ফ্রান্সিস বেকন

দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রান্সিস বেকন প্রসঙ্গে জন্ম, বংশ পরিচয়, শিক্ষা, রানী এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ, দার্শনিকতা, বিজ্ঞানের আলোচনা, মহামূল্য পুস্তক, সম্মাননা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রান্সিস বেকন

ঐতিহাসিক চরিত্রফ্রান্সিস বেকন
জন্ম২২ জানুয়ারি, ১৫৬১ খ্রি:
দেশইংল্যান্ড
পরিচিতিদার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক
উপাধিনাইটহুড
মৃত্যু৯ এপ্রিল, ১৬২৬ খ্রি:
দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রান্সিস বেকন

ভূমিকা :- বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা একে অপরের পরিপূরক। এই দুইয়ের সমন্বয়ের ফলে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসে বিপ্লব। এই বিপ্লবকে যাঁরা বহন করে এনেছিলেন তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সিস বেকন নিঃসন্দেহে একজন।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিপ্লব

  • (১) ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহ একরকম দার্শনিক চিন্তাধারার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। অথচ তারই পাশাপাশি চলছিল কারিগরদের দ্বারা নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন।
  • (২) কারিগররা অবশ্য বিশেষ কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ধারেপাশে যেতেন না। কেবল প্রয়োজনই তাঁদের উদ্বুদ্ধ করাতো নব নব আবিষ্কারে। বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার মধ্যে দূরত্বও ছিল অনেকখানি।
  • (৩) পন্ডিতেরা চিন্তা করে দেখলেন, এই দুটির মধ্যে বিভেদ আদৌ নেই। বরং একটি অপরটির পরিপূরক। তখন তাঁরা বিজ্ঞান ও কারিগরীবিদ্যার মধ্যে সমন্বয় সাধনে যত্নবান হন।
  • (৪) অপরদিকে তাঁদের দেখাদেখি কারিগররাও যন্ত্রপাতি নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রয়োগ করতে প্রয়াসী হন। ফলে দার্শনিক তত্ত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে বিজ্ঞান তার আপন পথটি খুঁজে পায়। এক কথায় তখনই বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসে একটি বিপ্লব।

ফ্রান্সিস বেকনের জন্ম

বেকন ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে স্ট্রান্ডের নিকট অবস্থিত ইয়র্ক হাউজে জন্মগ্রহণ করেন।

বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস বেকনের বংশ পরিচয়

তিনি স্যার নিকোলাস বেকনের দ্বিতীয় স্ত্রী, অ্যান (কুক) বেকনের পুত্র ছিলেন। তাদের কন্যা এন্থোনি কুক একজন খ্যাতনামা মানবতাবাদী ছিলেন। তার মার বোন, উইলিয়াম চেসিল প্রথম বেরন বার্গলেইকে বিয়ে করেন।

ফ্রান্সিস বেকনের শিক্ষা

জীবনীকারগণ মনে করেন, বেকন ঘরে থেকেই পড়াশোনা করেন। বারো বছর বয়সে তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে প্রবেশ করেন। প্রথম জীবনে দর্শন ও আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর তিনি অধ্যাপক হিসাবে জীবন শুরু করেন।

রানী প্রথম এলিজাবেথের সাথে ফ্রান্সিস বেকনের সাক্ষাৎ

ক্যাম্ব্রিজে থাকাকালীন সময়ে রানী প্রথম এলিজাবেথ-এর সাথে তার দেখা হয়। রানী এলিজাবেথ তার অকালপক্ক পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হন এবং তাকে “দ্যা ইয়ং লর্ড কিপার” নামে সম্বোধিত করেন।

রাজার কাছে ফ্রান্সিস বেকনের আমন্ত্রণ

অতি অল্পদিনের মধ্যে তাঁর পান্ডিত্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস-এর বিচার বিভাগে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ আসে। তখন বেকন অধ্যাপনা বৃত্তি পরিত্যাগ করে বিচার বিভাগে যোগদান করেন এবং অনন্যসাধারণ প্রতিভার জন্য অতি অল্পকালের মধ্যে তিনি উক্ত বিভাগের প্রধানরূপে মনোনীত হন।

ফ্রান্সিস বেকনের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ

তিনি ব্লোইস, পটিয়া, ফ্রান্স-এর ট্যুরস, ইতালি এবং স্পেন ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি কূটনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেন এবং ভাষা, রাজনীতি, সিভিল ল, বিষয়ে পড়াশুনা করেন।

দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন

বেকন ছিলেন মূলতঃ দার্শনিক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর আন্তরিক টান। এতবড় দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা করতেন।

