রাণী প্রথম এলিজাবেথ

রাণী প্রথম এলিজাবেথ প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতৃপরিচয়, শৈশবকাল, পঞ্চদশবর্ষীয়া এলিজাবেথ, মোহিনী নারী, বিলাসিতার প্রতি তীব্র আসক্তি, উৎসাহ ও প্রেরণার এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি, স্পেনের আক্রমণ ও পরাজয়, ঘোষণা, ঘৃণ্য ও প্রত্যাখ্যাতা, মৃত্যু ও তার স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে জানবো।

রাণী প্রথম এলিজাবেথ

ঐতিহাসিক চরিত্ররাণী প্রথম এলিজাবেথ
জন্ম৭ সেপ্টেম্বর, ১৫৩৩ খ্রি:
দেশইংল্যান্ড
পরিচিতিইংল্যাণ্ডের রানী
রাজত্ব১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ – ২৪ মার্চ ১৬০৩ খ্রি:
রাজ্যাভিষেক১৫ জানুয়ারি, ১৫৫৯ খ্রি:
মৃত্যু২৪ মার্চ, ১৬০৩ খ্রি:
রাণী প্রথম এলিজাবেথ

ভূমিকা :- ইংল্যাণ্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ তাঁর প্রথম আইন সভার অধিবেশনে যে স্মরণীয় উক্তিটি করেছিলেন, সম্ভবতঃ সেটাই ছিল তাঁর জীবনের আন্তরিকতার ছোঁয়ায় রাঙানো প্রথম ও শেষ বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, “আমার প্রজাদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা ভিন্ন আমার কাছে পৃথিবীর কোন কিছুই মূল্যবান নয়।”

জনগণের ভালোবাসা অর্জন ও রক্ষায় রানী প্রথম এলিজাবেথ

যদিও টিউডরদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল অসংখ্য মানুষকে, আর সেই রক্তস্নাত পিচ্ছিল পথ ধরেই তিনি আরোহণ করেছেন সিংহাসনে, তবুও কিন্তু তিনি তাদের ভালবাসা অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন। শুধু অর্জন নয়। সে ভালবাসা তিনি রক্ষাও করেছিলেন।

শয়তানিতে ভরা রানী এলিজাবেথ

হ্যাঁ, তাঁর রাজত্বের শেষ দিকের দুঃখময়, বিবর্ণ দিনগুলিতেও যখন তাঁকে চিত্রিত করা হয়েছে শয়তানিতে ভরা ঝগড়াটের এক রক্তবর্ণা স্ত্রীলোক হিসাবে তিনি লালায়িত ছিলেন যুব-সম্প্রদায়ের ভালবাসার জন্য; যদিও অবশ্য এর জন্য উচ্চ-পদস্থ বা সাধারণ, কোন ব্যক্তিকেই বঞ্চিত করতে বা বিপদে ফেলতে তাঁর হাত এতটুকু কাঁপেনি।

সবচেয়ে কাঙ্খিতা এলিজাবেথ

মহিলা পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্খিতা মহিলা এই এলিজাবেথ প্রেমাসক্তিতে ছিলেন উদ্দাম, বল্লহারা, নির্মম, নিষ্ঠুর। একটুকরো নিখাদ ভালবাসার জন্য তিনি পারতেন না এমন কোন কাজই পৃথিবীতে ছিল না।

রানী এলিজাবেথের জন্ম

এলিজাবেথ জন্মগ্রহণ করেন ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে।

রানী এলিজাবেথের পিতৃপরিচয়

  • (১) তাঁর পিতা অষ্টম হেনরী তাকে খুশি মনে মনে নিতে পারেন নি। কেননা তিনি চেয়েছিলেন যে কোনো পুরুষ বংশধর এসে বহন করুক ঐতিহ্যশালী এই টিউডর বংশের ধারা।
  • (২) বিশেষত অজস্র বাধা আর প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে তিনি যেখানে অ্যান বোলিমকে রাণী করেছিলেন সেখানে সামান্য প্রতিদান হিসাবে সেও তো তাকে একটা পুত্র-সস্তান উপহার দিতে পারত।
  • (৩) এলিজাবেথ যদি কন্যাসন্তান না হয়ে পুত্রসন্তান হতেন তো অ্যান বোলিনকে হয়ত তিন বছরের শিশুকে ফেলে রেখে ফাসি কাঠে তার উচ্চাকাঙ্খী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হতো না।

