বিপিনচন্দ্র পাল

বিপিন চন্দ্র পাল -এর জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা জীবন, ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ, চরমপন্থী রাজনীতিতে যোগদান, কংগ্রেসে যোগদান, বিপ্লবী ধারণার জনক, পত্রিকা সম্পাদনা, তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

বাঙালি রাজনীতিবিদ বিপিন চন্দ্র পাল প্রসঙ্গে বিপিন চন্দ্র পালের জন্ম, বিপিন চন্দ্র পালের বংশ পরিচয়, বিপিন চন্দ্র পালের শিক্ষা জীবন, বিপিন চন্দ্র পালের কর্মজীবন, বিপিন চন্দ্র পালের রাজনৈতিক জীবন, বিপ্লবী ধারণার জনক বিপিন চন্দ্র পাল, বিপিন চন্দ্র পাল রচিত গ্ৰন্থ, বিপিন চন্দ্র পালের আত্মজীবনী সত্তর বছর গ্ৰন্থটি প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত, বিপিন চন্দ্র পালের পত্রিকা সম্পাদনা ও বিপিন চন্দ্র পালের মৃত্যু।

স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিনচন্দ্র পাল

ঐতিহাসিক চরিত্রবিপিনচন্দ্র পাল
জন্ম৭ নভেম্বর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু২০ মে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ (বয়স ৭৩)
পরিচিতিভারত -এর স্বাধীনতা সংগ্রামী
বিপিনচন্দ্র পাল

ভূমিকা :- প্রখ্যাত বাঙালি বাগ্মী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে বিপিন চন্দ্র পাল বিখ্যাত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আগুন ঝরা বক্তৃতা দিতেন। তার আহ্বানে হাজার হাজার যুবক স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বিপিনচন্দ্র পালের জন্ম

১৮৫৮ সালের ৭ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের সিলেট জেলার হবিগঞ্জের পইল গ্রামে বিপিন চন্দ্র পাল জন্মগ্রহণ করেন।

বিপিনচন্দ্র পালের পিতামাতা

তাঁর পিতা রামচন্দ্র পাল ছিলেন একজন গ্রাম্য জমিদার এবং সিলেট বারের প্রভাবশালী সদস্য এবং মা ছিলেন উদার ও মানবিক গুণের অধিকারী। পারিবারিকভাবেই বিপিন চন্দ্র পালের মধ্যে সাম্য ও মানবতা বোধের দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠে।

বিপিনচন্দ্র পালের শিক্ষাজীবন

বিপিন চন্দ্র পাল সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ -এ ভর্তি হলেও পাশ করার আগেই তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

প্রধান শিক্ষক বিপিনচন্দ্র পাল

১৮৭৯ সালে বিপিন চন্দ্র তার চাকুরি জীবন শুরু করেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে।

লাইব্রেরিয়ান বিপিনচন্দ্র পাল

১৮৯০ – ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরীর সম্পাদক এবং লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিপিনচন্দ্র পালের ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ

কলকাতায় ছাত্রজীবনে তিনি কেশব চন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীর মত প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে আসেন। তাদের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বিপিন চন্দ্র ব্রাহ্ম আন্দোলন -এর সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন।

চরমপন্থী রাজনীতিতে বিপিনচন্দ্র পালের যোগদান

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর প্রভাবে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায় এবং ঋষি অরবিন্দ ঘোষ -এর বুদ্ধিতে ক্রমে তিনি চরমপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

বিপিনচন্দ্র পালের কংগ্রেসে যোগদান

বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন এবং ১৮৮৬ ও ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ও মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনজাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন -এ যোগদান করেন।

কংগ্রেসের সভাপতি বিপিনচন্দ্র পাল

ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে তিনি নিউ ইন্ডিয়া পত্রিকার মাধ্যমে স্বরাজ বা স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করতে শুরু করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে বিপিনচন্দ্র পালের যোগদান

বাংলা বিভাগ রদ করার জন্য তিনি বাংলার বাইরে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের নেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।

বিপ্লবী ধারণার জনক বিপিনচন্দ্র পাল

তিনি বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতৃত্বের প্রার্থনা ও আবেদন দ্বারা স্বরাজ অর্জন করা যেতে পারে না। স্বরাজের জন্য বিদেশী শাসনকে কঠোরভাবে আঘাত করতে হবে। এই কারণে বিপিনচন্দ্র পালকে স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘বিপ্লবী ধারণার জনক’ বলা হয়।

