প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্য প্রসঙ্গে মৌর্যযুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য, মৌর্যোত্তর যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য, গুপ্ত যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্য
ঐতিহাসিক বিষয় | প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্য |
মৌর্য যুগের বন্দর | পাটলিপুত্র, তক্ষশীলা |
মৌর্যোত্তর যুগের বন্দর | বারবারিকাম |
ভারত–রোম বাণিজ্য | গুপ্ত যুগ |
গুপ্তোত্তর যুগের বন্দর | কাবেরিপত্তনম, কুইলন |
ভূমিকা :- হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই বিদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকেও ভারতের বহির্বাণিজ্যের ধারা অব্যাহত ছিল।
মৌর্যযুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য
- (১) মৌর্যযুগে ভারতের বহির্বাণিজ্যের বিবরণ পাওয়া যায় স্ট্রাবোর ‘ভূগোল’ গ্রন্থ থেকে। বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পাটলিপুত্র গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিদেশি বণিকদের দেখাশোনার জন্য একটি পৃথক দপ্তর ছিল। পশ্চিমি দেশগুলির সাথে মৌর্যদের রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে ওই সকল দেশের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
- (২) বহির্বাণিজ্যে লিপ্ত ব্যস্ত বন্দরগুলি ছিল তক্ষশিলা, ভৃগুকচ্ছ, সোপারা, তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি। তামলিপ্ত বন্দর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে ভারতের সংযোগ গড়ে ওঠে। ব্রহ্মদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, শ্রীলঙ্কা ও চীন-এর সাথে ভারতের বাণিজ্যসম্পর্ক ছিল। ভারত থেকে রপ্তানি হত দামি পাথর, সুগন্ধি, হাতির দাঁতের অলংকার, মশলা, দামি কাঠ, সুতিবস্ত্র ইত্যাদি। অন্যদিকে আমদানি করা হত নীলকান্ত মণি, ঘোড়া, চিনা রেশম, প্রবাল প্রভৃতি।
মৌর্যোত্তর যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য
- (১) মৌর্যোত্তর যুগে সাতবাহন, শক ও কুষাণদের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বহির্বাণিজ্য চালু ছিল। কুষাণ যুগে ভারত-রোম বাণিজ্য সমৃদ্ধ রূপ নেয়। স্ট্রাবো ও টলেমির ‘ভূগোল’ গ্ৰন্থদ্বয়, প্লিনির ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’, ফান-ই’র ‘হৌ-হান-শু এবং অন্যান্য লেখকের ‘পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সী’ গ্রন্থ থেকে বহির্বাণিজ্যের বিবরণ জানা যায়।
- (২) চিন ও রোমের মধ্যে সমৃদ্ধ রেশম বাণিজ্য চলত স্থলপথে। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতি বণিকদের জ্ঞাত হলে লোহিত সাগর, আরব সাগর হয়ে ভারতীয় বন্দরের মাধ্যমে এই বাণিজ্য চালু হয়। নিম্ন সিন্ধু-উপতাকা এই বাণিজ্যে বিশিষ্ট ভূমিকা নেয়। সিন্ধুর ‘বারবারিকাম’ ছিল অতি ব্যস্ত বন্দর।
- (৩) এছাড়া বহির্বাণিজ্যে লিপ্ত ভারতীয়দের বন্দরগুলির অন্যতম ছিল ভৃগুকচ্ছ, সোপারা, কল্যাণ, গঙ্গা, তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি। এই সকল বন্দরে বিদেশি বণিকদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। ভারত থেকে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, গম, মশলা, সুগন্ধি, মসলিন, সুতিবস্ত্র ও দামি কাঠ। রোম থেকে আমদানি করা হত খেজুর, তামা, টিন, সিসা, সোনা, রুপো ইত্যাদি।
গুপ্তযুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য
- (১) খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে ভারত-রোম বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। তবে পূর্ব রোমে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য স্থাপিত হলে পুনরায় বাণিজ্যসম্পর্ক স্থাপিত হয়। পারস্য উপসাগর ধরে প্রাচ্যের সাথে রোমের বাণিজ্য চালু হলে পশ্চিম উপকূলের কল্যাণ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। চালুক্য দ্বিতীয় পুলকেশীর সাথে পারস্যের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল।
- (২) এই সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে ভারতের বাণিজ্যসম্পর্ক ছিল। সমতট অঞ্চলের সাথে শ্যামদেশ, ব্রহ্মদেশ এবং সুদূর দক্ষিণের সাথে মালয়, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতির মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চলত। রপ্তানি পণ্যের অন্যতম ছিল মশলা, চন্দন কাঠ, বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য এবং আমদানি হত মূলত রেশন, ঘোড়া, মূল্যবান ধাতু ইত্যাদি।
গুপ্ত পরবর্তী যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই সময় উত্তর ভারতে বহির্বাণিজ্য অবহেলিত হয়। তবে দক্ষিণ ভারতে চোল রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চিনের সাথে বাণিজ্যিক দিলেন অব্যাহত রাখে। মহাবলীপুরম, কাবেরীপত্তম, শালিয়ুর, কুইলন বহির্বাণিজ্যের ব্যস্ত কেন্দ্র ছিল। পারস্য ও আরব দেশের সাথেও পণ্য বিনিময় হত।
উপসংহার :- দক্ষিণ ভারত থেকে দামি পাথর, হাতির দাঁত, সিং, আবলুস কাঠ ও কর্পূর চিনে রপ্তানি হত। আরব দেশ থেকে আমদানি করা হত উন্নতমানের ঘোড়া। রাজা ও উচ্চকর্মচারীরা বাণিজ্যে অর্থ লগ্নি করতেন।
(FAQ) প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পাটলিপুত্র, তক্ষশীলা।
বারবারিকাম।
গুপ্ত যুগে।
কাবেরিপত্তনম, কুইলন।