মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপি প্রসঙ্গে শ্রেণি বিভাগ, লিপির চরিত্র, লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য, লিপির কালানুক্রম, স্বতন্ত্র কলিঙ্গ লিপি, অপ্রধান শিলালিপি, স্তম্ভলিপি ও গুহা লিপি সম্পর্কে জানবো।
মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপি প্রসঙ্গে অশোকের শিলালিপির শ্রেনীবিভাগ, ব্রাহ্মী, ক্ষরোষ্ঠী ও অ্ আরামাইক লিপিতে রচিত অশোকের শিলালিপি, অশোকের শিলালিপির চরিত্র, অশোকের শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য, অশোকের শিলালিপির কালানুক্রম, অশোকের শিলালিপির স্বতন্ত্র কলিঙ্গ লিপি, অশোকের অপ্রধান শিলালিপি, অশোকের স্তম্ভলিপি, অশোকের গুহালিপি, অশোকের শিলালিপির গুরুত্ব।
সম্রাট অশোকের শিলালিপি
বিষয় | সম্রাট অশোকের শিলালিপি |
সম্রাট | অশোক |
সাম্রাজ্য | মৌর্য সাম্রাজ্য |
যুদ্ধ | কলিঙ্গ যুদ্ধ |
উপাধি | মহর্ষি |
পিতা | বিন্দুসার |
পিতামহ | চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য |
ভূমিকা :- মৌর্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট হলেন অশোক। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্য -এর শ্রেষ্ঠ সম্রাট। রাজর্ষি অশোক তার রাজত্বকালে বেশ কিছু শিলালিপি উৎকীর্ণ করান।
অশোকের শিলালিপির শ্রেণিবিভাগ
অশোকের শিলালিপিগুলিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথা –
- (১) পর্বত লিপি বা পর্বত গাত্রে খোদাই করা লিপি,
- (২) স্তম্ভলিপি বা পাথরের থামের গায়ে খোদাই করা লিপি,
- (৩) গুহার গায়ে খোদাই করা লিপি।
অশোকের শিলালিপির চরিত্র
- (১) অশোকের শিলালিপিগুলির অধিকাংশ ব্রাহ্মী লিপিতে পালি ভাষায় রচিত। উত্তর-পশ্চিমের কিছু লিপি অ্যারামাইক লিপি বা খরোষ্ঠী লিপিতে উৎকীর্ণ করা হয়েছে অশোকের অভারতীয় যবন প্রজাদের জন্য।
- (২) কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন যে, পাথর খোদাই করে সরকারি আদেশ ও সংবাদ প্রচারের যে প্রথা আশোক চালু করেন তা পারস্যের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন। পারস্যের সম্রাট দরায়ুসের অনুকরণ করে অশোক তার লিপি রচনা করেন।
- (৩) বিষয়বস্তুর দিক থেকে উভয়ের লিপিতে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। অশোকের লিপিতে যে অনুতাপ ও করুণার সুর শোনা যায় দরায়ুসের লিপিতে তা অনুপস্থিত। দরায়ুস একজন শক্তিশালী, মদনও শাসকের অহমিকা তার লিপিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন এটা লক্ষ্য করার বিষয়।
অশোকের শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য
অশোকের শিলালিপি থেকে তাঁর
- (১) কলিঙ্গ যুদ্ধের বিবরণ,
- (২) কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলে তার মনে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং তাঁর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ,
- (৩) বৌদ্ধধর্মের সংহতি রক্ষা ও প্রচারের জন্য তার চেষ্টা,
- (৪) অশোকের ধম্ম নীতি,
- (৫) ধর্ম প্রচারের জন্য অশোকের চেষ্টা,
- (৬) অশোকের শাসন সংস্কার,
- (৭) বৈদেশিক সম্পর্ক,
