প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান

প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান প্রসঙ্গে হরপ্পা সভ্যতায় নারী, বৈদিক সভ্যতায় নারী, মৌর্যযুগে নারী, মৌর্যোত্তর যুগে নারী, গুপ্ত যুগে নারী ও স্ত্রীধন সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান

ঐতিহাসিক বিষয়প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান
মাতৃতান্ত্রিকহরপ্পা সভ্যতা
পিতৃতান্ত্রিকবৈদিক সভ্যতা
শ্রদ্ধেয় স্ত্রী জাতিমনু
গৃহের গৌরব স্ত্রীমহাভারত
প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান

ভূমিকা :- প্রাচীন যুগে নারীর সামাজিক অবস্থান নানা সময়ে নানা ভাবে বদলেছে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে রচিত প্রাচীন সাহিত্যে নারীর সামাজিক অবস্থানের পরিচয় পাওয়া যায়।

হরপ্পা সভ্যতায় নারীর অবস্থান

প্রাগৈতিহাসিক যুগ-এ ভারতীয় সমাজে ‘মাতৃশাসিত’ সমাজের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। হরপ্পার সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। এই সময় নারীর স্থান ছিল খুবই উঁচুতে।

বৈদিক সভ্যতায় নারীর অবস্থান

বৈদিক যুগ থেকে পিতৃশাসিত সমাজব্যবস্থার ধারা দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। সেই পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় নারীর অবস্থানও পরিবর্তিত হয়েছে। আর্যদের আগমনকালে নারীদেরও পুরুষের সাথে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হত। তাই সাধারণ নিয়মে নারী অন্তঃপুরবাসিনী হলেও, পর্দার আড়ালে বাস করত না।

মৌর্য সাম্রাজ্যে নারীর অবস্থান

  • (১) মৌর্যযুগে ভারতীয় নারীর অবস্থা দুঃসহনীয় বা সম্পূর্ণ বিড়ম্বনার ছিল না। অর্থশাস্ত্র-এ বিধবা-বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গুপ্তচর এবং অন্তঃপুররক্ষী হিসেবে মহিলাদের নিয়োগ করা হত।
  • (২) সমকালীন শাস্ত্রে নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ‘স্ত্রীধন’ হিসেবে অভিহিত হত। বিবাহকালে উপহার হিসেবে এবং পিতৃগৃহ থেকে উপহার হিসেবে নারী যা পেতেন সবই ‘স্ত্রীধন’ হিসেবে বিবেচিত হত।
  • (৩) অর্থশাস্ত্রে বিবাহিতা নারীর অধীনে উচ্চ পরিমাণ অর্থ রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অবশ্য স্ত্রী ও স্ত্রীধনের ওপর স্বামী ও পুত্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব ছিল। স্বভাবতই মৌর্যযুগের নারীর পুরুষ-নির্ভরতা কঠোরভাবে মান্য হত।

মৌর্যোত্তর যুগে নারীর অবস্থান

  • (১) মৌর্যোত্তর ভারত-এ নারীর অবস্থান সম্পর্কে আমাদের প্রধান উপাদান হল মনুস্মৃতি, যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি ও মহাভারত। তবে এদের বক্তব্যে স্ববিরোধিতা আছে। মনু বলেছেন যে, পিতার তুলনায় মাতা সহস্রগুণ সম্মানীয়। তাঁর মতে, যেখানে স্ত্রীজাতিকে শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানো হয়, সেখানে দেবতা সন্তুষ্ট হন (‘যত্ৰ নাৰ্য্যস্তু পূজ্যন্তে, রমস্তে তত্র দেবতাঃ)।
  • (২) মহাভারতের মতে, স্ত্রী হল গৃহের গৌরব। শাসনকার্যে নারীর অংশগ্রহণের দৃষ্টান্তও পাওয়া যায়। জনৈকা রাষ্ট্রকূট রাজমহিষী শাসনকাজে অংশ নিতেন বলে জানা যায়। কিন্তু অন্যত্র মনু বলেছেন যে, নারী প্রথম জীবনে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন। সাধারণভাবে বলা যায় যে, মৌর্যোত্তর যুগেও নারীর স্বাধিকার ও স্বাচ্ছন্দ্য পুরুষের ইচ্ছাধীন ছিল।

গুপ্ত যুগে নারীর অবস্থান

  • (১) গুপ্তযুগে নারীর অবস্থান প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। কামসূত্রে বলা হয়েছে যে, অভিজাত বংশের কন্যাদের ‘চৌষট্টিকলা’ বা কাজে পারদর্শী হতে হত। সাহিত্য পাঠ, ইতিহাস জ্ঞান, ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কে দক্ষতা, নৃত্য, গীত, গৃহকর্ম ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নারীকে পারদর্শী হতে হত। অবশ্য সাধারণ পরিবারের রমণীদের এহেন পারদর্শিতা অর্জনের সুযোগ ছিল না।
  • (২) এযুগেও স্বামীর সেবা, স্বামীর প্রতি আনুগত্য, পারিবারিক কাজকর্ম, সংসারের আয়ব্যয়ের হিসাব রক্ষা ইত্যাদিকে নারীর আবশ্যিক কর্তব্য বলা হয়েছে। নারদস্মৃতি ও পরাশর স্মৃতিতে বিধবা-বিবাহের অনুমোদন দেওয়া হলেও, মনু ও যাজ্ঞবল্ক্য তা অস্বীকার করেছেন।
  • (৩) ‘স্ত্রীধন’ হস্তগত করার জন্য এই সময় সতীদাহ ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা হত বলে ড. রামশরণ শর্মা মনে করেন। গুপ্তযুগে পারিবারিক সম্পর্ক দ্বারা যুক্ত নয় এমন কিছু নারীর কথা কামসূত্রে বলা হয়েছে, যেমন—গণিকা, দেবদাসী ইত্যাদি।

উপসংহার :- প্রাক-মুসলিম সমাজে নারীর অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। বরং রাজপুত সমাজে পর্দাপ্রথার প্রচলন জোরালো করার প্রবণতা দেখা যায়।

(FAQ) প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতে মাতৃশাসিত সমাজের লক্ষণ দেখা যায় কোন যুগে?

প্রাগৈতিহাসিক যুগে।

২. মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার নিদর্শন কোনটি?

হরপ্পা সভ্যতা।

৩. পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতার নিদর্শন কোনটি?

বৈদিক সভ্যতা।

৪. ‘পিতার তুলনায় মাতা সহস্রগুণ সম্মানীয়’ কে বলেছেন?

মনু।

Leave a Comment