রানী এলিজাবেথের শৈশবকাল

  • (১) শিশু হিসাবে একাকীত্ব, ভীতি, বেদনা এবং দুঃখ সম্বন্ধে এলিজাবেথ-এর অভিজ্ঞতা আর পাঁচটা শিশুর থেকে ছিল অনেক বেশি। খুব ছোট বয়স থেকে হঠাৎ মৃত্যুজনিত ভয় ছিল তাঁর চিরসাথী এবং নিজের জন্মের কলঙ্ক ছিল কায়ার ছায়ার মতো সর্বদা সম্মুখে লম্ববান।
  • (২) তাঁর ছোটবেলার বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে প্রকৃত পক্ষে বন্দীদশায়। তবু ভাল, গৃহশিক্ষক, প্রচুর পুস্তক এবং ছোট্ট বৈমাত্রেয় ভাই এডোয়ার্ড-এর সাহচর্যে তিনি কিছুটা তৃপ্তি লাভ করেছিলেন।
  • (৩) সর্বোপরি, রজার অ্যাসূচাস এবং ব্যালডাসেয়ার-এর অভিভাবকত্বে ‘হ্যাটফিলড হাউস’-এ কাটানো শান্ত দিনগুলি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতিগুলির অন্যতম।

ষষ্ঠ এডোয়ার্ডের সিংহাসনে আরোহণ

  • (১) এরপর ১৫৪৭ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম হেনরী মারা গেলেন এবং সিংহাসনে বসলেন দশ বছরের বালক ষষ্ঠ এডোয়ার্ড, সঙ্গে অভিভাবক হিসাবে থাকলেন তার মামা ডিউক অব সমারসেট। কিছুদিনের মধ্যেই দিকচক্রবালে ঘনিয়ে এল চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ।
  • (২) সমারসেট ক্ষমতালোভী হলেও সেরকম ধূর্ত ছিলেন না; তাছাড়া এটাও নিদারুণ ভাবে সত্য ছিল যে ওই বালক রাজা শারীরিকভাবে এমনই দুর্বল ও অথর্ব ছিল যে তার পক্ষে পরিপূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় পৌঁছানো কখনই সম্ভব ছিল না।

সবশেষ উত্তরাধিকারী এলিজাবেথ

  • (১) তাই অষ্টম হেনরীর উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁর পরেই ছিল অ্যারাগণের ক্যাথারিন-এর কন্যা মেরী টিউডর-এর নাম এবং সবশেষে ছিল এলিজাবেথ এর নাম।
  • (২) তবে, এদের দুজনের কাছেই ভয়াবহ বিপদস্বরূপ ছিল ফ্রান্সের দঁফের স্ত্রী ও অষ্টম হেনরীর বড় বোন মার্গারেট-এর নাতনী এবং স্কটল্যাণ্ডের সিংহাসনের ভবিষ্যৎ দাবীদার মেরী স্টুয়ার্ট। আসলে, ইংল্যাণ্ডের সিংহাসনের উপরও মেরী স্টুয়ার্ট-এর দাবী ওই দুই টিউডর যুবরাণীর চেয়ে অনেক বেশি ও জোরালো ছিল।
  • (৩) কিন্তু মেরী টিউডর এর মতো তার ক্যাথলিক ঘেঁষা মনোভাব তাকে ইংল্যাণ্ডের জনগণের সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত করেছিল, এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার ফ্রান্স-এর রাণী হওয়া, যা তার ইংলণ্ডেশ্বরী হওয়ার পক্ষেও অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল।