- (৮) ভারত -এর সাধারণ অবস্থা প্রভৃতি সকল কথাই তাঁর শিলালিপি থেকে জানতে পারা যায়।
অশোকের শিলালিপিগুলির কালানুক্রম
ডঃ বড়ুয়ার মতে, অশোকের লিপিগুলিকে কাল অনুযায়ী সাজালে হবে –
- (১) অশোকের প্রস্তরলিপিগুলি ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এই প্রাপ্তিস্থান ধরে তার সাম্রাজ্য সীমা নির্ধারণ করা হয়। এই প্রস্তরলিপির মধ্যে তার রাজত্বের দ্বাদশ বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় লিপি রচিত হয়। এই দুটি লিপিই হল সবার আগের।
- (২) প্রথম থেকে চতুর্থ লিপি অশোকের রাজত্বের দ্বাদশ বছরে খোদিত হয়।
- (৩) চতুর্দশ শিলালিপিগুলি তার অভিষেকের চতুর্দশ বছরে রাজত্বের ১৮ বছরে খোদিত হয়। এগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়।
- (৪) বারবার গুহালিপি তার রাজত্বের ১৯ বছরে খোদিত হয়।
- (৫) লুম্বিনী স্তম্ভলিপি তাঁর রাজত্বের ২০ বছরে খোদিত হয়।
- (৬) নিগলিসাগর স্তম্ভলিপি তাঁর রাজত্বের ২০ বছরে খোদিত হয়।
- (৭) প্রথম – ষষ্ঠ স্তম্ভলিপি তার রাজত্বের ২৬ বছরে খোদিত হয়।
- (৮) সপ্তম স্তম্ভলিপি তাঁর রাজত্বের ২৭ বছরে খোদিত হয়।
অশোকের স্বতন্ত্র কলিঙ্গ লিপি
অশোকের প্রস্তরলিপিগুলির মধ্যে ১-১৪ লিপি ভারতের নানাস্থানে ছড়িয়ে দেন। এতে তার ধর্মনীতি, শাসন-সংস্কার, কলিঙ্গ যুদ্ধের অনুতাপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কলিঙ্গের, ধৌলি ও জৌগড় নামক স্থানে যে ১-১৪ লিপি পাওয়া যায় তাতে নবম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ লিপি নেই। এর স্থলে অশোক আলাদা দুটি লিপি কলিঙ্গবাসীর জন্যে দিয়েছেন। এর নাম হল স্বতন্ত্র কলিঙ্গ লিপি। এই স্বতন্ত্র কলিঙ্গ লিপিতে কি নীতি নিয়ে কলিঙ্গ শাসিত হবে তা বলা হয়েছে।
অশোকের অপ্রধান শিলালিপি
এছাড়া আছে অপ্রধান শিলালিপি। এগুলি ছোট পাথরের ফলকের গায়ে খোদিত। এর সংখ্যা হল ১২। এই অপ্রধান শিলালিপির মধ্যে বৈরাট, রূপনাথ, মাস্তি, গাভীমঠ লিপি গুরুত্বপূর্ণ।
অশোকের স্তম্ভলিপি
অশোকের স্তম্ভলিপির সংখ্যা মোট ৭। এর মধ্যে ৬টি পাওয়া যায়। যথা – দিল্লী তোপরা, দিল্লী- মীরাট, এলাহাবাদ, লেরিয়-আরারাজ, লৌরিয় নন্দনগর, বিহারে রামপূর্বায়। সপ্তম স্তম্ভলিপি সাঁচি, সারনাথ, লুম্বিনী ও নিগ্লীভ নামক স্থানে।
অশোকের গুহালিপি
অশোকের গুহালিপি পাওয়া গেছে গয়ার কাছে বারবার গুহায়, কান্দাহারে, কাবুলের কাছে লাঘমনে।
উপসংহার :- দেবনাম প্রিয় প্রিয়দর্শি অশোক প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক অসাধারণ গৌরবে মণ্ডিত হয়েছেন। অশোকের শিলালিপি গুলি তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। এর আগে ভারতের কোনো সম্রাট রাজ্য শাসন নীতিকে কার্যকরীর জন্য শিলালিপির এরূপ ব্যাপক ব্যবহার করেননি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “অশোকের শিলালিপি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) অশোকের শিলালিপি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
অশোক।
মৌর্য সম্রাট অশোক।
২৬০ মতান্তরে ২৬১ খ্রিস্ট পূর্বে।
পিতা বিন্দুসার ও পিতামহ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।