চা বাগান শ্রমিকদের পক্ষে বিপিনচন্দ্র পালের আন্দোলন

মালিকদের দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে নিপীড়িত আসামের চা-বাগান শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন করার জন্য তিনি কংগ্রেসকে বাধ্য করেছিলেন।

লাল-বাল-পাল

বিপিন চন্দ্র পালের সাথে যােগ দিয়েছিলেন পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায় এবং মহারাষ্ট্রের বালগঙ্গাধর তিলক। এদের তিনজনকে বলা হত লাল-বাল-পাল ।

বিপিনচন্দ্র পালের পত্রিকা সম্পাদনা

১৯০৬ সালে তিনি বন্দেমাতরম নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে গিয়েও তিনি স্বরাজ পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

নারী মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বিপিনচন্দ্র পাল

বিপিন চন্দ্র পাল ছিলেন নারীমুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা। ছাত্রাবস্থায় তিনি ব্রাহ্ম সমাজ -এ যোগদান করে তরুণ বয়স থেকেই বিধবা বিবাহের পক্ষে ছিলেন। তার বলিষ্ঠ অঙ্গীকার ছিল বিধবা-বিবাহ প্রচলন করা, বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ রোধ করা এবং নারীশিক্ষার প্রচলনে ভারতীয় সমাজে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করা।

বিপিনচন্দ্র পালের রাজনীতি পরিত্যাগ

১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন -এর কর্মসূচীতে মহাত্মা গান্ধীর সাথে মতের মিল না হওয়ায় তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।

বিপিনচন্দ্র পালের বৈষ্ণব সাধনা

তিনি ব্রাহ্মত্ব কোনোদিন ত্যাগ করেননি কিন্তু ক্রমে ক্রমে ধর্মমত পরিবর্তিত হয়ে ১৮৯৫ সালে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কাছে দীক্ষা নিয়ে বৈষ্ণব সাধনায় অনুরাগী হন।

বিপিনচন্দ্র পালের মৃত্যু

শেষজীবনে আর্থিক অনটনে কষ্ট পেয়েছেন তিনি। ১৯৩২ সালের ২০ মে (৬ই জৈষ্ঠ্য, ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বিপিনচন্দ্র পাল রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল শোভনা (১৮৮৪, উপন্যাস), ভারত সীমান্তে রুশ (১৮৮৫, প্রবন্ধগ্রন্থ), মহারাণী ভিক্টোরিয়া (১৮৮৯, জীবনী), জেলের খাতা (১৯০৮,আত্মজীবনী), চরিতকথা (১৯১৬), সত্য ও মিথ্যা (১৯১৭), সত্তর বছর (১৯৫৪, আত্মজীবনী), সুবোধিনী (১৯৫৪, উপন্যাস), চরিত্রচিত্র (১৯৫৪), নবযুগের বাংলা (১৯৫৫, প্রবন্ধগ্রন্থ), মার্কিনে চার মাস (১৯৫৫), রাষ্ট্রনীতি (১৯৫৬), শতবর্ষের বাংলা, কৃষ্ণতত্ত্ব ইত্যাদি।

বিপিনচন্দ্র পাল রচিত ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থ

The new spirit, The Soul of India, Memories of my life and time, the Beginning of freedom, The battle of Swaraj, and the Movement in India.

উপসংহার :- বিপিন চন্দ্র পাল স্বাধীন-সুন্দর-মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই কারণে তিনি ধৈর্য সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে তার সুদীর্ঘ জীবনের রাজনৈতিক সংগ্রামে অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমে অনুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, যা স্মরণাতীতকালের ইতিহাসে দুর্লভ।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বিপিনচন্দ্র পাল” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বিপিনচন্দ্র পাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিপিনচন্দ্র পালের জীবনী গ্রন্থের নাম কি?

সত্তর বৎসর।

২. বন্দেমাতরম পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

বিপিন চন্দ্র পাল।

৩. বিপিন চন্দ্র পালের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় কোন পত্রিকায়?

প্রবাসী পত্রিকায়।

Leave a Comment