-এর সঙ্গে তুলনা করতে চাইছে। পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিজ খানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গর্ববোধ করতে চাইছে।
চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে অধ্যাপক উলান বাটোরের মন্তব্য
উলান বাটোরের একজন অধ্যাপক লিখছেন যে তার ছাত্রছাত্রীরা ‘সিক্রেট হিটলার‘ পাঠ করার পর চেঙ্গিজ খানকে নিয়ে মনে মনে খুবই গর্ববোধ করে থাকে। মানুষ হিসেবে, নেতা হিসেবে তাকে একজন বিশাল পুরুষ হিসেবেই ভাবতে চায়। যদিও সকলে স্বীকার করেন যে চেঙ্গিজ খানের সাম্রাজ্যবিস্তারের পদ্ধতিটি সমর্থযোগ্য নয়।
রাশিয়া ও চীনে চেঙ্গিজ খানের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া অধিকার করার পর সেখানে চেঙ্গিস খান এবং তার বংশধরদের রাজত্ব চলেছিল ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি। সেই সময় অত্যাচারও কম হয়নি। রাশিয়ার জনগণের মনে তার প্রতিক্রিয়া খুবই স্পর্শকাতর হয়ে আছে। চীন চেঙ্গিজ খানের প্রশাংসাব্যঞ্জক বিজ্ঞপ্তি ছেপে ব্যাপারটা আরও গুলিয়ে দিয়েছে।
চেঙ্গিজ খানের মৃত্যু
১২২৭ সালে চেঙ্গিজ খান মারা যাওয়ার পর তার পুত্র ও পৌত্রগণ প্রায় ১৫০ বছর ধরে মোঙ্গল সম্রাজ্যে রাজত্ব করেছিল।
উপসংহার :- ১২২৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে মারা যাওয়ার সময়ে পর্যন্ত তিনি নিজেকে ‘মানবজাতির সম্রাট’ আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন। সম্ভবত পৃথিবীতে অন্য কোনও সম্রাট এরকম একটি পদবিচিহ্নে নিজেকে চিহ্নিত করার ধৃষ্টতা দেখায় নি।
(FAQ) মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রধান মোঙ্গল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা বা মহান খান, ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি হিসেবে পরিচিত।
চেঙ্গিজ খান।
তেমুচিন।
মোঙ্গলিয়ার কারাকোরাম।
১২২১ খ্রি:।