শুধুমাত্র বিজ্ঞানের আলোচনায় ফ্রান্সিস বেকন

পরে কেবলমাত্র বিজ্ঞান সম্বন্ধেই ভাবনা চিন্তা আরম্ভ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সংগ্রহ করেন প্রাচীন গ্রীক পন্ডিতদের আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমূহ প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী। তার ফলেই বিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনার কথা তাঁর মনে উদিত হয়।

কারিগরীবিদ্যার প্রতি ফ্রান্সিস বেকনের আকর্ষণ

বেকন অতঃপর কারিগরীবিদ্যা এবং প্রচলিত যন্ত্রপাতির দিকে আকর্ষণ বোধ করেন। কিছুকাল এই বিষয়ে চিন্তা করার পর তাঁর মনে হল ঐ বিজ্ঞান এবং কারিগরীবিদ্যাই মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে।

বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যাকে জনপ্রিয় করতে বেকনের প্রয়াস

উৎসাহিত বেকন এবার আরম্ভ করেন প্রচন্ড পরিশ্রম। তাঁর চিন্তা ভাবনাগুলি ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন “দি অ্যাডভনসমেন্ট অফ লার্নিং” নামক একখানি পুস্তকের আরে। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যাকে জনপ্রিয় করার এই তাঁর প্রথম প্রয়াস এবং সত্য কথা বলতে কি, এই ধরনের প্রয়াস তাঁর পূর্বে কেউ করেন নি।

ফ্রান্সিস বেকনের মহামূল্য পুস্তক

  • (১) ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে বেকন্ প্রকাশ করেন “গ্রেট ইনস্টরেশন অফ লার্নিং” নামক দ্বিতীয় একখানি মহামূল্য পুস্তক। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই পুস্তকখানির গুরুত্ব অনেকখানি।
  • (২) পুস্তকটির প্রথম খন্ডে বেকন্ প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেন এবং নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। এই খন্ডে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিজ্ঞানকে অগ্রগতি দান করতে হলে নতুন নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে এবং প্রাচীন বৈজ্ঞানিক মতবাদগুলি সংগ্রহ করতে হবে। পন্ডিত ব্যক্তিরা যাতে এই কাজে এগিয়ে আসেন তার জন্যও তিনি অনুরোধ রাখেন।
  • (৩) পুস্তকখানির দ্বিতীয় খন্ডে তিনি যন্ত্রবিদ্যার উল্লেখ করেন এবং কোন্ কোন্ যন্ত্রে কোন্ কোন্ বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রযুক্ত হয়েছে তাও ব্যাখ্যা করেন।
  • (৪) তৃতীয় খন্ডে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাচীন বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলিকে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন।
  • (৫) চতুর্থ খন্ডে কারিগরি জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক আলোচনা করেন। পুস্তকখানির আরও কয়েকটি খন্ড তিনি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময়াভাবে কৃতকার্য হতে পারেন নি।

পণ্ডিত সমাজে ফ্রান্সিস বেকনের চিন্তাধারার আলোড়ন

ফ্রান্সিস বেকনের চিন্তাধারা তৎকালীন পণ্ডিতসমাজে যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি করে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ উন্মুক্ত হয়।

বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস বেকনের প্রতি সম্মাননা

ফ্রান্সিস বেকন ১৬০৩ সালে নাইটহুড পান। এছাড়াও ১৬১৮ এবং ১৬২১ সালে ব্যারন ভিরলাম এবং ভিসকাউন্ট সেন্ট এলবান উপাধি পান।

ফ্রান্সিস বেকনের মৃত্যু

১৬২৬ খ্রিস্টাব্দে এই মহান চিন্তানায়কের জীবনাবসান হয়।

উপসংহার :- প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানরাজ্যে তিনিই প্রথম বিপ্লবের সূচনা করেন। পরে গ্যালিলিও, দেকার্ত প্রমুখ মহামনীষীদের আপ্রাণ চেষ্টা ও যত্নে বিজ্ঞান তার নিজের পথের সন্ধান লাভ করে। তাই ফ্রান্সিস বেকনের নাম বিজ্ঞান চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করবে।

(FAQ) দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রান্সিস বেকন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফ্রান্সিস বেকন কে ছিলেন?

একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক।

২. ফ্রান্সিস বেকন কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?

ইংল্যান্ড।

৩. ফ্রান্সিস বেকনের সময় ইংল্যান্ডের রাজা কে ছিলেন?

প্রথম জেমস।

৪. ফ্রান্সিস বেকনের সময় ইংল্যান্ডের রানী কে ছিলেন?

প্রথম এলিজাবেথ।

৫. ফ্রান্সিস বেকন কত সালে নাইটহুড উপাধি লাভ করেন?

১৬০৩ সালে।

Leave a Comment