পঞ্চদশবর্ষীয়া এলিজাবেথ

  • (১) এলিজাবেথ অবশ্য তাঁর বিমাতা ক্যাথারিন-এর নতুন স্বামীর বেশ প্রিয় পাত্রীই হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, পঞ্চদশবর্ষীয়া রাজকুমারীর হৃদয়ে সুখের যে ঢেউ সুদর্শন সেমুর তুলেছিলেন তাঁর যৌবনের তটে। তাই ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাথারিন মারা যেতেই সেমুর এলিজাবেথ এর কাছে সরাসরি প্রস্তাব করলেন।
  • (২) সেমুর-এলিজাবেথ সম্পর্কের প্রকৃত চেহারা হয়ত আমরা কোনদিনই জানতে পারব না, কিন্তু যে লোকনিন্দা ও কলঙ্কের আর্বতে তিনি নিজেকে এবং এলিজাবেথকে ডুবিয়েছিলেন তাতে যুগ্ম মৃত্যুদণ্ড প্রায় অবধারিত ছিল।
  • (৩) কারণ, সেমুর-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজদ্রোহিতার; তিনি চেয়েছিলেন এলিজাবেথকে বিয়ে করে ইংল্যাণ্ডের সিংহাসন অধিকার করতে। শেষ পর্যন্ত একদল দুঁদে উকিলের প্রাণান্তকর জেরায় জেরবার হয়ে এলিজাবেথ তাঁর নির্দোষিতা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার পর তাঁরা দুজনে তাদের শির ও সম্মান কোনক্রমে বাঁচালেন।

মোহিনী নারী এলিজাবেথ

  • (১) রানী এলিজাবেথের বিরুদ্ধে বরাবরই একটা অভিযোগ ছিল যে তিনি ছিলেন এক মোহিনী নারী। আপাতবিরোধীভাবে এটা যেমন সঠিক, তেমনি বেঠিকও। শোনা গেছে, তাঁর বৃত্তের ধারে কাছে যে যুবকই এসেছে, পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনি তার যৌবনরস পান করেছেন।
  • (২) সম্ভবতঃ এসেক্স এর সঙ্গেই তাঁর প্রেম যথেষ্ট গভীরতা লাভ করেছিল; কিন্তু স্পেন-এর ফিলিপ, তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডন জন এবং অস্ট্রিয়ার আর্কডিউক চার্লস, আনজাউ এর হেনরী কিংবা তার ভাই ফ্রান্সিস-এদের সকলের সঙ্গেই তাঁর সলাজ সম্পর্ক ছিল ঠাণ্ডা রাজনীতি সঞ্জাত।
  • (৩) তাঁর এই নিস্পৃহ এবং শীতল আবরণ কিন্তু তাঁর পরিকল্পিত সাফল্যেরই অঙ্গীভূত। দুঃসাহস ও যৌবনের আগুনে উত্তপ্ত এবং বিত্ত ও ভোগের লালসায় উত্তেজিত একটা দেশে তিনি চোখ ঝলসানো কোন স্বর্ণ শিখর নয়, ছিলেন রজতশুভ্র পর্বত শৃঙ্গের মতো মহিমান্বিত এক শীতল ব্যক্তিত্ব, যাকে ধরা যায় কিন্তু বেঁধে রাখা যায় না, যার স্পর্শে জাগে শিহরণ কিন্তু তা দেয় না কোনো নির্ভরতা।

বিলাসিতার প্রতি এলিজাবেথের তীব্র আসক্তি

জাঁকজমক, আড়ম্বর ও যে কোনো বিলাসিতার প্রতি তাঁর তীব্র আসক্তি। রাজকীয় কোনো অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রা, বা বর্ণাঢ্যতায় ও জৌলুষে সাধারণ মানুষের চোখকে ধাঁধিয়ে দেয় এবং তাদেরকে বিশ্বয়ে বিমূঢ় করে দেয় তার জন্য তিনি স্বয়ং পৃষ্ঠাপোষকতা করতেন।

উৎসাহ ও প্রেরণার এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি এলিজাবেথ

