আরামাইক লিপি

আরামাইক লিপি -র উদ্ভব, ব্যবহৃত অঞ্চল, সরকারের ভাষা, মধ্যপ্রাচ্যের লেখনির মূল, ফিনিসীয় বর্ণমালার ব্যবহার, বর্ণের শৈলী, অন্যান্য লিপির উদ্ভব, পাণ্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্যে ব্যবহার ও লিপির পতন সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীন আরামাইক লিপি প্রসঙ্গে আরামাইক লিপির উদ্ভব, প্রাক হিব্রু লিপি, আরামাইক লিপির বর্ণ, আরামাইক লিপি ব্যবহৃত অঞ্চল, যীশু খ্রিস্টের মাতৃভাষা আরামাইক লিপি, আরামাইক লিপি থেকে আরবি ফারসি ভাষার লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন, সরকারি ভাষার লিপি আরামাইক, আরামাইক লিপির বর্ণের শৈলী, আরামাইক লিপি থেকে অন্যান্য লিপির উদ্ভব, আরামাইক লিপি থেকে তুর্কি লিপির উদ্ভব, আরামাইক লিপিতে রচিত পাণ্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্য ও পারস্যে আরামাইক ভাষার পতন।

আরামাইক লিপি

সময়কালখ্রিষ্টপূর্ব  ৮০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ
লেখার দিকডান দিক থেকে বাম দিকে
ভাষাআরামাইক ভাষা, হিব্রু ভাষা, সিরীয় ভাষা
আরামাইক লিপি

ভূমিকা :- ফিনিশীয় লিপি থেকে প্রাচীন আরামাইক লিপি উৎপত্তি লাভ করে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। সেই সময় আরামাইক ভাষা এবং হিব্রু ভাষা লেখার জন্য এই লিপি ব্যবহৃত হত।

আরামাইক লিপির উদ্ভব

প্রাচীন ফিনিশিয় লিপি থেকে এই লিপির উদ্ভব ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।

প্রাক-হিব্রু লিপি আরামাইক লিপি

প্রাচীন আরামাইক ভাষায় ব্যবহৃত লিপিকে অনেক সময় প্রাক-হিব্রুলিপি বলা হয়।

আরামাইক লিপির বর্ণ

আরামাইক লিপির সব বর্ণই ব্যঞ্জনবর্ণের প্রতিনিধিত্ব করে তবে কিছু বর্ণ দীর্ঘ স্বরবর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরামাইক লিপি ব্যবহৃত অঞ্চল

প্রাচীন পারস্য, ব্যবিলন ও আসিরিয় অঞ্চলে এই আরামাইক লিপি ব্যাপক ব্যবহৃত হতে।

যীশু খ্রীষ্টের মাতৃভাষা আরামাইক লিপি

ধারণা করা হয় যে, যিশুখ্রিষ্টের মাতৃভাষা ছিল আরামাইক।

আরামাইক লিপি থেকে আরবি-ফারসি ভাষার লিখন পদ্ধতির উদ্ভব

এই লিপি থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের আরবি এবং পারস্য অঞ্চলের ফার্সি ভাষার লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।

সরকারি ভাষার লিপি আরামাইক লিপি

ব্যাপক ব্যবহারের জন্য নতুন অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য ও তার উত্তরাধিকারী আকিমেনিয় সাম্রাজ্যে এটি সরকারি ভাষার লিপিতে পরিণত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের লেখনির মূল আরামাইক লিপি

আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের লেখনি ব্যবস্থার মূলে রয়েছে এই লিপি। তাছাড়া এই লিপি অনেক অ-চীনা কেন্দ্রীয় ও পূর্ব এশিয়ার লেখার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে অথবা অভিযোজিত হয়েছে।

আরামাইক লিপিতে ফিনিসীয় বর্ণমালার ব্যবহার

প্রাচীনকালের শিলালিপি থেকে বোঝা যায় যে, আরামাইক ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হত ফিনিশীয় বর্ণমালা। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে বর্ণমালা বিকশিত হয়েছে।

আরামাইক লিপির উদীয়মান লেখার পদ্ধতি

আরামাইক ভাষা ধীরে ধীরে  Lingua Franca তে পরিণত হয়। এরপর আরামাইক লিপি সারা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সুমেরীয় সভ্যতাকিউনিফর্ম লিপিকে প্রতিস্থাপন করে হয়ে ওঠে উদীয়মান লেখার পদ্ধতি।

