ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশনের সময়কাল, স্থান, সভাপতি, মুসলিম প্রতিনিধি, সংবিধান রচনা, কংগ্রেসের প্রধান নেতৃত্ব, কংগ্রেসের তহবিল গঠন, মুসলিমদের আহ্বান, সরকারের সমালোচনা, পুস্তিকা প্রকাশ, একহাজার সভার আয়োজন ও হিউমের ভারত ত্যাগ সম্পর্কে জানবো।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন (১৮৮৭ খ্রিঃ)
সময়কাল | ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | মাদ্রাজ |
সভাপতি | বদরুদ্দিন তায়েবজি |
প্রতিনিধি সংখ্যা | ৬০৭ |
ভূমিকা :- ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের সর্বস্তরের মানুষ কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় আসতে থাকে।ফলে জাতীয় কংগ্রেস সর্বভারতীয় রূপ পরিগ্রহ করে।
সময়কাল ও স্থান
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশনে ৬০৭ জন প্রতিনিধি যোগদান করেন। কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন ও দ্বিতীয় অধিবেশন -এর তুলনায় প্রতিনিধি অনেক বৃদ্ধি পায়।
মুসলিম প্রতিনিধি
মুসলিমদের দূরে সরিয়ে রাখার সকল চেষ্টা সত্ত্বেও এই অধিবেশনে ৭৯ জন মুসলিম প্রতিনিধি যোগদান করেন।
অধিবেশনের সভাপতি
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বোম্বাই-এর বিশিষ্ট আইনজীবী বদরুদ্দিন তায়েবজি।
সংবিধান রচনা
এতদিন পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনও সংবিধান ছিল না। বাংলার তরুণ জাতীয়তাবাদী বিপিনচন্দ্র পাল এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কমিটির হাতে একটি সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়—যদিও পরবর্তী বিশ বছরে কংগ্রেসে কোনও সংবিধান কার্যকরী হয় নি।
কংগ্রেসের প্রধান নেতৃত্ব
দাদাভাই নৌরোজি, ফিরোজ শাহ মেহতা, সুরেন্দ্রনাথ, আনন্দ চালু প্রমুখ নেতারাই কংগ্রেস চালাতেন।
কংগ্রেসের জন্য তহবিল গঠন
জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন থেকে স্বেচ্ছা প্রদত্ত দানে কংগ্রেসের জন্য তহবিল গঠিত হয়।
মুসলিমদের আহ্বান
কংগ্রেস সভাপতি বদরুদ্দিন তায়েবজি মুসলিম সম্প্রদায়কে দলে দলে কংগ্রেসে যোগ দেবার আহ্বান জানান।
হিউমের ভূমিকা
সরকারের কাছে বারংবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও জাতীয় কংগ্রেসের দাবিগুলির প্রতি সরকারের উদাসীনতা হিউমকে ব্যথিত করে। গ্রামীণ জনসাধারণের চরম দারিদ্র তাঁকে প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছিল। তাই তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন –
(১) সরকারের সমালোচনা
কৃষির উন্নতির প্রতি সরকারি অবহেলা, ক্রমবর্ধমান প্রশাসনিক ব্যয় ও ভারতীয় সম্পদের নির্গমের জন্য তিনি তীব্রভাবে সরকারের সমালোচনা করেন এবং দাদাভাই নওরোজির মতো তিনিও সিদ্ধান্তে আসেন যে, ব্রিটিশ শাসনের ফলেই ভারত একটি দুর্দশাগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছে।
(২) পুস্তিকা প্রকাশ
তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, একমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারই ভারতকে তার আর্থিক দুর্গতি থেকে রক্ষা করতে পারবে। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ছদ্মনামে প্রকাশিত এক পুস্তিকাতেও তিনি এই মতামত ব্যক্ত করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বারোটি বিভিন্ন ভাষায় দু’টি পুস্তিকা প্রকাশ করেগ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এই পুস্তিকা দু’টির মাধ্যমে সরকারের অনাচারের নানা দিক তুলে ধরে সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করা হয়।
এক হাজার সভার আয়োজন
এই সময় তাঁর উদ্যোগে সারা দেশ জুড়ে প্রায় এক হাজার সভার আয়োজন করা হয়, যাতে প্রায় ৫০ হাজার বা তারও বেশি সংখ্যক মানুষ যোগদান করে।
হিউমের ভারত ত্যাগ
সরকারের বিরুদ্ধে এই গণ-আন্দোলনের সূচনা সরকার কোনওভাবেই বরদাস্ত করতে রাজি ছিল না। তারা কংগ্রেসকে ধ্বংস করা এবং হিউমকে ইংল্যাণ্ডে ফেরৎ পাঠাবার কথা চিন্তা করতে থাকে। ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত হিউম ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে স্বেচ্ছায় ভারত ত্যাগ করেন।
উপসংহার :- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের পদটি হিউমের জন্য বাঁধা ছিল। আসলে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ হিউম ছাড়া অন্য কাউকে ঐ পদে ভাবতে পারতেন না।
(FAQ) ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মাদ্রাজ।
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ।
বদরুদ্দ তায়েবজ।