মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসন সংস্কার প্রসঙ্গে রাজকর্তব্য নীতি গ্রহণ, সর্বদা জনকল্যাণমূলক কাজ করা, চুক্তিতত্ত্ব, অনুসংযান, প্রদেশে অশোকের নীতি, দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতি, নতুন পদ সৃষ্টি ও অশোকের শাসন নীতির সমালোচনা সম্পর্কে জানবো।
অশোকের শাসন সংস্কার
ঐতিহাসিক ঘটনা | অশোকের শাসন সংস্কার |
রাজা | অশোক |
রাজধানী | পাটলিপুত্র |
নতুন প্রদেশ | কলিঙ্গ |
যুদ্ধ | কলিঙ্গ যুদ্ধ |
ধর্ম | বৌদ্ধ ধর্ম |
ভূমিকা :- ভারত -এর প্রথম ঐতিহাসিক সাম্রাজ্য তথা মৌর্য সাম্রাজ্য -এর শাসনব্যবস্থার মূল কাঠামোটি তৈরি করেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। পরবর্তীতে অশোকের শাসন ব্যবস্থা কয়েকটি দিক থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলের শাসন থেকে পৃথক ছিল।
অশোকের শাসন ব্যবস্থায় রাজকর্তব্য নীতি গ্রহণ
- (১) যে ক্ষেত্রে চন্দ্রগুপ্ত তার স্বৈর ক্ষমতাকে কিছুমাত্র সঙ্কুচিত করেননি, সে ক্ষেত্রে অশোক তার ক্ষমতার সঙ্গে প্রজার প্রতি কর্তব্যবোধকে যুক্ত করেছেন। তিনি দ্বিতীয় কলিঙ্গ লিপিতে বলেছেন যে, “সকল মানুষ আমার সন্তান। আমি যেমন নিজ সন্তানগণের জন্য ইহলোক ও পরলোক মঙ্গল কামনা করি, সকল প্রজার জন্যও তাই করি।”
- (২) রাজকর্তব্যের এই জনকল্যাণমূলক ব্যাখ্যা অশোকের শাসন ব্যবস্থার একটি মূল নীতি ছিল। অশোকের শাসন ব্যবস্থা এক উদার পিতৃত্ববোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ভারতীয় প্রথা অনুসারে রাজা তার প্রজাদের সন্তানের মত দেখেন। অশোক এক্ষেত্রে বলেন যে, “তিনি তাঁর নিজ সন্তানদের যেমন ইহলোক ও পরলোকে মঙ্গল চান, তেমন তিনি সকল মানুষের জন্যও করেন।
সর্বদা জনকল্যাণমূলক কাজ করা
- (১) অশোক তার স্বৈরতন্ত্রকে কতকগুলি নীতিবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করেন। অশোক ষষ্ঠ শিলালিপিতে বলেছেন যে, তিনি সব জায়গায় সব সময় জনগণের কাজ করতে প্রস্তুত (Peoples business, I do everywhere)।
- (২) জনগণের কাছে তাঁর যে ঋণ আছে তা তিনি এভাবে কাজ করে কিছুটা শোধ করতে চান। অশোক এই সকল কথা অষ্টম শিলালিপিতে লিখে জনসাধারণের কাছে প্রচার করেছেন এবং জনসভায় এই কথাগুলি পড়ে শোনাবার জন্য কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
- (৩) অষ্টম শিলালিপিতে জনপদবাসীদের অবস্থা তার নিজ চক্ষে দেখা কর্তব্য বলে স্বীকার করেছেন।
অশোকের শাসন ব্যবস্থায় চুক্তিতত্ত্ব
- (১) ডি. ডি. কোশাম্বী বলেছেন যে, ভারতের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে অশোকের উপরোক্ত আদর্শ ছিল সম্পূর্ণ নতুন। অর্থশাস্ত্র শিক্ষা দিয়েছিল যে, রাজার কারও কাছে কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি রাজত্ব করেন। সেক্ষেত্রে অশোক নিজেকে প্রজাসাধারণের কাছে ঋণগ্রস্থ বলে ঘোষণা করেন।
- (২) কোশাম্বির মতে, প্রজাদের কাছে তার রাজকর্তব্যের প্রতিশ্রুতি ঘোষণার ব্যবস্থা করে অশোক “রাজা ও প্রজার মধ্যে চুক্তি (Theory of Contract) চালু করার চেষ্টা করেন। তিনি এই রাজ-কর্তব্যগুলি জন সমক্ষে পাঠের ব্যবস্থা দ্বারা জনসাধারণকে তাদের অধিকারের কথা জানিয়ে দেন।
- (৩) অশোক সর্বপ্রথম এমন কিছু জনহিতকর কাজ করার প্রচেষ্টা করেন যাতে রাষ্ট্রের তথা রাজার নিজের কোনো লাভ হত না, কিন্তু প্রজারা উপকৃত হত। অর্থশাস্ত্রে এরূপ রাজকর্তব্যের চিন্তা করা হয়নি।
অশোকের শাসন ব্যবস্থায় অনুসংযান