অন্যদিকে আপামর জনসাধারণের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন উৎসাহ ও প্রেরণার এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি-যাকে আদর্শ করে অসংখ্য সাহসী, মেধাবী, এমনকি বিবেক-বুদ্ধিহীন মানুষও বেরিয়ে পড়েছিল স্থলে, জলে ও রণাঙ্গণে কিছু একটা করে দেখাবার নেশায়।

ধর্মীয় মত প্রকাশে এলিজাবেথের বাধা

  • (১) তবে ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তিনি মোটেই। প্রশ্রয় দিতেন না। কারণ, তাঁর এটা ভালভাবেই জানা ছিল যে ইংল্যাণ্ডে পূর্ণধর্মান্তরিত করার জন্য স্পেন থেকে যে বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্ম প্রচারকদের পাঠানো হয়েছিল, তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর দেশে বিদ্রোহ ও রাজদ্রোহের বীজ বপন করা।
  • (২) ওদিকে ওই ধর্মসংস্কারকের তাদের অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি অকপট ও অবিচল আস্থা নিয়ে থাকায় এবং সমগ্র ইংল্যাণ্ডেরও ক্যাথলিক ভাবধারার প্রতি সহানুভূতি পোষণ করায় তাঁর সিংহাসনের গায়ে তিনি অনুভব করলেন মৃদু তরঙ্গাঘাত। অতএব, এলিজাবেথ ক্যাথালিকদের অযথা হয়রান এবং তাদের উপর নির্যাতন করতে শুরু করে দিলেন।

এলিজাবেথ সম্পর্কে গ্রণি-র বক্তব্য

কিন্তু গ্রণি-র বক্তব্য ছিল অন্যরকম তার মতে- “এলিজাবেথই হলেন প্রথম ইংরেজ শাসক যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ধর্মীয় নির্যাতনের অভিযোগ তাঁর শাসন ব্যবস্থার উপর একটা বিরাট কলঙ্ক স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই শুধু মাত্র ধর্মীয় মতদ্বৈধতার কারণে কোন মানুষকে হত্যা করার চেষ্টাকে তিনি সরাসরি অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছিলেন।”

এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের উপর স্পেনের আক্রমণ

  • (১) ঠিক তার পরের বছরেরই স্প্যানিশ জাহাজের উপর ইংরেজ অভিযানকারীদের দুর্ব্যবহারে রীতিমত কুপিত হয়ে ফিলিপ তার রণতরীর বহরকে পাঠালেন নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকায় যেখানে শত্রুপক্ষ ব্যাপকভাবে তার স্বার্থক্ষুণ্ণ করে যাচ্ছিল।
  • (২) ওদিকে শত্রুপক্ষ এই হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি ছিল না; তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র বা গোলাবারুদ, কোনটারই মজুদ ছিল না। খারাপ কিছু একটা যাতে না ঘটে যায় তার জন্য এলিজাবেথকেও লণ্ডন ত্যাগ করে চলে যেতে বলা হল।
  • (৩) নৈরাশ্যবাদীরা প্রমাদ গুনলেন যে হানাদারদের মদতে এই সুযোগে দেশের অভ্যন্তরে একটা আদর্শের জন্য বলি প্রদত্ত আপামর জনসাধারণের নিষ্ঠাকে সম্বল করে তিনি নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন, উপযুক্ত মুহূর্তে তাঁকে নিরাশ করল না।

রানী এলিজাবেথের বক্তব্য

তাই টিলাবেরী-তে এক সমাবেশে তাঁর সৈন্যবাহিনীর উদ্দেশ্য তিনি বললেন, “আমার প্রিয় এবং বিশ্বস্ত দেশবাসীর প্রতি একতিল সন্দেহ বা অবিশ্বাস নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। আমি জানি আমি একজন নারী; তাই শরীরগত কারণে আমি ক্ষীণ ও দুর্বল হতে পারি, কিন্তু হৃদয়টা আমার রাজার মতো। এটা ভাবতে আমার রীতিমত দুঃখ ও ঘেন্না হয় যে পারমা অথবা স্পেন কিংবা ইউরোপ-এর কোনো যুবরাজ আমার রাজ্যের সীমান্তে এসে নিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছে”।

