ওয়াভেল পরিকল্পনা -র সময়কাল, পরিকল্পনার পটভূমি হিসেবে বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শক্তি হ্রাস, ইংল্যান্ডের ওপর চাপ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের আশঙ্কা, ওয়াভেল পরিকল্পনা পেশ, ওয়াভেল পরিকল্পনার শর্তাবলী, সিমলা বৈঠক, লীগের দাবি, কংগ্রেসের উদ্যোগ, সিমলা বৈঠকের ব্যর্থতা সম্পর্কে জানবো।
ওয়াভেল পরিকল্পনা
ঐতিহাসিক ঘটনা | ওয়াভেল পরিকল্পনা |
সময়কাল | ১৪ জুন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ |
ঘোষণা | লর্ড ওয়াভেল |
সিমলা বৈঠক | ২৫ জুন-১৪ জুলাই, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা:- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জার্মানির পতনে ইওরোপে যুদ্ধের অবসান ঘটে, কিন্তু এশিয়ায় জাপানের বিরুদ্ধে তখনও যুদ্ধ চলছিল। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে ভারতে তখন অচলাবস্থা চলছে।
ওয়াভেল পরিকল্পনার পটভূমি
ওয়াভেল পরিকল্পনার পটভূমি ছিল নিম্নরূপ –
(১) বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শক্তি হ্রাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এ ইংল্যাণ্ড জয়যুক্ত হলেও তার শক্তি যথেষ্ট হ্রাস পায় এবং ইংরেজ রাজনীতিকগণ উপলব্ধি করেন যে ভারতে ইংল্যাণ্ডের দিন শেষ হয়ে এসেছে।
(২) ইংল্যান্ডের ওপর চাপ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। ভারতের দাবি মেনে নেবার জন্য তারা ইংল্যাণ্ডের ওপর চাপ দিতে থাকে।
(৩) প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের আশঙ্কা
তখন ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছিল। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীল দলের নেতা উইনস্টন চার্চিল আশঙ্কা করছিলেন যে নির্বাচনে তাঁর দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রমিক দল তাঁদের ভারত-নীতির সমালোচনা করবে। এই সব কারণে রক্ষণশীল দল তখন ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ওয়াভেল পরিকল্পনা
এই উদ্দেশ্যে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুন ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেস ও লীগের কাছে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। এটি ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
ওয়াভেল পরিকল্পনার শর্তাবলী
এই পরিকল্পনায় বলা হয় যে,
- (১) শীঘ্রই সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংবিধান রচনার কাজ শুরু করবে।
- (২) নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয়দের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে।
- (৩) বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতি পুনর্গঠিতহবে এবং তাতে একমাত্র বড়লাট ও প্রধান সেনাপতি ব্যতীত সকল সদস্যই ভারতীয় হবেন।
- (৪) কার্যনির্বাহক সমিতিতে বর্ণহিন্দু ও মুসলিমদের অনুপাত হবেসমান সমান।
- (৫) ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব যতদিন ব্রিটিশ সরকারের হাতে নাস্ত থাকবে, ততদিন সামরিক দপ্তরও ব্রিটিশ সরকারের হাতে থাকবে।
সিমলা বৈঠক
এই বিষয়গুলি আলোচনার জন্য লর্ড ওয়াভেল সিমলায় এক সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন (২৫শে জুন) এবং এই উদ্দেশ্যে ১৫ই জুন কংগ্রেস কার্যনির্বাহক সমিতির বন্দি সদস্যদের মুক্তি দেওয়া হয়। ২৫শে জুন থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
লীগের দাবি
এই বৈঠকে জিন্না ‘পাকিস্তানের’ দাবিতে অটল ছিলেন। এছাড়া তিনি দাবি করেন যে বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতিতে নিযুক্ত মুসলিম সদস্যরা একমাত্র লীগ কর্তৃক মনোনীত হবে।
কংগ্রেসের উদ্যোগ
কংগ্রেসের পক্ষে এই দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন মৌলানা আজাদ। এছাড়া পাঞ্জাবের ইউনিয়নিস্ট দল’ (নেতা খিজির হায়াৎ খাঁ)’ বাংলার ‘কৃষক-প্রজা পার্টি’ (নেতা ফজলুল হক) ছিল মুসলিম লীগ বিরোধী।
বৈঠকের ব্যর্থতা
বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদের মুসলিম সদস্যরা একমাত্র লিগের দ্বারা মনোনীত হবে – জিন্নার এই দাবি কংগ্রেসের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। লিগের অনমনীয় মনোভাবের ফলে শেষপর্যন্ত বৈঠক ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা ব্রিটিশ সরকারকে খুশিই করে।
বৈঠকের ব্যর্থতার ফলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন –
- (১) সিমলা বৈঠক ছিল আসলে ব্রিটেনে আসন্ন (জুলাই, ১৯৪৫ খ্রি.) সাধারণ নির্বাচনে চার্চিলের রক্ষণশীল দলের নির্বাচনি চমক।
- (২) রক্ষণশীল দল প্রকাশ্যে যা-ই বলুক না কেন, তারা আসলে ভারতের শাসন ক্ষমতা ছাড়া করতে রাজি নয়।
- (৩) জিন্না পৃথক পাকিস্তান না পাওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সহযোগিতায় রাজি নন।
উপসংহার:- কংগ্রেসের দাবিকে নাকচ করার জন্য জিন্না হলেন ব্রিটিশ সরকারের ‘তুরুপের তাস‘। জিন্নার সম্মতি ছাড়া ব্রিটিশ সরকারভারতে কোনো শাসনতান্ত্রিক অগ্ৰগতি হতে দেবে না।
(FAQ) ওয়াভেল পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়াভেল ১৪ জুন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ।
উইনস্টন চার্চিল।
২৫ জুন-১৪ জুলাই ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ।
মহম্মদ আলি জিন্না।