অর্থশাস্ত্র -এ যে রাজকর্তব্য নির্দেশিত হয়েছিল অশোক তাকে সযত্নে অনুসরণ করেন। তিনি বিহার যাত্রা ছেড়ে ধর্মযাত্রাকেই বেছে নেন। তিনি ধর্মযাত্রার সময় সাধারণ প্রজার সংস্পর্শে এসে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনেন। তিনি যুত, মহামাত্র, রাজুক প্রভৃতি কর্মচারীদের নির্দেশ দেন তারা যেন প্রতি তিন অথবা পাচ বছর অন্তর ‘অনুসংযান’ বা রাজ্য প্রদক্ষিণ করে প্রজাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
প্রদেশে অশোকের নীতি
- (১) চন্দ্রগুপ্তের আমলে পাটলিপুত্রে যে শাসন ব্যবস্থা ছিল অশোক তাতে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটাননি বলে মনে করা হয়। তাঁর শিলালিপিতে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ্য নেই। কেন্দ্রে মন্ত্রিণ, মন্ত্রী পরিষদ প্রভৃতি আগের মতই বহাল থাকে।
- (২) অশোকের ষষ্ঠ শিলালিপিতে বলা হয়েছে যে, রাজার কোনো আদেশ অথবা মহামাত্রদের ওপর কোনো দায়িত্ব ন্যস্ত করার ব্যাপারে “পরিষ” বিতর্ক দেখা দিলে যেন প্রতিবেদকরা রাজাকে তৎক্ষণাৎ সেকথা জানায়।
- (৩) এখন “পরিষ” বলতে একটি পরিষদ বুঝায়। এতে উচ্চ মন্ত্রী বা মন্ত্রিণ এবং নিম্ন মন্ত্রী ও অমাত্যরা মিলিত হয়ে নীতি স্থির করত। কিন্তু পরিষদের পরামর্শ গ্রহণে রাজার কোনো বাধ্য-বাধকতা ছিল না। পরিষদের সদস্যরা রাজার দ্বারাই নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারা স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করতেন বলে মনে করা যায় না।
- (৪) অশোকের সময় সাম্রাজ্য ৫টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। এছাড়া স্বয়ং-শাসিত অঞ্চল রাজ্যের মধ্যে ছিল। গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে তিনি ‘আর্যপুত্র’ অর্থাৎ যুবরাজদের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতেন। সৌরাষ্ট্রে তিনি যবনরাজ তুষাস্পকে শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন।
- (৫) অশোক সকল প্রদেশের শাসনকর্তাদের সমান ক্ষমতা দিতেন না। কলিঙ্গের শাসনকর্তার ক্ষমতা কম ছিল। অশোক মহামাত্র পাঠিয়ে কলিঙ্গের শাসনকর্তা ঠিকমত কাজ করছেন কিনা তার খোঁজ নিতেন।
- (৬) কুশাসনের জন্য তিনি কলিঙ্গের নগর মহামাত্রদের তিরস্কার করতেন। তক্ষশীলা ও উজ্জয়িনীর শাসনকর্তার ক্ষমতা বেশী ছিল বলে মনে হয়। প্রাচ্য অর্থাৎ মগধ প্রদেশ অশোক নিজে শাসন করতেন।
অশোকের শাসন ব্যবস্থায় দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতি
- (১) প্রদেশের শাসনে তিনি দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতি প্রবর্তন করেন। সেনার্ট ও ডঃ রায়চৌধুরী প্রমুখ পণ্ডিতেরা এই দুই নীতির ব্যাখ্যা করেছেন যে, রাজ্যের সকল স্থানে একই প্রকার ব্যবহার বা আইনবিধি এবং একই প্রকার দণ্ড বা শাস্তির ব্যবস্থার প্রচলন করা। এর দ্বারা সমগ্র সাম্রাজ্যে শাসনগত ঐক্য স্থাপিত হয়।
- (২) অশোক ফৌজদারী আইনের সংস্কার করেন। নগর ব্যবহারিক ও মহামাত্রদের পরাক্রম সহকারে আইনবিধিগুলি কার্যকর করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো অপরাধী প্রাণদণ্ডের আদেশ পেলে তাকে অন্ততঃ তিন দিন সময় দেওয়ার তিনি নির্দেশ দেন।
- (৩) তিনি তার সিংহাসনে অভিষেকের বাৎসরিক দিনে জেলে আবদ্ধ অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি অন্ততঃ ২৫ বার এরূপ জেল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। মোট কথা, তিনি বিচার ব্যবস্থা ও ফৌজদারী আইনকে অনেক মানবিক গুণসম্পন্ন করেন।