স্পেনীয় আর্মাডার পরাজয়

তার বক্তব্যের সমর্থনে সৈন্যদের মধ্য থেকে যে হর্ষধ্বনি উঠল তা মিলিয়ে যাবার আগেই হঠাৎ এক দূত ডেক থেকে ছুটতে ছুটতে তাঁর কাছে এসে উপস্থিত হল এবং জানাল যে তার বিশ্বাস ব্যর্থ হয়নি। কারণ, ঈশ্বরের সহায়তায় ইংরেজরা স্পেনীয় আরমাডাদের হটিয়ে দিয়েছে।

সানন্দে এলিজাবেথের ঘোষণা

তাই সানন্দে তিনি ঘোষণা করলেন, “দেখুন, ঈশ্বর শুধু সৎ এবং সাহসীদেরই সাহায্য করেন। তাই তাঁর দৈব বায়ুর সাহায্যে তিনি আমাদের শত্রুপক্ষকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন।”

এলিজাবেথের রাজত্বের গৌরবময় দিন

তাই তাঁর সোনালী রাজত্বের গৌরবময় দিন হিসাবে গণ্য করা হয় ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের এই ১৭ই নভেম্বর তারিখটিকে। কারণ দেশের প্রধান হিসাবে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে তাঁর কর্তব্যই শুধু সম্পাদন করেননি তিল তিল করে যে দেশকে তিনি নিজের হাতে গড়েছেন এবং তাকে সম্মানের ও গৌরবের সর্ব্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছেন, চরম বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে সেই দেশকে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষাও করেছেন।

ঘৃণ্য ও প্রত্যাখ্যাত রানী এলিজাবেথ

  • (১) এরপর ইংল্যান্ড তাঁর মহত্ত্বের ও শৌর্যের শান্ত জলরাশির উপর দিয়ে তৃপ্ত মালীর যত খুশিমনে ঘুরে বেড়িয়েছে, আর তিনি নিজে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছেন তাঁর প্রিয় দেশবাসীর অন্তর থেকে।
  • (২) শেষে, সম্পূর্ণ একাকী এবং ভগ্নমনা অবস্থায় তিনি পেতে চাইলেন একটু প্রেমের উষ্ণ পরশ; কিন্তু সেখানেও তিনি প্রত্যাখাত হলেন। কারণ, সুদর্শন, তরুণ ও স্বেচ্ছাচারী নাইট এসেক্স যে এলিজাবেথকে জানতেন তিনি ছিলেন অহংকারী এবং তেজী এক মহিলা এবং রাজানুগ্রহের প্রতিও তাই তাঁর ছিল চরম এক অবজ্ঞা ও ঘৃণা।
  • (৩) তিনি অপেক্ষা করেছিলেন সময়ের করাল থাবায় ক্ষত বিক্ষত কুৎসিৎ ও বিগতযৌবনা এক নারীকে দেখার জন্য। সময়ের চাপে তিনি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে নুইয়ে পড়লেও এসেক্স-এর ধারনা ছিল যে ওই টিউডর অগ্নিশিখা যতই স্তিমিত অবস্থায় থাকুক না কেন তাকে গিলে খাবার পক্ষে তা তখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। তাঁর আশঙ্কা একদিন সত্যে পরিণত হল।

রানী এলিজাবেথের হৃদয়ের মৃত্যু

১৬০১ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সেই এসেক্সকে ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিতে হল; তার মৃত্যুর সাথে এলিজাবেথ এর হৃদয়ের মৃত্যু ঘটল।