আকিমেনিয় আরামাইক লিপি

প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীতে দরাউসের অধীনে ফার্সিদের আখেমেনীয় বিজয়ের পর ইরান প্রাচীন আরামাইক লিপিকে গ্রহণ করে কারণ ফার্সি সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন অঞ্চলের জাতির সাথে লিখিত যোগাযোগ করতে হত। পরে এটি সরকারি ভাষায় পরিণত হয়, যা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের ভাষা এবং আখমেনীয় আরামাইক হিসেবে অভিহিত হয়।

ইম্পেরিয়াল আরামাইক লিপি

এটি ছিল অত্যন্ত আদর্শমানের। এর বানানরীতি কথ্যভাষা নির্ভর নয় বরং ঐতিহ্য নির্ভর এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রাচীন ফার্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।

আরামাইক লিপির বর্ণের শৈলী

আরামাইক বর্ণ তখন প্রধান দুটি শৈলীতে ভাগ হয়ে যায়। – পাথুরে শৈলী ও জড়ানো শৈলী।

(১) পাথুরে শৈলী

এটি পাথরের পৃষ্ঠতলে লিখিত হত। এই শৈলীর বিকাশ ঘটে আখমেনীয় ফার্সি যুগে।

(২) জড়ানো শৈলী

এটি পাথুরে শৈলীকে বেশি রক্ষণশীল করে তোলে। যদিও জড়ানো লেখাগুলি পাথরের উপর অটল ছিল তবুও এগুলি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে  লুকানোই ছিল।

আরামাইক লিপি থেকে অন্যান্য লিপির উৎপত্তি

পূর্বাঞ্চলের লিপিগুলি (লেভ্যান্ট, ইরান, মধ্য এশিয়া ও ভারত) আরামাইক থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

অন্য লিপির ভিত গঠনে আরামাইক লিপি

আরামাইক লিপির জড়ানো শৈলীর বিকাশ সিরীয়, পালমিরিন ও মান্দাইক লিপি তৈরিতে সাহায্য করে। এই লিপিগুলি মধ্য এশিয়ার কিছু লিপি (যেমন – সোগদীয় ও মঙ্গোলীয়) লিপির ভিত গড়ে দেয়।

ব্রাহ্মী লিপি পরিবারের পূর্ব পুরুষ আরামাইক লিপি

আরামাইককে ব্রাহ্মী লিপির অতি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি দেবনাগরী লিপি সহ ব্রাহ্মী লিপি পরিবারের পূর্বপুরুষ।

আরামাইক লিপি থেকে তুর্কি লিপির উদ্ভব

প্রাচীন তুর্কি লিপি স্বাভাবিকভাবেই আরামাইক থেকে বিবর্তিত হয়। এমনকি খরোষ্ঠী লিপিও এর ব্যতিক্রম নয়।

আরামাইক লিপিতে হিব্রু বর্ণমালা

বাইবেলের আরামাইক, ইহুদিদের নিও-আরামাইক উপভাষা এবং আরামাইক ভাষায় লিখিত ধর্মীয় আইন গ্রন্থ হিব্রু বর্ণমালায় লেখা হয়েছে।

আরামাইক লিপিতে সিরীয় বর্ণমালা

সিরীয় ও খ্রিস্টান নিও-আরামাইক উপভাষাগুলি সিরীয় বর্ণমালায় লেখা হয়েছে। মান্দাইক ভাষা মান্দাইক বর্ণমালায় লিখিত আছে।

আরামাইক লিপিতে রচিত পাণ্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্য

আরামাইক ও শাস্ত্রীয় হিব্রু দেখতে প্রায় একই রকম। তাই আরামাইক লিপি আদর্শ হিব্রুর সাথে মিশে পাণ্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

পারস্যে আরামাইক ভাষার পতন

গ্রিস -এর সম্রাট আলেকজান্ডার পারস্য দখল করে নেওয়ার পর পারস্যে আরামাইক ভাষার বাতিল হয়ে যায়।

উপসংহার :- ধর্মীয় কারণে এখানও সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও তুরস্ক -এ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে আরামাইক ভাষার চর্চা রয়েছে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আরামাইক লিপি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) আরামাইক লিপি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন লিপি থেকে প্রাচীন আরামাইক লিপির উদ্ভব হয়?

ফিনিসীয় লিপি থেকে।

২. আরামাইক লিপি কোন দিক থেকে কোন দিকে লেখা হত?

ডান দিক থেকে বাম দিকে।

৩. আরামাইক লিপির দুটি উল্লেখযোগ্য ভাষার নাম কী?

আরামাইক ভাষা ও হিব্রু ভাষা।

৪. আরামাইক লিপি বা আরামীয় লিপি কখন ব্যবহৃত হয়?

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকে।

Leave a Comment