অশোকের শাসন ব্যবস্থায় নতুন পদ সৃষ্টি
প্রদেশের শাসন ভালভাবে পরিচালনার জন্য অশোক বহু নতুন কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করেন। কোনো কোনো পুরাতন কর্মচারীদের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা তিনি বৃদ্ধি করেন। তিনি যে সকল কর্মচারী নিয়োগ করেন তাদের মধ্যে যূত, রাজুক ও প্রাদেশিক এই তিন শ্রেণীর কর্মচারীর কথা তৃতীয় শিলালিপিতে বলেছেন।
(ক) যূত
ভাণ্ডারকরের মতে যুক্ত বা যূতরা রাজস্ব ও সরকারী সম্পত্তি সম্পর্কিত বিষয়ের দায়িত্ব বহন করত। এরা মহামাত্রদের দপ্তরে রাজার আদেশ লিখে রাখত। তাছাড়া মৃতরা রাজস্ব সংগ্রহ ও রাজকীয় সম্পত্তি গ্রহণ করতে পারত।
(খ) রাজুক
- (১) রাজুকরা গোড়ায় ছিল জমি জরিপ বিভাগের জেলা স্তরের কর্মচারী। রজ্জু বা দড়ি দ্বারা তারা জমি মাপত। কৃষি অর্থনীতিতে জমির গুরুত্ব ছিল খুব বেশী। জমি ঘটিত বিরোধও এজন্য ঘটত। অশোক রাজুকদের ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের জনপদ-এর সর্বময় কর্তার পদে উন্নিত করেন।
- (২) রোমিলা থাপার বলেছেন যে, রাজুকরা গ্রামস্তরের নিম্নবর্গের কর্মচারী ছিল। অন্যান্য পণ্ডিতরা এই মত স্বীকার করেন না। চতুর্থ স্তম্ভলিপিতে অশোক বলেছেন যে, “তিনি রাজুকদের শত সহস্র লোকের দায়িত্ব পালনের কাজ দিয়েছেন। শিশুকে যেমন মাতার রক্ষণাধীন রাখা হয়, জনসাধারণকে সেরূপ রাজুকদের রক্ষণাধীনে রাখা হয়েছে।”
- (৩) রাজুকরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও অন্যান্য বিরোধের বিচার করত। অবিচার হলে আগের রায় সংশোধন করে দিত। তারা দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতি প্রযোগ করত। মোট কথা, রাজুকরা মৌর্য শাসন ব্যবস্থার মেরুদণ্ডের মতই ছিল।
(গ) প্রাদেশিক
প্রাদেশিক নামে কর্মচারীদের কথা তৃতীয় শিলালিপিতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রাদেশিকরা ঠিক কি দায়িত্ব পালন করত তা বোঝা যায় না। এ সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকে এদের চন্দ্রগুপ্তের আমলের প্রদেষ্ট্রির সমতুল্য বলে মনে করেন।
(ঘ) প্রতিবেদক
প্রতিবেদক নামে কর্মচারীরা সাম্রাজ্যের স্থানে নিযুক্ত হত। তারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্রাটকে সরাসরি জানাত।
(ঙ) ধর্মমহামাত্র
- (১) অশোক ধর্ম মহামাত্র নামে এক বিশেষ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করেন। তার প্রচারিত ধর্ম জনসাধারণের কাছে প্রচার করার জন্য এবং ব্রাহ্মণ, শ্রমণ প্রমুখের যত্ন করার জন্য, যবন, কম্বোজ প্রভৃতি উপজাতিরা যাতে স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য তিনি এই কর্মচারীদের দায়িত্ব দেন।
- (২) তাছাড়া তার জনহিতকর কাজগুলির তদারকি করাও এদের কর্তব্য ছিল। পঞ্চম শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, দিন মজুর, বৃদ্ধ লোক, দুঃস্থদের প্রতি এরা নজর দিত। কারাগার থেকে অসুস্থ, বৃদ্ধ বন্দীদের মুক্তি দিত। গৃহস্থ ও গৃহীনিদের ধম্ম মঙ্গলের জন্য উৎসাহ দিত। ঐতিহাসিক বাসামের মতে অশোক তার বিভিন্ন সংস্কারকে কার্যকর করার জন্য ধর্মমহামাত্রের পদ সৃষ্টি করেন।
(চ) স্ত্রী অধ্যক্ষ মহামাত্র
নারীদের নিকট ধর্ম প্রচার ও নারীদের ধর্মমঙ্গল প্রভৃতি কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য স্ত্রী-অধ্যক্ষ মহামাত্র নিযুক্ত করা হয়।
(ছ) অন্ত-মহামাত্র
