দিল্লী ও আজমেরের চৌহান বংশ প্রসঙ্গে উৎপত্তি, অজয় রাজা, অর্ণরাজ, বিগ্ৰহ রাজ, দ্বিতীয় পৃথ্বিরাজ, তৃতীয় পৃথ্বিরাজ, প্রথম তরাইনের যুদ্ধ, দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ, হরিরাজা ও চৌহান বংশের পতন সম্পর্কে জানবো।
চৌহান বংশ
বিষয় | চৌহান বংশ |
স্থান | দিল্লী ও আজমের |
প্রথম রাজা | অজয় রাজা |
শ্রেষ্ঠ রাজা | তৃতীয় পৃথ্বিরাজ চৌহান |
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ | ১১৯১ খ্রি: |
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ | ১১৯২ খ্রি: |
ভূমিকা :- অন্যান্য রাজপুত গোষ্ঠীর মত চৌহান বংশও দাবী করত যে, তারা খুব প্রাচীন। পৌরাণিক সূর্যবংশে তাদের জন্ম বলে তারা দাবী করত।
চৌহান বংশের উৎপত্তি
কবি চাঁদ বরদাই চৌহানদের উৎপত্তি সম্পর্কে বলেছেন যে, আবু পর্বতে মহর্ষি বশিষ্ঠের যজ্ঞকুণ্ড হতে তাদের উৎপত্তি হয়। এই অগ্নিকুল মতবাদ সম্পর্কে অধিকাংশ পণ্ডিত বলেন যে, অগ্নিকুল মতবাদ রাজপুত জাতির বৈদেশিক উৎপত্তি প্রমাণ করে। বিদেশী ম্লেচ্ছ রাজপুতরা যজ্ঞের অগ্নিতে শুদ্ধ হয়ে ক্ষত্রিয়ত্ব পায়। চৌহানদের সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য।
চৌহান অজয় রাজা
একাদশ শতকে চৌহান শক্তি শকাম্বরী অঞ্চলে শাসন করত। চৌহান বংশের অজয় রাজা উজ্জয়িনী অধিকার করেন এবং অজয় মেরু বা আজমীরের প্রতিষ্ঠা করেন।
চৌহান অর্ণরাজ
এর পর অর্ণরাজ ১১৩৩ খ্রিস্টাব্দে আজমীরের সিংহাসনে বসেন। তিনি পাঞ্জাব থেকে আগ্রাসনকারী তুরস্ক বা তুর্কী শক্তিকে পরাস্ত করে স্বাধীনতা রক্ষা করেন। গুজরাটের চালুক্য শক্তির সঙ্গে তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। চালুক্য রাজ জয়সিংহের কন্যাকে অর্ণরাজ বিবাহ করলেও এই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি।
চৌহান বিগ্রহ রাজ
- (১) এর পর চৌহান চতুর্থ বিগ্রহরাজ (১১৫৩-১১৬৩ খ্রি) চালুক্য ও পারমার শক্তিকে পরাস্ত করেন। তিনি তোমর শক্তিকে পরাস্ত করে দিল্লী ও পূর্ব পাঞ্জাব অধিকার করেন। উত্তরে শিবালিক পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে রাজপুতানার উদয়পুর পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
- (২) বিগ্রহরাজ ছিলেন কবিপ্রাণ মানুষ। আড়াই-দিন-কা-ঝোপড়া নামে এক মসজিদের দেওয়ালের পাথরে তাঁর রচিত হরকেলী নাটকের অংশবিশেষ খোদিত আছে। সোমদেব তার ললিত-বিগ্রহরাজ নাটকে এই রাজার গুণকীর্তন করেছেন।
চৌহান দ্বিতীয় পৃথ্বিরাজ
বিগ্রহরাজের পর দ্বিতীয় পৃথ্বিরাজ এবং তারপর সোমেশ্বর চৌহান সিংহাসনে বসেন। সোমেশ্বরের পর তৃতীয় পৃথ্বিরাজ সিংহাসনে বসেন।
চৌহান তৃতীয় পৃথ্বিরাজ
তৃতীয় পৃথিবাজ (১১৭৮-১১৯২ খ্রি) ছিলেন চৌহান বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। অনেকে তাকে প্রাচীন যুগের শেষ শ্রেষ্ঠ হিন্দু রাজা বলে মনে করেন। সম্ভবত এই ধারণা অতিরঞ্জিত। তবে পৃথ্বিরাজকে কেন্দ্র করে বহু কিংবদন্তি, পৃথ্বিরাজ রসো ও পৃথ্বিরাজ বিজয় কাব্য রচিত হয়েছে। তুর্কী ঐতিহাসিকরাও পৃথ্বিরাজ সম্পর্কে বহু তথ্য দিয়েছেন। তুর্কী ঐতিহাসিকরা তাকে রায়পিথোরা বলে অভিহিত করেছেন।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
১১৯০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরী হিন্দুস্থান অধিকারের উদ্দেশ্যে তবরহিন্দ অধিকার করলে পৃথ্বিরাজের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়। তিনি মহম্মদ ঘুরীর অগ্রগতিকে বাধাদানের জন্য ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মহম্মদকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন। মহম্মদ নিজে আহত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। পৃথ্বিরাজ তবরহিন্দ অধিকার করেন।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
- (১) ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরী পুনরায় তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। তিনি ১ লক্ষ ২০ হাজার সেনা নিয়ে তররহিন্দ দখল করে পুনরায় তরাইনে হাজির হলে পৃথ্বিরাজ তাঁকে দ্বিতীয় বার যুদ্ধের ডাক দেন। পৃথ্বিরাজ ১৫০ জন রাজার একটি জোট তুর্কী আক্রমণ রোধ করতে গড়েন।
- (২) কনৌজের জয়চন্দ্র এই জোটে যোগ না দিয়ে দূরে থাকেন। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি স্কন্দ সেনা পরিচালনা না করায় খুবই ক্ষতি হয়। স্কন্দ অন্যত্র যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকায় আসতে পারেন নি। মহম্মদ রণ কৌশলে পৃথ্বিরাজকে পরাস্ত করেন। তাঁকে বন্দী করে হত্যা করা হয়।
চৌহান বংশের পতন
দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে কেবলমাত্র চৌহান শক্তির পতন হয়নি, এর ফলে উত্তর ভারতে রাজপুত শক্তির পতনের পথ প্রস্তুত হয়। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলা চলে।
চৌহান হরিরাজা
তরাইনের যুদ্ধে জয়লাভের পর মহম্মদ ঘুরী আজমীর ও দিল্লী অধিকার করেন। পৃথ্বিরাজের ভ্রাতা হরিরাজা আজমীরের সিংহাসনে বসে স্বাধীনতা ঘোষণার চেষ্টা করলে মহম্মদ ঘুরীর সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক তাকে বিতাড়িত করেন।
উপসংহার :- পরবর্তীতে চৌহান শক্তি আজমীর থেকে রণথম্ভোরে চলে যায় এবং ক্ষীয়মান শক্তি হিসেবে টিকে থাকে। ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজি রণথম্ভোর অধিকার করলে চৌহান শক্তির চূড়ান্ত পতন ঘটে।
(FAQ) চৌহান বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দিল্লী ও আজমের।
তৃতীয় পৃথ্বিরাজ চৌহান।
১১৯১ খ্রিস্টাব্দে।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দে।