ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন প্রসঙ্গে অযোগ্য সম্রাটদের ভূমিকা, সাম্রাজ্যের বিভাজন, অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে যোগদান, বহিরাগতদের আক্রমণ, ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে Spielvogel-এর মন্তব্য, ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে ভার্দুন ও মারসেন চুক্তির প্রভাব সম্পর্কে জানবো।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের ভাঙ্গনের মূল কারণ বা পতন প্রসঙ্গে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের বিভাজন, অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের যোগদান, ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে অযোগ্য সম্রাটদের ভূমিকা ও ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে বহিরাগতদের আক্রমণ সম্পর্কে জানব।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন |
শার্লামেনের মৃত্যু | ৮১৪ খ্রি |
শার্লামেনের উত্তরাধিকারী | Louis the Pious |
ভার্দুনের চুক্তি | ৮৪৩ খ্রি |
মারসেন চুক্তি | ৮৭০ খ্রি |
বহিরাগত আক্রমন | নরম্যান, ভাইকিং, ম্যাগিয়ার |
ভূমিকা :- শার্লামেনের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে সাম্রাজ্যের পতন ঘনিয়ে এসেছিল। শার্লামেনের পরবর্তী সম্রাটদের অযোগ্যতা ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে সাহায্য করেছিল।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে অযোগ্য সম্রাটদের ভূমিকা
- (১) শার্লামেনের পরবর্তী সময়ে তার সন্তান Louis the Pious সিংহাসনে বসেন। যাকে শার্লামেন ইতালির সম্রাট হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়েছিল। তারপর যারাই এসেছিলেন তারাই অত্যন্ত অযোগ্য ছিলেন। সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার মতো মানসিক দৃঢ়তা তাদের ছিল না।
- (২) পারস্পরিক সদ্ভাবও বজায় ছিল না। The Bald, The Fat, The Simple, The Child তাদের অযোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। শার্লামেনের মৃত্যুর পর ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে এই ধরনের দুর্বল ও অসমর্থ উত্তরাধিকারীর দেখা মেলে। তাদের অযোগ্যতায় ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
বিখ্যাত ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে দায়ী সাম্রাজ্যের বিভাজন
- (১) ক্যারোলিঞ্জিয়রা বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারী শাসন করবে এই বিষয়টি অনুসরণ করত না। সম্রাটের সন্তানই সিংহাসনে বসবে এরকম ধারণা থাকলেও কোনো সম্রাটের একের বেশি সন্তান থাকলে কোন সন্তান সিংহাসনের দাবিদার তা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। তারা পুরাতন ধ্যান-ধারণা অনুসারে তাদের পুত্রদের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দিত।
- (২) এই ধরনের ব্যবস্থার ফলে সাম্রাজ্যের শক্তি এবং স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। বহু বিভাজন সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল। যার ফলে শার্লামেনের মৃত্যুর তিরিশ বছরের মধ্যেই তার বিশাল সাম্রাজ্যটি তার পৌত্রদের মধ্যে তিনভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এই সময়কাল ছিল ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দ। তাই বলা যায় ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের বিভাজন সাম্রাজ্যের পতনে সাহায্য করেছিল।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে দায়ী অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে যোগদান
শার্লামেনের পুত্র Louis the Pious-এর মৃত্যুর পর তার সন্তান বহু যুদ্ধে যোগদান করেছিল। অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে যোগদান করার ফলে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাম্রাজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে দায়ী বহিরাগতদের আক্রমণ
- (১) ফ্রাঙ্ক সাম্রাজ্য বা ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য গৃহযুদ্ধের কারণে আরও দুর্বল হয়েছিল এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বহিরাগতদের আক্রমণ। এরা প্রায় দুই শতক ধরে উত্তর পূর্ব এবং দক্ষিণে আক্রমণ চালায়। নরম্যান, স্যারাসেন, ম্যাগিয়াররা ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ চালিয়েছিল। দুর্বল ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে নি।
- (২) শার্লামেনের মৃত্যুর পর এই বহিরাগতরা প্রতি বছর আক্রমণ চালিয়ে সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছিল। রাভেনকে নরম্যানরা তাদের রাজধানী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। ৮৪৫, ৮৫১, ৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তারা প্যারিসে আক্রমণ চালায়। বহু মঠ তারা ধ্বংস করে। ৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তারা প্যারিস দখল করেছিল।