রানী এলিজাবেথের অহংকার ও প্রেমের দাহিকা শক্তি

  • (১) অহংকার যেমন ছিল এলিজাবেথ-এর জীবনের চালিকাশক্তি, তেমনি ছিল তাঁর প্রেমের দাহিকাশক্তিও। অহংকার ছিল তাঁর জীবনের উত্থান, তাঁর জীবনের পতনও।
  • (২) তাই জীবেনর প্রান্ত সীমায় পৌঁছেও মাঝে মাঝে দেখা গেছে পড়ন্ত সূর্যের দীপ্ত কিরণ-গমগম্ করে বেজে উঠেছে তাঁর উচ্চকিত হাসির সুরেলা অনুরণন, শোনা গেছে চাঁছাছোলা ভাষায় স্পষ্টাস্পষ্টি বক্তৃতা।
  • (৩) তার এই বক্তৃতা রাষ্ট্রদূতদের অনুপ্রাণিত করেছিল সত্য কথা বলতে এবং রুক্ষ নাবিকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল কাব্য রচনা করতে। কিন্তু এসবই ছিল নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের দেদীপ্যমান শিখার মত হঠাৎ এক উজ্জ্বল বিচ্ছুরণ।

রানী এলিজাবেথের মৃত্যু

১৬০৩ সালে ২৪শে মার্চ এসেক্স-এর মৃত্যুর ঠিক দু’বছর পরেই ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ-এর জীবনদীপ চিরতরে নির্বাপিত হয়ে গেল।

রানী এলিজাবেথের স্মৃতিসৌধ

ফ্যারাওদের পিরামিড-এর চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল তাঁর স্মৃতিসৌধ-আর সেই স্মৃতিসৌধ ছিল তাঁর স্বদেশ, যাকে তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে জগৎসভায় সর্বশ্রেষ্ঠর আসনে বসিয়েছিলেন।

রানী এলিজাবেথের বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত্ব

  • (১) কারোর কোনো উপদেশ কেমন করে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে তার কৌশল আয়ত্ত্ব করে এবং অচিরেই তড়িঘড়ি কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলে, আগামী কাল সম্ভবতঃ ভাল কিছু ঘটতে পারে সেই আশায় সেই কাজকে ফেলে রাখা-এই নীতিতে বিশ্বস্ত করে।
  • (২) ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্পেন ও পর্তুগাল-এর সমুদ্রোপকূলে খবরদারি করার প্রবণতাকে চিরদিনের মত কমিয়ে দিয়েছিলেন; ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে দুধারের সমর্থকদের লেলিয়ে দিয়ে নিজের দেশে স্থাপন করেছিলেন চার্চ অফ ইংল্যান্ড।

কবি সাহিত্যিকদের অনুপ্রেরণার প্রতিমূর্তি রানী এলিজাবেথ

এযাবৎ পৃথিবী যা দেখেনি এবং অদূর ভবিষ্যতে দেখবে বলে মনেও হয় না সেই সব কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সৈনিক, আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী প্রভৃতি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ছিলেন আলোকদায়িনী সূর্যের মত সক্ষাৎ অনুপ্রেরণার প্রতিমূর্তি।

উপসংহার :- এলিজাবেথ সারাজীবন কুমারীই রয়ে গেছিলেন। শোনা যায় তার নাকি কিছু একটা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে তা ঘটনা বা রটনা যাই হোক না কেন, ঐতিহাসিকদের কথাটা বিশ্বাস করাই যুক্তিযুক্ত এবং তা শ্রেয়ও। বিয়ে তিনি করেন নি ঠিকই, কিন্তু ভাল তিনি বেসেছিলেন এবং তা গভীরভাবে ও আন্তরিকভাবে। আর সেই ভালবাসার, প্রেমের পাত্রটি ছিল তার অতি আদরের স্বদেশ-ইংল্যাণ্ড।

(FAQ) রাণী প্রথম এলিজাবেথ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রানী এলিজাবেথ কে ছিলেন?

১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ থেকে ২৪ মার্চ ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাণী, ফ্রান্সের রাণী (পদাধিকার অনুসারে) ও আয়ারল্যান্ডের রাণী ছিলেন প্রথম এলিজাবেথ।

২. রানী প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকাল কত?

১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ – ২৪ মার্চ ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

৩. রানী প্রথম এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক কবে হয়?

১৫ জানুয়ারি ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে।

৪. কার আমলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্পেনীয় আর্মাডা ধ্বংস হয়?

রানী প্রথম এলিজাবেথ।

Leave a Comment