সীমান্ত অঞ্চলে অথবা প্রতিবেশী রাজ্যে জনকল্যাণমূলক কাজ এবং ধর্ম প্রচারের জন্য নিযুক্ত হয় অন্ত-মহামাত্র।
(জ) ব্রজভূমিক
দ্বাদশ শিলালিপিতে ব্রজভূমিক নামে কর্মচারীর কথা বলা হয়েছে। ডঃ আর কে মুখার্জীর মতে, এরা জনকল্যাণমূলক কাজ অর্থাৎ, রাস্তা তৈরি, কূপ খনন ইত্যাদি কাজ করত। ঐতিহাসিক ভাণ্ডারকর ব্রজ বলতে গোচারণভূমি মনে করেন। সুতরাং তার মতে ব্রজভূমিকরা ছিল গোশালা ও গোচারণ ভূমির অধিকর্তা।
(ঝ) মহামাত্র
- (১) ব্রহ্মগিরি ও সিদ্ধপুরা লিপি থেকে মহামাত্র নামে কর্মচারীর কথা জানা যায়। মহামাত্ররা অশোকের আমলে জেলার ভার পেত। আসলে মহামাত্ররা ছিল রাজার বিশ্বাসভাজন উচ্চ কর্মচারী। তাদের নানা পদে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ করা হত।
- (২) ধম্ম প্রচারের জন্য ধম্ম মহামাত্র, বিচারের জন্য নগর মহামাত্র বা নগর ব্যবহারিক মহামাত্র এবং জেলার জন্য মহামাত্র নিযুক্ত হত। এরা ছিল কেন্দ্রের প্রতিনিধি এবং অশোক সরাসরি এদের কাছে আদেশ পাঠাতেন।
(ঞ) অন্যান্য কর্মচারী
এছাড়া নগর ব্যবহারিক নামে নগরের বিচারক, ‘পুরুষ’ নামে কর্মচারী, লিপিকার প্রভৃতি তিনি নিয়োগ করেন।
অশোকের শাসন নীতির সমালোচনা
- (১) অশোকের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে রোমিলা থাপার বলেছেন যে, চন্দ্রগুপ্ত বাহুবলে যে সাম্রাজ্য গঠন করেন, অশোক নতুন শাসন নীতির দ্বারা তাকে দৃঢ়ভাবে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করেন। তিনি ধর্ম প্রচার ও জনকল্যাণ নীতির দ্বারা রাজা ও দূরবর্তী স্থানের প্রজার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।
- (২) সাম্রাজ্যের শাসন নীতির নির্ধারণ কেন্দ্র থেকেই হতে থাকে। তবে তার প্রয়োগ স্থানীয় ভিত্তিতে হত। চন্দ্রগুপ্তের মতই অশোকও কেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ করেন। মহামাত্র, ধর্মমহামাত্রগণ ছিল তার কেন্দ্রীকরণের হাতিয়ার। রাজ্যে উচ্চ কর্মচারীদের পরিদর্শন বা অনুসংযান এবং পুরুষ বা গুপ্তচরদের গতিবিধিও কেন্দ্রীকরণকে দৃঢ় করে।
- (৩) এই ধরণের কেন্দ্রিকরণ নীতির ফল ছিল মারাত্মক। কেন্দ্রীয় শাসন অর্থাৎ রাজা দুর্বল হয়ে পড়লে পুরো শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ত। কর্মচারীরা রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত না হয়ে, রাজার প্রতি আনুগত্য দেখাত। রাজার পরিবর্তনের সঙ্গে কর্মচারীর পরিবর্তন ঘটত।
- (৪) অশোকের শাসনব্যবস্থায় কোনো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বা প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা ছিল না। এর জন্য সরকারের সঙ্গে স্থানীয় লোকের সংযোগ কম ছিল। অশোক ধর্মপ্রচার ও ধর্মমহামাত্রদের দ্বারা এই অসুবিধা দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।
- (৫) অশোক তার জনকল্যাণমূলক কাজের ও ধর্ম প্রচারের জন্য যে অর্থ ব্যয় করেন তাতে রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। কোশাম্বীর মতে, মৌর্য মুদ্রায় খাদের ভাগের বেশী হার সমাজের অর্থনৈতিক দুরবস্থার পরিচয় দেয়।
উপসংহার :- অশোক প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন প্রবর্তন করে শাসন ব্যবস্থাকে বেশী মজবুত করতে চেষ্টা করেন নি। তাই তার মৃত্যুর ৫০ বছরের মধ্যেই মৌর্য সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন ধরে।
(FAQ) অশোকের শাসন সংস্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সম্রাট অশোক।
কলিঙ্গ।
রাজুক, মহামাত্র, যূত প্রভৃতি।
ধম্ম।