- (৩) Charles the Fat ছিলেন তখনকার শাসক। তিনি নরম্যানদের সঙ্গে সমঝোতামূলক চুক্তি করলেও, তারা ধীরে ধীরে নর্মাণ্ডি, দক্ষিণ ইতালি, সিসিলি, ইংল্যান্ড-এর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে কফিনে শেষ পেরেকটুকু পুঁতেছিল এই নরম্যানরা। এর ফলে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছিল।
- (৪) ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনের প্রক্রিয়ায় বহির্দেশীয় আক্রমণ বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান যারা ভাইকিং নামে পরিচিত ছিল তারা ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল। কেবলমাত্র ভাইকিংরাই নয় ম্যাগিয়াররাও ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে নবম শতক থেকেই আক্রমণ করেছিল।
- (৫) ম্যাগিয়াররা ছিল মধ্য এশিয়ার। তারা নবম শতকে পূর্ব ইউরোপ অভিযান চালিয়েছিল। তারা পূর্ব ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়েছিল। পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরী এবং অন্যান্য অঞ্চলেও তারা আক্রমণ চালায়। তাদের সামরিক শক্তি ছিল উন্নত। ভাইকিংরাও নবম শতকে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালায়।
- (৬) নবম শতকের দ্বিতীয় ভাগে ইউরোপের সমস্ত অঞ্চল ভাইকিংদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ছিল। শাসকদের অযোগ্যতা এই দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছিল। ভাইকি এবং ম্যাগিয়াররা ক্যারোলিঞ্জিয় শাসকদের অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল।
- (৭) ৮১৪-৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সময়কালে ভাইকিং ও ম্যাগিয়াররা ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়েছিল। শার্লামেনের মৃত্যুর পর বহিরাগতদের আক্রমণ আরও সুদৃঢ় হয়েছিল।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে Spielvogel-এর মন্তব্য
Jackson J. Spielvogel ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে বলেছেন যে “ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য পতনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল শার্লামেনের মৃত্যুর পরবর্তী সময়কালে।” শার্লামেন পরবর্তী শাসকদের অযোগ্যতা এবং বহির্দেশীয় আক্রমণের বিষয়টি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী দায়ী ছিল।
ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে ভার্দুন-মারসেন চুক্তির প্রভাব
- (১) শার্লামেন এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুললেও তা স্থায়ী করতে গেলে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেননি। শার্লামেন সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুললেও পরবর্তী সম্রাটদের অধীনে সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ক্যারোলিঞ্জিয় শাসনব্যবস্থার ভিত্তি শার্লামেনের সময়কালে বজায় থাকলেও ৮১৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রশাসনিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
- (২) ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভার্দুনের চুক্তি অনুসারে Louis the Pious-এর তিন সন্তানের মধ্যে সাম্রাজ্যের বিভাজন হয়েছিল। Lothair I মধ্যভাগের সাম্রাজ্য অর্থাৎ রোম ও ইতালির সঙ্গে সংযুক্ত অঞ্চলগুলি লাভ করেছিলেন। Louis the German পূর্ব সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট অংশবিশেষ এবং Charles the Bald পশ্চিম সাম্রাজ্যের অংশ লাভ করেছিলেন। এইভাবে ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্য খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাচ্ছিল।
- (৩) শেষ ক্যারোলিঞ্জিয় উত্তরাধিকারী হিসাবে Louis the Child নির্বাচিত হলেও তিনি সম্রাট পদ লাভ করতে পারেন নি। সুতরাং শেষ ক্যারোলিঞ্জিয় সম্রাট ছিলেন তার পিতা Amulf। ৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়েছিল। যদিও এর অনেক আগে ৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট Lothair-এর মৃত্যুর পর তার তিন সন্তান Louis II, Charles এবং Lothair II এর মধ্যে সাম্রাজ্যের বিভাজন হয়ে যায়।
- (৪) ৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে Lothair II এর মৃত্যুর পর তার রাজ্যগুলি অধিকার করার জন্য Charles the Bald এবং Louis the German এর মধ্যে ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে যে চুক্তি হয়েছিল তা মারসেন চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির দ্বারা ঠিক হয়েছিল Charles the Bald বেলজিয়াম অঞ্চল পাবেন এবং লাডউইগ পাবেন আধুনিক হল্যান্ড অঞ্চল।
উপসংহার :- এইভাবে ক্রমাগত সাম্রাজ্যের বিভাজন ও তার সাথে বহিরাগত আক্রমন ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতনে সাহায্য করেছিল।
(FAQ) ক্যারোলিঞ্জিয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৮১৪ খ্রিস্টাব্দে।
তার পুত্র Louis the Pious
৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে
৮৭০ খ্রিস্টাব্দে।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