দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে ফা-হিয়েনের বিবরণ প্রসঙ্গে ভারতে আগমন, স্থান পরিভ্রমণ, ভারতে অবস্থান, সাধারণ মানুষের অবাধ জীবনযাত্রা, পাটলিপুত্রের বর্ণনা ও মধ্যদেশের মানুষের আচার সম্পর্কে জানবো।
ফা-হিয়েনের বিবরণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | ফা-হিয়েনের বিবরণ |
পরিচয় | চীনা পর্যটক |
ভারত -এ আগমন | খ্রিস্টিয় পঞ্চম শতক |
সাম্রাজ্য | গুপ্ত সাম্রাজ্য |
রাজা | দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত |
ভূমিকা :- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চীন -এর পর্যটক ফা-হিয়েন ভারত পরিভ্রমণে আসেন। ফা-হিয়েনের বিবরণে মধ্যদেশ অর্থাৎ গাঙ্গেয় উপত্যকার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
ফা-হিয়েনের ভারতে আগমন
যদিও তিনি চন্দ্রগুপ্তের নাম উল্লেখ করেননি, তবুও পণ্ডিতেরা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে এসেছিলেন। তিনি ৪০০-৪১১ খ্রিস্টাব্দ (মতান্তরে ৪০৫-৪১১ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত ভারতে ছিলেন।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে ফা-হিয়েনের পরিভ্রমণ
এই সময়ে পাটলিপুত্র ছাড়াও মথুরা, কনৌজ, পেশোয়ার, বারাণসী প্রভৃতি স্থান পরিদর্শন করেন। বাংলার তাম্রলিপ্ত বন্দর হতে তিনি জাহাজযোগে স্বদেশে ফিরে যান।
ফা-হিয়েনের ভারতে অবস্থান
ফা-হিয়েন গোবি মরুভূমি পার হয়ে খোটানের পথে, গান্ধার ও পাঞ্জাব হয়ে ভারতে আসেন। আসার সময় পথে তিনি বহু বৌদ্ধ স্তূপ ও বিহার দেখেন। তিনি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যে অন্ততঃ পাঁচ বছর বাস করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে ফা-হিয়েন রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক বহু তথ্যের উল্লেখ করেছেন। চন্দ্রগুপ্তের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
ফা-হিয়েনের বিবরণে সাধারণ লোকের অবাধ জীবনযাত্রা
- (১) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করে ফা-হিয়েন বলেছেন যে, রাজ্যে বহু লোক সুখে বসবাস করত। তাদের বাসগৃহগুলির নাম ও নম্বর সরকারী খাতায় রেজেষ্টারী করতে হত না। তাদের জীবনযাত্রা ও দৈনন্দিন কাজে সরকারী কর্মচারীরা হাত দিত না। যারা সরকারী সীতা জমি চাষ করত তারা ফসলের ভাগ রাজাকে দিত।
- (২) লোকে দেশের যেখানে খুশী যেতে পারত। তাতে কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। সরকারী আইন ছিল মৃদু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীদের জরিমানা করা হত। ঘন ঘন রাজদ্রোহ করলে তবেই অঙ্গচ্ছেদ করে শাস্তি দেওয়া হত। সাধারণত প্রাণদণ্ড দেওয়া হত না।
ফা-হিয়েনের বিবরণে পাটলিপুত্র
- (১) পাটলিপুত্র নগরে ফা-হিয়েন তিন বছর বাস করেন। এখানে তিনি সংস্কৃত শিক্ষা অর্জন করেন। মহাযান ও হীনযান বৌদ্ধদের জন্য পাটলিপুত্রে দুটি আলাদা বিহার ছিল। প্রতি বিহারে ৬৭ হাজার ভিক্ষু বাস করত।
- (২) ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শিক্ষালাভের জন্য পাটলিপুত্রে আসত। অশোক-এর রাজপ্রাসাদ দেখে ফা-হিয়েন অভিভূত হয়েছিলেন। এরূপ বিরাট আকৃতির প্রাসাদ মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব কিনা একথা ভেবে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
- (৩) পাটলিপুত্র নগরের লোকেরা স্বচ্ছল জীবন-যাপন করত। তাদের দানশীলতা ও পরোপকারিতার তিনি প্রশংসা করেছেন। তুলনামূলকভাবে উত্তর ভারতের অন্যান্য শহরগুলি ভগ্নদশাগ্রস্থ ছিল। গয়ার চারদিকে জঙ্গল বেষ্টন করেছিল, শ্রাবস্তী ছিল জনহীন নগরী।
মধ্যদেশে জনগণের আচার সম্পর্কে ফা-হিয়েনের বিবরণ
- (১) মধ্যদেশে জনগণ ছিল নিরামিষভোজী এবং অহিংসাপন্থী। পেঁয়াজ, রসুন, মাংস তারা সাধারণত খেত না। বাজারে মদের দোকান থাকা তারা পছন্দ করত না। মধ্যদেশে ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাব বেশী হলেও, বৌদ্ধদের শ্রদ্ধা করা হত। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আহার ও বাসস্থান দেওয়া হত।
- (২) জাতিভেদ প্রথা প্রবল ছিল। চন্ডাল প্রভৃতি শ্রেণীকে অন্যান্য লোকের বাসস্থান থেকে দূরে বাস করতে হত। চন্ডাল ও শবররা শিকার করত এবং মাংস ভক্ষণ করত। মধ্যদেশে পথের ধারে সরাইখানা ছিল এবং দরিদ্র রোগীদের বিনামুল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। লোকে কড়ির সাহায্যে মাল কেনা-বেচা করত। রাস্তায় লোক নিরাপদে চলাফেরা করত। তাম্রলিপ্ত ও সুপর্ক ছিল প্রধান বাণিজ্য বন্দর।
উপসংহার :- চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন তার বিবরণে ভারতের সমকালীন রাজনৈতিক দিক সম্পর্কে তেমন কিছুই উল্লেখ করেন নি। আসলে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন।
(FAQ) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।
ফো-কুয়ো-কি।
পাটলিপুত্র, মথুরা, কনৌজ, বারাণসী।